জুলাই যোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে নতুন করে দেড় হাজারের বেশি আবেদন

ডেস্ক রিপোর্ট :

জুলাই গণ অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের তালিকা আরও লম্বা হচ্ছে। এই স্বীকৃতি পেতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে আরও দেড় হাজারের বেশি আবেদন। নিজেদের   জুলাই যোদ্ধা দাবি করে এসব ব্যক্তি সরকারি তালিকায় নাম তুলতে চান। এই স্বীকৃতি পেলে তারা মাসিক ভাতাসহ সরকারি আরও সুবিধা পাবেন।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) যারা জুলাই যোদ্ধা  হিসেবে নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি, মূলত তারাই এখন আবেদন করেছেন। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে যারা নিহত হয়েছেন, তারা জুলাই শহীদ স্বীকৃতি পাচ্ছেন  যারা আহত হয়েছেন  তারা জুলাই যোদ্ধা।

সরকারি গেজেটে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদের সংখ্যা ৮৩৬ এবং আহত ১৩ হাজার ৮০০। যদিও শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের এই সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, আন্দোলনে অংশ না নিয়েও অনেকে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তাই এবার নতুন আবেদন সতর্কতার সঙ্গে যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকেও বিভিন্নজনের নাম আহত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে বাদ দিতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান অধিদপ্তরকে অনুরোধ করেছে। সম্প্রতি জুলাই ফাউন্ডেশনে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলে  জুলাই যোদ্ধা’র পক্ষ থেকে মামলাও হয়। তার দাবি তাকে ভুয়া জুলাই যোদ্ধা আখ্যায়িত করে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয় গত মার্চ মাসে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন করে আহত ব্যক্তিদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ৪০ জেলা থেকে আবেদন জমা পড়েছে ১ হাজার ৫৪৩টি। ঢাকা জেলা থেকে তালিকা আসা বাকি রয়েছে। সেগুলো এলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, তাদের কাছে নতুন ৭০০ আবেদন জমা পড়েছে। সেসব নাম যাচাই বাছাই চলছে। ঢাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি) তানভীর আহমেদ সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাছে আসা ৭০০ আবেদন যাচাই–বাছাই করে এ মাসের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।তাদের ধরে জুলাই যোদ্ধা  স্বীকৃতি পেতে নতুন আবেবদনকারীর সংখ্যা বেড়ে হচ্ছে ২ হাজার ২৪৩।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শাখা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র মাত্রায় আন্দোলন হয়েছিল ঢাকায়। তাই ঢাকা থেকে আবেদনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া বগুড়া থেকে ২০০, সুনামগঞ্জ থেকে ১৩০, কিশোরগঞ্জ থেকে ১২২, কুমিল্লা থেকে ১০৯, ফেনী থেকে ১০৫, হবিগঞ্জ থেকে ১০৩, চট্টগ্রাম থেকে ৯০, বাগেরহাট থেকে ৫২ এবং চাঁদপুর থেকে ৫১টি আবেদন জমা পড়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর এসব তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনসংক্রান্ত জেলা কমিটি’র কাছে পাঠিয়েছে। এই কমিটির সভাপতি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক। অন্যদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জনও রয়েছেন। যদিও জেলাগুলো থেকে যখন এই তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠায়, তখন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, এসপি ও সিভিল সার্জন নিয়ে গঠিত কমিটি যাচাই–বাছাই করেই তালিকা পাঠিয়েছে।

যাদের হাত ধরে তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আসছে, একই তালিকা কেন আবার তাদের কাছে পাঠানো হচ্ছে এ  প্রশ্নের জবাবে অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আহত ব্যক্তিদের তালিকা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নতুন করে কোনো ভুয়া ব্যক্তি যাতে গেজেটভুক্ত হতে না পারেন, সে জন্য সতর্কতামূলক এই পদক্ষেপ।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জুলাই গণ–অভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন,  নতুন করে যেসব আবেদন এসেছে, এ বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে চাই, যাতে কোনো ভুয়া ব্যক্তি তালিকায় ঢুকতে না পারে। এ জন্য তালিকাটি যাচাই বাছাইয়ের জন্য জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনসংক্রান্ত জেলা কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে যাদের নাম চূড়ান্ত করে পাঠাবে, তাদের নাম এমআইএসে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারও

স্টাফ রিপোর্টার:

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মতো এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ঢালাওভাবে সব খাতে নয়, ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে এই সুযোগ রাখা হচ্ছে।

সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুবিধা বহাল রাখেন।

অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার ক্ষেত্রে দুটি শর্তও দেওয়া হয়েছে। যদি আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের অধীনে কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম হতে উদ্ভূত হয় এবং কোনো বৈধ উৎস হতে উদ্ভূত না হয়, তাহলে এই আইনের এই ধারার আওতায় কালো টাকা সাদা করা যাবে না।

এর মানে দাঁড়ায়, যদি অপ্রদর্শিত অর্থ মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, মাদক বা সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন ইত্যাদি অপরাধমূলক উৎস থেকে অর্জিত হয় এবং সেটা বর্তমানে বলবৎ অন্য কোনো আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, তাহলে তা এই সুবিধার আওতায় আসবে না।

দ্বিতীয়, অপ্রদর্শিত অর্থের উৎস ‘বৈধ উৎস’ না হলে সেটি সাদা করা যাবে না। অর্থাৎ যেখানে অর্থ উপার্জনের উৎস নিজেই অবৈধ, যেমন—ঘুষ বা চুরি, সেখানে কর দিয়ে বৈধতা মিলবে না।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বাতিল করে। কিন্তু এবারের বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা নতুন করে করহার বাড়িয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিলেন।

এদিকে, গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারের এ উদ্যোগের কড়া সমালোচনা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত একই সঙ্গে অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থী।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে রাষ্ট্র সংস্কার—বিশেষ করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকে রীতিমতো উপেক্ষা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একইসঙ্গে, দুর্নীতিকে উৎসাহ দিয়ে রিয়েল এস্টেট লবির ক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। করহার যা-ই হোক না কেন, এটি সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যেখানে বলা হয়েছে রাষ্ট্র এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে যে অনুপার্জিত আয় অবৈধ হবে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ একই সঙ্গে বৈষম্যমূলক, কারণ এই সিদ্ধান্তের ফলে আবাসন খাতে অবৈধ অর্থের মালিকদের অধিকতর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সৎ উপার্জনকারীদের ফ্ল্যাট বা ভবনের অংশীদার হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সবচেয়ে আশঙ্কা ও হতাশার ব্যাপার হলো, সরকারের এই সিদ্ধান্ত দুর্নীতিকে উৎসাহ দেবে। এর মাধ্যমে সরকার বাস্তবে পুরো বছরজুড়ে অবৈধ ও অপ্রদর্শিত অর্থ-সম্পদ অর্জনের জন্য নাগরিকদের উৎসাহিত করছে এবং বছর শেষে কালো টাকাকে বৈধতা দেয়ার অঙ্গীকার করছে। বৈধতা দেয়ার অজুহাত হিসেবে যে খাতের তোষণ করা হচ্ছে, সে আবাসন খাতই দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতের একটি হিসেবে চিহ্নিত।’

বিদেশে অর্থ পাচার ঠেকাতে এই উদ্যোগ কিছুটা কার্যকর উল্লেখ করে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, ‘তবে এটা নীতিগতভাবে অনুচিত। সব ধরনের কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করা উচিত। এটি সামাজিক ন্যায্যতার পরিপন্থী এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের দাবির বিরোধী।’

এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঘোষণায় এসেছে অর্থাৎ সাদা হয়েছে বলে এনবিআর সূত্র জানা গেছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
বিদেশ থেকে যতটুকু স্বর্ণ আমদানি করলে দিতে হবে না ভ্যাট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎতে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব ফকরুল বাংলাদেশে ইতিহাস গড়ল উইন্ডিজ দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন রাজউক ইমারত পরিদর্শক শামীম রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে কে জিতবে, তা নিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচেছ ট্রাম্প নাসার চন্দ্র মিশনে স্পেসএক্স জুলাই যোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে নতুন করে দেড় হাজারের বেশি আবেদন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি শুরু প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন ইএম ২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদ সম্পদের পাহাড় জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি