সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদ বিএফইউজে ও ডিইউজের

সবুজ বাংলাদেশ ডেস্ক ॥

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম এক বিবৃতিতে মিডিয়ার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ, হুমকি দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

সোমবার (৭ জুলাই) এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলে রুদ্ধ বাকস্বাধীনতা পুনরুদ্ধার ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম লক্ষ্য।

সেই চেতনা থেকে সরে এসে জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান নেতাদের কেউ কেউ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও হুমকি দিয়ে চলেছেন। সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে বিকশিত হতে না দিয়ে উল্টো এ ধরনের হুমকি প্রদর্শন নিতান্ত অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য। রোববার (৬ জুলাই) রাজশাহীতে এনসিপির অন্যতম একজন শীর্ষ নেতা যে হুমকি দিয়েছেন, তা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধক।
বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, ওই এনসিপি নেতার বক্তব্যে আমরা ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। মনে রাখতে হবে সাংবাদিকদের হুমকি কিংবা মব জাস্টিসের জন্য ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থান সংঘটিত করেনি।

সাংবাদিক নেতারা হুমকিদাতা এনসিপির ওই নেতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ৬০ জনের বেশি সাংবাদিক খুন হয়েছেন। শুধু জুলাই বিপ্লবের সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ছয়জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। শুধু তাই নয়, জুলাই-আগস্টে ছাত্রদের আন্দোলনের সমর্থনে সাংবাদিকরা নিয়মিত রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

বিবৃতি বলা হয়, জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান যেসব কারণে সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ। আজ এনসিপি নেতা সাংবাদিকদের যে হুমকি দিয়েছেন তা জুলাই বিপ্লবের চেতনাবিরোধী। জুলাই বিপ্লবের একজন ছাত্রনেতার কাছে এটা আমাদের প্রত্যাশিত ছিল না।

বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বলেন, সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা অর্জনের ঐতিহ্যবাহী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আমরা অতীতেও এ ধরনের অযাচিত ও অন্যায় হস্তক্ষেপ মেনে নেইনি, এখনও মেনে নেব না। মিডিয়ার ভূমিকা সম্পর্কে কারো কোনো আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সেগুলোর প্রতিবিধানের জন্য আইন, আদালত ও প্রেস কাউন্সিলের শরণাপন্ন হতে পারেন। কিন্তু এ ধরনের আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা নিন্দনীয়। সংশ্লিষ্ট মহলকে এ ধরনের তৎপরতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই।

সাংবাদিকতায় আপনার জীবন নিরাপদতো ? সাগর-রুনি হত্যা: তদন্ত প্রতিবেদন পেছাল ১০৮ বার

মোঃ হাসানুজ্জামান:

দেশের বহুল আলোচিত খ্যাতনামা সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা আবারও বাড়িয়েছেন আদালত। এ নিয়ে মোট ১০৮ বার সময়সীমা বাড়ানো হলো।

আজ মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তদন্ত সংস্থা র‍্যাব প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২ এপ্রিল নতুন তারিখ ধার্য করেন।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক সাগর এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তারই সহধর্মিণী রুনিকে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে তাদের ভাড়া বাসায় হত্যা করা হয়। যা সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

ওই ঘটনায় নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার একজন এসআই। চার দিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।

দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি পুলিশ। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ওই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র‍্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেই থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি। মামলাটিতে সন্দেহভাজন হিসেবে এ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পার হয়েছে ১২ বছর, আর কতো ?
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার ১২ বছর পার হলেও তাদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার এখনো স্বপ্নের মতো। মামলার অগ্রগতি নিয়ে কোনো আশা আছে কি না তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। কারণ দিন যত গড়াচ্ছে, ধুম্রজাল ততই বাড়ছে।

পরিতাপের বিষয় হলো- মামলাটি নিয়ে শুরু থেকেই চলছে অদৃশ্য এক খেলা। গণমাধ্যমে সাড়া জাগানো জোড়া খুনের মামলাটিতে আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বারবার তারিখ দেন। তবে কোনোবারই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়ে না। আদালত আবারও সময় বাড়ান। আবারো প্রতিবেদন দাখিলে ব্যর্থ, আবার বাড়ান সময়। ঠিক এভাবেই চলছে।

বলতে অস্বস্তি বোধ হলেও এটাই সত্যি। লজ্জাজনক এই হতাশাজনক চক্র গত ১২ বছর ধরে চলছে। তদন্তকারীরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য এর আগে মোট ১০৭ বার সময় চেয়েছেন। এবার তা দাঁড়ালো ১০৮ বারে।

এদিকে ভুক্তভোগী পরিবার হতাশা প্রকাশ করে এই চক্রকে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ১২ বছরের ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেছে। যা রীতিমতো সবার জন্য লজ্জার।

এইতো গত সপ্তাহেই মাননীয় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জাতীয় সংসদে বলেন, “সাংবাদিক দম্পতি হত্যার তদন্ত শেষ করার কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয়।”

তারও আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি আনিসুল হক বলেছিলেন, “সাগর-রুনির খুনিদের খুঁজে বের করতে যদি তদন্ত ৫০ বছর লেগে যায়, তাহলে দিতে হবে।”

প্রেক্ষাপট:
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন।

সেই সময় ফ্ল্যাটটিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিল তাদের একমাত্র সন্তান মাহির সারোয়ার মেঘ। তার বয়স ছিল তখন মাত্র ৫ বছর। বাবা-মায়ের সেই নৃশংস মৃত্যুর কল্পনা নিয়ে কিশোর মেঘের বয়স এখন ১৭ বছর।

সবচেয়ে হতাশার ব্যাপার হলো, হত্যাকাণ্ডের পরপরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। সেই ৪৮ ঘণ্টা এখন ১ লক্ষ ঘণ্টা অতিক্রম করেছে, কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি।

১০৭ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে পুনরায় আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আদালতে এ মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়। অবশেষে সময়সীমা বেড়ে ১০৮ বারে গিয়ে ঠেকলো।

একই ঘটনা আপনার সাথে ঘটলে বিচার পাবেনতো?
আমাদের দেশের গণমাধ্যম সেক্টরটি খুব বেশি নিরাপদ নয়। গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য খুব বেশি শক্ত প্রতিরক্ষা আইন নেই। অবশ্য অদৃশ্যভাবে সাংবাদিকদের হাত-পা বেঁধে দেয়ার জন্য আইন আছে। যার নাম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই আইনের মার-প্যাচ সবারই জানা।
দেশের অন্যতম দুটি বৃহত টেলিভিশন চ্যানেলের নামকরা দু’জন সাংবাদিক খুন হলেন। তাদের বিচার প্রক্রিয়ার হাল আমরা সকলেই দেখতে পাচ্ছি।

এখন প্রশ্ন-
সাংবাদিকতায় আপনার জীবন নিরাপদতো ?
আপনার সাথে এমনটা ঘটলে আপনি বিচার পাবেনতো ?
প্রশ্ন আরো জাগে- আপনি কি সাংবাদিকতায় থাকবেন ?

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
জুলাই যোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে আরও দেড় হাজারের বেশি আবেদন সতর্ক মন্ত্রণালয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি শুরু প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন ইএম ২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদ সম্পদের পাহাড় জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে অত্যন্ত হতাশাজনক : মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক দের মাঝে যে অনৈক্য কুমিরের দেখা মিলল রাজশাহীর পদ্মায় সরকার ও সেনাবাহিনী, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও ন্যায়বিচার যেন ব্যাহত না হয় আজ থেকে আমরণ অনশন, প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের