ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে রেটকোট ফাঁস করেছেন পিডি মঞ্জুরুল হক

ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে রেটকোট ফাঁস করেছেন পিডি মঞ্জুরুল হক

বিশেষ প্রতিবেদক:

প্রবাদ আছে যে, কয়লা শতবার ধুলেও তার ময়লা ছাড়ে না। ঠিক তেমনটিই পরিলক্ষিত হচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসির) একটি বৃহত্তর প্রকল্পের পিডির ক্ষেত্রে। এই প্রকল্প পরিচালক প্রায় এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি করে বারবার সংবাদপত্রের শিরোনাম হলেও তিনি নিজেকে শুধরাচ্ছেন না। বরং দিনদিন তার দুর্নীতির মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিব ও বিসিআইসি চেয়ারম্যানের নিরবতাও সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। এমন একজন আওয়ামী ঘরাণার পিডিকে কেন আজঅব্দি এই প্রকল্পের পিডি রাখা হয়েছে তারও কোন জবাব মিলছে না। এই পিডির নাম মো: মঞ্জুরুল হক। তিনি বাফার ৩৪ সার গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক।

সম্প্রতি এই পিডি বাফার ৩৪ সার গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডারে ভয়ংকর দুর্নীতি করেছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে। তিনি বিশেষ চুক্তিতে ৪ টি ঠিকাদারী ফার্মকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ওই ৪ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে রেটকোট ফাঁস করে দিয়েছেন । ফলে তার পছন্দের ঠিকাদারী ফার্মগুলো সর্বনিন্ম দরদাতা হিসাবে কাজগুলো পেতে যাচ্ছে। কাজগুলো হলো: ১ম প্যাকেজ,লট নং ০৩, কুমিল্লা সাইট। ৫ম প্যাকেজ, লট নং ০১, সাতক্ষীরা সাইট এবং খুলনা ও বাগেরহাট সাইট।

সুত্রমতে, ৩ নং লটের কুমিল্লা সাইটের কাজ পেতে যাচ্ছেন এমবিএল নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এই কাজে মোট ৫ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করেছিল। ০১ নং লটের সাতক্ষীরা সাইটের কাজ পেতে যাচ্ছে এসএস রহমান নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এই দরপত্রে মোট ৬ টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করেছিল। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে বিশেষ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে পিডি মো: মঞ্জুরুল হক রেটকোট ফাঁস করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন অন্যান্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

আরো একটি গুরুতর তথ্য পাওয়াগেছে যে, অদ্য ১০/০৭/২০২৫ তারিখ বেলা ৩ টার সময় খুলনা ও বাগেরহাট জেলার টেন্ডার ওপেন করা হবে। এই টেন্ডারের ক্ষেত্রেও পিডি মো: মঞ্জুরুল হক দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বিশেষ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে তাদের কাছেও রেটকোট ফাঁস করে দিয়েছেন। সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুটির নাম: এনডিই এবং এআইএল। ফলে খুলনার কাজটি পেতে যাচ্ছে এনডিই এবং বাগেরহাটের কাজটি পেতে যাচ্ছে এআইএল ঠিকাদারী ফার্ম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৪ সালে আওয়ামী সরকার আমলে প্রকল্প পরিচালক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় আওয়ামী সুবিধাভোগী প্রকৌশলী মনজুরুল হককে। তিনি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বাফার গুদাম নির্মাণ করার মতো তার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তিনি বিসিআইসি ভবনে আওয়ামী লীগ সরকারের একজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তার বাড়ি বরিশাল শহরে। মনজুরুল হক ৫ আগস্টের আগে নিজেকে শুধু ছাত্রলীগ করা নেতা হিসাবে পরিচিতই করেননি, হাসনাত আবদুল্লাহর আত্মীয়ও বলতেন। সাবেক মন্ত্রীর কমিশন বাণিজ্য নির্বিঘ করতে ‘দলীয় কর্মকর্তা’ বিবেচনায় তাকে প্রকল্প পরিচালক করা হয়। এর আগে মনজুরুল হক ২০২২ সালে আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের জিএম থাকাবস্থায় যন্ত্রাংশ ক্রয়ের নামে ৪টি প্যাকেজে ২শ কোটি টাকা কাজের টেন্ডার করেন।

অভিযোগ আছে, এ ৪টি প্যাকেজ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুস নিয়ে মেসার্স সাইফ পাওয়ার টেককে কাজ পাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে এলে কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। এ নিয়ে প্রকল্প পরিচালক মঞ্জুরুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেওয়া হয়। ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

আরএডিপি (রিভাইজড অ্যানুয়াল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান বা সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পিডব্লিউডির রেট শিডিউল দিয়ে নির্মাণকাজের প্রাক্কলন করতে হবে। সেই শর্তে পিডব্লিউডি শিডিউল অনুযায়ী বাফার গুদাম নির্মাণে ২নং প্যাকেজে ৫নং লটে খুলনা সাইটের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ৪৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অভিযোগ আছে, প্রকল্প পরিচালক মো. মনজুরুল হক ব্যক্তিগত সুবিধা আদায় করে দরপত্র প্রাক্কলনের নথিপত্রে দেখানো হয় ৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। এই টেন্ডারে ১২ কোটি টাকার বেশি দেখানো হয়েছে। কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারের সঙ্গে ওই ১২ কোটি টাকা ভাগাভাগি করতে টেন্ডারের নথিপত্র জালিয়াতি করা হয়।

এ ছাড়া ৩নং প্যাকেজের আওতায় সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, জয়পুরহাটসহ ৪টি সাইট মিলে অফিশিয়াল এস্টিমেট ২৬৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মাজেদ সন্স কনস্ট্রাকশন লি. নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৬৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকায় একমাত্র অংশগ্রহণকারী হিসাবে দরপত্র দাখিল করেন। এখানে অন্য কাউকে দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ম্যানুয়েল পদ্ধতির দরপত্রে প্রথমবার সিঙ্গেল টেন্ডারে কার্যাদেশ দেওয়া পিপিআর পরিপন্থি। গত বছরের ৯ জুন বড় অঙ্কের টাকা কমিশনের বিনিময়ে মাজেদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। সালাম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের মালিক সালামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। শেখ সেলিমের আত্মীয় পরিচয়ে বিগত সরকারের আমলে প্রভাব দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রভাবে টেন্ডারবাজি করেছে মেসার্স এরোনাস ইন্টারন্যাশনাল লি. নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকও। এ দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেসামরিক বিমানবন্দর ঢাকা, সিলেট, কক্সবাজার নির্মাণকাজে শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকীসহ ৮১২ কোটি টাকা দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪টি মামলা দুদকে চলমান। প্রকল্প পরিচালক মো. মনজুরুল হক বিষয়টি জানার পরও ঘুসের বিনিময়ে ওই ২টি কোম্পানিকে মাগুরা-চাঁদপুর, যশোর-নড়াইল, ময়মনসিং-নেত্রকোনায় ৩টি লটে ৪শ কোটি টাকার গুদাম নির্মাণের কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

এছাড়াও ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লি. (এনডিই) আওয়ামী আমলে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ করে। প্রথমে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় এনডিইকে ৪নং প্যাকেজের ১নং লটের আওতায় ভোলা-বরগুনা, ২নং লটের রাজশাহী-গাইবান্ধা, ৩নং লটের মেহেরপুরের দরপত্র বাতিল করা হয়। পরে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কমিশনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর এনডিইকে মানিকগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জে ১২৮ কোটি টাকার কাজ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পিডি মঞ্জুরুল হককে তার সেল ফোনে কয়েকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।

এমন একজন মহদুর্নীতিবাজ,আওয়ামী ঘরাণার প্রকৌশলীকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমলেও কেন এতোবড় একটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক পদে রাখা হয়েছে এবং তার দ্বারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেটাই কারো বেধগম্য নয়।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতির আখড়া

 

বিশেষ প্রতিবেদক :
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতির অভিযোগে ব্যাপক আলোচিত সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সাইফুল রহমানের যোগ্য উত্তরসূরী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে এযাবতকাল যে সকল দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার সব কয়টিতেই সম্পৃক্ত ছিলেন বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ। নতুন করে তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার চাকরির বিধি বহির্ভূত প্রধান প্রকৌশলীর পথ বাগিয়ে নেওয়া সহ গুরুতর বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সারাদেশের নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক তুষার মোহন সাধু খাঁ‘র বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই চাউর রয়েছে। প্রকল্প পরিচালক থাকাকালীন সময়ে দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দেশের বাইরে পাচার করছে এমন অভিযোগে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, তার পরিবারের একাধিক সদস্য সহ তার সন্তান লেখাপড়া করছে উন্নত দেশে। সেখানে তিনি নিজের সেকেন্ড হোম তৈরিও করেছেন।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর তুষার মোহন সাধু খাঁ‘র বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন শামিম হোসেন নামের এক ব্যক্তি। নানারকম দুর্নীতি -অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিম্নমানের কাজের মধ্যদিয়ে প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এসব টাকা লুটপাটের অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়।

এ অভিযোগপত্র গত বছর ৩১ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন শামিম হোসেন। যার বিরুদ্ধে এতোসব অভিযোগ সেই তুষার মোহন সাধু খাঁ বর্তমানেও জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। এর আগে তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) পদে ছিলেন এবং সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনও করেছিলেন।

অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, তুষার মোহন সাধু খাঁ রাজধানীর লালমাটিয়ায় তার ছোট বোনের বাসায় অবৈধ অর্থ জমা রাখতে বানিয়েছিলেন অলিখিত সুইস ব্যাংক। পরে ঠিকাদার দিলীপ বাবুর মাধ্যমে হুণ্ডির মাধ্যমে কথিত সুইস ব্যাংক থেকে ওই টাকা ইন্ডিয়া এবং আমেরিকায় বসবাস করা তার ছোট ভাই ও কানাডায় বসবাসরত তার মেয়ের কাছে পাঠাতেন। অবৈধ টাকার বেশিরভাগ তার ছোট বোন ও ভাইয়ের কাছেও পাঠান বলেও উল্লেখ করা হয় ওই অভিযোগে। ছোট ভগ্নিপতি মারা যাওয়ার আগে তিনিই হুল্ডি ব্যবসায়ির কাছে অবৈধ অর্থ পৌঁছে দিতেন।

ইন্ডিয়া, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই ও শ্রীলঙ্কায় তার নামে বেনামে গাড়ি-বাড়ি ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রাক্কালনিক আনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে আগে অবৈধ অর্থ লেনদেন করলেও পরে সরাসরি নিজেই বিশ্বস্ত ঠিকাদার ও বিভিন্ন জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে অবৈধ অর্থ লেনদেন করেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। তার যে কোন প্রকার নীতি নেই এটাই তার বড়ো প্রমাণ।

নিয়ম অনুযায়ী নিজ মন্ত্রণালয় হয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প রিভাইসড হওয়ার কথা থাকলেও বিধি লঙ্ঘণ করে এবং নিয়মের বাইরে ব্যত্যয় ঘটিয়ে আগের আইটেমের সঙ্গে নতুন আইটেম একসঙ্গে যোগ করে প্রকল্প রিভাইসড করে থাকেন বললেও অভিযোগ আছে

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সমগ্র বাংলাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ডিপিপির উপজেলা অনুযায়ী বন্টননামা ১৫০ থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য বরাদ্দ প্রদান করা আছে। শুধু একটি জেলায় ১৫ হাজার টিউবওয়েল স্থাপনের কথা রয়েছে ডিপিপিতে। বেশিরভাগ উপজেলায় ৪ হাজার, ৫ হাজার, ৬ হাজার, ৭ হাজার পর্যন্ত টিউবওয়েল বরাদ্দ রয়েছে।

ডিপিপিতে যে উপজেলায় পূর্বের প্রকল্পের বেশি কাজ হয়েছে এবং অন্য প্রজেক্ট চলমান আছে সেই উপজেলায় কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে উপজেলায় পূর্বের প্রকল্পে কম কাজ হয়েছে এবং অন্য প্রজেক্টের চলমান কোনো কাজ নাই সেই উপজেলায় বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, জনসংখ্যার আনুপাতিক হার হিসেবে ডিপিপির রিভাইজড ছাড়াই কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে দেশের সব ইউনিয়নে সমভাবে বন্টন করা হয়েছে। যেখানে অতীব জরুরি সেখানে বরাদ্দ না দিয়ে যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে টিউবওয়েল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে ।

ডিপিপি অনুযায়ী প্রতি ৬০ জনে ১টি টিউবওয়েল স্থাপন হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের কোনো কোনো জায়গায় ২০ জনে একটি করে টিউবওয়েল পেয়েছে। আবার কোনো কোনো জায়গায় একটিও নেই। ফলে অবহেলিত এলাকা অবহেলিতই রয়ে গেছে। এ হিসাবে সারাদেশে প্রায় ৬ লাখ টিউবওয়েল স্থাপন করা হলেও জনগণ সার্বিকভাবে উপকৃত হবে না। ৬ লাখ টেন্ডার আহ্বান শেষ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক নিজে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে সমভাবে টেন্ডার আহ্বান করেছে। ডিপিপিতে যেভাবেম প্যাকেজ উল্লেখ ছিল তা ভায়লেট করা হয়েছে। এবং মনগড়াভাবে করা হয়েছে।

ডিপিপির সাথে সংখ্যা ও প্যাকেজের কোনো মিল নাই। ১০ শতাংশ লেস কাজের সিএসও মাসের পর মাস পড়ে থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। জেলার বিভিন্ন মাঠ পর্যায়ের টেন্ডার প্রক্রিয়া যাচাই করে এর সত্যতা পাওয়া যায়। প্রকল্প পরিচালক নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে এসব অনিয়ম করা হয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে ফিল্ডে সময়মত কাজও বাস্তবায়ন হয়নি। পানির কোয়ালিটি নিয়ে পিডিসহ কর্মকর্তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

এছাড়াও টিউবওয়েলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও আয়রন থাকার পরও ঠিকাদারদের বিল দেয়া হয়েছে। যেখানে ওয়াটার কোয়ালিটি খারাপ সেখানে ১০ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ভেসেল টাইপ প্রেসার ফিল্টার ধরা আছে ডিপিপিতে। কিন্তু পিডি তার পূর্ব পরিচিত ও নিজস্ব কোম্পানির নিম্নমানের ১৮ হাজার টাকার ‘আরও ফিল্টার’ ওই সমস্ত খারাপ ওয়াটার কোয়ালিটির জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। ডিপিপিতে পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই ৪৯১টি উপজেলায় ছিল। বেশিরভাগ জেলায় কোনো অগ্রগতি নাই। শুধু টেন্ডার আহ্বান করা হলেও নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ায় জনগণ কোনরূপ উপকার পাচ্ছে না।

প্রকল্পটির কাজে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে খোদ সরকারি সংস্থা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ণ বিভাগ (আইএমইডি)। এরমধ্যে নির্মাণ ত্রুটি ঠিকাদারের জবাবদিহীতা নিশ্চিত না করার মতো অভিযোগও রয়েছে তুষার মোহন সাধু খাঁ’র বিরুদ্ধে। প্রকল্প পরিচালনার অন্যতম নিয়ামক হওয়া সত্ত্বেও পর্যাপ্ত সংখ্যক পিআইসি ও পিএসসি সভা না করা, মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ না দেয়ার মতো দুর্বলতা ও ত্রুটি রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় এই অভিযোগে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্প থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি করে তুষার মোহন সাধু খাঁ যতো টাকা আয় করেছেন তার চেয়ে বেশি আয় করেছে স্টিমেটর আনোয়ার শিকদার। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ টাকা আনোয়ার শিকদার হাত দিয়ে এসেছে। মাঠ পর্যায়ে এবং ঠিকাদারদের সাথে স্যার (সাধু খাঁ) এসব নিয়ে কথা বলতেন না। দেন-দরবার সব করতেন আনোয়ার শিকদার। কার সাথে কতো চুক্তি এসব থেকে অনেকটাই স্যারকে অন্ধকারে রাখা হতো। যেখান থেকে টাকা আসতো ২০ লাখ, আনোয়ার স্যারকে বলতেন ৫ লাখে রফাদফা হয়েছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
বিদেশ থেকে যতটুকু স্বর্ণ আমদানি করলে দিতে হবে না ভ্যাট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎতে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব ফকরুল বাংলাদেশে ইতিহাস গড়ল উইন্ডিজ দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন রাজউক ইমারত পরিদর্শক শামীম রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে কে জিতবে, তা নিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচেছ ট্রাম্প নাসার চন্দ্র মিশনে স্পেসএক্স জুলাই যোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে নতুন করে দেড় হাজারের বেশি আবেদন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি শুরু প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন ইএম ২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদ সম্পদের পাহাড় জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি