
স্টাফ রিপোর্টার: বন্ধ্যাত্ব কেবলমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যগত কারণেই নয়, এর পেছনে অনেক মনোসামাজিক, জীবনধারা, এবং পরিবেশগত উপাদানও কাজ করে থাকে। পুরুষের বন্ধ্যাত্বের বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যা তাদের প্রজননক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
পুরুষের বন্ধ্যাত্বের সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, চলুন জেনে নেয়া যাক-
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা
বর্তমান সময়ে, অনেক পুরুষ অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে বন্ধ্যাত্বের শিকার হচ্ছেন। অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান, স্থূলতা, এবং অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার অভ্যাস পুরুষের প্রজনন ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষত, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং ধূমপান শুক্রাণুর গুণগত মান এবং পরিমাণে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
শারীরিক আঘাত বা চিকিৎসা সমস্যা
পুরুষের বন্ধ্যাত্বের আরেকটি বড় কারণ হলো শরীরের উপর শারীরিক আঘাত। উদাহরণস্বরূপ, মূত্রথলির অস্ত্রোপচার, কিংবা যৌনাঙ্গে আঘাত বা সংক্রমণ পুরুষের প্রজননক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এছাড়া, বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা যেমন কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি থেকেও বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
হরমোনের অস্বাভাবিকতা
পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন এবং অন্যান্য হরমোনের অসম্পূর্ণতা প্রজননক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। বিশেষত, হরমোনজনিত সমস্যা যেমন হাইপোগনাডিজম (টেস্টোস্টেরনের অভাব) পুরুষের শুক্রাণুর উৎপাদন ও গুণমানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
জেনেটিক কারণ
বংশগত বা জেনেটিক কারণে অনেক পুরুষ বন্ধ্যাত্বে ভোগেন। ক্রোমোজোমাল সমস্যা, যেমন কাইরোপলাজমিক অস্বাভাবিকতা (যেমন কলাইফেল্টার সিনড্রোম), শুক্রাণু উৎপাদনে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
পরিবেশগত প্রভাব
পরিবেশগত বিষাক্ত পদার্থ যেমন পেস্টিসাইড, ভারী ধাতু (তামা, সীসা, পারদ), এবং প্লাস্টিকের কিছু রাসায়নিক পুরুষের প্রজননক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। এইসব রাসায়নিক পদার্থ শুক্রাণুর গুণগত মান এবং পরিমাণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ পুরুষের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের ফলে শরীরে কারটিসল হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা শুক্রাণুর উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
বংশগত ইনফেকশন বা রোগ
কিছু পুরুষের ক্ষেত্রে যৌন সংক্রমণ বা অগ্ন্যাশয়ের সমস্যা (যেমন, মেনোনোজাইটিস বা মহিলাদের কাছে দেখা যায় এমন ক্ল্যামিডিয়া সংক্রমণ) বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। এছাড়া, মেনোপজের পর পুরুষদের কিছু বংশগত সমস্যা যেমন অসহনীয় গ্যাসট্রিক রোগ বা শ্বাসকষ্টের সমস্যাও তাদের প্রজনন ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বয়সের প্রভাব
পুরুষের বয়সও বন্ধ্যাত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে, যদিও এটি মহিলাদের মতো তীব্র নয়। তবে, পুরুষ বয়স বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শুক্রাণুর গুণগত মান এবং পরিমাণ কমতে পারে, যা প্রজনন ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে, যা শারীরিক, মানসিক এবং পরিবেশগত হতে পারে। যদি পুরুষের প্রজননক্ষমতা নিয়ে কোনো ধরনের উদ্বেগ থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং চিকিৎসকের সাহায্যে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এছাড়া, জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন যেমন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ কমানোর মাধ্যমে পুরুষদের প্রজননক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।