ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় কাঁঠাল

লাইফস্টাইল ডেস্ক:

কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম আর্টোকার্পাস হেটেরোফিলাস। কাঁঠালের আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশেই। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও তার আশেপাশের এলাকাগুলো কাঁঠালের উত্‍পত্তির স্থান হিসেবে বিবেচিত। ব্রাজিল ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের জ্যামাইকায় সীমিত পরিমাণে কাঁঠাল জন্মে। বাংলাদেশ, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণ ভারত, বিহার, মিয়ানমার, মালয়, শ্রীলংকা ইত্যাদি এলাকায় যে হারে কাঁঠাল চাষ হয়, এই পরিমাণে বিশ্বের আর কোথাও কাঁঠাল চাষ হয় না।

গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল—কথাটা অনেক সময়েই আমরা ব্যবহার করি। এই কাঁঠাল কি সত্যিই এতটাই মহার্ঘ যে এর জন্য গোঁফে তেল দিয়ে অপেক্ষা করা যায়! হ্যাঁ, স্বাস্থ্যকথা তো তাই ই বলছে। যদিও অনেকেই কাঁঠালের গন্ধে নাক সিঁটকোন, আর এই ফলটিকে যথাসম্ভব দূরেই রাখেন। তারা অন্তত এবার জেনে নিন এই ফলের কী কী গুণ রয়েছে, যা আপনাকে একবার হলেও এই ফলের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে। কাঁঠালে এমন অনেক উপাদান রয়েছে, যা শরীরের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে।

অতি প্রিয় ফল ও তরকারি হিসেবে কাঁঠাল যুগ যুগ ধরে কদর পেয়ে আসছে। কাঁঠালের বিচি এখানকার মানুষের একটি ঐতিহ্যপূর্ণ তরকারি। বিশেষ করে কাঁঠালের বিচি দিয়ে শুঁটকি ভর্তা অত্যন্ত প্রিয় সকলের। বিভিন্ন ধরনের শাক ও কাঁঠালের বিচির সমন্বয়ে রান্না করা তরকারি এখানকার মানুষ তৃপ্তির সঙ্গে ভাত খেতে পারেন। তাছাড়া গবাদিপশুর জন্যও কাঁঠালের ছাল উন্নতমানের গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এক প্রকারের সবুজ রঙের সুমিষ্ট গ্রীষ্মকালীন ফল।

কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল হিসেবে সরকারিভাবে নির্ধারিত। বাংলাদেশের সর্বত্র কাঁঠাল গাছ পরিদৃষ্ট হয়। কাঁঠাল গাছের কাঠ আসবাবপত্র তৈরির জন্য সমাদৃত। কাঁঠাল পাতা বিভিন্ন প্রাণীর পছন্দের খাদ্য। তুলনামূলকভাবে বিশালাকার এই ফলের বহির্ভাগ পুরু এবং কন্টকাকীর্ণ, অন্যদিকে অন্তরভাগে একটি কান্ড ঘিরে থাকে অসংখ্য রসালো কোয়া। কাঁঠালের বৃহদাকার বীজ কোয়ার অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত।

কাঁঠাল এমন একটি ফল, যা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, থায়ামিন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং জিঙ্কে সমৃদ্ধ। এসব ছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পুষ্টিমান হিসেবে মোট কার্বোহাইড্রেট ২৪ গ্রাম, বায়াটারি ফাইবার ২ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, ভিটামিন এ ২১৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬.৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০৩ মিলিগ্রাম এবং ক্যালরি পাওয়া যায় ৯৪ মিলিগ্রাম। খনিজ পদার্থ- ১.১ গ্রাম কিলোক্যালরী ৪৮, আমিষ-১.৮ গ্রাম, শর্করা ৯.৯ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ২০ মি. গ্রাম, লৌহ-০.৫ মি.গ্রাম, ভিটামিন বি ১-.১১ মি. গ্রাম, ভিটামিন বি২- ১৫ মি.গ্রাম, ভিটামিন সি-২১ মি.গ্রাম, ক্যারেটিন-৪৭০০ মাইক্রোগ্রাম, অশ-০.২ গ্রাম, চর্বি-০.১ গ্রাম, জলীয় অংশ-৮৮ গ্রাম।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, কাঁঠালে কোনো ক্যালরি নেই। তাই হার্ট সংক্রান্ত অনেক সমস্যায়ও এটি বেশ উপকারী। তবে কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা খুব একটা জানি না। রসালো এই ফলে কী উপকারিতা লুকিয়ে আছে, চলুন জেনে নেওয়া যাক-

ক্যানসার প্রতিরোধ করে

ক্যানসারের কোনো উত্তর আমরা এখনো সে অর্থে পাই না। তবে যে সব টক্সিক পদার্থও এই রোগকে ত্বরান্বিত করে, সেগুলো এই কাঁঠালের ঠেলায় দূরে থাকে। কারণ কাঁঠালে থাকে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভনয়েডসের মতো যৌগ। এই যৌগগুলো শরীরে ক্যানসার বাসা বাঁধতে দেয় না।

এনার্জি থাকে ভরপুর

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে আপনি পাবেন ৯৪ কিলো ক্যালোরি শক্তি। এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট আপনাকে সবসময় রাখে প্রাণবন্ত। তাই রোজ কাঁঠাল খেলে যতই পরিশ্রম করুন, তার ক্লান্তি ততটা বোধ করবেন না একেবারেই।

হৃদয়ের যত্ন নেয়

আমাদের শরীরে পটাশিয়াম আর সোডিয়ামের ব্যালেন্স ঠিক না থাকলে খুবই সমস্যা হয়। কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা শরীরের সোডিয়ামকে ব্যালেন্সে রাখে। তারই সঙ্গে আপনার হৃদপেশিগুলোকেও সচল রেখে, তাদের কাজে একটা ছন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করে এই পটাশিয়াম। তাই আপনার হৃদয়ও থাকে সুস্থ-সবল।

তারুণ্য বজায় রাখে

চারপাশের ধূলো-ময়লা-জার্ম থেকে আমাদের ত্বক সুরক্ষিত নয়। তাই খুব তাড়াতাড়ি আমাদের মধ্যে বার্ধক্য এসে যায়। আর এই বার্ধক্যকে বাড়িয়ে দেয় হাই অক্সিডেটিভের মতো মৌল। এগুলো দূষণের সাথে বিক্রিয়া করে ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলে। কাঁঠাল এই মৌলর সাথে যুদ্ধ করেই আমাদের ত্বককে রাখে তরতাজা। তাই রোজ কাঁঠাল খান আর ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া আটকে রাখুন।

অ্যাজমার সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়

যাদের হাঁপানির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কাঁঠাল একদম ওষুধের মতো কাজ করে। আবার কাঁচা কাঁঠাল সিদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে সে পানি ঠান্ডা করে পান করলে অ্যাজমার সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।

হাড় ভালো রাখে

হাড়ের ক্ষয় রোগ বা ভঙ্গুরতা একটি ভয়ানক অসুখ। এক্ষেত্রে আপনাকে বাইরে থেকে দেখতে স্বাভাবিক মনে হলেও ভেতরে আপনি একেবারে জীর্ণ হয়ে যাবেন। হাড় ভালো রাখতে চাইলে খাবারের তালিকায় রাখতে হবে কাঁঠাল। কারণ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এই ফল আপনার হাড় শক্ত রাখতে কাজ করবে।ভিটামিন সি-র একটি দুর্দান্ত উৎস

কাঁঠাল ভিটামিন সি-র একটি দুর্দান্ত উৎস। ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মজবুত করে। তাই ভিটামিন সি-র ঘাটতিজনিত রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতেও কাঁঠাল খাওয়া উচিত। প্রতিদিন এক থেকে দু কোয়া কাঁঠাল খেলে সহজেই আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। আপনার সুস্থতা আপনার হাতেই থাকবে।

পেট পরিষ্কার করে

কাঁঠালের একটি অন্যতম বড় সুবিধা হলো এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তিকে মজবুত করে। আর ফাইবার পেট পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে।

কোলেস্টরলমুক্ত

কাঁঠালে আছে ভিটামিন বি৬। উপকারী এই উপাদান ছাড়াও এতে পাওয়া যায় প্রচুর ক্যালোরি। তবে এতে কোনো রকম কোলেস্টেরল নেই। তাই কাঁঠাল খেলে উপকার মিলবে সহজেই।

ত্বক উজ্জ্বল করে

ত্বক উজ্জ্বল রাখতে চাইলে কেবল বাইরে থেকে যত্ন নেওয়াই যথেষ্ট নয়। বরং খেয়াল রাখতে হয় খাবারের দিকেও। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে ত্বক দ্রুত উজ্জ্বল হবে। কারণ এই ফলে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। সেইসঙ্গে কমায় বলিরেখাও।

গর্ভস্থ শিশুর পুষ্টির অভাব দূর হয়

গর্ভবতী মা প্রতিদিন ২০০ গ্রাম পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভস্থ শিশুর সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয় এবং গৰ্ভস্থ সন্তানের বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবে হয়। এই কাঁঠালের সব থেকে বড় গুণ হচ্ছে এটি মায়ের দুধের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।

চোখ ভালো রাখে

চোখের যত্ন নেওয়া জরুরি। কারণ আমাদের অবহেলা বা অযত্নের কারণে কমতে থাকে দৃষ্টিশক্তি। আপনার দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে কাজ করবে কাঁঠাল। এই ফলে আছে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ এবং বিটা ক্যারোটিন। চোখ ভালো রাখার জন্য এই দুই উপাদান অপরিহার্য।

রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ কর

পটাশিয়ামের পাশাপাশি কাঁঠাল আয়রনের একটি দারুণ উৎস। এ আয়রন রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একই সঙ্গে রক্ত​চলাচলও ঠিক রাখতে সাহায্য করে এ আয়রন।

ত্বকচর্চায় ঘরেই বানান কোরিয়ান ফেসপ্যাক

লাইফস্টাইল ডেস্ক:

নতুন নতুন সব স্কিন ট্রেন্ড তৈরিতে কোরিয়ানদের জুড়ি নেই। তবে বাজারচলতি কোরিয়ান স্কিন কেয়ার যেমন দামি তেমনি পণ্যে থাকা নানা রাসায়নিক ত্বকের ক্ষতিও করতে পারে।

তাই অনেকেই এখন ঘরোয়া উপায়ে কোরিয়ান স্টাইলে তাদের মতো গ্লাস স্কিন পেতে আগ্রহী। জেনে অবাক হবেন দুটি সাধারণ উপাদান দিয়েই ঘরেই তৈরি করতে পারেন কার্যকর একটি কোরিয়ান ফেসপ্যাক, যা ত্বককে করে তুলবে উজ্জ্বল, মসৃণ ও তরতাজা।

ফেসপ্যাক তৈরির উপকরণ

চালের গুঁড়ো ২ চা চামচ
অ্যালোভেরা জেল

কীভাবে বানাবেন?

প্রথমে অ্যালোভেরা পাতার কেটে জেল সংগ্রহ করুন (যদি তাজা ব্যবহার করেন, নাহলে দোকান থেকে কিনেও ব্যবহার করতে পারেন)। এবার একটি পরিষ্কার পাত্রে অ্যালোভেরা জেল ও চালের গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। যতক্ষণ না এই মিশ্রণটি ভালোভাবে মিশে যাচ্ছে ততক্ষণ ব্লেন্ড করুন। চাইলে ফ্রিজে রেখে কয়েক মিনিট ঠান্ডা করে নিতে পারেন, এতে ত্বকে আরও সতেজতা অনুভব হবে।

ব্যবহার পদ্ধতি

এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করার আগে মুখ ও ঘাড় পরিষ্কার করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এবার তৈরি করা ফেসপ্যাকটি মুখ ও ঘাড়ে সমানভাবে মেখে নিন। ১৫ মিনিট রেখে দিন যাতে প্যাকটি শুকিয়ে যায়। এরপর সামান্য পানি দিয়ে হালকা হাতে মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। মুখ মুছে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে নিয়ম করে অন্তত ২-৩ দিন এই ফেসপ্যাক ব্যাবহার করুন উজ্জ্বল ত্বক।

এই ফেসপ্যাকের উপকারিতা কী?

এই ঘরোয়া ফেসপ্যাক ত্বকের মৃত কোষ দূর করে। চালের গুঁড়ো ত্বক স্ক্রাব করে এক্সফোলিয়েশনে সাহায্য করে।

অ্যালোভেরা জেল ত্বকে আর্দ্রতা যোগায় এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। ত্বককে মসৃণও করে।

এছাড়া ত্বকের রোদে পোড়া ও কালচে ভাব কমায়, স্কিন টোন ব্রাইট করতে সহায়তা করে।

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম