জলবায়ু পরিবর্তনের থাবায় হুমকিতে বাংলাদেশের চা শিল্প

মুহাম্মদ রুহুল আমীন:
বাংলাদেশের চা শিল্প, যা একসময় সবুজ পাহাড়ে গড়ে ওঠা অর্থনীতির প্রতীক ছিল, আজ জলবায়ু পরিবর্তনের কড়াল ছোবলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, দীর্ঘমেয়াদি খরা, তাপমাত্রার লাগাতার বৃদ্ধি এবং ছত্রাক ও পোকামাকড়ের আধিক্যে চা গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এতে উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি গুণগত মানেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।

সিলেট, মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের চা বাগানগুলোতে এখন আর আগের মতো সবুজ সমুদ্র দেখা যায় না। বদলে ধুলিময়, বিবর্ণ জমিতে রোগাক্রান্ত চা গাছ দাঁড়িয়ে থাকছে নিশ্চুপ প্রতিবাদে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এমন অভিঘাত চলতে থাকলে দেশের চা শিল্পে স্থায়ী বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

চা বোর্ডের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে দেশের ১৬৯টি চা বাগানে মোট এক কোটি ৮০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। অথচ প্রকৃত উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৯ কোটি ৩০ লাখ কেজি—লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৮.৩৩% কম। চলতি বছরের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি, কিন্তু এপ্রিল পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৩ কোটি ৯৫ লাখ কেজি। পরিস্থিতি দেখে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, এবারও লক্ষ্য পূরণ হবে না।

সিলেট অঞ্চলের এক অভিজ্ঞ চা শ্রমিক শ্যামলী দাস জানান, “আগে চা পাতার কুঁড়ি তুলতে দিনে ছয় ঝুড়ি লাগতো, এখন তিনটিও হয় না। গাছগুলো যেন ক্লান্ত হয়ে গেছে।” তাঁর কথায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা।

আবহাওয়া বিশ্লেষক ড. শাহ মো. সজিব হোসাইন জানিয়েছেন, “চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশে বৃষ্টিপাত কমেছে প্রায় ৪৯ শতাংশ। সেই সঙ্গে গড় তাপমাত্রাও বেড়েছে প্রায় ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চায়ের মতো সংবেদনশীল ফসলের জন্য মারাত্মক।”

এই আবহাওয়া সংকটের সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন শত্রু-ছত্রাক ও পোকামাকড়। তাপ ও আর্দ্রতার সমন্বয়ে ছড়িয়ে পড়া রোগে চা পাতায় দাগ পড়ছে, কিছু গাছ সম্পূর্ণভাবে মারা যাচ্ছে। ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ও টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমদ মনে করেন, “জলবায়ু অভিযোজন ছাড়া চা শিল্পের ভবিষ্যৎ নেই। এখনই সময় সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে সেচ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, মাটির মান রক্ষা এবং তাপ-সহনশীল জাত উদ্ভাবনে উদ্যোগ নেওয়ার।”

চা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ম্যাকসন ব্রাদার্স বাংলাদেশ লিমিটেড-এর পরিচালক মো. আজহারুজ্জামান সোহেল বলেন, “চা শিল্প শুধু অর্থনীতির অংশ নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে এখন প্রয়োজন সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা।”

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের মতো কৃষিনির্ভর দেশে গভীরভাবে অনুভূত হচ্ছে। চা শিল্প তার জ্বলন্ত প্রমাণ। এখন সময়, সরকার ও শিল্প সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে এই সংকট মোকাবেলায় সুস্পষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে একটি টেকসই চা শিল্প গড়ার।

তাপমাত্রা নিয়ে আবহাওয়া অফিস নতুন তথ্য জানালেন

তাপমাত্রা নিয়ে আবহাওয়া অফিস নতুন তথ্য জানালেন

ডেস্ক রিপোর্ট:

রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আজ তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যেতে পারে। একইসঙ্গে দিনের প্রথমার্ধে সম্ভাবনা রয়েছে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টির। সোমবার (২৮ জুলাই) আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে দেওয়া সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে তাপমাত্রা কমে আগের তুলনায় গরমের অনুভূতি কিছুটা কমতে পারে। আর এসময়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৮ শতাংশ। গতকাল রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একইসঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

অন্যদিকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে সারাদেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। রোববার রাতে দেওয়া আবহাওয়া বার্তা অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে খুলনা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে খুলনা ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম