১ বছরে মব সন্ত্রাস দমনে কার্যকর উদ্যোগ নেই

১ বছরে মব সন্ত্রাস দমনে কার্যকর উদ্যোগ নেই

ডেস্ক রিপোর্ট:

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দুই মাস পর সরকারকে মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও পরবর্তী ১০ মাসেও এ বিষয়ে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়নি। বরং সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) সন্ত্রাসকে প্রেশার গ্রুপ বলে যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এ কথা বলেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। শনিবার রাজধানীর বিজয়নগরে ইআরএফ মিলনায়তনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর দায়িত্ব ও ভূমিকা পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সভায় আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, সরকার গঠনের দুই মাসের মাথায় মাজার, কবরস্থান, ভাস্কর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ধর্মীয় উপাসনালয় ও বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা তাঁরা লক্ষ করেছেন। তখন সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পরবর্তী ১০ মাসেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।

পর্যালোচনা সভার আয়োজন করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান, স্থপতি ফারহানা শারমিন। সংবিধান সংশোধনে বেশ কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, এরপরও বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়ে সন্দেহ থেকে যায়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং নজরদারি কার্যক্রমে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

অর্থনৈতিক খাত সংস্কার বিষয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। রিজার্ভ ও রেমিট্যান্সে উন্নতি হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে খেলাপি ঋণ উদ্ধার বা পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব সামরিক ও বেসামরিক চুক্তি আছে, সেগুলো প্রকাশ করতে এবং জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের আহ্বান জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তি প্রকাশ করা হয়নি। বরং গত কয়েক মাসে সরকারের কিছু গোপন চুক্তির আলামত দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্টের বিষয়টি উল্লেখ করেন।

এক বছরে গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা কতটা পূরণ হলো শীর্ষক মূল প্রবন্ধে কল্লোল মোস্তফা অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার, মামলা বাণিজ্য, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনীতির গতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন। তিনি বলেন, পুলিশ ও জনপ্রশাসনকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ নেই। এ ছাড়া আমলাতন্ত্র জনবান্ধব হয়নি, সরকার নিজেই আমলাতন্ত্রবান্ধব হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পর প্রশাসনের বিভিন্ন পদে ঢালাও বদলি ও পদোন্নতি হয়েছে। বাজেটে বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে। রাজস্ব আয়ের বিপুল ঘাটতির মধ্যেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতনকাঠামো নির্ধারণ করতে বেতন কমিশন গঠন করা হয়েছে।

হাসিনা সরকার ভারতের বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার বিষয়ে কখনো প্রতিবাদ করেনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। এরপরও সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। যুক্ত হয়েছে ভারত থেকে পুশ ইন। সীমান্ত ও পানিবণ্টনের সমস্যার যে মাত্রায় আন্তর্জাতিকীকরণ প্রয়োজন, সেখানে ঘাটতি রয়ে গেছে। প্রবন্ধে বলা হয়, মতপ্রকাশে সরকারের দিক থেকে সরাসরি বাধা দেওয়া না হলেও মব সৃষ্টি করে গণমাধ্যমের ওপর চাপ প্রয়োগ, সংবাদ সরাতে চাপ দেওয়া কিংবা সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করতে বাধ্য করার মতো ঘটনা ঘটেছে। এসব বন্ধ করতে সরকারের দিক থেকে কোনো শক্ত পদক্ষেপ দেখা যায়নি। পাহাড় ও সমতল মিলিয়ে গ্রেপ্তারের পর মৃত্যু, বিনা বিচারে আটক, মারধর, হেনস্তা এবং জোর করে ধর্মান্তর করার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

জুলাই আন্দোলনের আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেন স্থপতি ফারহানা শারমিন। আহত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা না হওয়ায় সেবা গ্রহণের প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেবা প্রদানে কোনো সমন্বিত পরিকল্পনা এবং ওয়ান স্টপ সার্ভিস নেই। রাষ্ট্রীয়ভাবে আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই যে সমন্বয়হীনতা, উদাসীনতা এর মূল কারণ নিম্নবিত্ত শ্রেণির জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি সরকারের শ্রেণিবৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি। সভায় শ্রম সংস্কার নিয়ে কথা বলেন শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা। তিনি বলেন, যে তথ্যব্যবস্থা দিয়ে শ্রমিকদের তালিকাভুক্তি করে উন্নয়নের কাজে লাগানোর কথা, সেই ব্যবস্থা ব্যবহৃত হচ্ছে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে, শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করতে। আন্দোলন করলেই সেই ‘ইনফরমেশন সিস্টেম এ শ্রমিকের বিরুদ্ধে তালিকাভুক্তি করা হয়, যাতে ওই শ্রমিক আর কাজ না পান।

চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান বলেন গত এক বছরে জনগণকে বিভেদ ও বিদ্বেষের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। একধরনের জোরপূর্বক ধারণা চাপিয়ে সাংস্কৃতিক যুদ্ধ তৈরি করা হচ্ছে। প্রান্তিক মানুষের সংস্কৃতি প্রকাশের অন্যতম জায়গা মাজার ভাঙা হচ্ছে, আবার সেই মাজার সংস্কৃতির অন্যতম অংশ কাওয়ালিচর্চার মতো প্রহসন করা হচ্ছে। একটি গোষ্ঠী বিটিভি এবং শিল্পকলাকে কুক্ষিগত করে রেখেছে উল্লেখ করে আকরাম খান বলেন, বিটিভি ও শিল্পকলায় সরকারি মদদে অপপ্রচার চলছে, স্বাধীন সংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে না। পাশাপাশি মব সন্ত্রাসের কারণে সংস্কৃতির জায়গায় সেলফ সেন্সরশিপ (স্বনিয়ন্ত্রণ) শুরু হয়েছে।

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের শেখ বিল্লালের দুর্নীতির মাইলফলক, গড়েছেন অট্রালিকাসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের শেখ বিল্লালের দুর্নীতির মাইলফলক, গড়েছেন অট্রালিকাসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি

মো: ইসমাইল হোসেনঃ

দীর্ঘ সময়ের ফ্যাসিবাদের সুযোগে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতিতে। বর্তমান বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বেরিয়ে আসছে অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনেক কর্মকর্তার দুর্নীতি প্রকাশ্যে এলেও অনেক কর্মকর্তার দুর্নীতি রয়েছে অগোচরে। বর্তমান সময়ে বাক স্বাধীনতা ফিরে পেয়ে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন সাধারণ ভুক্তভোগী জনতা। এবার প্রকাশ্যে এলো ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের পেশকার শেখ বিল্লালের দুর্নীতির চিত্র।

জমি-জায়গা নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দুর্নীতির কবলে পড়েননি বা জিম্মি হতে হয়নি এমন কাউকে পাওয়া বিরল। বিশেষ করে অর্থনৈতিক হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। নিয়মানুযায়ী সরকারী চাকরির বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩৫ হলেও দুর্নীতিবাজ শেখ বিল্লাল চাকরিতে যোগ দিয়েছেন ৪৫ বছর বয়সে। সরকারী বিধিমালা অনুযায়ী পেশকার পদের বেতন গ্রেড ১৬ এর অন্তর্ভুক্ত। যার বর্তমান বেতন কাঠামো ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা। অথচ কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার মালিক শেখ বিল্লাল। অল্প সময়ের বছরের চাকরি জীবনে দুর্নীতি করে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। যেনো আঙুল ফুলে কলা গাছ।

ফরিদপুরের বিলমামুদপুর নতুন ডাঙি গ্রামের শেখ আরসাদের তিন পূত্র। বড় ছেলে শেখ ইউনুস (মৃত), মেঝো শেখ বিল্লাল, ছোট শেখ দেলোয়ার।

শেখ বিল্লাল বিলমামুদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ময়েজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় পাস করার পর পারিবারিক টানা-হেচঁড়ায় পড়াশোনা আর চালিয়ে যেতে পারেননি। দিন এনে দিন খাওয়ার মতো পরিবার তাদের। তবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের প্রভাব খাটিয়ে ফরিদপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রিার কার্যালয়ের অফিসে পিয়ন পদে চাকুরি নেন শেখ বিল্লাল। দুই বছর যেতে না যেতেই পদন্নতি পেয়ে হয়ে যান একজন পেশকার। পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। বর্তমানে তিনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের পেশকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) নাহিয়ান ইমন নামের এক ভুক্তভোগী দুদকে একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। শেখ বিল্লালের বিরুদ্ধে রয়েছে দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল্লাশি, নকল উত্তোলনের মতো কাজেও সরকারী ফির থেকেও বাড়তি অর্থ নেওয়ার অভিযোগ। বিভিন্ন অযুহাতে গ্রাহকদের হয়রানি করে ঘুষ গ্রহন করা। এবং সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া।

শেখ বিল্লাল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার বদলে তাদের সাথে প্রতারণা করে নিজ গ্রাম ও শশুর বাড়িতে ক্রয় করেছেন বিঘায় বিঘা জমি।

অনুসন্ধানে উঠে আসে ফরিদপুরের বিলমামুদপুর নতুন ডাঙি নিজ গ্রামে গড়েছেন (কোহিনুর মন্জিল) নামে আলিশান অট্রালিকার বাড়ি। নিজের ৬ কাঠা জমিসহ সরকারী ২ কাঠা রাস্তার জায়গা দখল করে তার বাড়িটি নির্মাণ করেছেন।

শেখ বিল্লালের দুটি পূত্র, (বড় সাইফুল), (ছোট সাকিব)। বড় ছেলে সাইফুলও ব্যবহার করেন দামি পোশাক, দামি গাড়ি, দামি ফোন।

শেখ বিল্লালের ছেলের বিষয়ে জানতে চাইলে একজন বলেন, সাইফুল খুবই ভয়ংকর, এলাকার মধ্যে একধরনের ত্রাস করে বেড়ান।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, শেখ বিল্লালের বাড়িতে ৪-৫ বছর আগেও চুলা তেমন একটা জ্বলতো না, কিন্তুু শেষ বয়সে সরকারী চাকরি নেওয়ার সাথে সাথে এতো বড় অট্রালিকা বানানো সত্যিই চোখে নাড়া দেওয়ার মতো।

আরেকজন স্থানীয় বলেন, শেখ বিল্লাল মোবারক খলিফার দাপটে পুরো গ্রামে ত্রাস করে বেড়াতেন।

মোবারক খলিফা কে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোবারক খলিফা সাবেক আওয়ামীলীগের কাউন্সিল, কিন্তুু বর্তমানে তিনি পলাতক আছেন।

এবিষয়ে শেখ বিল্লালকে কল করা হলে তিনি বলেন বাড়িটি লোন করে করা হয়েছে, আর আমি এখনো অভিযোগটি দেখিনি, পাঠিয়ে দিন। দেখে আমি জানাচ্ছি।
কিন্তুু পরবর্তীতে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এবিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাব রেজিস্ট্রার তনু রায়, ফরিদপুর সদর সাব রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলামকে একাধিক কল করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম