
বিশেষ প্রতিবেদন:
রাজধানীর প্রশাসনিক কাঠামোর ভেতর থেকে ভয়াবহ এক চাকরি জালিয়াতির চক্রের তথ্য সামনে এসেছে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের নিয়োগ ব্যবস্থায় একাধিক ব্যক্তির ভুয়া ঠিকানা, জাল সার্টিফিকেট ও ঘুষের মাধ্যমে সরকারি চাকরি পাওয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে।
এই চক্রের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তি মোঃ রিয়াজ উদ্দিন, যার প্রকৃত স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালী সদর উপজেলার ৭ নং ধর্মপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড—এবং যার পিতার নাম নুর ইসলাম, মাতার নাম রোকেয়া বেগম। কিন্তু তিনি জাল ঠিকানা ব্যবহার করে ঢাকার সরকারি অফিসে চাকরি নেওয়ার চেষ্টা করেন।
প্রথমে তিনি সিএমএম (ঢাকা) কার্যালয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে শূন্য পদে আবেদন করেন এবং নিয়োগও পান। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ যাচাইকালে তার ঠিকানা ভুল প্রমাণিত হলে তার চাকরি বাতিল করা হয়। তদন্ত চলাকালেই তিনি জেল-হাজতের ভয়ে পালিয়ে যান।
অবাক করার বিষয় হলো—চাকরি বাতিল ও পলাতক হওয়ার পরও, মোঃ রিয়াজ উদ্দিন আবার নতুন করে জাল ঠিকানা ব্যবহার করে ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ৫ জুলাই ২০২৩ তারিখে যোগদান করেন। এখানেই স্পষ্ট হয়, ভিতর থেকে কেউ তাকে সহায়তা করেছে।
সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক গার্ড পদে থাকা কর্মচারী আয়নাল, যার স্থায়ী ঠিকানা মাদারীপুর, তিনিই এই চক্রের অন্যতম সক্রিয় সদস্য। তিনি নিজেও ভুয়া ঠিকানায় ঢাকায় চাকরি করছেন, এবং অভিযোগ রয়েছে—তিনি বিভিন্ন মানুষকে চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ৫-৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করেন।
তাঁর সহায়তায় রিয়াজ উদ্দিন ও আরেকজন সোহেল একইভাবে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে অবৈধভাবে চাকরি পান। অভিযোগ মতে, আয়নাল ব্যক্তিগতভাবে এই দু’জনের কাছ থেকে মোট ১০-১২ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন, যার বিনিময়ে তিনি ভুয়া কাগজপত্র ম্যানেজ করে ঢাকায় নিয়োগ নিশ্চিত করেন।
জনমনে প্রশ্ন উঠেছে কীভাবে একবার চাকরি বাতিল হওয়ার পর একজন ব্যক্তি আবার সরকারি অফিসে ঢুকতে পারেন? জেলা প্রশাসকের অফিসে ঠিকানা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া এতটাই দুর্বল যে, জাল ঠিকানার মাধ্যমে বারবার চাকরি পাওয়া সম্ভব? আয়নালের মতো নিম্নপদস্থ একজন কর্মচারী কীভাবে এইচআর ও নিয়োগ সিস্টেমে প্রভাব বিস্তার করে?
সংশ্লিষ্টদের অভিমত: এই ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তির নয়—এটি ব্যবস্থাগত দুর্নীতির প্রতিচ্ছবি। এটি স্পষ্ট করে যে, চাকরির নামে ভুয়া কাগজপত্র, ঘুষ, অভ্যন্তরীণ সুবিধা ও দালাল চক্র মিলে পুরো নিয়োগ ব্যবস্থা জিম্মি করে রেখেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃত মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীরা।
সরকারি চাকরিতে ভুয়া ঠিকানা ও ঘুষ-নির্ভর নিয়োগ ঠেকাতে জেলা প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে কঠোর তদন্ত ও অভিযানের দাবি উঠেছে। যদি এই জালিয়াতি চক্র ভেঙে ফেলা না হয়, তবে শুধুমাত্র কয়েকটি পদ নয় সমগ্র প্রশাসনই হারাবে জনগণের আস্থা।