বিএনপি ২৫ সালেই ভোটে অনড়

স্টাফ রিপোর্টার: 

নেতারা বলছেন প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় নির্বাচন নিয়ে জনমনে সংশয় কাটবে না, সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে।

আগামী বছর, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। বিএনপির পাশাপাশি অধিকাংশ রাজনৈতিক দলেরও একই চাওয়া। ‘২০২৫ সালের শেষের দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়’, নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যকে সাধুবাদ জানালেও দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে জনমনে যে সংশয় তৈরি হয়েছে এ ঘোষণায় তা কাটবে না। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনের সময়ের প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

আগামী বছর, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। বিএনপির পাশাপাশি অধিকাংশ রাজনৈতিক দলেরও একই চাওয়া। ‘২০২৫ সালের শেষের দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়’, নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যকে সাধুবাদ জানালেও দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে জনমনে যে সংশয় তৈরি হয়েছে এ ঘোষণায় তা কাটবে না। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনের সময়ের প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, উপদেষ্টার বক্তব্যে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন তাঁরা। অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে নির্বাচনমুখী করতে না পারলে দেশবিরোধী নানা ধরনের অপপ্রচার-ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে। পতিত সরকার দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাবে। বিএনপি মনে করে, আগামী বছরের প্রথমার্ধে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে পরবর্তী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।

সর্বোচ্চ ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ হলে তাতে আপত্তি থাকবে না। তবে নির্বাচন ২০২৬ সালে গেলে সেটি হবে দীর্ঘ সময়। এর মধ্য দিয়ে সময় ক্ষেপণ হবে, যেটি কাম্য নয়।

বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অভিমত, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।

বিএনপি তাদের ৩১ দফায়ও সংস্কারের কথা বলেছে। তাই নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা উচিত। এর অংশ হিসেবে দ্রুত রোডম্যাপ দিলে দেশ পুরোপুরি নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ঢুকে যাবে। এতে বিদ্যমান অস্থিরতাও কেটে যাবে। তা ছাড়া ১৫-১৬ বছর ধরে ভোটাধিকারবঞ্চিত জনগণও এখন ভোট দিতে উন্মুখ।আর সব সংস্কার শেষে নির্বাচন করতে গেলে সেটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। নির্বাচিত সরকার এসে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেবে। এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণার পর বিএনপি সরকারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। তিনি বলেন, নির্বাচন করতে এত সময় লাগার কথা নয়। সরকার আন্তরিক হলে আরও দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। জনগণ দ্রুত নির্বাচন প্রত্যাশা করে। অংশীজনেরাও দ্রুত নির্বাচন চায়। জবাবদিহিমূলক সরকার না থাকলে অংশীজনেরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের একটি ধারণা দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি ধারণা নয়, নির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায়। তিনি বলেন, সংস্কার যুগ যুগ ধরে চলবে, এটা নতুন কিছু নয়। সময়ের বিবর্তনে, সময়ের চাহিদায় সংস্কার প্রয়োজন হয়। আমরা আশা করছি, এ সরকার দ্রুততম সময়ে জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফেরত দেবে, এটাই কাম্য।

 

বিএনপির একসময়ের রাজপথের মিত্র জামায়াতে ইসলামী বলছে, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের একটা ধারণা দিলেও সংস্কারের বিষয়ে কিছুই বলেননি। জামায়াত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন চায়। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, আমরা প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন চাই। তিনি বলেন, জনগণের প্রত্যাশা ফ্যাসিবাদমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। যেখানে ন্যায়বিচার কায়েম হবে। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করবে। এসব নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই বিগত সরকারের প্রতিটি সেক্টরের অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরই নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোও রোডম্যাপ প্রশ্নে এখন সরকারপ্রধানের সঙ্গে সংলাপ আশা করছে। তারা বলছে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এরপর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে রোডম্যাপ তৈরি করা হলে সব সন্দেহ-সংশয় দূর হবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাচনের সময় নিয়ে এখন যে ইঙ্গিত পাওয়া গেল, সেটা দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরিতে সহায়ক হবে। এখন অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার এবং নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলে এটি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, দেড় থেকে দুই বছরের মাথায় সংস্কার শেষ করে একটি নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা আশা করেছিলাম। তার পরও যেটা বলেছেন, আমরা মনে করি, তিনি সামনে আরও সুন্দরভাবে, আরও নির্দিষ্টভাবে একটি পরিকল্পনা আমাদের সামনে তুলে ধরবেন। আমরা চাই এ সরকার সফল হোক। বিএনপির মিত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা দিতে হবে। তিনি বলেন, সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ দেখতে চাই না। মানুষ ১৭ বছরে ভোট দিতে পারেনি। বর্তমান সরকার দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলাসহ নানা বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মো. ফারুক রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সম্ভাবনার কথায় দেশবাসী আস্থা রাখতে পারছে না। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের স্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। দেশে এখন নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দ্রুত একটি নির্বাচিত সরকার দরকার। যত দ্রুত নির্বাচন হবে, ততই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল। বিএনপির আরেক মিত্র ১২-দলীয় জোটের নেতারা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের চার মাস পার হওয়ার পর সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্বাচনের সময় নিয়ে বক্তব্য এলো। কিন্তু তাতে সংস্কারের সময় বা নির্বাচনের তারিখ বলা হয়নি। এ জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন বলেন, এখন দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা প্রয়োজন। তাঁরাসহ অনেক দল ২০২৫ সালে জুনের মধ্যে নির্বাচন চায়। তাঁরা মনে করেন, সংস্কার করবে রাজনৈতিক সরকার।

সবা:স:জু- ৪২৯/২৪

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী প্রকৌশলীদের হাতের মুঠোয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগতরা ঘাঁটি গেড়ে বসে আছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে। সরকার পতনের এক বছর পরও জনগণের স্বাস্থ্যসেবা খাতের গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরটি দোর্দণ্ড প্রতাপে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। এদের বিরুদ্ধে দেশের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমসহ আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জমানায় হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে পিডি (প্রকল্প পরিচালক) হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন একেকজন। সেই সুবাদে আর্থিকভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন তারা। একই সঙ্গে দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যভান্ডার ভারতে পাচারের অভিযোগ রয়েছে বেশ আরো কয়েকজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি কয়েকজন প্রকৌশলীকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (‘র’) এজেন্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)। ফ্যাসিবাদের বিগত বছরগুলোতে একাধিক তদন্তে প্রকল্প পরিচালকদের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়লেও কাউকেই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি। উপরন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সময় কেউ কেউ বাগিয়ে নিয়েছেন পদোন্নতি। বাগিয়ে নিয়েছেন বড় বড় নতুন প্রকল্প।

আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন প্রকৌশলীর মধ্যে রয়েছেন অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শিশির কুমার বিশ্বাস, তার স্ত্রী নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মিষ্ঠা দেবনাথ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র দে, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাইফুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী নাবিলা তাবাসসুম মিকি। তাদের বিরুদ্ধে এনএসআই অধিদপ্তরের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের গত ২৪ মার্চ দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এনএসআই অধিদপ্তরের পাঠানো সুপারিশের চিঠিতে বলা হয়েছে, এসব প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে সুনিদির্ষ্টভাবে এদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও পাওয়া গেছে, যা দুর্নীতি দমন কমিশনই এ তদন্ত করতে পারে। ওই চিঠির ধারাবাহিকতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এসব কর্মকর্তাদের দুদক তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এসব ব্যাপারে বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মীর আব্দুস সহিদ বলেন, ‘আমি শুনেছি এবং অনেক বিষয় পত্রপত্রিকায়ও আসছে। কিন্তু বেশি দিন হয়নি আমি দায়িত্বে এসেছি। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের ব্যাপারে তদন্তসহ যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে কেবল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তারা গোয়েন্দা সংস্থা বা নিজেরা তদন্ত করে যদি অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেয়, তাহলে কেবল আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের অধিদপ্তর, পরিদপ্তরগুলোতে প্রধান প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন প্রকৌশল পদে কর্মরত ছিলেন আওয়ামী সুবিধাভোগী প্রকৌশলীরা। তারাই ছিলেন উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার মহা লুটপাটতন্ত্রের অন্যতম সহযোগী। হাসিনার অনুগত প্রকৌশলীদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি আব্দুস সবুর। তিনি একাধারে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞাপন ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক। ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে সংসদ সদস্য সদস্য হয়েছিলেন। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে হাসিনা উৎখাত হলেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরগুলো স্বপদে বহাল রয়েছেন আবদুস সবুর, তথা হাসিনার অনুগত প্রকৌশলীরাই।

শেখ হাসিনা বিভিন্ন দপ্তরে থরে থরে সাজিয়ে গেছেন অনুগত প্রকৌশলীদের। ‘বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের মাধ্যমে সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় রেখে তাদের পদায়ন করেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। এ ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ৩ আগস্ট প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম মিয়াকে আহ্বায়ক ও প্রকৌশলী শেখ সাদী রহমত উল্লাহকে সদস্য সচিব করে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর শাখা গঠন হয়। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ড. প্রকৌশলী এম হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী নূরুজ্জামান ১১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির অনুমোদন দেন।

সূত্র জানিয়েছে, পরিষদের আহ্বায়ক প্রকৗশলী নজরুল ইসলাম মিয়া বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। ৩২ পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের পিডি তিনি। প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত নজরুলের অনিয়ম দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে তিন দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রকল্পের আওতায় একটি পৌরসভাতেও পানি সরবরাহ সম্ভব হয়নি। একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও চালু হয়নি। একটি পৌরসভাতেও ফিক্যাল স্ল্যাজ ট্রিটমেন্ট (মলমূত্র ব্যবস্থাপনা) প্ল্যান্টের কাজ শেষ হয়নি। সব সময় তিনি পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কাজ করান। সরকারের বিপুল অর্থেও অপচয় ঘটিয়েও তিনি এই প্রকল্পে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

কমিটির প্রথম সদস্য তুষার মোহন সাধু খাঁ ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক। তিনি ছিলেন একাধারে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্প ও সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের পরিচালক। আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পটি দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার। অন্যদিকে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের কলেবর আট হাজার ৮৫০ কোটি টাকার। বিগত ১৬ বছর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে সব নতুন নিয়োগ, নতুন প্রকল্প ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছেন বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেনের বিনিময়ে।

এমন সব দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্বিঘ্নে অবসর-পূর্ব ছুটিতে যেতে দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান চললেও এখনো কোনো মামলা করেনি দুদক। বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন প্রকৌশলী মীর আব্দুস সহিদ।

বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান এহতেশামুল রাসেল খান। সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও প্রধান প্রকৌশলী সাধু খাঁর আস্থাভাজন হিসেবে বিভাগের সর্বোচ্চ সুবিধা পেয়েছেন তিনি। বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির সুপারিশ ছাড়াই ২০২৪ সালের মে মাসে ২৬ জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে নিয়মের সর্বোচ্চ ব্যত্যয় ঘটিয়ে তাকে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর (পরিকল্পনা) মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফিজিবিলিটি স্টাডি সার্কেলের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ফরিদপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাহার উদ্দিন মৃধা বিগত সরকারের আমলে একাধিকবার দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হলেও বঙ্গবন্ধু প্রকৗশল পরিষদের সদস্য পরিচয়ে পার পেয়ে যান।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে জরিপ অনুসন্ধান ও গবেষণা) শিশির কুমার বিশ্বাস। কুয়েট ছাত্রলীগের এই একনিষ্ঠ কর্মী শিশির ঢাকা বিভাগে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে যোগসাজশ করে পছন্দের ঠিকাদারদের কোটি কোটি টাকার কার্যাদেশ দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার সরকারি অর্থ আত্মসাতের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অধিদপ্তরের অ্যাসিবিলিটি ফর ইমপ্লিমেন্টিং অব সোল্ড ওয়েস্ট অ্যান্ড ফেক্যাল স্টাডিজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইন ৫৩ ডিস্ট্রিক্ট লেভেল পৌরসভা অ্যান্ড আট সিটি করপোরেশন নামক প্রজেক্টের আওতায় বাংলাদেশের সব পৌরসভা জরিপের নামে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যভান্ডার (প্রতিটি বাড়ি ও রাস্তাঘাটের ড্রোন ক্যামেরায় তোলা ছবি ও ভিডিওসহ তথ্য তৈরি করে) এই প্রজেক্টর পিডি হিসেবে নিয়োগ পান শিশির কুমার বিশ্বাস। তিনি এই প্রজেক্টটি টিলার নামক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বাস্তবায়ন করেন। প্রতিষ্ঠানটি তামজিদুল ইসলাম নামক একজনের হলেও মূলত এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শিশির নিজেই। আর এই তথ্যভান্ডার ভারতের কাছে পাচার করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বলে উচ্চতর তদন্ত চেয়েছে দুদক।

এসব ব্যাপারে শিশির কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘দুদক আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, এ ব্যাপার আমার জানা নেই। তবে এ বিষয় নিয়ে আপনার সঙ্গে ফোনে কথা বলব না। সামনা-সামনি কথা বলতে চাই। আর আমার বিরুদ্ধে করা কোনো অভিযোগই ঠিক নয়।’

প্রকৌশলী নুর আহাম্মেদ ছিলেন ডুয়েট ছাত্রলীগের নেতা। একাধিক পদে দায়িত্ব পালনকারী বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের এই সদস্য বর্তমানে উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৃষ্টির পানি সরবরাহের মাধ্যমে পানি সরবরাহ প্রকল্প নামে দুটি প্রকল্পের পরিচালক। এর আগে ৩৭ জেলা শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্প ও পুকুর প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন। তার অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে ৩৭ জেলা শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পের কাজ এত নিম্নমানের হয়েছে, অধিকাংশ পৌরসভাতেই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। তার চাকরির মেয়াদ রয়েছে দুই বছরের কিছু বেশি সময়। অত্যন্ত দাপুটে এই কর্মকর্তাকে ৫ আগস্টের পরে সব নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চার বছর মেয়াদি রোহিঙ্গা প্রকল্পের পরিচালক বানানো হয়েছে।

গ্রাউন্ড ওয়াটার সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) বিধান চন্দ্র দে। এর আগে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের পিডি ছিলেন। সীমাহীন দুর্নীতির কারণে ২০২৪ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও কোথাও পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম চালু হয়নি। নিয়ম ভেঙে এক ইউনিয়নের টিউবওয়েল অন্য ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে। বেশির ভাগ পিএসএফ ও আরো প্ল্যান্টের কাজ শেষ না করেই বিল দেওয়া হয়েছে। এর আগে গোপালগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় দেড় কোটি টাকার একটি পুকুর খনন না করেই সম্পদ ও অর্থ আত্মসাৎ করে ক্ষমতার জোরে ধামাচাপা দেন।

প্রকৌশলী মুন্সি হাচানুজ্জামান ৫২ জেলায় ল্যাবরেটরি স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ৫২ জেলায় নির্মাণকৃত ল্যাবরেটরি ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ল্যাবরেটরির জন্য কেনা মূল্যবান মেশিনারিজ পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্প ছয় বছরেও শেষ হয়নি। সরকারি অর্থ অপচয়ের জন্য অডিট আপত্তি হয়েছে। ১৬ কোটি টাকার একটি কাজ পিপিআরের সব নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে প্রথম সাতজন দরদাতাকে বাদ দিয়ে অষ্টম স্থানে থাকা তার শ্যালকের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে। চাকরি জীবনের শুরু থেকে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও ফরিদপুরের বাসিন্দা সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খোন্দকার মোশারফ হোসেনের আশীর্বাদপুষ্ট এই কর্মকর্তা ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

প্রকৌশলী তবিবুর রহমান তালুকদার বুয়েট ছাত্রলীগের নজরুল গংয়ের সদস্য ছিলেন। দুর্নীতির ‘মহানায়ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া’ এই প্রকৌশলী পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালার (পিপিআর) ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে সর্বনিম্ন দারদাতাকে বাদ দিয়ে চতুর্থ, পঞ্চম অবস্থানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছেন। এসব অনিয়মের কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি আশঙ্কাজনক কম ও গুণগত মান অত্যন্ত নিম্ন। বিভিন্ন প্রকল্পের পরামর্শকদের বেতন থেকে পারসেন্টেজ গ্রহণ করা এবং টাকার বিনিময়ে এনজিও নিয়োগের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

টাঙ্গাইল জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের সদস্য সুলতান মাহমুদ। বুয়েট ছাত্রলীগের নজরুল গংয়ের সদস্য ছিলেন তিনি। তার দুর্নীতির কারণে জামালপুরের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও পাইপলাইনের কাজ বন্ধ আছে। দুর্নীতির কারণে খাগড়াছড়ি বদলি হয়েছিলেন সুলতান মাহমুদ। ৫ আগস্টের পর মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের বিনিময়ে টাঙ্গাইলে পোস্টিং পেয়েছেন। মাগুরা ও গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালে তার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ ছিল।

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
বিদেশ থেকে যতটুকু স্বর্ণ আমদানি করলে দিতে হবে না ভ্যাট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎতে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব ফকরুল বাংলাদেশে ইতিহাস গড়ল উইন্ডিজ দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন রাজউক ইমারত পরিদর্শক শামীম রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে কে জিতবে, তা নিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচেছ ট্রাম্প নাসার চন্দ্র মিশনে স্পেসএক্স জুলাই যোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে নতুন করে দেড় হাজারের বেশি আবেদন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি শুরু প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন ইএম ২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদ সম্পদের পাহাড় জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি