পেশায় মিটার রিডার প্লট ফ্ল্যাটসহ গড়ে তুলেছেন কয়েক’শ কোটি টাকার সম্পদ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর (ডিপিডিসি) এক মিটার রিডার মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্লট,ফ্ল্যাটসহ নামে বে-নামে কয়েক’শ কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। প্লট এবং ফ্ল্যাটের পাশাপাশি কোটি টাকা দামের কয়েকটি গাড়ীর সন্ধ্যান পাওয়া গেছে। তার সম্পদের ফিরিস্তি নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) চাঁদ উদ্যান এলাকার বাসিন্দা সোয়েব হোসেন দূদকে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ডিপিডিসির মিটার রিডারের নাম একেএম রফিকুল ইসলাম। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ মোহাম্মদপুরের সাত মসজিদ ও লালমাটিয়া ডিপিডিসি অফিসে মিটার রিডার হিসেবে চাকুরী করছেন। এই এলাকায় চাকরীর সুবাদে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান,চন্দ্রিমা হাউজিং,নবীনগর হাউজিং,ঢাকা উদ্যানসহ মোহাম্মদপুর এলাকার বিভিন্ন বস্তি, অবৈধ বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, মোটর চালিত অটোরিকশার গ্যারেজে অবৈধ সংযোগসহ বিল কম আসতে মিটার টেম্পারিংয়ের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে এসব অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেন। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকার ১ নম্বর রোডে চারতলা একটি বাড়ি ও দুইতলা একটি বাড়িসহ ১০ কাটার একটি প্লট কিনেছেন। পাশাপাশি, মোহাম্মদপুরের লতিফ রিয়েল এস্টেট এলাকার ১ নম্বর রোড ১টি ফ্ল্যাট, কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকায় ১০ লাখ টাকা দিয়ে বোনকে একটি ফ্ল্যাট বন্ধক রেখে দেওয়াসহ লালমাটিয়ায় ২০ কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এছাড়াও, হাইস ব্র্যান্ডের ৪টি গাড়ী। যা ডিপিডিসির হেড অফিসে কর্মকর্তাদের আনা নেওয়ার কাজে টেন্ডারের মাধ্যমে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। এসব সম্পত্তি ছাড়াও নামে বে-নামে আরও অনেক সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তার গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার সাথিয়া উপজেলায় কয়েক একর আবাদী জমি কিনেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিপিডিসির লালমাটিয়া শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, সে লালমাটিয়া ব্রাঞ্চের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের খুব কাছের লোক হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় মিটার টেম্পারিং,অবৈধ সংযোগ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। চাঁদ উদ্যান এলাকার ১ নম্বর রোডের বাড়িগুলোতে সে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করে আসছে। তার এক মাত্র নেশাই হলো, প্রতিবছর কখনো ফ্ল্যাট কেনা। আবার কখনো প্লট কেনা। চাঁদ উদ্যান এলাকায় সে ১০ কাটার আরেকটি প্লট বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা থেকে ১৫ কোটি দাম ধরে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে বায়না করেছে। এছাড়াও, বসিলা একটি হাউজিংয়ের তার ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপার ব্যবসায়ীর মাধ্যমে প্লট ব্যবসায় বিনিয়োগ করে আসছে। ইতিমধ্যে এখন সরাসরি প্লট না কিনে প্লট ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে। তার এসব বিষয় ডিপিডিসির হেড অফিস জানার পরও কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা হতাশায় রয়েছি। একবার আমাদের একজন মুখ খুলেছিলো। তখন তাকে চাকরী থেকে কয়েকদিনের জন্য বরখাস্ত করে চাকরী খেয়ে ফেলার হুমকি দিয়েছিলো। এজন্য তার ভয়ে কেউ এখন আর মুখ খুলতে চায় না। ডিপিডিসির কর্মকর্তা ছাড়াও, তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, সে ফ্ল্যাট-প্লট,গাড়ি-বাড়ী ছাড়াও ঋণ দেওয়ার নামে বর্তমানে কয়েকটি এমএলএম ব্যবসা খুলে বসেছেন। যা প্রতিনিয়ত আলাদিনের চেরাগের মতো আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে উঠছেন।

তার এমন সীমাহীন দূর্ণীতির বিষয়ে কয়েকদফায় বর্তমানে কর্মরত লালমাটিয়া ডিপিডিসি অফিসে গিয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলে সে তার কল দেওয়া ফোনটি রিসিভ না করে তার ব্যবহৃত অন্য নাম্বারে ফোন দিয়ে প্রতিবেদককে র‍্যাব,গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজেএফআই,এনএসআই) দিয়ে তুলে নেওয়া এবং তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। যা প্রতিবেদকের কাছে ফোন কলের রেকর্ডটি সংরক্ষিত আছে।

ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত দুদক কর্মকর্তা সুদীপ

স্টাফ রিপোর্টার:

ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির অভিযোগে উপ-সহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরীকে বরখাস্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবিদুল মোমেন সই করা আদেশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তাকে দুদক (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৩৯(খ), ৩৯(৪), ৩৯(চ) ও ৪০(১) (খ)(৫ অনুযায়ী চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বগুড়ায় উপসহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকাকালে জেলা পুলিশে গোয়েন্দা বিভাগের উপপরিদর্শক আলমগীর হোসেনের সম্পদ বিবরণী যাচাই করেন। সে সময় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আশ্বাস দেন সুদীপ কুমার। তখন আলমগীর হোসেনের কাছে ঘুষ দাবি করেন তিনি। কিছু টাকা তিনি উৎকোচ হিসেবে গ্রহণও করেছেন।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ৭ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করলে মো. আলমগীর হোসেনের খালাতো বোন বেগম সুমাইয়া শিরিনের মাধ্যমে কিছু অর্থ গ্রহণ করেছেন। যার মধ্যে বগুড়া বারের আইনজীবী মো. কামাল উদ্দিন থেকে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। পরে অ্যাডভোকেট সৈয়দ আসিফুর রহমানের মাধ্যমে আরো ১ লাখ টাকা উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আলমগীর হোসেনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির খালাতো বোন বেগম রুমাইয়া শিরিন এবং অ্যাডভোকেট সৈয়দ আসিফুর রহমানের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত মোবাইলের মাধ্যমে উৎকোচ দাবি ও গ্রহণের কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও দুদকের ফরেনসিক ল্যাবে মাধ্যমে প্রমাণ পাওয়া গেছে। কমিশনের আদেশ অমান্য করে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে উৎকোচ দাবি করে দুদকের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৩৯(খ), ৩৯(৩) ও ৩৯(চ) বিধি অনুযায়ী যথাক্রমে অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করে তার কাছে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারি করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অভিযোগের জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানি চান এবং সে অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তার ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় তদন্ত শেষে ওই বছরের ২ নভেম্বর দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে সুদীপ কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৩৯(খ), ৩৯(৪), ৩৯(চ) ও ৪০(১) (খ)(৫ অনুযায়ী তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ২০ জুলাই সুদীপ কুমার চৌধুরীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। ওই বছরের ৯ এপ্রিল বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন পুলিশ কর্মকর্তার বোন রুমাইয়া শিরিন।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম