ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক বসাবে যুক্তরাষ্ট্র

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক বসাবে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একটি বাণিজ্য চুক্তি কাঠামোয় পৌঁছেছে। চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ইইউর সব রপ্তানি ওপর শুল্ক থাকবে ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে, ইউরোপীয় বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যে শুল্ক থাকবে শূন্য শতাংশ।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় সময় রবিবার (২৭ জুলাই) স্কটল্যান্ডের টার্নবেরিতে গলফ রিসোর্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে সম্মত হয়। ঘোষণা আসে, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া সব ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে একক শুল্ক আরোপ করা হবে। এই হারটি পূর্বঘোষিত ৩০ শতাংশ শুল্কের অর্ধেক, যা ট্রাম্প শুক্রবার থেকে কার্যকর করার হুমকি দিয়েছিলেন।

ভন ডার লায়েন এই চুক্তিকে ‘স্থিতিশীলতা আনার একটি বড় সুযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “এই চুক্তি আমাদের দুই পক্ষের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করবে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যদিকে ট্রাম্প এই ‍চুক্তিকে ‘এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড়’ চুক্তি আখ্যা দেন। ট্রাম্প আরো বলেন, “এটা একটি ভালো চুক্তি, সবার জন্যই লাভজনক। এটি আমাদের একত্রিত করবে।

ভন ডার লায়েন ট্রাম্পকে ‘একজন কঠিন আলোচক, কিন্তু একইসঙ্গে একজন দক্ষ চুক্তিকারক’ হিসেবে প্রশংসা করেন। চুক্তির অংশ হিসেবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করবে, যার মধ্যে থাকবে মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম ও জ্বালানি খাতে ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের খরচ। এই বিনিয়োগ ইউরোপকে রাশিয়ার জ্বালানি নির্ভরতা থেকে সরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন উরসুলা ভন ডার লায়েন।

বিমানের যন্ত্রাংশ, কিছু রাসায়নিক ও কৃষিপণ্যসহ নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে কোনো শুল্ক বসানো হবে না। সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে একটি আলাদা চুক্তির ঘোষণা শিগগিরই আসতে পারে।
তবে বিশ্বব্যাপী স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে। ইইউর পাশাপাশি, ট্রাম্প যুক্তরাজ্য, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনামের সঙ্গেও ইতিমধ্যে শুল্ক চুক্তি করেছেন, তবে তিনি ‘৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি’ করার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি।

এদিন, আলোচনার আগে মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, ১ আগস্টের পর আর কোনো সময়সীমা থাকবে না। যারা আলোচনায় ব্যর্থ হবে, তাদের জন্য শুল্ক কার্যকর হবে। তবে বড় অর্থনীতিগুলোর জন্য ভবিষ্যতে আলোচনা চালু রাখা যেতে পারে।

ভারতীয় অর্থনীতিতে মনমোহন সিং-এর অবদান

সবুজ বাংলাদেশ ডেস্ক: 

ভারতীয় অর্থনীতিতে মনমোহন সিং-এর অবদান ভোলার নয়। অর্থমন্ত্রী হিসেবে যেসব সংস্কারমূলক কাজ তিনি করে গিয়েছেন, তার সুফল আজ পাচ্ছে বর্তমান ভারত। উদারীকরণের পর ভারতীয় অর্থনীতির যে উত্থান হয়েছে তা কখনওই সম্ভব ছিল না মনমোহনের অবদান না থাকলে। দেশের তেরোতম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনেক আগে থেকেই দেশবাসীর জন্য তিনি কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন।

পিভি নরসিংহ রাও-এর জমানায় ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং। সেসময় ভারতীয় অর্থনীতিতে টালমাটাল দশা। নরসিংহ রাও-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে মনমোহনই অর্থনীতিকে উন্নয়নের রাস্তায় নিয়ে এসেছিলেন। ভারতীয় অর্তনীতির উদারীকরণ করেন তি্নি। লাইসেন্স রাজ কমিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণনীতিতে লাগাম পরান মনমোহন। এর ফলে শিল্পক্ষেত্রে সরকারের নাক গলানো অনেকাংশে কমে যায়। সরকারি চোখ রাঙানি হ্রাস পাওয়ায় কোনও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হতে থাকেন শিল্পপতিরা। আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে বামিজ্যিক সংস্কার শুরু করেছিলেন মনমোহন। তার ফলে শুরু হয়েছিল খোলাবাজারের অর্থনীতি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই নীতি শুরু করেন মনমোহন। যার ফলে আজকের ভআরতের এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভবপর হয়েছে।

টাকার অবমূল্যায়নের কথা মাথায় রেখে রফতানিতে জোর দেন মনমোহন। যার ফলে এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে ভারতীয় রফতানি শিল্পও। কর কাঠামোয় পরিবর্তন করে সেখানেও সংস্কার করেছিলেন মনমোহন। ১৯৯১ সালে যখন অর্থমন্ত্রী হিসাবে নিজের প্রথম বাজেট পেশ করেছিলেন তিনি, সেখানে আশাপ্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, এবার দেশে অর্থনৈতিক স্তিরতা আসবে বলেই তিনি বিশ্বাসী। এরপর প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের জিডিপি-র হার সাত শতাংশে তুলে নিয়ে যান মনমোহন। ২০০৮-এ যখন সারা দেশে অর্থনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছিল, সেসময় মনমোহনের ক্ষুরধার বুদ্ধি আর সংস্কারী পদক্ষেপের ফলে ভারতীয় অর্থনীতি সেই ধাক্কা সামলে ওঠে। বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার ফলে ধাক্কা লেগেছিল সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনে। কড়া হাতে সেই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।

আর্থিক নীতি শিথিল করে দেয় আরবিআই। মানুষের চাহিদা বাড়াতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ গ্যারান্টি নীতি বা মনরেগা মনমোহনেরই শুরু করা সংস্কারমূলক কাজ। এই নীতির ফলে গ্রামে গ্রামে ১০০ দিনের কাজ পেতে থাকেন গরিবরা। যার সুফল মেলে গ্রামীণ অর্তনৈতিক উন্নয়নে। জনকল্যাণমূলক কাজে তছরুপ রুখে সরাসরি টাকা পাইয়ে দিতে ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার শুরু করেছিলেন মনমোহন। এজন্য আধার প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। এটাই পরের সরকারকে জনকল্যাণমূলক কাজে বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপের সহায়ক হয়ে ওঠে।

একজন প্রধানমন্ত্রী এবং দক্ষ অর্থনীতিবিদ হিসাবে মনমোহন সিং উপলব্দি করতে পেরেছিলেন যে বিশ্ববাজারে ভারতের আর্থিক উন্নতি তখনই সম্ভব যখন পরমাণু শক্তি ক্ষেত্রেও সাবলম্বী হবে দেশ। তাঁর আমলেই ভারত-আমেরিকা অসামরিক চুক্তি সাক্ষরিত হয়। ফলে অসামরিক ক্ষেত্রে পারমাণবিক ব্যবহার শুরু হয় দেশে। ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এক সংস্কারমূলক যুগের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল মনমোহন সিং-এর সময়ে। অর্থমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিই আজকের ভারতের অর্তনৈতিক উন্নয়নের কান্ডারি।

সবা:স:জু- ৫৩৫/২৪

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম