সবুজ বাংলাদেশ ডেক্স॥
কাবুল— শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইতিহাস, সংস্কৃতি আর অস্থিরতার মিলনস্থল। যুদ্ধবিদ্ধস্ত এই শহরকে ঘিরে নানা গল্প আছে, তবে একটি ব্যাপার জানলে যে কেউ অবাক হবেন— এই শহরে একটিও রিকশা নেই! হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। প্রায় পঞ্চাশ বছরের টানা যুদ্ধ আর সংঘাতে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের রাজধানীতে ঘোড়ার গাড়ি, ট্যাক্সি, মোটরসাইকেল, এমনকি ভাঙাচোরা মাইক্রোবাস আছে, কিন্তু নেই আমাদের চিরচেনা দুই বা তিন চাকার রিকশা।
রিকশাহীন এই শহরকে ভাবতে গেলে প্রথমেই প্রশ্ন জাগে— কেন নেই? দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে তো রিকশাই চলাচলের প্রধান বাহন। ঢাকায় প্রতিদিন কোটি মানুষ রিকশায় ওঠে, কলকাতায় হাতচালিত রিকশা এখনও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে, এমনকি পাকিস্তানের করাচিতেও অটোরিকশার ছড়াছড়ি। তাহলে কাবুলই বা ব্যতিক্রম কেন?
বিজ্ঞাপন
আসলে এর পেছনে আছে কিছু বাস্তব আর কিছু মজার কারণ। প্রথমত, কাবুল পাহাড়ে ঘেরা একটি শহর। এর রাস্তাগুলো ঢালু আর অসমান। প্যাডেল চালিয়ে এমন উঁচুনিচু রাস্তায় মানুষ টানা একেবারেই সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ যুদ্ধের কারণে শহরের অবকাঠামো বারবার ভেঙেছে, মেরামত হয়েছে, আবার ভেঙেছে। রিকশা চালানোর মতো সমতল সড়ক কখনোই পুরোপুরি তৈরি হয়নি।
তৃতীয় কারণটা আরও মজার। আফগানদের কাছে রিকশা যেন মর্যাদাহানির প্রতীক। এখানে ঘোড়ার গাড়ি চালানো সম্মানের, মোটরসাইকেল চালানো তো গর্বেরই ব্যাপার। কিন্তু রিকশা? সেটাকে তারা কিছুটা শিশুদের খেলার গাড়ি ভেবে থাকে। ফলে বাজারে রিকশা আসার সুযোগই পায়নি।
অবশ্য কাবুলে রিকশা না থাকলেও মানুষের পরিবহন চাহিদা তো থেমে নেই। বিকল্প হিসেবে আছে হলুদ ট্যাক্সি, যেগুলো বেশিরভাগই ৮০-র দশকের জাপানি গাড়ি—পুরোনো টয়োটা বা নিশান। আছে মিনিবাস, যেগুলো প্রায়ই এত ভিড়াক্রান্ত থাকে যে যাত্রীদের ঝুলে ঝুলে যেতে হয়। আর আছে মোটরসাইকেল, যেটা কাবুলের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাহন। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অর্থনীতি ও সংকীর্ণ রাস্তায় দ্রুত চলাফেরার জন্য বাইকের মতো উপায় আর নেই।
তাহলে কাবুলবাসী কি কখনো রিকশার নাম শুনেইনি? শুনেছে বটে। বাংলাদেশ, ভারত কিংবা পাকিস্তানে গিয়ে যারা রিকশা দেখেছে, তারা মজা করে বলে— ‘রিকশা যদি কাবুলে চালু হতো, তবে হয়তো সেটাকে টানতে একসঙ্গে দু’জন চালক লাগত!’ কারণ, পাহাড়ি রাস্তায় যাত্রী তুলতে গিয়ে এক চালকই হাঁপিয়ে যেত।
তবে কাবুলে যদি সত্যিই রিকশা চালু হতো, তা হলে দৃশ্যটা নিঃসন্দেহে হাস্যকর আর আকর্ষণীয় হতো। কল্পনা করুন, শহরের ভিড়ভাট্টার মধ্যে দিয়ে ঘণ্টা বাজিয়ে যাচ্ছেন রিকশাওয়ালা— পেছনে বসা যাত্রী কাবুলি পোলাও হাতে ধরে বলছেন, ‘দ্রুত চালাও ভাই, নাহলে কাবাব ঠাণ্ডা হয়ে যাবে!’
তবে বাস্তবতা হলো, কাবুলের ভবিষ্যৎ পরিবহন কৌশল রিকশার ওপর নয়, বরং আধুনিক যানবাহনের ওপর নির্ভর করছে। যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও এখন সেখানে কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। মেট্রো বা বাস র্যাপিড ট্রানজিটের পরিকল্পনাও করা হয়েছে।
তবুও, আমাদের মতো রিকশা সমৃদ্ধ দেশের মানুষের কাছে কাবুল শহরের এই রিকশাহীনতা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। যুদ্ধের ক্ষত, পাহাড়ি ভৌগোলিক বাধা আর সংস্কৃতিগত দৃষ্টিভঙ্গি মিলে এক অভিনব ব্যতিক্রম তৈরি করেছে। কাবুলের বাসিন্দাদের কাছে হয়তো রিকশার কোনো অভাব নেই। কিন্তু বাইরে থেকে যাওয়া একেকজন ঢাকাবাসী, কলকাতাবাসী কিংবা লাহোরবাসীর কাছে এই অভাবটা বড় অদ্ভুতই বটে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ মাসুদ || বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২১/১ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০ || মোবাইল : ০১৫১১৯৬৩২৯৪,০১৬১১৯৬৩২৯৪ || ই- মেইল: dailysobujbangladesh@gmail.com || ওয়েব : www.dailysobujbangladesh.com
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ. All rights reserved.