দুই যুবলীগ নেতা ডিবি হেফাজতে

স্টাফ রিপোর্টার :

ঢাকা মহানগরীর যাত্রাবাড়ি এলাকার একটি মামলার আসামি যুবলীগ নেতা মো. এনামুল হক ও মো. রোবেল হোসেনকে একটি অনুষ্ঠান থেকে ধরে হেফাজতে নিয়েছে যশোর ডিবি। ওই মামলার প্রধান আসামি পতিত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।এনামুল ও রোবেল পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মচারী সংঘের (সিবিএ) যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। শুক্রবার দুপুরে যশোর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মচারী সংঘের খুলনা বিভাগীয় সম্মেলন থেকে তাদের হেফাজতে নেয় ডিবি।

পুলিশ হেফাজতে নেওয়া মো. এনামুল হক টাঙ্গাইল সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের ময়নাল হক ও জরিনা বেগমের ছেলে। অন্যদিকে, মো. রোবেল হোসেন ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মোহাম্মদ ইউনুস ও রানু বেগমের ছেলে। উভয়েই ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যাত্রাবাড়ী থানার সিআর ৯৩৭/২০২৪ মামলার যথাক্রমে ৬২ ও ৬৪ নম্বর আসামি এই দুই ব্যক্তি। ওই মামলার প্রধান আসামি পতিত ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়া আসামির তালিকায় নাম রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৫ আসনের সাবেক এমপি সজল মোল্লা, ঢাকা-৪ আসনের সাবেক এমপি ড. আওলাদ হোসেন, সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা, পুলিশের সাবেক আইজি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. ফয়জুর রহমান, এনটিএমসির সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, সাবেক পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিসি (মতিঝিল) বিপ্লব সরকার প্রমুখ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে যশোর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক সিবিএ্থর (রেজি. নম্বর- বি-২২১৫) উদ্যোগে খুলনা বিভাগীয় বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে মো. এনামুল হক প্রধান অতিথি এবং মো. রোবেল হোসেন প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন চলাকালে দুপুরে ডিবি পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় ।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবুল বাশার জানান, আটক দুইজনের বিরুদ্ধে ঢাকার রমনা থানায় একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলায় তারা জামিনে আছেন। এছাড়া ময়মনসিংহের একটি ঘটনায় রুজু করা মামলায় এই দুইজনের নাম আছে। তবে আসামির তালিকায় এদের নাম নেই। এর বাইরে ভোলা ও টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন থানায় বেতারবার্তা পাঠানো হয়েছে। যদি অন্য কোনো থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকে তাহলে সেই থানা কর্তৃপক্ষ এদেরকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করতে পারে। আগামীকাল শনিবার উল্লিখিত দুইজনকে আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান এডিশনাল এসপি বাশার।

যশোর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মঞ্জুরুল হক ভুঁইয়া বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই দুইজনকে সম্মেলন চলাকালে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ওই দুইজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর থানাগুলোতে মামলা আছে কি না পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানার একটি সিআর মামলা রয়েছে বলে এখন পর্যন্ত পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। সিআর মামলায় আদালতের নির্দেশনা ছাড়া গ্রেপ্তার করা যায় না বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।

এদিকে, জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, আটক এনামুল ও রোবেল যাত্রাবাড়ী এলাকার যুবলীগের ক্যাডার। তারা দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার বিএনপিসহ অন্য দলের নেতাকর্মীদের নিপীড়ন চালিয়েছেন। যশোর জেলা বিএনপির কাছে এই দুই ব্যক্তির অপকর্মের বিষয়ে কিছু তথ্য-প্রমাণও এসেছে।

দুদকের নজরে কি পড়বে সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর এপিএস শামীমের অবৈধ সম্পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) শামীমের দুর্নীতির খবর সকলের জানা।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি)এর পরিচালক
ইফতেখারুজ্জামান বলেন এধরণের দূর্নীতির বিরুদ্ধে সঠিক আইন প্রয়োগ করে কেউ দেশ ছাড়ার আগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
এক দশক আগে সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকায় একটি মেসে থেকে টিউশনি করে কোনোরকমে জীবনযাপন করতেন শামীম আহাম্মদ। তিনি ইংরেজিতে পারদর্শী ছিলেন। তাই শিক্ষক হিসাবে সাভারের মানুষের কাছে বেশ সুনাম অর্জন করেন। মানুষ তাকে ‘ইংলিশ টিচার’ হিসাবেই চিনতেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পর শামীমকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত ১০ বছরে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। তার রয়েছে বেলা অ্যাগ্রো পার্ক, বেলা নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ ৮টি প্রতিষ্ঠান এবং ৭টি মাছ ও গরুর খামার। যার মূল্য অন্তত ২১০ কোটি টাকা। কিভাবে তিনি এত বিপুল সম্পদের মালিক হলেন তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

একান্ত সচিব হিসাবে শামীম ৩৭ হাজার টাকা মাসিক ভাতা পেতেন। হঠাৎ তিনি এত সম্পদের মালিক বনে গেলেন কী করে? দুদকের নজরে আসা উচিত বলেও জানান সচেতন মহল।

শামীম ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের রানীগঞ্জ-পোড়াবাড়ি এলাকার অধ্যাপক মফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) ওকুপেশনাল থেরাপিস্ট কোর্স সম্পন্ন করেন। থাকতেন সাভারের থানা রোডের মুক্তির মোড় এলাকার অ্যাভিনিউ জুনায়েদ টাওয়ারের ৬ তলায়। ওই টাওয়ারে তিনি দুটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। এর আনুমানিক মূল্য ২ কোটি টাকার বেশি। বর্তমানে তিনি উত্তরায় কিনে ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করতেন।

ময়মনসিংহ ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ী, রানীগঞ্জ এলাকায় রানীগঞ্জ চকের অধিকাংশ জায়গাজুড়ে ‘বেলা অ্যাগ্রো পার্ক’। পুরো এলাকা কাঁটাতারের বেড়ায় ঘিরে রাখা হয়েছে।১৪০ বিঘা আবাদি জমি কিনে বিশাল আকারের মৎস্য খামার গড়ে তোলা হয়েছে। গবাদি পশুর খামারও। স্থানীয়রা জানায় ২০১৭/২০১৮ সাল থেকে শামীম নিজ গ্রাম ও পাশের এলাকায় জমি কিনেন। সেখানে মাছের খামার গড়ে তোলা হয়।মাছের ঘের খনন করতেই ব্যয় হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। খামারে ৫ কোটি টাকার বেশি মূল্যের মাছ রয়েছে। এছাড়া এই অ্যাগ্রো পার্কে আরও দুটি মাছের খামার এবং একটি গরুর খামার রয়েছে। গরুর খামারে দেশি বিদেশি জাতের গরু রয়েছে।

পোড়াবাড়িতে রয়েছে ৮টি সেমিপাকা ঘর ও একটি ৩ তলা ভবন বেলা নার্সিং ইনস্টিটিউট ও নার্সিং কলেজ। ভবনের সামনে রয়েছে বিশাল আকারের দুটি মাছের খামার। খামারের পাশে নার্সিং কলেজের জন্য তিনটি ৬ তলা ভবন রয়েছে । এখানে জমির পরিমাণ ৯০ থেকে ১০০ বিঘা।
বেলা নার্সিং ইনস্টিটিউট ছাড়া আরও ৩টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং এগুলোর একাধিক শাখা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-বেলা রিহ্যাবিলিটেশন সলিউশন পয়েন্ট, জোসনার আলো ও কাতলাসেন মৎস্য খামার। এরমধ্যে বেলা রিহ্যাবিলিটেশন সলিউশন পয়েন্টের ৩টি শাখা। এগুলো রয়েছে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মাসকান্দা নতুন বাজার, ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ও ঢাকার গুলশানে নাভানা টাওয়ারে। জোসনার আলো’র একটি শাখা ময়মনসিংহের মাসকান্দা নতুন বাজারে। এছাড়া ফুলবাড়িয়া উপজেলার কাতলাসেন এলাকায় প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে একটি মৎস্য খামার ও একটি গরুর খামার রয়েছে।

স্থানীয়রা আরো তার বাবা মফিজ উদ্দিন শিক্ষকতা করে ছেলেমেয়েদের জীবনযাপন করত। তার নগদ টাকা-পয়সা ছিল না।তবে শামীমের বাবা এলাকায় সম্মানিত ব্যক্তির একজন। শামীম গ্রামের অনেক জমি কিনেছে। গ্রামের মানুষ এ নিয়ে নানা রকম কথা বলাবলি করে। শামীম সরকারী লগোযুক্ত দামি গাড়ি নিয়ে গ্রামে আসে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই শামীম তার পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতে প্রকল্প পরিচালকদের নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতেন। এছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ত্রাণ বরাদ্দে কমিশন বাণিজ্য করতেন বলে গুন্জন রয়েছে ।
সাভার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায় সেখানে অনেক প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ।

দুদকের একটি সূত্রে জানায় তদন্ত সাক্ষেপে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ বিষয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা.এনামুর রহমান বলেন,কেউ ব্যক্তিগতভাবে দূর্নীতির সাথে যুক্ত থাকলে তার দায় ব্যক্তির
এ বিষয়ে সাবেক এপিএস শামিমের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম