নাটোরের বড়াইগ্রামে র‍্যাব সদস্যকে বাগে আনতে সাজানো মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার:

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামান্য কোনো ত্রুটিও সাধারণ মানুষ অনেক বড় করে দেখেন। কিন্তু মুদ্রার অপর পাশ দেখে না কেউ। এবার র‌্যাব সদস্যকে বিভিন্নভাবে হয়রানি, হুমকি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে নাজেহালের ঘটনা ঘটেছে।

নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বালিয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রউফ মুন্সীর ছেলে মোঃ মিজানুর রহমান। মিজান অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের এএসআই পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বর্তমানে র‌্যাব হেডকোয়ার্টারে দায়িত্ব পালন করলেও মিজান একজন নিরহংকার ও সরল সোজা মানুষ। পেশাগত জীবনেই নয়, তার নিজ গ্রামেও মিজানের নামে নেই বিন্দুমাত্র অভিযোগ। অথচ এমন একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিকে নানাভাবে হুমকি, মানহানি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

শুনে অবাক হলেন ?

অবাক হবারই কথা। র‌্যাব সদস্য মিজান চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকলেও তার পরিবার গ্রামেই থাকেন। দীর্ঘ চাকরি জীবনে কষ্টে অর্জিত অর্থ দিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি বাড়ি বানাবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
কারন মিজানের জমির পার্শবর্তী কথিত অংশীদার বাদশা নামে একজন শুরু করেছেন বিভিন্ন ষড়যন্ত্র। কিছু অসাধু ব্যক্তির কুপরামর্শ ও বাদশার লালসা পূরণ করতে র‌্যাব সদস্য মিজানের নামে অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন বাদশা ওরফে মামলা বাজ বাদশা। এমনকি জন্মগত প্রতিবন্ধী না হয়েও এলাকায় প্রতিবন্ধী বলে সহানুভূতি নিয়ে করে যাচ্ছেন নানা অসংগতি।

উল্লেখিত প্রকৃত জমির মালিক মিজানের বিরুদ্ধে মামলা, কুৎসা রটনা, বাড়িতে গিয়ে হত্যার হুমকি, মিজানের ছেলেকে আঘাত করাসহ সকল দুষ্কর্ম করছেন বাদশা। বাদশা কিছু ভাড়াটে বাহিনী ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের নিয়ে এসে করেছেন ভুয়া মানববন্ধনও। যারা জানতোও না কিজন্য মানববন্ধন হয়েছে!

পরবর্তীতে খোলস পাল্টে মিজানের বাড়িতে গিয়ে মিজানের পরিবারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তার ছেলেকে আহত করে মিজানের বাড়ির কাজ বন্ধ করে দেয় বাদশা। আইনের প্রতি সম্মান রেখে চললেও এখন বাদশার ভয়ে মিজান বাড়ির কাজ করতে পারছেন না। কারন বালিয়া এলাকার অনেকেই নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, বাদশা একজন সন্ত্রাস। সে প্রতিবন্ধীর ছদ্মবেশে অনেক যায়গায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়েছে। তাই ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তাছাড়া সে যে কারো নামে মামলা দিতে ওস্তাদ তাই অনেকে বাদশাকে মামলা বাজ বাদশাও বলে। যেখানে একজন র‌্যাব সদস্যকে এভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায় !!
কথিত প্রতিবন্ধী বাদশা এলাকার গুটিকয়েক ভাড়াটে লোকজন এবং বাদশার কর্মস্থল কলেজের কিছু ছাত্রদের নিয়ে একটি নাটকীয় মানববন্ধন সাজিয়ে মিজানকে হয়রানি করে যাচ্ছে। তাই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সরেজমিনে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায় ঘটনা সম্পূর্ণ উল্টো। বাদশা মিয়া তার জমি দখলের যে অভিযোগ করেন, তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। মূলত বাদশার কোন জমি ই নেই এবং বাদশর নামে কোন প্রকার জমির কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেনো এমন মানববন্ধন করা হলো মর্মে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ইছাহাক আলী বলেন, ‘বাদশা আমার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। তাই কিছু ছাত্রদের সাথে তার চেনা-জানা রয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাদশা ছাত্রদেরকে মানববন্ধনে নিয়ে গিয়েছে। তবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আমার কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি এবং কলেজ ছাত্রদেরকে নিয়ে মানববন্ধন করে বাদশা অন্যায় করেছেন।

বাদশা প্রতিবন্ধী কি না জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, আমার জানা মতে বাদশা প্রকৃত প্রতিবন্ধী না। সে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে বা একটা দুর্ঘটনায় তার পায়ে সমস্যা হয়। তবে সে জন্মগত প্রতিবন্ধী না।

জমি সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়ে অত্র এলাকার লোকজনের কাছে জানতে চাইলে তারা সাংবাদিকদের বলেন মিজান তার নিজের জমিতেই বাড়ি তুলছেন। কেউ কারো জমিতে হাত দেয়নি। মিজানের জমিতে মিজান আছে, বাদশার জমিতে বাদশা আছে। মিজানরা এই জমি প্রায় ৩০ বছর ধরে ভোগ করছে। কখনো কোনো কথা শুনিনি। এখন মিজান এই জমিতে বাড়ি করার কারণেই বাদশা এসব বলছে। তাছাড়া এখানে আশেপাশের জমি মিজানের। তাই তার পাশের জমিতেই সে বাড়ি তুলেছে। এখানেতো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।
অসহায় প্রতিবন্ধী দাবি করা বাদশার মানববন্ধন ও জমি দখলের অভিযোগের ব্যাপারে স্থানীয় জনগণের কাছে আরো জানতে চাইলে এলাকাবাসী সাংবাদিকদের বলেন, বাদশা প্রতিবন্ধীর নামে ভন্ডামি করে বেড়ায়। সে কোনো প্রতিবন্ধী না। একটা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়। এরপর থেকে সে প্রতিবন্ধী কার্ড বানিয়ে এসব করে বেড়ায়।
আর এই জমির বিষয়ে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ মিজান অত্যন্ত ভালো মানুষ। মিজানের নিজের জমিতে সে বাড়ি তুলছে। এখানে বাদশার জমি আলাদা রয়েছে। উল্টো মিজানের জমির দাম বেশি হওয়াই, বাদশা এখন এসব পায়তারা করছে।
অনেকে বলেন, বাদশা একজন মুখোশধারী লোক। ও একসময় সন্ত্রাসী করতো। ওর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাই না। তাছাড়া বাদশা কথায় কথায় মামলার ভয় দেখায়। সে মাঝেমধ্যেই এমন মামলা কান্ড ঘটায়। তাই লোকজন তাকে মামলাবাজ বাদশাও বলে। যেকোনো বিষয়ে ঝামেলা পাকিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করাই ওর কাজ।
বাদশার অভিযোগের বিষয়ে তার মায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মিজান আমাদের জমিতে বাড়ি তুলেছে। ওই জমি আমাদের। কিন্তু বাদশার মা-বাবা জমির কোনো যথোপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।
তাছাড়া বাদশার বাবা-মা বাদশাকে প্রতিবন্ধী বলে দাবি করেন। তারা বলেন, বাদশা জন্মগত প্রতিবন্ধী । কিন্তু স্থানীয় লোকজন, তার কলেজের অধ্যক্ষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রতিবেশী এমনকি বাদশা নিজেও স্বীকার করেন যে, বাদশা প্রতিবন্ধী নন। একটা সড়ক দুর্ঘটনায় সে আহত হয়। কিন্তু সে জন্মগত প্রতিবন্ধী নয়। অর্থাৎ বাদশা তার পরিবারকে মিথ্যা শিখিয়ে রেখেছেন।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর দেখা মেলে কথিত প্রতিবন্ধী বাদশা অরফে মামলা বাজ বাদশা অরফে সন্ত্রাসী বাদশার। নাটকীয় মানববন্ধন, জমি দখলের অভিযোগ, মামলা দায়ের, মিজানের বাড়িতে গিয়ে গালিগালাজ ও হত্যার হুমকিসহ সকল বিষয়ে কথা হয়।
বাদশার জমির দলিল সহ সকল কাগজপত্র যাচাই করা হয়। কিন্তু দলিলে কোথাও উক্ত মিজানের জমির সাথে বাদশার জমির কোনো বিরোধপূর্ণ অবস্থান দেখা যায়নি।

বাদশা দাবি ও অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তার কাছে সার্বিক বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। বাদশা দাবি করেন র‌্যাব সদস্য মিজান যেখানে বাড়ি তুলছেন, ওই জমি বাদশার। কিন্তু বাদশার জমির দলিলে পূর্বপাশে বলে কোনো শব্দ উল্লেখ নেই। অথচ র‌্যাব সদস্য মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, মিজান তার জমিতে বাড়ি তুলেছে। যার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই।

মামলা করার বিষয়ে বাদশাকে জিঙ্গাসাবাদ করিলে বাদশা সাংবাদিকদের বলেন “ আমি প্রথমে সালেহার নামেই মামলা করতাম কারন প্রকৃত মামলার আসামী সালেহা, কিন্তু সালেহা মেয়ে মানুষ তাকে মামলা দিয়ে কিছুই করতে পারবোনা, তাই আমি মিজানের নামে মামলা দিয়েছি।

তাছাড়া বাদশার প্রতিবন্ধী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি জন্মগত প্রতিবন্ধী না। একটা সড়ক দুর্ঘটনায় আমার পায়ে সমস্যা হয়। এরপর আমি প্রতিবন্ধী কার্ড করি।’
নিজেকে প্রতিবন্ধী দাবি করা বাদশার সনদের বিষয়ে খোঁজ নিতে যাওয়া হয় বড়াইগ্রাম উপজেলা সমাজসেবা অফিসে। অফিসে সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা না থাকায় কথা হয় অফিস সহকারীর সাথে। জন্মগত প্রতিবন্ধী না হয়েও কিভাবে এমন প্রতিবন্ধী কার্ড করা হলো এবিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে পারেননি। তিনি বলেন, আমাদের স্যার আসলে আপনারা স্যারের থেকে শুনে নিবেন।
সবাই যখন মিজানের পক্ষে এবং কথিত প্রতিবন্ধী বাদশার বিপক্ষে বলছে ঠিক তখন সরেজমিনে যাওয়া হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইউপি সদস্য মোঃ জালালউদ্দিন এর কাছে। বাদশার এমন ফাঁপরবাজি, প্রতারনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ইউপি সদস্য বলেন, বাদশা যে মানববন্ধন করেছিলো, সেটার বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা। পরে শুনেছি যে, সে কিছু লোক ও কলেজ ছাত্রদের নিয়ে একটা মানববন্ধন করেছে। আর এই জমির সমস্যার কথা অনেকদিন থেকেই আমরা শুনছি। কিন্তু আমরা যতটুকু জানি, এই জমি মিজানের। তাই মিজান তার নিজের জমিতেই বাড়ি তুলেছে। আর বাদশার জমি বাদশারই রয়েছে। তাছাড়া জমির দলিলে পূর্ব বা পশ্চিম পাশ উল্লেখ আছে বলে আমার জানা নেই।

ইতোপূর্বে বাদশা মিয়া স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান থেকে একটি মিথ্যা ও একতরফা রায় নেয়। রায় দেয়ার পূর্বে চেয়ারম্যান র্যা ব সদস্য মিজানকে পরিষদে দেখা করতে বলেন। কিন্তু মিজান চাকরির সুবাদে ঢাকায় অবস্থান করার কারণে গ্রামে যেতে পারেননি। সেই সুযোগে বাদশা মিয়ার যোগসাজশে একতরফা রায় দিয়ে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন তিনি। তাই ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও চেয়ারম্যানের দেখা পাওয়া যায়নি। একাধিকবার মেবাইলে যোগাযোগের চেষ্টার পর তিনি বলেন, তিনি রাজনৈতিক কাজে ব্যস্ত আছেন। ফোনে কথা বলবেন তিনি।
বাদশার মূল অভিযোগ হলো: ওই প্লটে মিজানের জমি পশ্চিম পাশে, আর বাদশার জমি পূর্ব পাশে। কিন্তু মিজান জোর করে বাদশার পূর্ব পাশের জমিতে বাড়ি তুলেছে। আর জমির আগের মালিক সালেহা বেগম ও মিজান ছলচাতুরী করে এই সমস্যা তৈরি করেছে।
তাই জমির আগের মালিক ও প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে জানা ব্যক্তি সালেহা বেগমের কাছে যাওয়া হয়। উপরোক্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সালেহা বেগম বলেন, বাদশা যে অভিযোগগুলো করেছে তা সব মিথ্যা কথা। কারণ মিজান অত্যন্ত ভালো ছেলে। সে ঢাকায় চাকরি করে। তাই গ্রামে পরিবারের জন্য একটা বাড়ি তুলছে। তার জমিতে সে বাড়ি তুলছে। এখানে সমস্যার কিছু নেই। আর বাদশার জমিতে কেউ হাত দেয়নি।

আমার জমি আমি বুঝেশুনেই মিজানকে দিয়েছি। জমি দেয়ার আগে বাদশা যদি আমার কাছে চাইতো। তাহলে জমি বাদশাকে দিতাম। কিন্তু মিজানকে জমি দেয়ার পর বাদশা ও তার বাবা সালাম একদিন আমার কাছে আছে। তখন আর কিছু করার নেই। কারন মিজানকে জমি দেয়ার পর বাদশা ও তার বাবাকে ওই জমি কিভাবে দিই ? মিজানকে জমি দেয়ার পরও বাদশা আমার কাছে জমি চায়। কিন্তু আমি এই অন্যায় কাজ করিনি। কারণ ওই জমির পূর্ব পাশে এখনো মিজানের জমি রয়েছে। তাই তার জমির সাথে আমার জমিও নিয়েছে। এটা মিজানেরই হক। তাহলে বাদশা ওই জমিতে ঝামেলা করে কেনো বুঝিনা। এখন বাদশা কিছু বদলোকের পরামর্শে মিজানকে ও আমাকে আইনি ঝামেলায় জড়াতে চাচ্ছে।

এদিকে মিজানুরের ছেলে বাড়িতে থাকার কারনে বাদশা মিয়া গং কিছু লোকজন কে পুলিশ সদস্য এবং সাংবাদিক পরিচয়ে বাড়িতে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে মিজানরের ছেলে কে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং ২৩ নভেম্বর মিজানুরের জোর করে বাড়ি দখল করে নেওয়ার হুমকি দেয়।অপর দিকে বাদশার পরিবার গত ১৮ নভেম্বর মিজানের বাড়িতে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে মিজানুরের পরিবারকে বেঁধে মারপিট করার হুমকি দেন।

কথিত প্রতিবন্ধী এই বাদশা মিয়ার অত্যাচারের সীমা শেষ কোথায়? যেখানে একজন র‌্যাব সদস্যকে এভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায় ? প্রশ্ন একালাবাসীর!

 জুয়ার ফাঁদে নিঃস্ব হচ্ছেন তরুণরা

মেহেরপুর প্রতিনিধি॥

মেহেরপুরের মুজিবনগর আদর্শ মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নুরুল ইসলাম এবং অফিস সহকারী কাম হিসাবরক্ষক জামান উদ্দিন। কলেজে শিক্ষাদান তাদের কাজ হলেও তারা অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম বসিয়ে এলাকার যুবসমাজকে ফেলেছেন হুমকির মুখে। তাদের ফাঁদে পড়ে যুবক থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ হয়েছেন নিঃস্ব।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে প্রভাষক নুরুল ইসলাম ওরফে লালন মাস্টার ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে ২০২২ সালে এলাকায় এসে জামান উদ্দিন ওরফে জামান মাস্টারের সঙ্গে মিলে কোমরপুর বাজারে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা খোলেন। এর চার মাস পর তারা মেহেরপুর জেলায় অনলাইন জুয়ার প্রথম এজেন্টশিপ আনেন মুকুল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে। সে সময় নুরুল ও জামান নিজেদের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে মুকুলকে এজেন্ট সিম ও জুয়ার ব্যবসা পরিচালনার টাকা দেন। এক পর্যায়ে জুয়া খেলে মুকুল টাকা নষ্ট করতে শুরু করলে জামান ও নুরুল মাস্টার তার মাধ্যমে অনলাইন জুয়া পরিচালনার জন্য আলাদা কয়েকটি চ্যানেল বের করে নেন। জামান মাস্টারের চ্যানেলের নাম ‘জামান নগদ’, ‘জামান রকেট’ ও ‘জামান উপায়’। আর নুরুল ওরফে লালন মাস্টারের চ্যানেলের নাম ‘ড্রাগন বিকাশ’, ‘ড্রাগন নগদ’, ‘ড্রাগন রকেট’ ও ‘মেলবেট চ্যানেল’। এর পর থেকে জামান ও নুরুল যৌথভাবে অনলাইন জুয়ার ব্যবসা চালাতে থাকেন। এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়।

অনলাইন জুয়ার পাশাপাশি নুরুল মাস্টার আদম ব্যবসাতেও হাত পাকান। এলাকায় অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে না পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি মেহেরপুর জেলার কয়েকজন তরুণকে রাশিয়ায় নিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছিল একটি চক্র। এই চক্রে নুরুল মাস্টারের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

মুজিবনগর আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ওমর খৈয়াম উষা বলেন, ‘এর আগে দুজনের বিরুদ্ধে অনলাইন জুয়ায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে মামলার খবর পেয়ে তাদের শোকজ করেছিলাম। তারা শোকজের উত্তর দিয়েছিলেন। এরপর আমাদের কিছুই করার ছিল না। কলেজের কাজ শেষে বাইরে তারা কী করেন, সেটি আমার জানার বা দেখার বিষয় নয়। তবে বিদেশে পাঠানোর নাম করে অনেকের কাছ থেকে নুরুল মাস্টার টাকা নিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা আমার কলেজে এসে অভিযোগ দিয়েছেন। আমি যতটুকু জানি কিছু জমি বিক্রি করে নুরুল সেই টাকা পরিশোধ করেছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। বর্তমানে আমি খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছি। সিটি ব্যাংকের একটি এজেন্ট আউটলেট ছাড়া আমার এখন আর কিছুই নেই। জমি-বাড়ি সব বিক্রি করে দিয়েছি। দোয়া করবেন যেন আমার তিনটি মেয়ে নিয়ে কোনো রকমে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারি।’

বিদেশে লোক পাঠানোর নামে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটা ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। উনার ওপর বিশ্বাস করে কীভাবে যে কী করেছিলাম! এখন আমি সম্পূর্ণ নিঃস্ব।’ তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ক্ষেত্রে লোক পাঠানোর অভিযোগের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

অন্য অভিযুক্ত জামান উদ্দিন বলেন, ‘মেহেরপুর জেলায় আমি প্রথম ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট পয়েন্ট নিয়ে এসেছি। আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই চাকরি করে। কিছু জমি জায়গা কিনেছি। অল্প সময়ের মধ্যে আমার উন্নতি দেখে কোমরপুর গ্রামের অনেকেই হিংসায় আমার নামে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের কথা শুনে আপনি আমার বিরুদ্ধে লিখলে সেটি সঠিক হবে না।’

জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ  বলেন, ‘আপনি যেটা বলছেন সেটা অভিযোগ মাত্র, প্রমাণিত কিছু না। এজন্য এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলব না। তবে বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে খতিয়ে দেখতে বলব।’

মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। তদন্ত চলছে। অনলাইন জুয়ায় সম্পৃক্ত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম