তারিখ লোড হচ্ছে...

নারীঘটিত কারন দেখিয়ে জবির ইমামকে অব্যাহতি, শিক্ষার্থীরা বলছে সাজানো নাটক

উম্মে রাহনুমা , জবি প্রতিনিধি:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় মসজিদে গত ৬ মে মধ্যরাতে মেয়েদের নামাজ পড়ার কক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় এক নারী শিক্ষার্থীকে পাওয়ার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মসজিদের ইমাম ছালাহ্ উদ্দীনকে তার দায়িত্ব পালন (নামাজ পড়ানো) থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (২৭ মে) এই অব্যাহতির আদেশ দেওয়া হয়। পরে এ ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন।
প্রক্টর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘গত ৬ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে কেন্দ্রীয় মসজিদে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়ার খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে একজন সহকারী প্রক্টরকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। সহকারী প্রক্টর ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই ইমাম মেয়েটিকে দ্রুত হলে পাঠিয়ে দেয়। মেয়েটি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাতো ঘটতে পারতো। এখানে ইমামের দায়িত্বে অবহেলা ছিল, তাই তাঁকে নামাজ পড়ানো থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে অন্য কোনো ইস্যু নেই। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তদন্তে মূল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
শিক্ষার্থীর সাথে ইমামের কিছু হয়েছিল কি না তার পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পেয়েছেন কি না এ প্রশ্ন করা হলে প্রক্টর বলেন, এরকম মিনিংফুল কিছুই না, শুধু তার দায়িত্বে অবহেলার জন্য তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মেয়েটি জেনুইনলি নামাজ পড়ার জন্যই গিয়েছিল, হয়তো মেয়েটি অসুস্থ অনুভব করায় সেখানে ঘুমিয়ে পড়েছিল এত রাত পর্যন্ত একজন মেয়ে শিক্ষার্থী মসজিদে ঘুমাবে বিষয়টি তার খেয়াল রাখা উচিত ছিল।
তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত হলো নাটক সাজিয়ে ইমামকে ফাঁসানো হয়েছে তিনি অনেক পরহেজগার মানুষ। ফাইরুজ সাদাফ অবন্তীর আত্মহত্যার পর গত ১৭ মার্চ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে মসজিদের ভিতর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড.সাদেকা হালিম মসজিদে প্রবেশ করেছিলেন ও সবার সামনে বক্তব্যও দিয়েছিলেন, বিষয়টি দেশব্যাপী সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। নারী পুরুষ এক সাথে মসজিদে প্রবেশের ব্যাপারে ইমাম ওইসময় বলেছিলেন “আমি সকাল থেকেই উপাচার্য জন্য মহিলাদের নামাজের স্থানে নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে বসার জায়গা করেছিলাম, কিন্তু প্রক্টর এসে বলেছেন ছোট জায়গায় উপাচার্য কেন বসবে? উপাচার্য মূল মসজিদেই বসবেন, আমি বাধ্য হয়েই সেটা মেনে নিয়েছি। মসজিদের ভিতর নারী পুরুষের একসাথে অবস্থান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।”
বর্তমান নারীঘটিত দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগের ঘটনার বিষয়ে জানতে মসজিদের ইমাম ছালাহ্ উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না বলে প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন তিনি।

ভূমিকম্প শুরু হলে ৫ কাজ ভুলবেন না

অনলাইন ডেস্কঃ

এক বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম ভূমিকম্প। এই দুর্যোগের উৎপত্তি নিয়ে ভূতত্ত্ববিদরা বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করলেও ইসলামি বিশ্বাসমতে তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য সতর্কবার্তা অথবা আজাব। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, ‘আল্লাহ তোমাদের উপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম’ (সুরা আনআম: ৬৫)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৫৯)

ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, ভূমিকম্প শুরু হলে পাঁচটি কাজ ভুলে গেলে চলবে না। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো।

 আত্মরক্ষায় করণীয়

ঘরের বাইরে থাকলে ভূমিকম্পের প্রথম ঝাঁকুনির সঙ্গে সঙ্গে খোলা জায়গায় আশ্রয় নিন। ঘরে থাকাবস্থায় ভূমিকম্প শুরু হলে দ্রুত বেরিয়ে যান, আশেপাশের সবাইকে বের হয়ে যেতে বলুন। সঙ্গে কিছু নেওয়ার জন্য অযথা সময় নষ্ট করবেন না। আর সুযোগ না থাকলে বাচ্চা, বৃদ্ধ, অসুস্থদের নিয়ে দ্রুত নিরাপদ স্থানে যেমন ইটের গাঁথুনি দেওয়া পাকা ঘর হলে ঘরের কোণে এবং কলাম ও বিমের তৈরি ভবন হলে কলামের গোড়ায় আশ্রয় নিন। আধাপাকা বা টিন দিয়ে তৈরি ঘর থেকে বের হতে না পারলে শক্ত খাট বা চৌকির নিচে আশ্রয় নিন। এর আগে দ্রুত বৈদ্যুতিক ও গ্যাসের সুইচ বন্ধ করে দিন। ঘরে হেলমেট থাকলে মাথায় পরে নিন, অন্যদেরও পরতে বলুন। ভূমিকম্পের সময় লিফট ব্যবহার করবেন না। গাড়িতে থাকলে যথাসম্ভব নিরাপদ স্থানে থাকুন। কখনো সেতুর ওপর গাড়ি থামাবেন না।

ভূমিকম্পের সময় কখনই সিঁড়িতে আশ্রয় নেবেন না। সিঁড়ির ‘মোমেন্ট অফ ফ্রিকোয়েন্সি’ বিল্ডিং-এর চাইতে ভিন্ন হয় এবং অনেক সময় বিল্ডিং ভেঙ্গে না পড়লেও সিঁড়ি দ্রুত ভেঙ্গে পড়ে। চেষ্টা করুন বাসার একেবারে ভেতরের দিকের রুমে না থেকে বাইরের ওয়ালের কাছাকাছি আশ্রয় নিতে। বিল্ডিং-এর ভেতরের দিকে থাকলে সবকিছু ভেঙ্গে পড়ার পর আপনার ‘উদ্ধার পাবার রাস্তা’ ব্লক হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাইরের ওয়ালের কাছাকাছি থাকলে ব্লক কম থাকবে, তাড়াতাড়ি উদ্ধার পাবার সম্ভাবনাও বেশি থাকবে। বড় ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যেটাকে ‘আফটার শক’ বলে। এটার জন্যও সতর্ক থাকুন। এসবকিছু নিরাপত্তার স্বার্থে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। কারণ ইসলামে জান বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা জরুরি। সুরা বাকারার ১৯৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ করো না’। এই আয়াত থেকে ইসলামিক ফিকহবিদরা বলেছেন যে, আত্মরক্ষা বা জান বাঁচানো ফরজ।

 ধৈর্য

যেকোনো বিপদাপদে ধৈর্যধারণ প্রকৃত মুমিনের বিশেষ একটি গুণ। ভূমিকম্পের মতো মসিবতে ধৈর্যধারণ না করলে বিপদ বরং বেড়ে যেতে পারে। যেমন- বহুতল বাড়ির ওপরের দিকে কোনো তলায় আটকা পড়লে, বেরিয়ে আসার কোনো পথই না থাকলে, সাহস হারাবেন না। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। ভেবে দেখুন, উদ্ধারকারী পর্যন্ত আপনার চিৎকার পৌঁছাবে কি না। বিম, দেয়াল, কংক্রিটের ছাদ ইত্যাদির মধ্যে আপনার শরীরের কোনো অংশ চাপা পড়লে, বের হওয়ার সুযোগ যদি না-ই থাকে, তবে বেশি নড়াচড়া করবেন না। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। ধ্বংসস্তূপে আটকে গেলে সাহস হারাবেন না। যেকোনো উত্তেজনা ও ভয় আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কোরআন-হাদিসের ভাষ্যমতে, ধৈর্য অনেক উপকারী একটি গুণ। বিশেষ করে মুমিনের জন্য তা নেয়ামতস্বরূপ। হাদিসে এসেছে, মুমিনের বিষয়টি বড় আশ্চর্য রকমের, বিপদে পড়লে এতে সে ধৈর্য ধরে আবার সুখে থাকলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। উভয় অবস্থাই তার জন্য কল্যাণকর।’ (সহিহ মুসলিম: ২৯৯৯)

আল্লাহর ওপর ভরসা

ভূমিকম্পের সময় যেটুকু সময় পাওয়া যায় মাথা ঠান্ডা রাখা সম্ভব হয় না। তবুও চেষ্টা করতে হবে এবং সবকিছু যথাযথ মেনে চলার পর একমাত্র আল্লাহর ওপরই ভরসা রাখতে হবে। কারণ আল্লাহ না চাইলে পৃথিবীর কোনো শক্তি কাজে আসবে না। তাই মুমিনের কর্তব্য হলো- যেকোনো বিষয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করা। আল্লাহর ওপর ভরসাকারীদের বড় পুরস্কারটি হলো- তিনিই ওই বান্দার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। বান্দার আর কিছুর প্রয়োজন হয় না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক: ৩) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘বস্তুত, যারা ভরসা করে আল্লাহর ওপর, তারা নিশ্চিন্ত। কেননা আল্লাহ অতি পরাক্রমশীল, সুবিজ্ঞ।’ (সুরা আনফাল: ৪৯)

দোয়া

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যেকোনো বিপদ-মসিবতে নবীজির শেখানো যেকোনো দোয়া পড়তে পারেন। বিশেষ করে কোরআনে বর্ণিত দোয়া ইউনুস তথা لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ-লিমিন।’ অর্থ: ‘তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তুমি পবিত্র সুমহান; আমি নিশ্চয়ই জালিমদের দলভুক্ত’ এই দোয়াটি পড়বেন। এই দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। মহানবী (স.) বলেছেন, ‘মাছের পেটে ইউনুস (আ.) এই দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকেছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি কোনো মুসলিম বিপদে পড়ে দোয়াটি পাঠ করে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।’ (আহমদ, তিরমিজি, মেশকাত: ২২৯২)

ইস্তেগফার

যেকোনো বিপদ-মসিবতে ইস্তেগফার ও তওবা করা মুত্তাকিদের একটি বিশেষ আমল। সেজন্য ভূমিকম্পের সময় প্রত্যেক মুসলমানের আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করা উচিত। এক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (স.) নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘দ্রুততার সঙ্গে মহান আল্লাহর জিকির করো, তাঁর কাছে তওবা করো।’ (বুখারি: ২/৩০; মুসলিম: ২/৬২৮)

উল্লেখ্য, ভূমিকম্পসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য যেকোনো বিপদ-মসবিত কিন্তু মানুষের হাতের কামাই। আল্লাহ তাআলা অযথা বান্দাকে শাস্তি দিতে চান না। তাই আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার জন্য আমল পরিশুদ্ধ করার বিকল্প নেই। যে আমলে আল্লাহ খুশি হন, সে আমল বেশি বেশি করতে হবে। নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, দান-সদকাসহ নেক আমল করতে হবে। হাদিসে আছে, ‘সদকা আল্লাহর অসন্তুষ্টিকে নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যু রোধ করে।’ (সুনানে তিরমিজি: ৬০০)

আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হওয়ার পর দুর্যোগে পতিতদের উদ্ধার, চিকিৎসাসহ অন্যন্যা সহায়তা দেওয়া মুমিনের কর্তব্য। সুযোগ থাকার পরও এতে অবহেলা করলে কঠিন গুনাহ হবে। আল্লাহ তাআলা কিন্তু এক দুর্যোগ দিয়ে সবার পরীক্ষা নেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রত্যেক বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সবা:স:জু- ৬৮৯/২৫

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম