ময়মনসিংহে সংবাদ সম্মেলনে ওসির ভূমিকায় কাঁদলেন বৃদ্ধা মা

ময়মনসিংহে সংবাদ সম্মেলনে ওসির ভূমিকায় কাঁদলেন বৃদ্ধা মা

ময়মনসিংহ সংবাদদাতা:

জমি সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায় সালিশ ডেকে আল-আমিন (২৮) নামে এক যুবককে আটকের পর নগরীর কেওয়াটখালীতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাজনৈতিক মামলায় জেলে পাঠান ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম। এনিয়ে পুলিশের ভিতরে বাহিরে চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করে অঝোরে কাঁদলেন আল-আমিনের মা আনারা বেগম।

যুবক আলামিন নগরীর বলাশপুর এলাকার মৃত নুরুল ইসলাম ও আনারা বেগম দম্পতির ছেলে। প্রতিপক্ষ মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের উপপ্রধান প্রকৌশলী। ২০২১ সাল থেকে জমি নিয়ে আনারা বেগম ও প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। আনারা বেগম সংবাদ সম্মেলনে বলেন ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি ক্রয় করি। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি ক্রয় করার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক বাউন্ডারি দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র বিভাগের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান।

এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান মনিরুজ্জামান ও তার পক্ষের লোকজন। আমার ছেলে আল-আমিনসহ আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মনিরুজ্জামান কোতোয়ালি মডেল থানাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম থানায় উভয় পক্ষকে ডাকেন। গত শনিবার (২৬ জুলাই) রাত আটটায় দরবার শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। দরবারের শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র আমাদেরগুলো ঠিক পায় সালিশকারীরা তখন ওসি আল-আমিনকে তার রুমে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দেন। পিছন পিছন আমি গিয়ে প্রতিবাদ করলে আমার সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। আর আল আমিনকে লকাপে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপপ্রয়োগ করা হয়। সে রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় জেল পাঠানো হয়।

আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানদের মানুষ করেছি। আল আমিনকে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সে ক্রোকারিজের ব্যবসা করে পুরো সংসার চালায়। রাজনীতির সঙ্গে কোনভাবেই সে জড়িত নয়। অথচ ওসি তাকে রাজনৈতিক মামলায় জেলে ঢুকিয়েছে। মনিরুজ্জামানের টাকা ও ক্ষমতার কাছে আমি হেরে গেছি। এই দেশে কোনো বিচার নেই বিচার টাকার কাছে বন্দী। আমার ছেলে যদি মুক্তি না পায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে সে বিপথে গেলে পুলিশ সমাজ এবং রাষ্ট্র এর জন্য দায়ী থাকবে। তাই অবিলম্বে আমি আমার নিরপরাধ ছেলের মুক্তি দাবি করছি। সংবাদ সম্মেলনের পূর্বে ব্যানারে থাকা আল আমিনের ছবি আগলে ধরে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করেন আনারা বেগম।

জমি নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র বিভাগের উপ প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ মেটাতে গত শনিবার থানায় সালিশ ডাকেন ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম। সালিশের এক পর্যায়ে ওসি প্রভাবিত হয়ে আল আমিনকে সালিশ থেকে আটক করে রাজনৈতিক মামলায় জেলে প্রেরণ করেন। এসময় হাতে পায়ে ধরেও কোন লাভ হয়নি। তখন দুই হাত কড়জোর করে ঘটনার সঠিক বিচারের পাশাপাশি আল-আমিনের মুক্তি দাবি করেন আনারা বেগম।

মামলার বিবরণে জানাযায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫মিনিটে পুলিশের টহল টিম আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুর পাড় সেলফি নামক স্থানে পাকা রাস্তার উপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরো ২৫টি কাচের টুকরো জব্দ করে। এঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আল আমিনকে সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে গত ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০মিনিটে নগরীর কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন আল আমিন যুবলীগ করে কারণ যুবলীগের নেতাকর্মীদের সাথে তার ছবি রয়েছে। আল-আমিনকে থানায় সালিশ ডেকে পরে আটক করা হয়েছে কিন্তু মামলায় দেখানো হয়েছে তাকে কেওয়াটখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সে বিষয়টি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবে। জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন আল-আমিনের মা ছেলের মুক্তির দাবিতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

এমপির স্বজন পরিচয় দেয়া ড্রাইভারের কব্জায় রিকশাচালকের জমি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পেশায় ছিলেন গাড়ির চালক নিজেকে বর্তমান এমপির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় পরিচয় দিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজের এক বলয়।

২০১৩ সালে গাড়ি চালানো ছেড়ে হয়ে যান বর্তমান বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম সাত্তারের ডান হাত। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন এখন নজর নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদের দিকে।

একজন গাড়ি চালক থেকে রাতারাতি নেতা বনে যাওয়া ও ক্ষমতার এক বিশাল বলয় তৈরী করা নিয়ে বিস্ময়ের শেষ নাই স্থানীয় মানুষজন ও নেতাকর্মীদের মাঝে।

বিগত কয়েক বছরে সাত্তার চেয়ারম্যানকে সামনে রেখে গ্রাম্য বিচার-সালিশ করে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পত্তি।

জমি সংক্রান্ত কোনো বিচার আসলেই জমির কাগজ হাতে নিয়ে শুরু করেন নানা টাল বাহানা। নজরুল ইসলাম ইদুর ক্ষমতার মুখে জমি বেহাত হয়েছে একজন রিকশাচালকের।

ভুক্তভোগী রিকশা চালকের নাম নূর ইসলাম। তিনি জানান, জমির দখল নিয়ে অনেকদিন মামলা চলার পর – মামলা তুলে নেয় প্রতিপক্ষ এরপর জমির কাগজ আসে নজরুল ইসলাম ইদুর হাতে। অভিযোগ আছে এরপরেই নিজের নাম ভুয়া দলিল করে রিক্সা চালক নুরু ইসলামের জমি দখল করে নজরুল ইসলাম ইদু। বিক্রি করে দেন জমির উপরে থাকা বাঁশ ঝাড়।

বিষয়টি নিয়ে নুরু ইসলাম যান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইদুর শেল্টারদাতা তৎকালীন নিলাক্ষিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সাত্তারের কাছে।

নূর ইসলাম জানান, জমির কাগজ দেখতে অস্বীকৃতি জানায় সাত্তার এবং বলে দেন, ‘এই জমি তুমি পাবে না।’

একই বিষয়ে জনাব নূর মোহাম্মদের (স্থানীয় সংসদ সদস্য জামালপুর- ১) দ্বারস্ত হন ভুক্তভোগী। এ সময় জনাব নূর মোহাম্মদ তাকে থানায় অভিযোগ ও আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন।

পরে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা করেন নুরু ইসলাম। কিন্তু এইখানেও বাধে বিপত্তি। ইদুর প্রভাবে বাঁশ ঝাড় সম্পর্কিত মামলায় হেরে যান তিনি চার জন সাক্ষী থাকা সত্ত্বেও – আপিল করতে পারেননি অর্থাভাবে।

নুরু ইসলামের আইনজীবীর সাথে কথা বলে জানা যায়, দুটি মামলা বিচারাধীন একটি ভুয়া দলিল অন্যটি পুনরায় জমির দখল পাওয়া। যদি রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার না করেন তবে নুরু ইসলামের ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব।

স্থানীয় আরো একজন ভুক্তভোগী পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বহুদিন আগে জমির দাগ নিয়ে বিবাদে সালিশ করেন সাত্তার। সালিশে সিদ্ধান্ত দেন তিনি নিজে জমি মেপে দেখবেন। এর পর শুরু হয় টাল বাহানা। আজ না কাল করতে করতে কেটে চায় বছর। দখলকারীরা এরইমধ্যে জমিতে ঘর তুলে ফেলেন।

ভুক্তভোগী জানান, এ বিষয়ে বিচার চাইতে গেলে রেগে যায় সাত্তার।

এই ভুক্তভোগী বলেন, ‘সাত্তার সাহেব
আমাকে বলেন, মানুষের জমি পাহারা দেয়া তার কাজ না।

জমির দখল হারানো ভুক্তভোগী এখন বিচারের আশায় ঘুরছেন আদালতে।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, কাজ ও ব্যবসার প্রয়োজনে যারা বকশীগঞ্জ উপজেলার বাইরে থাকেন, তাদের জমিকে লক্ষ্যবস্তু বানান অভিযুক্তরা।

এ বিষয়ে জানতে নজরুল ইসলাম ইদুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এগুলো মিথ্যা। এমন কোনো ঘটনা নাই। আমি দুইটা রায় পেয়েছি।’

স্থানীয় সংসদ সদস্যকে নিজের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে তার ক্ষমতা বলে নিজের বলয় তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমপিই হইছে কয়দিন?’

একই বিষয়ে নজরুল ইসলাম সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম