তারিখ লোড হচ্ছে...

সওজে’র প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিনের অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য

সওজে’র প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিনের অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার॥
স্বৈরাচার হাসিনার সরকার পালালেও তার দোসররা রয়ে গেছে ধরা ছোয়ার বাহিরে আর সেই দোসরদের মধ্যে একজন হলো সওজে’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ ও কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতায়ধীন সওজ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহাম্মদের দুর্নীতির অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনের বাছাই কমিটি হতে গায়েব করেছেন বলে দাবি করেন মোসলেহ উদ্দিন নিজেই। এছাড়াও প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ গায়েবের পর একের পর এক নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনে মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রথম অভিযোগ জমা পড়ে ২০১৯ সালে। তবে বাছাই কমিটি হতে সেই অভিযোগের কাগজ গায়েব হয়ে যায়। দুদকের কাছে জমা দেওয়া সেই অভিযোগ পত্রে বলা হয়, মোসলেহ উদ্দিন আহাম্মদ একজন ক্ষমতাবান কর্মকর্তা। কমিশন ও নিজস্ব পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া তিনি কোনো কাজ প্রদান করেন না। তিনি আরও কিছু দুর্নীতি পরায়ন নির্বাহী প্রকৌশলী ও অফিস কর্মকর্তা দ্বারা নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘কে’ ব্লকের ১১ নং রোডে তার আলীশান ডুপ্লেক্স বাড়ি বাড়ি রয়েছে। বাড়ি নম্বর হচ্ছে ৫০৯। দুই সন্তানকে কানাডায় ও যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করাচ্ছেন। স্ত্রী ও সন্তানদের নামে-বেনামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ও ব্যাংক ব্যালেন্স। মোসলেহ উদ্দিন আহাম্মদের ভয়ে আমরা আমাদের নাম ও পরিচয় গোপন রাখছি। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করলে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্নীতি বের হয়ে আসবে। সেই সঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

আমাদের হাতে আসা মোসলেহ উদ্দিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির একাধিক কাগজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহাম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সড়ক বিভাগের বিভিন্ন সার্কেল অফিসে জনবল থাকার পরও অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে বাণিজ্য করেন। কাজ নাই মজুরি নাই ভিত্তিতে ৪৭ শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এছাড়াও মহামান্য রাষ্ট্রাপতির এলাকার বাসিন্দা দাবি করে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্ন দফতরে গায়ের জোরেই নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এমএলএসএস পদে কর্মরত ব্যক্তিদের কাউকে গাড়িচালক পদে নিয়োগ দিয়ে, আবার কাউকে অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পদায়ন দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন চৌকশ এই সরকারি প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন। আরও দেখা যায়, অধিদফতরের কারখানা সার্কেল শাখায় চাকরিকালীন প্রায় ১৬ ব্যক্তিকে এম আর কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন সওজ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন।

এই নিয়োগের মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় কোটি টাকা। আরও উঠে এসেছে, ওয়াসী উল্লাহ সজীব নামের এক ব্যক্তিকে মোসলেহ উদ্দিন সওজ অধিদফতরের ময়মনসিংহ সার্কেলে ওয়েন্ডার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। যার বাড়ি কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের সাভিনগর গ্রামে। সজীবের নিয়োগের পর ময়মনসিংহ সার্কেলের কারখানা বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের কাছে একটি চিঠিতে জানান, বর্তমানে ময়মনসিংহ কারখানা সার্কেলে দুটো ওয়েন্ডার পদের মধ্যে দুটোতেই জনবল রয়েছে। ফলে এই পদে আর কোনো জনবলের প্রয়োজন নেই।

অন্যদিকে এই দফতরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাস্টাররোলের কর্মচারী (এমআর) রয়েছে। অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে প্রতি মাসে হাজিরা ভিত্তিতে বেতন দেওয়াও দুরূহ হয়ে পড়েছে বলেও তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন। এছাড়াও কারখানা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় মোসলেহ উদ্দিন কারখানা উপবিভাগের সহকারি স্টোর কিপার পদে সিরাজগঞ্জ সদরের মিরপুর বিড়ালাকুঠি গ্রামের আল আমিনকে ও জরুরি গাড়ির এসি মেরামত কাজের জন্য কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার সাভিয়া নগরের সোহান মিয়াকে প্রধান কার্যালয়ের কারখানা উপবিভাগের সহকারি মেকানিক হিসেবে নিয়োগের জন্য দপ্তরাদেশ এবং কাজ নেই মজুরি নেই ভিত্তিতে তাদের তিন মাসের জন্য নিয়োগ আদেশ দেওয়ার বিষয়টিও  অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। সে সময় অতিরিক্ত জনবল থাকার পরও ঢাকার তেজগাঁওয়ে কারখানা বিভাগে দুই জন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হলে সেখানকার নির্বাহী প্রকৌশলী গুঞ্জন বড়ুয়া সংক্ষুদ্ধ হয়ে চিঠি লেখেন মোসলেহ উদ্দিনকে।

গুঞ্জন বড়ুয়া চিঠিতে লেখেন, ‘অত্র দপ্তর হতে কাজ নাই মজুরি নাই ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগের কোনো চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও দুই জন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা সম্পূন ভাবে যুক্তিযুক্ত নয়। আরও উল্লেখ্য করেন, বর্তমানে এ দফতরে সর্বমোট ৪৭ জন কাজ নাই মজুরি নাই ভিত্তিতে কর্মরত আছে। যাদের বেতন প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যায় না’।  অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে মাস্টার রোলে নিয়োগ পাওয়া মো. সুমন ও জসীম নামের দুইজন কর্মচারীকে ফেরি প্ল্যানিং সার্কেল থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বদলি করে নিজের বাসার কাজের জন্য নিযুক্ত করেন মোসলেহ উদ্দিন। যা চলমান থাকে প্রায় দুই বছর। এসময় তাদের প্রত্যেকের বেতন মাসে ১৫ হাজার টাকা করে সরকারি খাত হতে প্রদান করা হয়। এক কথায় জনবল থাকার পরও অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে সরকারি অর্থের অপচয়ও করেছেন মোসলেহ উদ্দিন।

 

৫০০ দালাল র‌্যাবের জালে

নিজস্ব প্রতিবেদক॥

হঠাৎ দেশব্যাপী দালালবিরোধী অভিযানে প্রায় পাঁচ শতাধিক দালালকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান-র‌্যাব। তাদের মধ্যে প্রায় ২৪৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকিদের প্রায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

রবিবার সকাল থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ৬৮টি পৃথক অভিযানে তাদের আটক করা হয়। দেশজুড়ে র‌্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এসব দালালকে জরিমানা ও সাজা প্রদান করে। এলিট ফোর্সটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ঢাকা টাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

র‌্যাব জানায়, সরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দালালমুক্ত করতে দেশজুড়ে তাদের এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি- বিআরটিএ, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, পাসপোর্ট ও ভূমি অফিস রয়েছে।

র‌্যাবের সূত্রটি আরও জানায়, সকাল থেকে র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে প্রায় ৬৮টি অভিযান চালানো হয়। এতে ২৪৮ জনকে নগদ জরিমানা করে ৯ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৬ টাকা আদায় করা হয়। এছাড়া ২৪৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে (এক সপ্তাহ থেকে ছয় মাস) সাজা দেওয়া হয়। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি সময়ে আমরা দেখেছি বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ ও ভূমি অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক ভূক্তভোগী বিভিন্নভাবে প্রতারিত হয়ে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করেছে। পাশাপাশি র‌্যাব সাইবার মনিটরিং সেলের মাধ্যমে সাইবার ওয়ার্ল্ডেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারণা রয়েছে। এছাড়া র‌্যাব সদর দপ্তরের ফেসবুক পেজেও (র‌্যাব অনলাইন মিডিয়া সেল) অনেক ভুক্তভোগী প্রতারিত হয়েছে জানিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করেছে। অভিযানে আমাদের সঙ্গে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম