প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্রলীগের হামলার শিকার সাংবাদিকরা

স্টাফ রিপোর্টারঃ

একটি কর্মসূচির নিউজ কাভার করার সময় জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বর্বরোচিত হামলায় ২ তরুণ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।আজ রোববার (৪ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ নগ্ন হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের মানবন্ধন হচ্ছি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। এ সময়  সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আকস্মিকভাবে শতাধিক যুবক জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে হামলা ও মারধর শুরু করে। এতে হামলার শিকার হয়েছেন ইত্তেফাকের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার হাসিব প্রান্থ ও  মানবজমিনের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আবদুল্লাহ আল মারুফ। এসময় হামলাকারীরা তাদের তিনটি মোবাইলফোন ও মাইক্রোন ছিনিয়ে নেয়

হামলায় শিকার মানবজমিনে প্রতিবেদক আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, প্রেস ক্লাব এলাকায় আমরা নিউজ কাভার করতে আসি। এসময় ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডারদের একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। আমরা মানববন্ধনের নিউজ কাভার করার জন্য দাঁড়ালে মুহূর্তে কয়েকশো তরুণ যুবক জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে হামলা শুরু করে। আমরা সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরেও আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় তারা আমার দুটি মোবাইলফোন, মানিব্যাগ, আইডি কার্ড ও সঙ্গে থাকা আরেকটি ব্যাগ নিয়ে যায়

ইত্তেফাকের প্রতিবেদক হাসিব প্রান্থ বলেন, আমার আইফোন ইলেভেন প্রো, মানিব্যাগের ১০ হাজার ৮০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। তারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। পুলিশের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটলেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে।

হামলার সময় ছাত্রলীগের একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ। হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, যদি আমাদের কেউ এই হামলার সাথে জড়িত থাকে বা আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন হামলা চালিয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজও বাইসাইকেল চালিয়ে সাংবাদিকতা করছেন আজাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুরঃ

জীবনের ৬৪ বছর কেটে গেছে পথে প্রান্তরে। এর মধ্যে ৪০ বছর কেটেছে সাংবাদিকতা পেশায়। নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার সংবাদ ছাপিয়েও তিনি রয়ে গেছেন নিভৃতে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাইসাইকেলে ছুটে বেড়িয়েছেন এদিক-সেদিক। তার লেখায় অনেকের জীবন বদলে গেলে বদলায়নি শুধু নিজের ভাগ্যের চাকা। তিনি হলেন, প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুস সাত্তার আজাদ।

যুবক কালে তিনি প্রেমেও পড়েছিলেন। কিন্তু গরিব পরিবার আর সাংবাদিকতা পেশার কারণে বিয়ে করেননি প্রেমিকা। শেষে বিয়ে করবেন না পণ নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল তার জীবন। একে একে মা-বাবা পরপারে ছেড়ে গেলেও আব্দুস সাত্তারের জন্য রেখে যাননি কিছু। তবুও থেমে থাকেনি সাত্তারের সাংবাদিকতা।

প্রতিদিনের মতোবাইসাইকেলে চড়ে তথ্যের খোঁজ করতে গিয়ে সন্ধান পান লাইলী বেগমের। অসহায় সেই নারীর দুঃখকষ্টে মন ভেঙে যায় সাত্তারের। অবশেষে এতিম লাইলীর সঙ্গে নিজের কষ্ট ভাগাভাগি করার সিদ্ধান্ত নেন। দীর্ঘসময় ধরে পুষে রাখা পণ ভেঙে ৫৫ বছর বয়সে লাইলীর মজনু হতে বিয়ে করেন সাত্তার। বর-কনের পোশাকসহ বিয়ের যাবতীয় খরচ দেন পীরগাছা জেএন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক খন্দকার মতিয়ার রহমান। ওই সময় আব্দুস সাত্তার আজাদ সংবাদের শিরোনাম হলেও থেমে যায়নি তার জীবনযুদ্ধ। এখনো অভাব অনটনের সংসার সামলাতে বাইসাইকেলে ভর করে ছুটে বেড়ান তিনি।

এটি চার দশক চুটিয়ে গ্রামীণ সাংবাদিকতায় নাম কুড়ানো আব্দুস সাত্তার আজাদের জীবনগল্প। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তার বাবা মৃত লোকমান আলী ও মা মৃত আমেনা বেগম। বর্তমানে দাদার দেয়া ৩ শতাংশ জমিতেই আব্দুস সাত্তার আজাদের বসবাস।

১৯৬৯ সালে ইটাকুমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রতি মাসে ১০ টাকা করে বছরে ১২০ টাকা বৃত্তি পান তিনি। ১৯৭৫ সালে অন্নদানগর হাইস্কুলে পড়েন। এরপর রংপুরে কে.আলী কমার্শিয়াল কলেজে টাইপ টেলিগ্রাফ ও সটহ্যান্ড বিষয়ে পড়েশোনা করে ১৯৮১ সালে পীরগাছা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

বাইসাইকেল চালিয়ে রংপুর যাওয়া-আসা করতেন তিনি। পত্রিকাও পড়তেন নিয়মিত। তখন সাংবাদিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে ১৯৭৯ সালে শুরু করেন লেখালেখি। তৎকালীন সাপ্তাহিত জনকথা পত্রিকায় পীরগাছা প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদপত্রে হাতেখড়ি তার। এরপর যোগ দেন দৈনিক জনতায়। দীর্ঘদিন সেখানে কাজ করলেও আর্থিক কোনো সুবিধা পাননি তিনি। জীবনের পড়ন্ত বেলায় তার কোচিং-টিউশনির ছাত্রদের ভালোবাসার টাকায় চলছে জীবনসংসার।

প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুস সাত্তার আজাদ বলেন, অভাব আর অনটনই তার জীবনের নিত্য সঙ্গী। ২০১৮ সালে অস্বচ্ছল সাংবাদিক হিসেবে ৫০ হাজার টাকা সরকারি অনুদান পেয়েছেন। ওই টাকায় সামান্য জমি বন্ধক নিয়েছেন। সেই জমির ফসল আর বিভিন্নস্থানে চাকরি করা তার ছাত্রদের দেয়া টাকায় সংসার চলছে।

তিনি আরো বলেন, প্রতিমাসে কোনো না কোনো ছাত্র বিকাশের মাধ্যমে তাকে টাকা দেন। এছাড়া তার আর কোনো আয়ের পথ নেই। এত বছর সাংবাদিকতা করে কি পেলেন, এর উত্তরে তিনি বলেন, এটা একটা নেশা। যখন নিজের লেখাটা পত্রিকার দেখতাম, তখন মনটা ভরে যায়। সাংবাদিকতা করতে এসে অনিয়ম-দুর্নীতি, সমস্যা-সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছি। তখন মানুষ সম্মান করত। তাই পেশাটা ছাড়তে পারিনি। এখনও মাঝেমধ্যে লিখি কিন্তু আগের সেই অনুভূতি অনুরাগ কাজ করে না।

প্রবীণ এই সাংবাদিকের বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার আব্দুল করিম বিএম কলেজের অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, নিঃসন্দেহে আব্দুস সাত্তার একজন শিক্ষানুরাগী। তার মানসিক শক্তি, পরামর্শ সবাইকে ভালো কাজে উৎসাহিত করেছে। সমাজে ভালো দিকগুলো তিনি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তার মধ্যে দেশপ্রেম আছে বলেই তা কলমের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

ইটাকুমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বাশার বলেন, সাংবাদিক হিসেবে যেমন তার নাম রয়েছে, তেমনি ভালো মানুষ হিসেবেও তিনি সবার কাছে সমাদৃত। খুবই ভালো মনের মানুষ। কখনো তার অভাব মানুষের কাছে প্রকাশ করেননি। সব সময় হাসিখুশি থাকেন। আগামীতে তাকে সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় রাখার চেষ্টা করব।

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
কুমিরের দেখা মিলল রাজশাহীর পদ্মায় সরকার ও সেনাবাহিনী, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও ন্যায়বিচার যেন ব্যাহত না হয় আজ থেকে আমরণ অনশন, প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান বিমানবন্দর অগ্নিকান্ডে পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কুমিল্লায় গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, পালিয়েছেন স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন ঢাকা এলজিইডিতে দুর্নীতির একচ্ছত্র অধিপতি বাচ্চু মিয়া