
স্টাফ রিপোর্টার:
একটি বাণিজ্য মেলার নামে সাধারণ মানুষের আবেগকে পুঁজি করে লটারি ও টিকিট বিক্রির মাধ্যমে কৌশলে কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা জেলায়। লাকসাম রোডে অবস্থিত কুটির শিল্প মেলার অন্তরালে চলছে এ জুয়ার আয়োজন। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এটি যেন একপ্রকার ক্যাসিনোই, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ প্রতারিত হচ্ছে।
বাণিজ্য মেলার অন্তরালে লটারি নামে চলছে একপ্রকার সুপরিকল্পিত প্রতারণা। টিকিট কিনে মানুষ আশায় থাকে কিছু একটা জিতবে, কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেউ কিছু পায় না। এইভাবে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আয়োজকরা। অথচ এই আয়োজন চলছে প্রশাসনের চোখের সামনেই, কোনো রকম অনুমোদনের তথ্য না থাকলেও।
আইন অনুযায়ী, প্রকাশ্যে জুয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ২৯৪ (ক) ধারা অনুযায়ী প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগত স্থানে জুয়া খেলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাহলে প্রশ্ন উঠে—এই মেলার লটারি আসর কীভাবে বৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা ও বাজারে মাইকিং করে এই লটারি প্রচার করা হচ্ছে। ‘প্রতিদিন গাড়ি-বাইক-বাড়ি জেতার সুযোগ’, এমন লোভনীয় প্রচারে সাধারণ মানুষ আকৃষ্ট হয়ে টিকিট কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, মেলায় গিয়ে দেখেন তাঁদের জেতার কোনো সুযোগই নেই—সবই পূর্ব নির্ধারিত ও ফাঁকি।
মেলায় আগত দর্শনার্থীদের একজন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এটা তো ক্যাসিনোর থেকেও ভয়ংকর। এখানে এমনভাবে মানুষকে ঠকানো হচ্ছে যে বুঝতেই পারছে না সে প্রতারিত হচ্ছে।
আরেকজন বলেন, “এটা একটা ফাঁদ। টিকিট কিনে পরে দেখি, কিছুই জেতা যায় না। হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এভাবে টাকা হারাচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এমন একটি আয়োজন কীভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলে, যদি প্রশাসন সত্যিই নিরপেক্ষ থাকে? কোথায় তাদের নজরদারি, কোথায় লাইসেন্স যাচাই, কোথায় নিয়মিত তদারকি?
অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতা বা নীরব সম্মতি না থাকলে এত বড় পরিসরে জুয়া ও লটারি চালানো সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও অনেকেই মনে করেন, ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি এই মেলার আয়োজনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারেন। তাদের আশীর্বাদ ছাড়া এত বিশাল মেলা ও লটারির আয়োজন কীভাবে সম্ভব?
সাধারণ মানুষের আহ্বান—এ ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। জুয়ার মতো সামাজিক অপরাধের ছলে সাধারণ জনগণের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কাজ বন্ধ করতে হবে। মেলার আড়ালে চলা এই জুয়ার আসর ভেঙে দিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে সচেতন নাগরিক সমাজ।
একটি শিল্প-সংস্কৃতিমূলক মেলাকে জুয়া ও প্রতারণার আসরে পরিণত করা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এভাবে জনগণের আস্থা ও অর্থ উভয়কেই অপচয় করা হচ্ছে। কুমিল্লাবাসী এখন প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন—তারা চান এই প্রতারণার বিরুদ্ধে অবিলম্বে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হোক।