পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে ঘুষ দাবি

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে ঘুষ দাবি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

মাদারীপুর সংবাদদাতা:

মাদারীপুরের ডাসারে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগে কালকিনি থানার কম্পিউটার অপারেটরের দায়িত্বে থাকা সোহেল খান নামে এক কনস্টেবলকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। রোববার (২৭ জুলাই) রাতে কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায় এক যুবক পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য যোগাযোগ করলে অভিযুক্ত সোহেল খান তার কাছে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না বলে জানান। পরে ওই যুবক বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের জানালে ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।

নাম প্রকাশ না করে ভুক্তভোগী যুবক জানান, তার পাসপোর্টে থানার ঠিকানা কালকিনি ও জাতীয় পরিচয়পত্রে থানা দেওয়া ডাসার। তিনি অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করেন। কয়েক দফা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও ডাসার থানায় গিয়েও সেবা পাননি। পরে তিনি কালকিনি থানায় যান। কালকিনি থানার কম্পিউটার অপারেটর সোহেল খানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

পরে তিনি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন। এজন্য পুলিশের এই সদস্যকে ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানান। পরে ৫ হাজার টাকা পুলিশ সদস্য সোহেলকে দেন ভুক্তভোগী যুবক। ১ জুলাই অনলাইনে আবেদন করে ১৫ দিনের মধ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দেওয়া হবে বলে জানান সোহেল। গত ২০ জুলাই মাদারীপুর পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন এই ভুক্তভোগী।

বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হলে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে জেলা পুলিশ। পরে অভিযুক্ত সোহেল খানকে ক্লোজড করা হয়। কালকিনি থানার ওসি কে এম সোহেল রানা বলেন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে এক ব্যক্তির কাছে কনস্টেবল সোহেল খান টাকা দাবি করার অভিযোগ উঠলে পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিক অভিযুক্তকে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্তির আদেশ দেন। সেই হিসেবে সোহেল খানকে ক্লোজড করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই ঘটনায় তিনি জড়িত কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ম্যানহোলে পড়ে মারা যাওয়া জ্যোতির নামে সহায়তা চাওয়া সকলেই প্রতারক দাবি পরিবারের

গাজীপুর সংবাদদাতা:

ম্যানহোলে পড়ে মারা যাওয়া জ্যোতির নামে সহায়তা চাওয়া সকলেই প্রতারক দাবি পরিবারের
গাজীপুরের টঙ্গীতে ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলে পড়ে মারা যাওয়া ফারিয়া তাসনিম জ্যোতির (৩২) সন্তানদের সহযোগিতার নামে কোনো অর্থ না দিতে আহ্বান জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। রোববার (৩ আগস্ট) ফারিয়া তাসনিম জ্যোতির পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন যারা ফারিয়া তাসনিম জ্যোতির নামে বিভিন্ন স্থান থেকে অর্থ সহায়তা সংগ্রহ করছেন তারা সকলেই প্রতারক। গত ২৭ জুলাই রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকার ঢাকনা খোলা ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজ হন জ্যোতি। রোববার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় উদ্ধার অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। অবশেষে ৩৬ ঘণ্টা পর ২৯ জুলাই সকাল ৯টার দিকে টঙ্গী এলাকার শালিকচুড়া (টেকপাড়া) বিল থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার হয়।

জ্যোতি চুয়াডাঙ্গা শহরের বাগানপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং পৌরসভার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার মৃত বাবলুর মেয়ে। তিনি রাজধানীর মিরপুরে আট বছর বয়সী দুই জমজ ছেলে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন এবং মনি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল হেলথ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।ফারিয়া তাসনিম জ্যোতির ঢাকনা বিহীন ম্যাহোলে পড়া থেকে শুরু করে মৃত দেহ উদ্ধার সারাদেশেই ব্যাপক আলোচিত হয়। এদিকে এই হৃদয় বিদারক ঘটনাকেই কেন্দ্র করে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র অর্থ সহায়তার নামে প্রতারণা করছেন বলে নজরে এসছে জ্যোতির পরিবারের। জ্যোতির বড় ভাই হাসানুজ্জামান লোটন বলেন অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, কিছু অসাধু ব্যক্তি এবং চক্র এই দুঃখজনক ঘটনার সুযোগ নিয়ে সমাজে ভ্রান্ত তথ্য ছড়াচ্ছে। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দোকান ও জনবহুল স্থানে গিয়ে মানুষের সহানুভূতি আদায়ের নামে ভুয়া অনুদান সংগ্রহ করছে। তারা বলছে, এই মেয়েটির দুই সন্তান এতিম হয়ে গেছে, তাদের সাহায্য করুন। এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রচারিত।

তিনি বলেন জ্যোতির আমরা দুইজন ভাই আছি। আমরা দুইজনই আর্থিকভাবে সচ্ছল এবং সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। আমার বোন ২০১৮ সালে স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ করেছিলেন। তখন জমজ ছেলে দুইটার বয়স মাত্র এক বছর। তারপর থেকে একাই দুই সন্তানকে বড় করেছেন। বাচ্চাদের বয়স এখন আট বছর। আমার বোন উচ্চ শিক্ষিত নারী ছিলেন। ঢাকায় একটি কোম্পানির এনএসএম হিসেবে কাজ করতেন। প্রায় ৭০ হাজার টাকার কাছাকাছি বেতন পেতেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে সন্তানের জন্য লড়েছেন। আল্লাহর ইচ্ছাই আমাদের পরিবার কারো সহানুভূতির বা অর্থনৈতিক সহায়তার প্রয়োজন অনুভব করছেনা। অনুগ্রহ করে কেউ এসব কথায় প্ররোচিত হয়ে অর্থ প্রদান করবেন না। সিটি কর্পোরেশন এবং কয়েকটি সংগঠন থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে আমরা একই কথা আগেই বলেছিলাম। এমনকি গত ২৯ জুলাই যেদিন আমার বোনের মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়, সেদিনই অর্থ সহায়তা নিবো না বলে সিটি কর্পোরেশনকে জানিয়ে আসি।

বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পরিবারের সদস্যদের সিদ্ধান্তের কথা বলে জ্যোতির বড় ভাই হাসানুজ্জামান লোটন আরও বলেন আমার দুই ভাগ্নে আমাদের কলিজার টুকরো। এখন আমাদের বোন আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু আমরা চাইনা তার সন্তানরা যেন বাবার ভালোবাসা থেকেও বঞ্চিত হয়। একজন সন্তানের কাছে মা ও বাবা উভয়ের ভালোবাসা সবচেয়ে মূল্যবান। তারা তাদের মা কে হারিয়েছে, বাচ্চা দুইজন বাবা কেউ হারাই ফেলুক এটা আমাদের পরিবার চাইনি। আমরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাচ্চারা তাদের বাবার কাছে থাকবে। তাদের দাদি, বাবা এবং মামারা সবাই মিলে সন্তানদের মানুষ করবে, ইনশাআল্লাহ। আমার বোনের সমস্ত সম্পত্তি বাচ্চাদের নামে হস্তান্তর করা হবে। বাসা ও দোকান ভাড়ার টাকা প্রতি মাসে তাদের নামে ব্যাংকে জমা হবে। ইতোমধ্যেই বোনের গহনা থেকে শুরু করে মূল্যবান সবকিছুই আমরা ব্যাংকে ওই বাচ্চাদের নামে জমা রেখেছি।। বাচ্চা প্রাপ্তবয়স্ক হলে এই টাকা ব্যবহার করতে পারবে। আমরা চাইনা, এই দুই বাচ্চার আর কোনো শূন্যতা থাকুক।

জ্যোতির ছোট ভাই আকরামুজ্জামান শোভন বলেন আমরা আমাদের বোনের কলিজার টুকরোকে ভালোবাসা দিয়ে বড় করে তুলবো। তাঁদেরকে মানুষের মতো মানুষ করতে আমরা দুই ভাই এবং আমাদের সন্তানরাও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের বোন তার দুই সন্তানকে প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসতেন। মা হারা ওই শিশু দুইটির দিকে তাকালে হৃদয় ফেটে যায়। আর যাইহোক আমরা চাই শিশু দুইটা তাঁদের পিতার স্নেহ যেন পাই। তবে আমাদের কোনো আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন নেই।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম