চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়নে রাজস্ব খাতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজগর আলী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ময়নুল হকের বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার সুবাদে চেয়ারম্যান আজগর আলী প্রশাসনিক কর্মকর্তার সহযোগিতায় ২০টির বেশি ইটভাটা থেকে আদায়কৃত রাজস্ব পরিষদের হিসাব নম্বরে জমা না দিয়ে আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

দণ্ডপাল ইউনিয়নের ইটভাটা মালিক ও ব্যবস্থাপকরা জানান, প্রতি বছর মৌসুমের শুরুতেই ইউনিয়ন পরিষদে ৫০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা কর দিতে হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই পুরো টাকার রশিদ দেওয়া হয় না কাউকে ১৫ হাজার, আবার কাউকে পাঁচ হাজার টাকার রশিদ প্রদান করা হয়। মালিকরা অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান আজগর আলী ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ইটভাটা থেকে কোনো কর নেবেন না। কিন্তু এখন তিনি করের পরিমাণ আগের চেয়ে আরও বাড়িয়েছেন।

 

ইউনিয়ন পরিষদের সরবরাহকৃত তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন উৎস যেমন হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশান, নাগরিকত্ব, হাটবাজার, গাছ কর্তন, প্রত্যয়ন, পেশাকর ও পশু সনদ থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে—২০২২–২৩ অর্থবছরে ৫ লাখ ৩ হাজার ৮২১ টাকা, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৮ লাখ ২০ হাজার ৮১৯ টাকা এবং ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ১১ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৩ টাকা। চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত আয় দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৮৬৮ টাকা। তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, ইউনিয়নের ইটভাটা থেকেই প্রতিবছর ৩০ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়, যা পরিষদের হিসাব বইয়ে প্রতিফলিত হয়নি।

 

মেসার্স এমআরবি ব্রিক্সের প্রোপাইটর মোকবুল হোসেন বলেন, “গত মৌসুমে আমরা ৭০ হাজার টাকা কর দিয়েছি, কিন্তু রশিদ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকার।” লোহাগাড়া এলাকার এসবিবি ব্রিক্সের ম্যানেজার খগেশ্বর বর্মন বলেন, “গত বছর পরিষদে ৭০ হাজার টাকা কর দিয়েছি, রশিদ দেওয়া হয় সাড়ে ১৭ হাজার টাকার। এবারও ৭৫ হাজার টাকা দাবি করে চিঠি দিয়েছে পরিষদ।” অটো রাইচ মিলের মালিক গোলাম আজম গোলাপ বলেন, “প্রতি বছর ৪০ হাজার টাকা কর দিই। ভ্যাট, ট্যাক্স, চাঁদা, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন খাতে আরও ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ হয়।”

 

অভিযুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ময়নুল হক দাবি করেছেন, গত কয়েক বছর কোনো ইটভাটা থেকে কর আদায় হয়নি। একই বক্তব্য দিয়েছেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. আজগর আলীও। তবে স্থানীয়রা বলছেন, এসব বক্তব্য মিথ্যা এবং আত্মসাতের ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা মাত্র।

 

দণ্ডপাল ইউনিয়নের ইটভাটা থেকে রাজস্ব আদায়ে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এবার সেই অনিয়মের অভিযোগ সরাসরি ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই ঘটনায় স্বচ্ছ তদন্ত হলে লাখ লাখ টাকার আত্মসাতের চিত্র বেরিয়ে আসবে।

 

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে এলাকাবাসীর দাবি দণ্ডপাল ইউনিয়নের রাজস্ব খাতের পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা করলে আত্মসাতের প্রকৃত পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।

পটিয়ায় অতিথি পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত হাতিয়াঘোনা ডোবা

অনলাইন ডেস্কঃ

অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের হাতিয়াঘোনা (হেক্কার) ডোবা এলাকা। প্রতিদিন পাখির কিচির-মিচির শব্দে ঘুম ভাঙে এখানকার মানুষের। হাজার হাজার পাখি সারাক্ষণ মুখরিত করে রেখেছে ডোবা এলাকা। এলাকাজুড়ে অতিথি পাখির আগমন ঘটে শীত মৌসুমে। প্রতিদিন পাখি দেখতে ডোবা এলাকায় ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

জানা যায়, পৃথিবীতে ১০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার প্রজাতির পাখি পরিযায়ী বা অতিথি পাখি। এরা নিজ দেশের তীব্র শীত থেকে বাঁচতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আসা-যাওয়া করে থাকে। সাইবেরিয়া, ইউরোপ, এশিয়া, হিমালয় থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি নভেম্বর থেকে জানুয়ারিতে আমাদের দেশে আসে। শীতটা শেষ হলে আবার তারা পাড়ি জমায় নিজ দেশে। যেসব অতিথি পাখি শীতের সময় আমাদের দেশে আসে, তাদের মধ্যে রয়েছে- লালবুবা, বক, পানকৌড়ি, শামুককনা, গাঙ, কবুতর, থাম, পাইজ, জলপিপি, পেরিহাঁস, পাতিবাটান, পাতিকুট, গিরিয়া, পাতারি প্রভৃতি।

সরেজমিনে দেখা যায়, কচুয়াই ইউনিয়নের ফকিরপাড়া রোড ৯নং ওয়ার্ড দিয়ে পাহাড়ের পাশে মেজর শহীদ ছবুরের নামে সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে। স্কুলের পাশ দিয়ে পাহাড়ী এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট বড় বেশ শতাধিক মৎস্য প্রজেক্ট। সেই সাথে পাহাড়ী অঞ্চলের আশেপাশে কয়েক হাজার একর জমিতে নানান প্রজাতির সবজি ও ধানের চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে স্থানীয় জনসাধারণ। সেখানে হাতিয়াঘোনা (হেক্কার) ডোবায় মৎস্য প্রজেক্টে শান্ত জলের বুকে কচুরিপানার সবুজ গালিচার মাঝে ঝাঁক বেঁধে ডানা মেলছে অতিথি পাখির দল। উড়ে চলা পাখির কিচির-মিচিরে মুখরিত চারপাশ।

স্থানীয়রা জানান, কচুয়াই ইউনিয়নের পাহাড়ী এলাকা যেন অপরুপ সৌন্দর্য্যে সমারোহ। এখানে সরকারিভাবে হাতিয়াঘোন (হেক্কার) ডোবার আশপাশের এলাকা নিয়ে একটি বিনোদন স্পট গড়ে তোলার দাবি জানান তারা।

স্থানীয় ডোবার মৎস উৎপাদনকারী আবু তৈয়ব জানান, কচুয়াই ইউনিয়নে ৯নং ওয়ার্ড হাতিয়াঘোন (হেক্কার) ডোবায় ৫০ কানি জায়গা মৎস্য উৎপাদন করছি। সে সাথে আশেপাশে আমার ছোট বড় আরো ১০টি মৎস্য প্রজেক্ট রয়েছে। প্রতিবছর শীতের মৌসুম এলেই পাখিগুলো যে কোথা থেকে আসে তা জানি না। তবে প্রচুর পাখি আসে এই গ্রামের হেক্কার ডোবায়। সন্ধ্যায় রক্তিম সূর্য দেখতে খুব ভালো লাগে। আমি মনে করি সরকারের পক্ষ থেকে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল সৃষ্টিতে পদক্ষেপ নেওয়া হলে আগামীতে এই এলাকায় পাখিদের আরো বেশি আগমন ঘটবে। সেই সঙ্গে এলাকাটি বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।

পটিয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আতিকুল মামুন বলেন, পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের খাল-বিল ও পাহাড়ী অঞ্চলের জলাশয়ে অসংখ্য অতিথি পাখি আগমন করে। পাখি প্রকৃতির অলংকার। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাখির বিচরণক্ষেত্র যাতে কোনভাবে ঝুঁকিপূর্ণ না হয় এ বিষয়ে আমরা সজাগ আছি। পাখি শিকার অনেকটাই বন্ধ। এখন পর্যন্ত পাখি শিকারের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। সর্বস্তরের মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

এ ব্যাপারে কচুয়াই ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ইনজামুল হক জসিম জানান, কচুয়াই ইউনিয়নের পাহাড়ী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মৎস প্রজেক্ট। সেখানে ছোট বড় এই মৎস্য প্রজেক্টে শীতের মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটে। অতিথি পাখির কিচির-মিচির ডাকে এলাকা যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মুখরতি হয়ে উঠে।

সূত্রঃ আলোকিত বাংলাদেশ

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম