
নিজস্ব প্রতিবেদক:
পুরো পাহাড়টাই আস্ত একটা পাথর। প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে মহাশূন্য থেকে ছুটে আসা অতিকায় পাথরখণ্ডটি ‘স্টোন মাউন্টেইন’ নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় বেড়াতে গিয়ে দেখে এসেছেন ওমর কায়সার
আমাদের গাড়ি যত কাছে যাচ্ছে, তত ছায়ার মতো অতিকায় পাহাড়টি চোখের সামনে বড় হয়ে উঠছে। পাদদেশে নেমে দেখি নানা গাছপালা, ঘাসের প্রান্তর আর ছোট ছোট জলাশয়। চারদিক শান্ত ও নির্জন। একটা জায়গায় বেশ ঘন গাছপালা। সেখানে দুটো কৃশ হরিণ চরে বেড়াচ্ছে। আমাদের উপস্থিতি গ্রাহ্যই করল না। মানুষ দেখতে দেখতে তারা অভ্যস্ত নিশ্চয়ই।
স্টোন মাউন্টেইনের কথা আগে শুনেছিলাম। তখন থেকে মনে হয়েছিল পাথরের পর্বত মানে রুক্ষ, বৈচিত্র্যহীন ও বিষণ্ন একটা কিছু হবে। কিন্তু পাথরের বুকও যে এতটা লাবণ্য ধরে রাখে, আগে বুঝিনি। ফোবানা উৎসব যোগ দিতে আগস্টের শেষ সপ্তাহে আটলান্টা গিয়েছিলাম। কলেজ জীবনের সহপাঠী রাফি সৈয়দ আর সারোয়ার কামালের অতি আগ্রহ আমাকে চুম্বকের মতো স্টোন মাউন্টেইনে টেনে নিয়ে গেল। সারোয়ার বলল, পর্বতটাতে ওঠার আগে অনেকেই ভাবে সেখানে তারা অনেক পাথর দেখতে পাবে। আসলে তা না। এই পাহাড়টির পুরোটাই একটা বিশাল গ্রানাইট শিলা। অর্থাৎ একটা পাথর দিয়ে গঠিত একটা পাহাড়। পৃথিবীর বৃহত্তম একক গ্রানাইট গঠনগুলোর একটি স্টোন মাউন্টেইন।
প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে মহাশূন্য থেকে ছুটে এসে এই অতিকায় পাথরখণ্ডটি পৃথিবীর বুকে আসন পেতেছিল। ভাবতে অবাক লাগল যে পাথরের ওপর আমি দাঁড়িয়ে আছি, সেটি মানবসভ্যতার বহু আগেই জন্ম নিয়েছিল। ঘুরতে ঘুরতে মনে হলো প্রকৃতি আর ইতিহাস যেন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। বিশাল ধূসর পাহাড়টা দূর থেকে কঠিন আর নীরব মনে হয়েছিল, অথচ কাছে এসে মনে হলো এটি জীবন্ত। সত্যিই স্টোন মাউন্টেইন পার্ক শুধু পাহাড় নয়, এটা এক বিশাল বিনোদন ও ঐতিহাসিক কেন্দ্র। পাহাড়ের গায়ে খোদাই করে বানানো হয়েছে জেফারসন ডেভিস, রবার্ট ই. লি আর স্টোনওয়াল জ্যাকসনের বিশাল ভাস্কর্য। এই তিনজনের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমেরিকার গৃহযুদ্ধ আর দাসপ্রথার ইতিহাস। ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সালে দাসপ্রথার পক্ষ-বিপক্ষে দুই ভাগ হয়ে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হয় আমেরিকা। উত্তরের রাজ্যগুলো চেয়েছিল দাসপ্রথা বন্ধ হোক। আর দক্ষিণের রাজ্যগুলো চেয়েছিল দাসপ্রথা থাকুক। এই নিয়ে গৃহযুদ্ধ। পরে দক্ষিণের ১১টি রাজ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আলাদা হয়ে গঠন করে কনফেডারেট স্টেট অব আমেরিকা (কনফেডারেসি)। দাসপ্রথা চালু রাখার পক্ষের রাজ্যগুলোর নেতা ছিলেন এই তিনজন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে ওরা জিততে পারেনি, জিতেছিল উত্তর। ফলে বিলুপ্ত হয় দাসপ্রথা। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার গৃহযুদ্ধের খলনায়কদের নাম ওরা ভোলেনি, পাথরের গায়ে তাদের ভাস্কর্য খোদিত করা হয়েছে।