একে অপরের হাঁড়ি ভাঙছেন বিএনপি নেতারা

একে অপরের হাঁড়ি ভাঙছেন বিএনপি নেতারা

বরিশাল সাংবাদদাতা:

মনোনয়ন দ্বন্দ্বে প্রকাশ্যে বিষোদ্গার আর কাদা ছোড়াছুড়িতে মেতেছেন বরিশালের বিএনপি নেতারা। শুধু সভা-সমাবেশে নয়, পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েও চলছে একে অপরের চরিত্র হনন। বিষয়টি নিয়ে একদিকে যেমন চলছে আলোচনা-সমালোচনা, তেমনি বিব্রত দলের মাঠপর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরা। নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস আর ফ্যাসিস্ট তোষণের অভিযোগ তোলায় ক্ষতির মুখে পড়ছে ধানের শীষ-এমনটাও বলছেন অনেকে। পরস্পরের বিরুদ্ধে তোলা এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করলেও নির্বাচনে যে এসবের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে তা অস্বীকার করেননি দলটির নেতারা।

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন লড়াইয়ে আছেন হাফ ডজনেরও বেশি নেতা। যদিও সাক্ষাতের জন্য এখন পর্যন্ত কেন্দ্রের ডাক পেয়েছেন ৩ জন। তারা হলেন-চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পাঁচবারের সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের রহমতউল্লাহ ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক। এছাড়া মনোনয়ন চাইছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবায়েদুল হক চাঁন, বরিশাল (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন ও মহানগর বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা নাসরিন। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে দলকে ৭ খণ্ড করে চলছে এদের মনোনয়নের লড়াই। সভা-সমাবেশও চলছে আলাদাভাবে। তবে ইদানীং এসব নেতার কয়েকজন মেতেছেন একে অপরের প্রতি বিষোদ্গারে। নিজেকে সৎ প্রমাণ করতে গিয়ে অন্যের চরিত্র হননও করছেন কেউ কেউ। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত মনোনয়নপ্রার্থী রহমতউল্লাহর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির দুই নেতার দেওয়া বিবৃতি। যা নিয়ে এখন চলছে তোলপাড়।

একটি অনলাইন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দলের জন্য নিজের ত্যাগের কথা বলেন রহমতউল্লাহ। আন্দোলন-সংগ্রামে তার ভূমিকা সম্পর্কে বলার পাশাপাশি বরিশালে রাজপথের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে একটি বিবৃতি দেন জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন। বিবৃতিতে রহমতউল্লাহর বক্তব্য মিথ্যা ও বরিশালের আন্দোলনে তার তেমন ভূমিকা ছিল না দাবির পাশাপাশি তাকে জাতীয় পার্টির উচ্ছিষ্টভোগী বলে আখ্যা দেওয়া হয়। পালটা বিবৃতিতে রহমতউল্লাহ বলেন, বিবৃতির ভাষাই প্রমাণ করে যে, এটি রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। কোনো ভুল করলে দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা কিংবা আমার কাছে কৈফিয়ত চাওয়া যেত। হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি ভিউ পাওয়া একটি সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে সবগুলো গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে দলের ঐক্য বিনষ্টের মতো ক্ষতিকর ঘটনা ঘটিয়েছেন তারা।

বিষয়টি সম্পর্কে আলাপকালে আবুল কালাম শাহিন বলেন, যেহেতু রহমতউল্লাহ মিডিয়ায় ওই বক্তব্য দিয়েছেন তাই আমরাও গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েই তার প্রতিবাদ জানিয়েছি।

কেবল রহমতউল্লাহ নয়, মনোনয়নপ্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার ও মনিরুজ্জামান ফারুকের বিরুদ্ধেও ভাইরাল হয়েছে আরেক বিএনপি নেত্রী আফরোজা নাসরিনের করা অভিযোগের ভিডিও। সম্প্রতি এক সভায় দেওয়া বক্তব্যে ওইসব অভিযোগ করেন নাসরিন। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মনোনয়নপ্রার্থী সরোয়ার ও ফারুকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও ফ্যাসিস্ট তোষণের অভিযোগ করে বক্তব্য রাখছেন নাসরিন। দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সরোয়ারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তার দুই ভাই নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল দখল করেছে। এই ১৭ বছর আপনার ভাইয়েরা কোথায় ছিল? তারা আজ বাস টার্মিনাল দখল করে লাখ লাখ টাকা আয় করছে অবৈধভাবে।

সরোয়ারকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, দরবেশ সেজে বসে আছেন? আপনারা চাঁদাবাজি করবেন, দখলবাজি করবেন আর বরিশালের মানুষ আপনাকে ভোট দেবে? তারা কি বোকা?

অন্যদিকে মনিরুজ্জামান ফারুককে উদ্দেশ করে নাসরিন বলেন, আপনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেছেন। উপস্থিত সবাইকে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম ও সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর সঙ্গে ফারুকের ছবি দেখিয়ে নাসরিন বলেন, আমাদের কাছে প্রমাণ আছে আপনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওঠাবসা করেছেন। বরিশালের মানুষ আপনাদের মতো চাঁদাবাজ-দখলবাজ সন্ত্রাসীদের আর প্রশ্রয় দেবে না।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পালটা অভিযোগ করে ফারুক বলেন, নাসরিনের আশপাশে এখন যারা আছে তারা কোন দলের? ফ্যাসিস্ট দলের কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের নিয়ে চলাফেরা করেন তিনি। ছবিসহ সব প্রমাণ রয়েছে আমাদের কাছে। ৫ আগস্টের পর কোন জাদুবলে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা দিয়ে লাইনসহ বাস কিনলেন নাসরিন? এত টাকা তিনি পেলেন কোথায়? সাদিক ও জাহিদ ফারুকের সঙ্গে ছবির বিষয়ে তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৬ নভেম্বর আমার স্ত্রী মারা যান। তার মৃত্যুর খবরে আরও অনেকের সঙ্গে সমবেদনা জানাতে বাসায় আসেন তৎকালীন মেয়র সাদিক। সে সময় তোলা ছবি দেখিয়ে আমাকে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ বলার মতো ঘৃণ্য মানসিকতা যাদের রয়েছে তাদের সম্পর্কে কী বলব? এছাড়া এলাকার একটি স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ছিলাম আমি। সেখানে এসেছিলেন জাহিদ ফারুক। এই ছবি দুটি দেখিয়েই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

ফারুকের অভিযোগের জবাবে নাসরিন বলেন, পারিবারকিভাবে নানা ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে আমার। তাই দিয়েই বাস কিনেছি। আমার সঙ্গে ফ্যাসিস্ট কারও কোনো সম্পর্ক নেই। পারলে তারা দেখাক যে আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো এমপি-মন্ত্রী কিংবা নেতার ছবি আছে।

দুই ভাইয়ের বাস টার্মিনাল দখল বিষয়ে মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক হলো দলে চেইন অব কমান্ড না থাকা। যিনি এসব ফালতু কথা বলেছেন তিনি মহানগর বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা। কেন্দ্র থেকে এখানে মহানগরের নেতৃত্ব নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু তাই বলে চেইন অব কমান্ড নষ্ট হবে কেন? কেবল আমি নই, নিজ কমিটির আহ্বায়কের বিরুদ্ধেও তো আজেবাজে কথা বলেছেন তিনি। কেন্দ্রের উচিত এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। এখানে দলে ৩-৪টি গ্রুপ, এটা কেন হবে? স্থানীয় রাজনীতির প্রশ্নে আমাকেও মহানগরের নেতাদের পরামর্শ শুনতে হবে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বরিশালে এটা নেই।

নিজের ভাইদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার দুই ভাই বাস টার্মিনালের মালিক সমিতি কিংবা শ্রমিক ইউনিয়নের কোনো পদে নেই। তাদের একজনের বাসের ব্যবসা ছিল। ফ্যাসিস্ট আমলে ব্যবসা করতে দেওয়া হয়নি বলে বাস বিক্রি করে চলে এসেছিল। এখন আবার বাস কিনে ব্যবসা করছে। আমার ভাইয়েরা কোনোরকম চাঁদাবাজি করছে প্রমাণ করতে পারলে দল যে ব্যবস্থা নেবে তা আমি মেনে নেব।

দলের প্রধানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রাখা উচিত: সালাহউদ্দিন

দলের প্রধানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রাখা উচিত: সালাহউদ্দিন

ডেস্ক রিপোর্টঃ দলের প্রধানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রাখা উচিত বলে মনে করে বিএনপি। রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বিএনপির এ অবস্থানের কথা জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘পৃথিবীর গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে আমরা যুক্তরাজ্যের উদাহারণ দিয়ে থাকি। সেখানেও দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী একই ব্যক্তি হয়ে থাকেন। তবে কয়েকটি দেশে মাঝে মাঝে ব্যতিক্রম হয়ে থাকে। সেটিও সরকারি দল সিদ্ধান্ত নেয় কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। তাই দলীয় প্রধানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ রাখা উচিত হবে বলে মনে করে বিএনপি। আশা করি, পরবর্তী আলোচনায় আমরা একমত হতে পারবো।’

বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ত্রয়োদশ সংশোধনীতে যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল তাতে কিছু পরিবর্তন আনা যায় কি না, তা নিয়ে আজ আলোচনা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব হাতে পেয়েছি। এটা দেখে পর্যালোচনা করে মতামত দেবে বিএনপি।’

ঐকমত্য কমিশনের নতুন খসড়া প্রস্তাবের বিষয়ে মঙ্গলবার আলোচনা হবে বলে জানান বিএনপির এ নেতা।

তিনি বলেন, ‘আজ মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন প্রক্রিয়া ও ক্ষমতা কাঠামো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।’

বৈঠক শেষে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে একমত হয়েছে।’

আলী রীয়াজ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিষয়ে উপস্থাপিত মতামতের অধিকাংশ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। দলগুলোর প্রস্তাব ও আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন নতুন করে প্রস্তাব তৈরি করে দলগুলোকে দিয়েছে। পরবর্তীতে আরো আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’

এসময় তিনি আশা করেন, ‘এ মাসেই জুলাই সনদ ঘোষণা সম্ভব হবে।’

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম