
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে বিজেপি মহাসচিব মতিন সাউদের পরিচিতি সব সময়েই । আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজধানীর অন্যতম আলোচিত ঢাকা-৫ আসনে সেই মতিন সাউদই এখন শান্তিপ্রিয় ভোটারদের কাছে তুরুপের তাস । চাঁদাবাজি ও দখলবাজিমুক্ত এলাকা গড়তে মতিন সাউদের মধ্যেই সব সম্ভাবনা দেখছেন এলাকাবাসী ।
এই আসনে দিন দিন জনপ্রিয়তা ও জনআস্থা বাড়ছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি— বিজেপির মহাসচিব এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সদ্য সাবেক ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সাউদের।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজপথে রাজনীতি করা এই নেতার পরিচিতি এখন ‘আদর্শ ও আপোষহীন নেতৃত্বের প্রতীক’ হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত। আব্দুল মতিন সাউদ ১৯৮০ সালে ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে তিনি ক্রমান্বয়ে উঠে আসেন জাতীয় রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে। বর্তমানে তিনি বিজেপির মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজনীতির এই দীর্ঘ সময়ে তিনি কোনো ব্যক্তিস্বার্থ নয়, বরং জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিরলস ভূমিকা রেখেছেন। এরশাদ শাসনামলে জাতীয় পার্টির ডেমরা থানার সভাপতি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক—সব পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন নিষ্ঠার সঙ্গে।
রাজনীতি আমার পেশা নয়, এটা আমার দায়িত্ব। আমি জনগণের রাজনীতি করি, ক্ষমতার রাজনীতি নয়,— বলছিলেন আব্দুল মতিন সাউদ। ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে তিনি রাজপথে ছিলেন সামনের কাতারে। ২০১৩ সালের সহিংস সময়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন; বুকের হাড় ভেঙে যায়, তবুও রাজনীতি ছাড়েননি।
আব্দুল মতিন সাউদ বলেন, ‘২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর ঠিকমতো বাড়িঘরে থাকতে পারিনি। ২০১৪ সালে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার একতরফা নির্বাচনের আগে ডিজিএফআই লোকজন আমাকে বিজেপির নিজস্ব দলীয় কার্যালয় থেকে ধরে নিয়ে যায়। ওই নির্বাচনে দল ভাঙতে আমাকে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করা হয়। নির্বাচন করতে রাজি না হওয়ায় পরবর্তীতে আমাকে গুম করতে গিয়ে ভুলবশত আমার ছোট ভাইকে (চাচাতো ভাই) গুম করা হয়। যখন তারা নিশ্চিত হয় এটি আমি নই; তখন আমার ভাইকে গাজীপুর জঙলে চোখ বাধা অবস্থায় লেলে রেখে যায়। পরবর্তীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ডেমরা থানাধীন ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়। ওই নির্বাচনে ঢাকার ওয়ারী জোনের ডিসি, এডিসি, ডেমরা থানার ওসি এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্র দখল করেও আমাকে পরাজিত করতে পারেনি।’
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আব্দুল মতিন সাউদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হলেও তিনি কোনো আপোষ করেননি। মতিন সাউদ বলেন, জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে আপোষ করা মানে নিজের বিবেককে হত্যা করা। আমি সেই রাজনীতি করি না।
জনপ্রিয়তার মূল ভিত্তি সততা ও সেবা ২০১৯ সালের ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন মতিন সাউদ। তার ওয়ার্ডে ঘুষ, চাঁদাবাজি বা দলীয় দখলবাজি চলতে দেননি। ওয়ার্ডের সড়ক, ড্রেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে তিনি ব্যক্তিগতভাবে অর্থ ও জমি দান করেছেন।
তার নিজ এলাকায় এখনো প্রচলিত আছে— ‘সাউদ ভাইয়ের এলাকায় ঘুষ চলে না, অন্যায় টেকে না।’ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অভিযোগ, ‘তিনি নিজের জনপ্রিয়তায় আওয়ামী লীগকেও চাপে রেখেছিলেন,’ যা প্রমাণ করে তার জনভিত্তি কতটা মজবুত।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাজনীতির পাশাপাশি আব্দুল মতিন সাউদ ডেমরা-যাত্রাবাড়ী অঞ্চলের সামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। তিনি একাধিক মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল ও কবরস্থানের প্রতিষ্ঠাতা মোতাওয়াল্লী। ফিরোজা বেগম কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানা, আহমেদ নগর জামে মসজিদ, নুরে মদিনা জামে মসজিদ, দারুস সুন্নাত ফাজিল মাদ্রাসা, রুস্তম আলী উচ্চ বিদ্যালয়সহ অনেক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও তিনি ডগাইর কেন্দ্রীয় কবরস্থান কমিটির মোতাওয়াল্লী ও স্থানীয় বহু যুবসংঘের প্রধান উপদেষ্টা। তার পরিবারের দান করা জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বহু সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
আন্দোলনে মাঠের নেতা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যখন বিএনপি, বিএনএফ ও অন্যান্য দল রাজপথে, তখন মতিন সাউদ স্বশরীরে কর্মীদের নিয়ে মাঠে নেতৃত্ব দেন। বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার নিজ বাড়িতে পুলিশ ও র্যাবের একাধিক অভিযান চালায়। পরিবারের নারী সদস্যদের হেনস্তা করা হলেও তিনি আন্দোলন চালিয়ে যান। তিনি আন্দোলনকারীদের খাবার, আশ্রয় ও চিকিৎসায় সহায়তা দেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও স্থানীয় সূত্র মতে, ঢাকা-৫ আসনে মতিন সাউদের এগিয়ে থাকার মূল কারণগুলো হলো— দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বগুণ। চার দশকেরও বেশি সময় রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক এবং এলাকা ভিত্তিক সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে তার অবদান জনগণের মনে আস্থা সৃষ্টি করেছে।
একইসঙ্গে তিনি সততা ও নীতিনিষ্ঠা— দুর্নীতি, চাঁদাবাজি বা অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপোষ করেননি। তাছাড়া দলের ভিতরে (বিজেপি) দৃঢ় অবস্থান— ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে দলের সাংগঠনিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছেন।
আব্দুল মতিন সাউদ তার রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি মাদক, সন্ত্রাস, দখল ও দুর্নীতিমুক্ত ঢাকা-৫ গড়তে চাই। এই আসনকে একটি আধুনিক ও নিরাপদ সংসদীয় মডেল এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবো ইনশাআল্লাহ।’






