রাজধানীর বনানী-কাকলিতে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি

অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের নেই অনুমোদন।

 রিসিপশনিস্ট, কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে ব্লাড কালেকশন।
 ডাক্তার ছাড়াই ল্যাপ টেস্টের রিপোর্ট প্রদান।
 বিট ইনচার্জ কে মাশোহারা দিয়ে নিরাপদ বাণিজ্য।
হাফসা আক্তারঃ
রাজধানীর মহাখালী, কাকলি, বনানী এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মত অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাড জোন ও প্রি মেডিকেল সেন্টার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার হাসপাতাল, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলছে রমরমা অবৈধ ব্যবসা। নিয়ম আছে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান চালুর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হয়। এজন্য একগুচ্ছ নিয়ম-কানুন মেনে যোগ্য হতে হয় তাদের। স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য থাকতে হয় প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও যন্ত্রপাতি। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চালু করতে হয় ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানা গেছে ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালুর জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র অত্যাবশ্যকীয়। প্রতি বছরই বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এর নিবন্ধন নবায়ন করা বাধ্যতামূলক।

বনানী থানাধীন মহাখালী রেললাইন থেকে কাকলি ফুট ওভার ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ২৫-৩০টি ছোট বড় ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এসবের অধিকাংশেরই নেই কোন সরকারি অনুমোদন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোন সার্টিফিকেট, পরিবেশ ছাড়পত্রের বালাই নেই। অনেকে আবার সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই শুরু করেছেন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যেটা আইনত দণ্ডনীয়ও বটে। প্রশ্ন উঠেছে খোদ রাজধানীর প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে চলছে এইসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নেই রোগ নির্ণয়ের মানসম্মত যন্ত্রপাতি, অপারেশন থিয়েটার, পরীক্ষাগার, প্রশিক্ষিত সেবিকা ও ল্যাব এটেনডেন্ট। নাক, কান, গলা ও সার্জনসহ বিভিন্ন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙ্গানো থাকলেও নিয়মিত রোগী দেখতে বসেন না তারা। ধার করা খন্ডকালীন চিকিৎসক দিয়ে চলছে জটিল অস্ত্রপাচার সহ বিভিন্ন চিকিৎসা। জরাজীর্ণ ভবনে ছোট খুপরি ঘরের মতো কয়েকটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। কোন কোন ভবনের নিচ তলায় ভাঙ্গারি ও পুরাতন কাগজ বেচাকেনার গুদাম। উপরে রয়েছে বিভিন্ন কলকারখানা ও ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা।

মহাখালী থেকে চেয়ারম্যান বাড়ি, কাকলি ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। অনুমোদনহীন এইসব হাসপাতালে চিকিৎসার নামে ব্যবসা, প্রতারণা, রোগী ভোগান্তির অভিযোগ ঘটে হরহামেশাই। এইসব অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির প্রভাব খাটিয়ে হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিম্বা ভ্রাম্যমান এইসব হাসপাতাল ক্লিনিক এর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হলেও সাময়িক সময়ের জন্য হাসপাতাল ক্লিনিক বন্ধের নোটিশ পাঠানো মধ্যেই তাদের দায়িত্ব শেষ।

সরজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা যায় কাকলি “নাজ মেডিকেল সেন্টার” সেখানে মালিক নিজেই ল্যাব এটেনডেন্ট, এক্সরে মেশিন অপারেটর ব্ল্যাড কালেকশন করেন। রক্তের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই দেয়া হচ্ছে প্রি-মেডিকেল সার্টিফিকেট। বিদেশে লোক পাঠানো বিভিন্ন ওভারসিজ এর দালাল সর্বোচ্চ কিছু ব্যক্তি নাম সর্বস্ব এইসব মেডিকেলে প্রি-মেডিকেল নামে অবৈধ বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন। ওভারসিসের দালালদের মাধ্যমে এইসব হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রি-মেডিকেল করার জন্য বিভিন্নভাবে সেবা প্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই দেওয়া হয় সার্টিফিকেট। মেডিকেল সার্টিফিকেটের উপর যে ডাক্তারের নাম উল্লেখ করে সীলমোহর দেওয়া হয়েছে, মূলত ওই নামে কোন ডাক্তারকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। নাজ মেডিকেল সেন্টারের মালিকের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি আমাদেরকে বসিয়ে রেখে স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনী ডেকে বিভিন্নভাবে হয়রানির চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে আইডি কার্ড কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেন তিনি। ব্যর্থ হয়ে তিনি তার পোষ্য বনানী থানার এসআই রুহুল আমিন কে ডেকে এনে আমাদেরকে হেনস্থার শেষ চেষ্টা চালান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশের নিবন্ধিত স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে ১১ হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু সারাদেশে সঠিকভাবে অভিযান চালালে দেখা যাবে দেশে বৈধ-অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে প্রায় অর্ধ লক্ষের কাছাকাছি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডাঃ মোঃ শফিউর রহমান জানান, অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। অভিযানে যেসব হাসপাতাল বা ক্লিনিক, ডায়গনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, সেই সব প্রতিষ্ঠানে যদি লাইসেন্স পাওয়ার যে শর্ত রয়েছে তা পূরণ না করে, তাহলে অবশ্যই তা বন্ধ থাকবে। আর যেগুলোতে এখনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি, অতিসত্বর সেইসব প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হবে।

শীতে বাতের ব্যথা বেড়ে গেলে

স্বাস্থ্য ডেস্ক: 

বার্ধক্যজনিত ও বয়স বেড়ে গেলেই বাতের ব্যথায় আক্রান্তের হার বেড়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই রোগটি অল্পবয়সী মানুষের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে আজকাল। মনে করা হয় শীতকালে কায়িক শ্রম কমে যাওয়া ও আলস্যতার কারণে এ রোগটির  প্রকোপ বাড়ে। তবে শীতের শুরুতেই বাতের ব্যথার রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে একটু সচেতন হলেই পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে আমাদের দেহের অভ্যন্তরে রয়েছে এক বিশেষ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘ইমিউন সিস্টেম’। রোগ-শোকের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করে এই সিস্টেম। কিন্তু অনেক সময় তা আবার শরীরের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করে বসে। হঠাৎ আক্রমণ করে শরীরের গিঁট, মাংসপেশিসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। কিন্তু ঠিক কী কারণে এই বিদ্রোহ, তা এখনো জানা যায়নি। আর এই বিদ্রোহের প্রভাব নানা বাত-ব্যথা-বেদনা। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০০ রকমের বাত রোগ আছে।

কারণসমূহ

বাত রোগের সঠিক কারণ এখনো অজানা। এরপরও বিজ্ঞানীরা কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন। যেমন-
বংশগত বা জেনেটিক কারণ (সাধারণত ১০ থেকে ১৫ ভাগ ক্ষেত্রে হয়ে থাকে)।
পরিবেশগত কারণ।
হরমোনের প্রভাব।

রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে। অনেক সময় থায়াজাইড, এসপিরিন, পাইরাজিনামাইড ইত্যাদি ওষুধেও ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গিয়ে গাউট হতে পারে।
ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাব।
উদ্বেগ, চিন্তা ইত্যাদি।

চিকিৎসা

বাতের ব্যথার রোগীদের শীতকালের জন্য আলাদা বা ভিন্ন কোনো চিকিৎসা নেই। তবে ব্যথা অধিক বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে। বাতের ব্যথার ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খেতে হয়। ব্যথানাশক ওষুধ খেলেও খেয়াল রাখতে হবে যাতে হার্ট, কিডনি, লিভার, ফুসফুস ইত্যাদি ভাইটাল অর্গানগুলোর ক্ষতি না হয়। মনে রাখতে হবে বাত ব্যথার রোগীরা কোনো ক্রমেই নিজের ইচ্ছায় ফার্মেসি থেকে কোনো ওষুধ কিনে সেবন করবেন না। এতে ব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে।

প্রতিরোধ 

কিছু উপায় রয়েছে, যাতে শীতকালেও ব্যথামুক্ত অথবা কম মাত্রার ব্যথা নিয়ে থাকা যায়। ফলে বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রেখেই দিনযাপন করা যায়।

স্বাভাবিক চলাফেরা ও ব্যায়াম 

শুধু বাতের রোগীদের জন্য নয়, বরং সবার উচিত শীতকালে স্বাভাবিক কাজকর্ম একটু বেশি করা। লেপ-কম্বল-কাঁথা মুড়ি দিয়ে বেশিক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকা বা বেশির ভাগ সময় বসে থাকা পরিহার করা উচিত। অনেকক্ষণ এক জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে না থেকে হালকা হাঁটাহাঁটি করুন। নিয়মিত নির্দেশমাফিক হালকা ধরনের ব্যায়ামগুলো করুন। তবে ব্যথা বেড়ে গেলে ব্যায়াম বন্ধ রাখুন।

গরম পোশাক 

শীতের সময় পর্যাপ্ত গরম পোশাকে আবৃত থাকা উচিত, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিরা বা মানুষগুলোকে শীতের সময় উষ্ণ রাখার চেষ্টা করতে হবে। এজন্য যথোপযুক্ত গরম কাপড় পরিধান করা শ্রেয়।

গরম পানি ব্যবহার

হালকা গরম পানিতে অজু-গোসল করুন। কুসুম গরম পানি পান করুন। গরম পানির সেঁক (ময়েস্ট হিট) আর্থ্রাইটিসের ব্যথার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার ব্যথার জায়গায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট গরম বা ঠাণ্ডা সেঁক দিলেও আরাম মেলে।

ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ

ব্যথা প্রতিরোধে ভিটামিন ‘ডি’ খুবই কার্যকরী। শীতে সূর্যালোক কম থাকায় ভিটামিন ‘ডি’-এর কিছুটা অভাব দেখা দেয়। তাই বেশি করে ভিটামিন ‘ডি’যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। আর ভিটামিন ‘ডি’ ডিফিসিয়েন্সি হলে পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে ভালো হয়, সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে ২০-৩০ মিনিটের মতো প্রতিদিন রোদ পোহাতে পারলে। কেননা, ভিটামিন ‘ডি’র ৮০ শতাংশের উৎস সূর্য।

 

সবা:স:জু- ২৯০/২৪

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম