কোথায় নিরাপদ শিশু?

এস এ আখি: শিশু আমাদের আগামী প্রজন্ম, আমাদের আশা এবং ভবিষ্যত। কিন্তু আজকের দিনে এই শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়? প্রতিদিনই দেশে-বিদেশে শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও পাচারের খবর গণমাধ্যমে আসছে। প্রশ্ন উঠছে, কোথায় তাদের নিরাপত্তা? কেন বারবার আমাদের শিশুদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও অত্যাচার ঘটছে? কখন আমরা একটি সুরক্ষিত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো, যেখানে শিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে?

দেশজুড়ে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ক্রমেই উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সমাজের জন্য একটি মারাত্মক সংকেত।

সম্প্রতি ঢাকার কেরাণীগঞ্জের আটি বাজার সংলগ্ন নয়াবাজার গ্রামে নিজ বাড়ির সামনে ধর্ষণের শিকার হয়েছে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু । এর আগে বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে ৮ বছর বয়সী আছিয়া ধর্ষণের শিকার হয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।

বর্তমান পরিস্থিতি:
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিশুদের নিরাপত্তা আজ বড় এক প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই শিশুদের ওপর ধর্ষণ, নির্যাতন, পাচার, এবং শারীরিক নিপীড়নের খবর আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। শুধু সড়ক দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগই নয়, সেসব ঘটনার মধ্যে সবার আগে উঠে আসে শিশু ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা। একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় সংস্থাগুলোর রিপোর্টে দেখা গেছে, গত বছরেই প্রায় ৬,০০০ এরও বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যা আমাদের সমাজের জন্য একটি অশনি সংকেত।

এছাড়া, বেশিরভাগ শিশু যে অপরাধীদের দ্বারা শিকার হচ্ছে, তারা সাধারণত পরিচিত কেউ। পরিবারের সদস্য, শিক্ষক বা প্রতিবেশী, এমনকি বন্ধুবান্ধবও শিশুদের শিকার করার মধ্যে রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, যদি আমাদের নিজেদের কাছেই নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে এই শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়?

শিশু ধর্ষণের পেছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করে। মূলত সমাজে অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক বৈষম্য, অপরাধমূলক মনোভাব, শিশুদের প্রতি নিরাপত্তাহীনতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা এসব ঘটনার জন্য দায়ী। শিশু ধর্ষণ অনেক সময় পরিচিত ব্যক্তিদের দ্বারা ঘটে থাকে, যেমন: পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী, শিক্ষক বা অন্য কোন পরিচিত ব্যক্তি।

আইন ও বিচার ব্যবস্থা:
বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে, যার মধ্যে বিশেষভাবে শিশু নির্যাতন (প্রতিরোধ) আইন ২০০০ অন্যতম। তবে, এই আইনটির বাস্তবায়ন এখনো যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি। আইনের প্রতি মানুষের অবজ্ঞা এবং দুর্বল বিচার ব্যবস্থার কারণে অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা শাস্তি থেকে মুক্ত থাকে। এই ধরনের পরিস্থিতি একটি ধ্বংসাত্মক পরিণতির দিকে নিয়ে যায়, যেখানে অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হয় এবং শিশুদের জন্য নিরাপত্তা দিন দিন হুমকির মুখে পড়তে থাকে।

শুধুমাত্র একটি ঐক্যবদ্ধ সমাজই পারে এই ভয়াবহ অপরাধের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করতে এবং শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। আইনজীবী, পুলিশ এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

 

 

সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে নদী দখল

সবুজ বাংলাদেশ॥
দেশে নবায়নযোগ্য শক্তিসংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অবৈধ দখলের বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

লালমনিরহাটে একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে গিয়ে কীভাবে অন্যের জমি দখলে নেওয়ার পাশাপাশি নদীর বিস্তীর্ণ এলাকাও দখল করা হয়েছে, তা গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। জানা গেছে, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভোটমারী (নাককাটির ডাঙ্গা) গ্রামের মানুষ বংশপরম্পরায় নদী পার হয়ে তিস্তার চরে চাষাবাদ করে আসছে।

কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের জমি কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। কারণ, সেখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে। সেই থেকে ওই গ্রামের বহু মানুষের জীবন প্রায় থমকে গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কৃষকের জমি দখলের পাশাপাশি তিস্তার বিস্তীর্ণ এলাকা দখলের অভিযোগও উঠেছে। সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য নদীর বুক চিরে ৫০ ফুট চওড়া দুই কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

সড়ক নির্মাণের ফলে তিস্তার একটি চ্যানেল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নদীর ভেতর এ ধরনের সড়ক নির্মাণের ফলে নদীভাঙনসহ সম্পদহানি ঘটবে। তিস্তার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীতে এভাবে অবৈধ দখল প্রক্রিয়া চলছে, এসব কি দেখার কেউ নেই?

জানা গেছে, তিস্তার তীরে নদীর ওপর লাগানো হয়েছে ‘ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেডের’ সাইনবোর্ড। এক জায়গায় নদীর মাঝখানে কিছুটা জায়গা ফাঁকা (বেইলি ব্রিজের জন্য) রেখে চলছে সড়কের নির্মাণকাজ। ফলে নদীর পানি বাধাগ্রস্ত হয়ে দুই তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে; যা বাঁশ-টিন দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। নদী পার হয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় দুই কিলোমিটারের ইট বিছানো সড়কটি চলে গেছে শৌলমারী চরে নির্মাণাধীন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এলাকা পর্যন্ত। সড়কের কারণে চরের মাঝে পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ডুবে আছে চরের অনেক জমি।

শৌলমারী চরের একজন কৃষকের দাবি, তার কেনা প্রায় পৌনে তিন একর জমির মধ্যে ৯০ শতাংশ জমি কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে নেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ করেন ওই কৃষক ও তার স্বজনরা। এতে জমি রক্ষা করা সম্ভব না হলেও মারধরের শিকার হয়েছেন তারা। শৌলমারী চরের ওই কৃষকসহ নয়জনের নামে সম্প্রতি কাঁটাতার ও টাকা ছিনতাইয়ের মামলাও করা হয়েছে।

নিজেকে ইন্ট্রাকো সোলার লিমিটেড ‘কমিটির ম্যানেজার’ দাবি করে ওই এলাকার প্রভাবশালী এক ব্যক্তি মামলাটি করেন। এমন ঘটনায় এলাকার অনেকেই হতবাক। নদীর ভেতর সড়ক নির্মাণের কারণে বিস্তীর্ণ আবাদি জমি ইতোমধ্যে চলে গেছে নদীগর্ভে। ফলে এলাকার বহু দরিদ্র মানুষ পথে বসার আশঙ্কায় দিন গুনছেন। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের নামে অবৈধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত যারা, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম