দুর্নীতির অপ্রতিরোধ্য রথ চালাচ্ছেন রাজউক ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ

দুর্নীতির অপ্রতিরোধ্য রথ চালাচ্ছেন রাজউক ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ

মাহতাবুর রহমান:

আবুল কালাম আজাদ রাজউকের একজন ইমারত পরিদর্শক। ২০১৮ সালে রাজউকের প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ পরিক্ষায় তার নিয়োগ হয়। জানাগেছে তার হয়ে অন্য কেউ লিখিত পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করলেও ভাইভা দিয়েছেন তিনি । তবে ভাইভা বোর্ডে যারা ছিলেন তাদের খুশি করে চাকুরি বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠলেও আজ পর্যন্ত এই বিষয় নিয়ে অদৃশ্য কারনে কোন তদন্ত করেনি রাজউক।

শেরখালী, শাহজাদপুর সিরাজগঞ্জের মৃত আব্দুল কাদেরের পুত্র আবুল কালাম আজাদ ওরফে জামিল, জন্ম ১৯৮৭ সালে। ডিপ্লোমা ইন ইনঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল) পাশ করে ২০১৮ সালে যোগদান করেন রাজউকে। এই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকেই তিনি দুর্নীতির রথ চালাচ্ছেন যা এখন অপ্রতিরোদ্ধ হয়ে উঠেছে।

জাকির পাটোয়ারী নামে এক ব্যক্তি ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ এই আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, যেখানে সে সুস্পষ্ট দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন আবুল কালাম আজাদ অতি সাধারন নিম্ন বিত্ত পরিবারের সন্তান। সম্প্রতি ৩মাস যাবৎ রাজউক জোন-৪ এ বদলী হয়ে আসার পর জোন-৪ এর এলাকাধীন পূর্ব বাড্ডার হাজী সেকান্দার বাগ রোডের কামাল উদ্দিনের বাড্ডা মৌজার আর এস দাগ নং৬৬০৫ এ নির্মিত প্ল্যান বিহীন ভবন মালিকের নিকট থেকে ১০লক্ষ টাকা গ্রহণ করে ঘুষ বাবদ, উত্তর বাড্ডার জামতলায় ডা. আলমাসের মালিকানাধীন পাশাপাশি পৃথকদুটি ভবন ৪র্থ তলা থেকে ২টি ছাদ একত্রিত করে নির্মণের অপরাধে ভবন মালিক ডা. আলমাসের নিকট থেকে ১৮লক্ষ টাকা জরিমানা করে রসিদ না দিয়ে পুরো ১৮লক্ষ টাকাই পকেটে ভড়েন। বদিউল আলমের মালিকানাধী পূর্ব বাড্ডা ৩/৫, দঃআনন্দ নগরে মাল্টি প্লান ডেভলপার কর্তৃক নির্মিত রাজউক অনুমোদনহীন ১০তলা ভবনের মালিক থেকে ৩২লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে রাজউকের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রীট করার পরামর্শ দেন যেন রাজউক কখনো ভবনটি উচ্ছেদ করতে নাপারে।

গত ২৯/০৪/২৫ ইং তারিখে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), মহাখালী জোনাল অফিস, জোন-৩/২ এর মাধ্যমে ৬০ ফিট এলাকায় অথরাইজড অফিসার জনাবা সে গুপ্তা শারমিন আশরাফ ও ইমারত পরিদর্শক জনাব আবুল কালাম আজাদ এর দায়িত্বাধীন এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে একটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। উক্ত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে একাধিক বিল্ডিং থেকে বৈদ্যুতিক মিটার বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যাওয়া হয়। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পর থেকে জনাব আবুল কালাম আজাদ আর ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তার কথামতো কাজ না করলে বিল্ডিংয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে মিটার খুলে নিয়ে যাবে। এমন কি যে বিল্ডিংয়ে লোক উঠে গেছে সেখানে গিয়ে হুমকি দিয়ে আসে। কারন তাদের রাজউক অনুমোদিত নকশায় বেজমেন্ট না থাকলেও সরেজমিনে তারা বেজমেন্ট করেছেন। এজন্য অথরাইজকে ম্যানেজ করতে হবে বলে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। হোল্ডিং টি হল -৩৪০/৩, মধ্য পীরেরবাগ, (শিমুলতলা মসজিদের উল্টা পাশের গলি), মিরপুর, ঢাকা এবং হোল্ডিং ২৭৯/১/এ, মধ্য পীরেরবাগ, শিমুলতলা মোড়, মিরপুর, ঢাকা এখান থেকে তার ব্যক্তিগত সহকারীকে পাঠিয়ে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। এছাড়াও ৩০৭/১/বি/১, মধ্যপীরেরবাগ হোল্ডিং থেকে গত ২০এপ্রিল২০২৫ ইং তারিখ অর্থাৎ মোবাইল কোর্টের আগের দিন বিকেল বেলা কলাপাতা রেস্টুরেন্টে বসে আবুল কালাম আজাদকে ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়, যা সিসি ফুটেজ চেক করলে পাওয়া যাবে কিন্তু তাতেও তাহার মনপুত হয়নি বিধায় ২৯এপ্রিল২৫ তারিখে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তার মিটার খুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়াও ৩২৮/১০, মধ্য পীরেররবাগ হোল্ডিং থেকে তিন ধাপে অথোরাইজড এর কথা বলে মিরপুর সুলতান ডাইনে বসে ০১এপ্রিল২০২৫ ও ১০এপ্রিল২০২৫ ও ২২এপ্রিল২৫ ইং তারিখে মোট ৮ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। উপরোক্ত বিষয়গুলোর কথা জানাজানি হলে আমাদের বিল্ডিং এর সমস্যা হবে বলে আমাদের শাসিয়ে যায়। এই বিষয়গুলো নিয়ে জিআরএস.বিডি.গভ এ রাজউকে অভিযোগ করেছেন জনৈক ব্যাক্তি, অভিযোগের ট্রাকিং নাম্বার ০১৮১৮৬৫৬৭৫০০০০১।

ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদের অকল্পনীয় দুর্নীতির কারনে ভুক্তভোগীদের একাধিক অভিযোগ ও সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশের পর আবুল কালাম আজাদকে ২০২৩ সালে জোন ৪/১ থেকে বদলি করে জোন ০৮ এ পাঠানো হয়। জানা গেছে আবুল কালাম আজাদ সদ্য সাবেক দুর্নীতিগ্রস্থ রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান সরকারকে খুশী করে পূনরায় জোন  ৩/২ ফিরে এসেছেন।  ২০২৩ সালে এই দুর্নীতিবাজ ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদকে নিয়ে সাপ্তাহিক রিপোর্টিং পত্রিকায় ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। ২৪ জানুয়ারি প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম “নির্মাণে রাজউকের অনুমতি নেই, বিক্রি হচ্ছে ফ্ল্যাট” । ০৬ ফেব্রুয়ারী প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম “রাজউক আমার হাতের মুঠোয় বলে হুমকি ভবন মালিকের”, এই ভবন মালিক বদিউল আলমের এমন আচরনের শক্তিও ছিলেন এই আবুল কালাম আজাদ। ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ এ প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম “রাজউকের শত্রু রাজউক কর্মকর্তা, দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পোষার ভূমিকায় ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ”। বদিউল আলমের ৩/৫ হোল্ডিং-দক্ষিন আনন্দ নগর, আনসার ক্যাম্প এলাকায় অনুমোদনহীন ভবন পরিদর্শনে গিয়ে মাল্টি পারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের নামে এমআরএ সনদ ছাড়া অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাকারী ও অনুমোদনহীন ভবনের মালিক বদিউল আলমের সাথে মোটা অংকের টাকা লেনদেন এর মাধ্যমে সখ্যতা গড়ে উঠে ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদের। বর্তমানে এই অবৈধ ভবনটি দেখতে দেখতে ১০ তলায় রূপান্তর হয়েছে। গত ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ প্রকাশিত “রাজধানীর পূর্ব বাড্ডায় অবৈধ্য বাড়ি নির্মাণের হিড়িক, নিশ্চুপ রাজউক” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফলাফল একই। অবৈধ্য ভবন মালিকদের সাথে ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদের সমঝোতার খবর প্রকাশ্যে এসেছে একাধিকবার । ১২ মার্চ ২০২৩ এ “বাড্ডা এলাকায় গড়ছেন বহুতল মৃত্যু কুপ, দৃষ্টি গোচর হয়না রাজউকের” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রকাশের পরেও রাজউককে নিশ্চুপ থাকার বিষয়টি মনে প্রশ্ন জাগায় কত প্রাণ গেলে সচেতন হবে রাজউক?

এত অপকর্ম করে পার পেয়ে যাওয়ার পরে বর্তমানে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছেন ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ। তার কর্ম এলাকায় আবাসিক ভবনের অনুমতি নিয়ে বাণিজ্যিক ভবন গড়ে তোলা কয়েকটি ভবনের বিষয়ে তাকে তথ্য উপাত্ত দিলে প্রথমে সে এই বিষয় আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন। সূত্রমতে জানা যায় তিনি অনুমতি ছাড়া আবাসিক থেকে বাণিজ্যিক ভবনে রূপান্তর করা একটি ভবনকে সুরক্ষিত রাখার শর্তে রাইসা বিল্ডার্সের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহন করেছেন। এই বিষয়ে কথা বলার জন্য মহাখালী জোন-৩ এর পরিচালক জনাব সালেহ্ আহমদ জাকারিয়ার সাথে কথা বলতে গেলে ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ এই বিষয় জানতে পেরে আরেক দুর্নীতি পরায়ন ইমারত পরিদর্শক সোলাইমান হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে কৌশলে সাংবাদিকদের সোলাইমানের রুমে ডেকে নিয়ে সাংবাদিকদের অপদস্থ করে।

রাইসা বিল্ডার্সের ঐ ভবনের বিষয়ে প্রতিবেদক ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। অনুসন্ধানে দেখা গেছে রাইসা বিল্ডার্সের এমডির বিরুদ্ধে দুদকে একাধিক অভিযোগ রয়েছে আর এই সুযোগ নিয়ে সেখান থেকেও অর্থ হাতিয়েছেন এই আবুল কালাম আজাদ।

রাইসা বিল্ডার্সের ঐ ভবনের বিষয়ে অথরাইজড অফিসার প্রকৌশলী শেগুফতা শারমীন আশরাফ, মহাখালী জোন-৩ এর পরিচালক জনাব সালেহ্ আহমদ জাকারিয়া সবাই যেন কোন অদৃশ্য কারনে কথা বলতে চান না।

২০ মে ২০২৫ তারিখে দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ পত্রিকায় “২ জন পরিদর্শকের কাজ ১ জনকে দিয়ে করাচ্ছেন রাজউক জোন-৩ পরিচালক জাকারিয়া” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পরে তিনি প্রতিবেদক কে কল করে তার অফিসে আমন্ত্রন জানান এবং বলেন কথা বলে সব কিছু সমাধান করবেন। তাহলে পরিচালক জাকারিয়া-ই কী রয়েছেন সকল দুর্নীতির মূলে?

এই দুর্নীতিগ্রস্থ ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ও রাইসা বিল্ডার্সের বিষয় রাজউক সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) (যুগ্মসচিব) ড. মোঃ আলম মোস্তফা ও পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-১) এ. বি. এম. এহছানুল মামুন এর সাথে একাধিকবার কথা হলেও কোন ব্যবস্থা দৃশ্যমান হয়নি বরং তাদের কাছে দিয়ে আসা নথি তিনি হারিয়ে ফেলেছেন বলে দুঃখ প্রকাশ করায় পুনরায় নথির আরেকটি অনুলিপি তাকে সরবরাহ করা হয়েছে। তাহলে কি সরষের ভিতরেই রয়েছে ভুত?

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম