চাকুরি দেয়ার নামে দেড় বছরে হাতিয়েছে ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার॥

প্রতিষ্ঠানের নাম আছে, মুঠোফোনে অস্তিত্বও আছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো কিছুই নেই। তবে বিভিন্ন সময় নাম সর্বস্ব পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। চক্রটির টার্গেট বড়লোক বা খুব বেশি শিক্ষিতরা নয়। ৮ম থেকে এইচএসসি পাস করা বেকার তরুণ-তরুণীদের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।

নোয়াখালীর মজিবুর রহমান চাকরির জন্য ঢাকায় আসেন ২০০৮ সালে। ওই সময় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। অফিসের কাজের পাশাপাশি বসের এমন প্রতারণার কাজে সহযোগিতা করতেন তিনি। সেখান থেকেই প্রতারণার এই কৌশল রপ্ত করেন। পরে নিজেই খুলে বসেন নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। একে একে গড়ে তোলেন ৩০টি প্রতারণার প্রতিষ্ঠান।

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান থানার আশকোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারণা চক্রের মূলহোতাসহ দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বুধবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদরদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির সাইবার মনিটারিং টিমের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) রেজাউল মাসুদ এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. মজিবুর রহমান, তার দুই নারী সহযোগী লাবনী আক্তার ও জান্নাতুল ফেরদৌস ময়না। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১৪টি মোবাইল, বিভিন্ন কোম্পানির ৬০টি সিম কার্ড, চাকরি প্রার্থীদের ৪০টি জাতীয় পরিচয় পত্র, ১৪৮টি বায়োডাটা ও ৩০টির বেশি ভুঁইফোড় কোম্পানি ও এনজিওর নামে তৈরি করা নিয়োগপত্র, স্ট্যাম্প ও সিল জব্দ করা হয়।

রেজাউল করিম বলেন, চাকরি প্রার্থী সংগ্রহে অভিনব কৌশল অবলম্বন করতেন চক্রটি। মজিবুর রহমান প্রথমে পত্রিকায় দেয়া বিজ্ঞাপনে ইমেলের মাধ্যমে আবেদন আবেদন সংগ্রহ করতেন। এছাড়া অনেক সময় বিভিন্ন প্রতিষ্টান থেকে টাকার বিনিময় চাকরি প্রার্থীদের জীবনবৃত্তন্ত (সিভি) সংগ্রহ করতেন। তার টার্গেট প্রতিমাসে ২০০ চাকরি প্রত্যাশীর নিয়ে কাজ করা।

পরে নারী সহযোগীদের প্রাথমিক বাছাই প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে ফোন করা। আপনি আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকেছেন। এখন কিছু টাকা দিয়ে চাকরি কনর্ফম করুন। কিছুদিন পরে আবার আরেকটি ফোন নম্বর থেকে একই প্রার্থীকে ফোন করে বলা হয়। আপনাকে খুব শিগগিরই যোগদান করতে হবে। কিন্তু আপনাকে মোটরসাইকেল, মোবাইল ও ল্যাপটপ আছে কিনা। না থাকলে, দুই হাজার টাকা পাঠান কেনার জন্য বাকি টাকা বেতন থেকে সমন্বয় করা হবে। টাকা নেওয়ার পরে ওই ফোন নম্বর বন্ধ করে দেন চক্রটি।

চক্রের প্রধান মজিবুর রহমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি সিভি ১০০ টাকা দিয়ে কিনতেন। পরে নারী সহযোগীরা ফোন করে চাকরি প্রার্থীর থেকে টাকা আনতে পারলে পেতেন ২০০ টাকা। চক্রটি গত ১০ বছর ধরে এই প্রতারণা করে আসছে। আর পাঁচ বছরে ২৫ হাজার সিভি সংগ্রহ করে তারা। এরমধ্যে শেষ দেড় বছরে ছয় হাজার ৯৬২ জন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে এক কোটি ৮৭ লাখ ছয় হাজার ২১৭ টাকা আত্মসাত করেছে বলে জানিয়েছেন সিআইডি। আগের লেনদেনের হিসাব পেলে এই পরিমান আরও বাড়বে বলে মনে করেন সংস্থাটি।

এসএসপি রেজাউল মাসুদ বলেন, নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, করোনা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, ওয়ার্ল্ড কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও বাংলাদেশ মহিলা উন্নয়ন কেন্দ্রের নামে অফিস খুলে বিভিন্ন পত্রিকায় ভুঁইফোড় কোম্পানির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিত চক্রটি। সেখান থেকে চাকরি দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ করত তারা। এই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষিত ও বেকার অসংখ্য যুবক প্রতারিত হয়েছে। এ বিষয়ে সাইবার পুলিশ সেন্টারে (সিপিসি) একটি অভিযোগ আসলে, অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, একজন চাকরি প্রত্যাশীর আকর্ষণ করতে যা করা লাগে, সব করত চক্রটি। টাকার পরিমাণ কম হলেও গ্রাহক বেশি। এছাড়া অভিযোগ কারীর সংখ্যা কম। অল্প টাকা প্রতারিত হওয়ার কারণে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে না। আর সেই সুযোগটা নিয়েছেন চক্রটি। কিন্তু তার কাছে এটা বিরাট অংকের টাকা হয়ে দাঁড়ায়।

এর আগেও মজিবুর রহমান বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তারও হয়েছেন কয়েকবার। তবে জেল থেকে বের হয় আবার একই প্রতারণার কাজে করেন মজিবুর। আর এই ঘটনায় প্রতারণা চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

 

পুলিশ কোনো দলের তল্পিবাহক হয়ে বেআইনি কাজ করবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, পুলিশ কোনো দলের তল্পিবাহক হয়ে বেআইনি কাজ করবে না।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা, রাজশাহীতে ৪০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম ও বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদার অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান ভূঞা।

প্যারেড অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ১১ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার বগুড়া সেনানিবাস মেজর জেনারেল এস এম আসাদুল হক, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাওয়াদুল হক, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) বাংলাদেশ পুলিশ আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ ও আরএমপির পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানসহ উচ্চ পদস্থ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সব নাগরিকের, কোনো দলের নয়, কোনো গোষ্ঠীর নয়, কোনো সম্প্রদায়ের নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ প্রজাতন্ত্রের স্বাধীন কর্মচারী, যারা সুনির্দিষ্ট আইন মেনে চলেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করবে। তারা কোনো দলের তল্পিবাহক হয়ে এজেন্ডা বাস্তবায়ন কিংবা তাদের অন্যায্য ও অন্যায় নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে অপেশাদার আচরণ ও বেআইনি কাজ করবে না। আজকের এই সমাপনী অনুষ্ঠানে আপনারা এই শপথে বলীয়ান হবেন।

নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কর্তব্য পালন করতে হবে। থানায় এসে মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেই দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।

এ সময় তিনি জুলাই ও আগস্ট ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছে সেই চেতনাকে ধারণ করে পুলিশ বাহিনীর গৌরবকে আরও সমুন্নত রাখার পরামর্শ প্রদান করেন। নবীন কর্মকর্তাদের কোনো দলের আজ্ঞাবহ হয়ে কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন কিংবা তাদের অন্যায্য ও অন্যায় নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে অপেশাদার আচরণ ও বেআইনি কাজ না করার জন্য বলেন।

তিনি আরও বলেন, আজ আপনাদের এই এক বছরব্যাপী মৌলিক প্রশিক্ষণের শেষ দিন। আজ থেকে আপনারা সুপ্রশিক্ষিত এক ঝাঁক মেধাবী চৌকস পুলিশ অফিসার হয়ে মাঠ পর্যায়ে সরাসরি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে যাচ্ছেন, আপনাদের এই নতুন কর্মজীবনে স্বাগত জানাচ্ছি। আজকের এই সমাপনী অনুষ্ঠানের মাহেন্দ্রক্ষণে সুনিপুণ কুচকাওয়াজ উপহার দেওয়ায় আপনাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয় বিসিএস ৪০তম ব্যাচের ৬৩ জন ও ৩৮তম ব্যাচের তিনজনসহ মোট ৬৬ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারের। এক বছর প্রশিক্ষণ শেষে গত বছরের ২০ অক্টোবর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এ জন্য দেড় হাজারের বেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে আগের রাতে হঠাৎ করেই কুচকাওয়াজ স্থগিত করে প্রশাসন। এরপর গত ২৪ নভেম্বর এই অনুষ্ঠানের জন্য দিন ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু সেবারও অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছিল।

এরপর এলোমেলোভাবে হেঁটে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন এমন অভিযোগ এনে গত ১৫ ডিসেম্বর শিক্ষানবিশ ২৫ এএসপিকে শোকজ করা হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের মাত্র দুই দিন আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি শোকজপ্রাপ্ত ২৫ জনের মধ্যে ছয়জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সর্বশেষ আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি ৪০তম বিসিএস ব্যাচের ৫৭ জন ও ৩৮তম বিসিএস ব্যাচের ৩ জনসহ মোট ৬০ জন প্রশিক্ষণার্থীর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হলো।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে অত্যন্ত হতাশাজনক : মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক দের মাঝে যে অনৈক্য কুমিরের দেখা মিলল রাজশাহীর পদ্মায় সরকার ও সেনাবাহিনী, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও ন্যায়বিচার যেন ব্যাহত না হয় আজ থেকে আমরণ অনশন, প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান বিমানবন্দর অগ্নিকান্ডে পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম