মাহতাবুর রহমানঃ
রাজউক এর মহাপরিকল্পনাভুক্ত এলাকার আওতাধীন হোল্ডিং নং ৩/৮, উত্তর পীরেরবাগ (রাইসা এন্ড সিকদার টাওয়ার) মিরপুরে আবাসিক ভবনের প্লান নিয়ে নির্মিত হয়েছে বাণিজ্যিক ভবন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন লেগেছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় থাকা বিমানবন্দরেও আগুন লাগা বাদ যায়নি, সেখানে আবাসিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে তৈরি করেছে বাণিজ্যিক ভবন। এর ফলে প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট দুর্যোগের কবলে পড়তে পারে এই ভবনটি।
রাজউক এর নকশা অনুমোদনের রেজিস্টারের ১১২৭ ক্রমিকের তথ্য অনুযায়ী একটি বেজমেন্ট সহ ১০ তলা ভবন ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে অনুমোদন দেয়া হয়। তৎকালীন সময় যাদের স্বাক্ষরে এই ভবনের নকশা অনুমোদন হয়েছিল তারা হলেন, সদস্য (পরিকল্পনা) ও সভাপতি, বি সি কমিটি অঞ্চল-ক মোঃ আব্দুর রহমান, পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-১) ও সদস্য বি সি কমিটি অঞ্চল-ক মোঃ গোলাম মোস্তফা, উপ-নগর স্থপতি ও সদস্য বি সি কমিটি অঞ্চল-ক মোস্তাক আহমেদ, অথরাইজড অফিসার জোন-৩/১ মোঃ আশরাফুল ইসলাম। নকশায় সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে একটি বেইজমেন্ট ১০(দশ) তলা আবাসিক(এ-টু টাইপ) ইমারতের লে আউট নকশা অনুমোদিত।
ভবনটির গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকার কথা কার পার্কিং এরিয়া, প্রশস্ত খোলা যায়গা, ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল রুম, ড্রাইভার ওয়েটিং রুম, ড্রাইভার টয়লেট, গার্ড রুম, সিড়ি ও লিফট কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এখানে রয়েছে এসিআই মটরস লিমিটেডের ইয়ামাহা শো-রুম। ভবনটি আবাসিক হিসেবে অনুমোদন থাকলেও ৪তলা পর্যন্ত সম্পূর্ন বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের পীরেরবাগ শাখা। চতুর্থ তলায় রাইসা বিল্ডার্সের নিজস্ব অফিস রয়েছে।
এই ভবনের জমির মালিকের সাথে প্রতারণা করেছে রাইসা বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী বেনাপোল পৌরসভার সাবেক দুর্নীতিগ্রস্থ সচিব মোঃ রফিকুল ইসলাম। জমির মালিক তামজীদ জোবায়ের একাধিকবার রাজউক, দুদক, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরসহ একাধিক জায়গায় ধরনা দিয়েও কোন বিচার পাননি।
এই বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখে মোঃ রফিকুল ইসলামকে রাজউক অনুমোদিত নকশা(মঞ্জুরী) দাখিলের নোটিশ করা হয় যেখানে ০৭ দিনের সময় বেধে দেয়া হলেও ২বছরেও শেষ হয়নি ০৭দিন।
রাইসা বিল্ডার্সের ঐ ভবন রাজউক জোন-৩/১ এর যে এড়িয়ায় রয়েছে সেই এড়িয়ার বর্তমান ইমারত পরিদর্শক মোঃ আলীনুর হোসেন। এর পূর্বে ছিলেন ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ তারও পূর্বে ছিলেন বরখাস্ত হওয়া ইমারত পরিদর্শক সোলাইমান হোসেন। ২০২৫ খিস্টাব্দের ৩০ জানুয়ারিতে এই ভবনের এড়িয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদের সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে দুর্নীতিগ্রস্থ ইমারত পরিদর্শক সোলাইমান হোসেনকে নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের হেনস্থা করেন আবুল কালাম আজাদ।
ইমারত পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদের দুর্নীতির খতিয়ানও বেশ লম্বা। জাকির পাটোয়ারী নামে এক ব্যক্তি ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ এই আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, যেখানে সে সুস্পষ্ট দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন আবুল কালাম আজাদ অতি সাধারন নিম্ন বিত্ত পরিবারের সন্তান। সম্প্রতি ৩মাস যাবৎ রাজউক জোন-৪ এ বদলী হয়ে আসার পর জোন-৪ এর এলাকাধীন পূর্ব বাড্ডার হাজী সেকান্দার বাগ রোডের কামাল উদ্দিনের বাড্ডা মৌজার আর এস দাগ নং৬৬০৫ এ নির্মিত প্ল্যান বিহীন ভবন মালিকের নিকট থেকে ১০লক্ষ টাকা গ্রহণ করে ঘুষ বাবদ, উত্তর বাড্ডার জামতলায় ডা. আলমাসের মালিকানাধীন পাশাপাশি পৃথকদুটি ভবন ৪র্থ তলা থেকে ২টি ছাদ একত্রিত করে নির্মণের অপরাধে ভবন মালিক ডা. আলমাসের নিকট থেকে ১৮লক্ষ টাকা জরিমানা করে রসিদ না দিয়ে পুরো ১৮লক্ষ টাকাই পকেটে ভড়েন। বদিউল আলমের মালিকানাধী পূর্ব বাড্ডা ৩/৫, দঃআনন্দ নগরে মাল্টি প্লান ডেভলপার কর্তৃক নির্মিত রাজউক অনুমোদনহীন ১০তলা ভবনের মালিক থেকে ৩২লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে রাজউকের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রীট করার পরামর্শ দেন যেন রাজউক কখনো ভবনটি উচ্ছেদ করতে নাপারে।
এই ভবনের বিষয়ে জোন-৩/১ এর সদ্য সাবেক অথরাইজড অফিসার শেগুফতা শারমিন আশরাফ দায়িত্বে থাকাকালীন বলেন, আমি আজাদকে একাধিকবার এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি কিন্তু অজানা কারনে তিনি আমার নির্দেশনাও এড়িয়ে যাচ্ছেন।
সংবাদ প্রকাশের পূর্বে জোন-৩/১ এর বর্তমান ইমারত পরিদর্শক মোঃ আলীনুর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ছুটিতে আছি অফিসে ফিরে এই বিষয়ের সর্বশেষ অবস্থা জানাতে পারবো।
গত ০৭সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম এর সাথে তার কার্যালয়ে দেখা করে এই বিষয়ে সকল তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করে দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিনিধি। কিন্তু দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এই বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জানা যায়নি।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: কে এম মাসুদুর রহমান, সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ মাসুদ।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২১/১ নয়াপল্টন (মসজিদ গলি),ঢাকা - ১০০০।
✆ ০১৫১১৯৬৩২৯৪, ০১৬১১৯৬৩২৯৪ 📧dailysobujbangladesh@gmail.com.
কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত