বেইলি রোড ট্র‍্যাজেডি এবং নিরাপত্তাহীন জীবন !

 

আজিজুর রহমান বাবু, জেলা সংবাদদাতা, শরীয়তপুর

২৯শে ফেব্রুয়ারির বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে অসংখ্য মানুষের জীবন। স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এতদিনের লালিত সংগ্রাম। যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের কথা জাতি স্মরণ না করলেও প্রতিটি পরিবারে একেকটি ক্ষত মনে করিয়ে দেবে স্বজন হারানোর বেদনাদায়ক অনুভূতি।

২০% ডিসকাউন্টের অফারে বিরিয়ানি খেতে কাচ্চি ভাই রেষ্টুরেন্টে গিয়েছিলেন আধুনিক সভ্যতার মানুষগুলো রাতের ডিনার করতে। তাঁরা কী জানতেন এটাই তাঁদের শেষ খাবার ?

দ্রব্যমূল্যের এই অসম প্রতিযোগিতায় ক্লান্ত দেহমন নিয়ে কেউ ডিনারে বসেছিলেন – কেউ খাচ্ছিলেন। হঠাৎ চিল্লাচিল্লিতে আগুন আগুন শব্দের অবতারণা হয়, অতঃপর বাঁচার আকুতি। ঘটনার ১ম সূত্রপাত হয় নীচ তলায়। ইচ্ছে করলে তাত্ক্ষণিক ভাবে নেভানো যেতো। স্হানীয়দের উদাসীনতার কারণে আগুনের লেলিহান শিখা তেড়ে ২য়, ৩য়,৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ তলায় ছড়িয়ে পড়ে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

কেউ কেউ দৌড় দিয়ে নীচের তলায় এসে দেখেন আগুনের লেলিহান শিখা তেড়ে আসছে আবার উপরের তলার ছাঁদে জড় হওয়া। কেউ লাফ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা। কেউ হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করলেও অবশেষে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ক্রেনে করে নামানোর চেষ্টা। কিন্তু এরি মধ্যে কাচ্চি ভাই রেষ্টুরেন্টে অসংখ্য মানুষ পুড়ে কাবাব হয়ে গেছেন। একটু ভাবুনতো ? কেমন দুঃসহ পরিস্থিতি ? কেমন যন্ত্রণাময় উপলব্ধি – ভাবতে পারেন ?

ইতিমধ্যে ৪৩ জন অন স্পটে পুড়ে ডেড। বিকৃত দেহের প্রতিচ্ছবি ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। পাশ্ববর্তী আরো ২০/২৫ জন গুরুতর আহত। তাঁরা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। কারো ডেড বডি মরচুয়ারিতে পড়ে আছে – লাশ নেওয়ার অভিভাবক খুঁজে পাচ্ছেন না।

এসব অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর জন্য আসলে দায়ী কারা ? তাঁদের বিরুদ্ধে কী রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রণীত আইনে কোনরুপ ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে ? নাকি অবৈধ মন্টু মামার প্রয়োগে সব স্হগিত হয়ে পড়বে ?

প্রিন্ট মিডিয়া কতৃক জানা গেলো, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণেই আগুনের সূত্রপাত। এই বিল্ডিংয়ে উঠা নামার জন্য একটাই সিঁড়ি ছিলো। প্রতিটি তালার সিঁড়ি মাঝ বরাবর একাধিক গ্যাস সিলিন্ডার রাখার কারণে যাতায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি হতো। গ্রাহকরা যেতে আসতে বিরক্তিবোধ – তারপরও যেতেন একটু কমের আশায়। একটু তৃপ্তিদায়ক খাবার খাওয়ার জন্য।

ভার্চুয়াল সূত্রে জানা গেছে,রাজউক কতৃপক্ষ কাচ্চি ভাই রেষ্টুরেন্ট পরিচালনা না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। তা বাস্তবে কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আবার ফায়ার সার্ভিস কতৃপক্ষ পরপর তিনবার নোটিশ জারী করার পর ও কাচ্চি ভাই রেষ্টুরেন্ট কতৃপক্ষ নোটিশকে উপেক্ষা করে ব্যবসা পরিচালনা আসছিলেন। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, কোন খুঁটির জোরে অবৈধ ভাবে এতদিন তাঁরা মুনাফা করে আসছিলেন ? রাজউক এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্তা ব্যক্তিরা কেনই বা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলেন ? কত টাকার বিনিময়ে এইসব অলিখিত চুক্তি হয়েছিল ? কার কাছে ফরিয়াদ করবে ক্ষতিগ্রস্হ পরিবার ?

বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ডে আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার প্রবাসী একই পরিবারের ৫ জন, মা- বাবা দুই মেয়ে এক ছেলে। এঁরা এসেছিলেন রাতে খেতে কিন্তু নিয়তির কাছে তারা হেরে গেলেন দগ্ধ লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন। বুয়েটের মেধাবী ছাত্রী লামিসা , সংবাদকর্মী অভিস্রুতি, আওয়ামী লীগ নেতা শামীমের মৃত্যু আমাদের বার বার সংশোধন হওয়ার সুযোগ করে দিলেও। নগদ প্রাপ্তির প্রত্যাশায় সকল অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে রাষ্ট্র যন্ত্রকে অকেজো করার জন্য যেসব সরকারি কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন , তাঁদের বিরুদ্ধে কী কোন অভিযোগ তৈরী হবে ? নাকি পর্দার অন্তরালে থেকে যাবেন নেপথ্যের কুশীলবরা ।

আমজনতা ব্যস্ততা পূর্ণ জীবন থেকে একটু প্রশান্তির প্রত্যাশায় জীবনকে উপভোগ করতে গিয়ে দগ্ধ লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কোথায় ? কে দেবে এই সহিংস আচরণের জবাব ?

সন্ধীপ নৌ রুটে ভাড়া কমাতে চায় বিআইডব্লিউটিএ, রাজি নয় জেলা পরিষদ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

সগীর আলীর মেয়ে থাকে চট্টগ্রামের হালিশহর। মেয়ে অনেকদিন ধরে অসুস্থ। এদিকে দিনমজুর সগীর আলীর সংসার চলে তার আয়ে। ছেলের স্কুলে পরীক্ষার ফি জমা দেয়ার জন্য মেয়েকে দেখতে যেতে পারছে না। গতকালের পারিশ্রমিক ৬০০ টাকা আছে সগীর আলীর কাছে। আজকেই মেয়েকে দেখে ফিরতে হবে তার জন্মভূমি সন্ধীপে। ৬০০ টাকা নিয়ে চিন্তা করে ঘাটে বসে, স্পীড বোট ভাড়া ৩৮০ টাকা করে, যাওয়া-আসাতেই তার লেগে যাবে ৭৬০ টাকা। মেয়েকে আর দেখতে যেতে পারে না,তার বাবা। পুরো একটা দিনের পারিশ্রমিক দিয়েও সন্ধীপ থেকে চট্টগ্রাম আসতে পারে না সগীর আলী। বুক ফাটা কান্না নিয়ে সগীর ফিরে যায় তার বাড়ি। সগীর আলী এখানে উপমা হলেও এরকম হাজারো বাবা প্রতিদিন ফিরে যাচ্ছে চাপা কান্না নিয়ে।

সন্ধীপ থেকে চট্টগ্রাম আসার সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘাট হল কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট। সরকারি ২ প্রতিষ্ঠানের কাড়াকাড়ি এই ঘাট নিয়ে। তবে অবাক করা বিষয় হল- মাত্র ১৭ কিঃমিঃ নৌ রুটের ভাড়া ৩৮০ টাকা। ইজারাদারের মর্জি মতো চলে এসব বোট। তারই নিজস্ব নিয়োগকৃত কর্মচারীদের কাছে যেন জিম্মি সকলে। তার নামে যে সুনাম ও প্রচারে ব্যস্ত থাকে,তাকেই দেয়া হয় ভিআইপি প্রটোকল। তবে সত্যিকারের ভিআইপিদের সাথে করা হয় খারাপ আচরণ। তার কর্মীবাহিনীর আচার-আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক নামি-দামি মানুষ সন্ধীপে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গত বর্ষার শেষ সময়ে ‘সন্দ্বীপ উদ্যোক্তার খোঁজে’ সংগঠনের একজন নারী সদস্য সন্দ্বীপ গিয়েছিলেন সন্দ্বীপ থেকে ট্রেড লাইসেন্স ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করার জন্য। উনাকে পানিতে নামিয়ে দেওয়া হয় উনার ১ বছরের শিশু কন্যাসহ। সন্দ্বীপ থেকে যাওয়ার সময় একই অবস্থা হয়েছিল। অতঃপর উনি সন্দ্বীপ থেকে ব্যবসায়িক লাইসেন্স করতে আগ্রহী হননি। ফলে শিল্প সন্দ্বীপের কিছু লোক কর্মসংস্থান হারালো।

এই ইজারাদার মহাশয়ের নাম এস এম আনোয়ার হোসেন। তিনি সন্ধীপ উপজেলা মগধরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ঔই ইউনিয়নে ঘাট হওয়াতে এক কর্তৃত্ব স্থাপন করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করতে সাহস পান না। নিজেকে দানবীর হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন তিনি। দাবী করেন, করোনার মধ্যে কয়েক কোটি টাকার ত্রাণ সামগ্রী তিনি দিয়েছেন। এই টাকার উৎস কোথায়, তা জানা সম্ভব হয় নি। তবে ঘাট ছাড়াও তার অননুমোদিত কয়েকটি ইটের ভাটা রয়েছে। সামান্য কিছু দান সদকা করে গ্রামের সহজ সরল মানুষকে নিজের হাতে পুঞ্জীভূত করে রেখেছেন। ব্যাপারটা এরকম, শিশুর পাওয়া ঈদের বকশিস ১০০০ টাকার নোট হাত থেকে নিয়ে তাকে ১০ টাকার ১০টি নোট ধরিয়ে দিয়ে খুশি রাখা। তিনিই জেলা পরিষদকে এই অবৈধ ঘাট ধরে রাখার জন্য সর্বোচ্চ সহয়তা প্রদান করেন। কারণ অবৈধ ঘাটের অবৈধ আয়ের সিংহভাগই তার পকেটে ঢোকে। এই ঘাটে তার স্পীড বোট ছাড়া কারও বোট চলতে পারে না। যেন একক রাজত্ব স্বর্গ তৈরি করেছেন তিনি। তবে সেই স্বর্গ উপভোগ করার অধিকার কেবল তার মতে যারা রাজি থাকবে, তাদের ই প্রাপ্য।

২০১৩ সালে গুপ্তছড়া– কুমিরা ঘাটের ইজারা নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ–পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিউটিএ) ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। জটিলতা নিরসনে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের উদ্যোগে স্থানীয় দুই সাংসদ চট্টগ্রাম–৩ (সন্দ্বীপ) ও চট্টগ্রাম–৪ (সীতাকুন্ড), বিআইডবিউটিএ ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪ সালের ২ রা ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপ উপজেলার গুপ্তছড়া–কুমিরা যাত্রী পারাপার ঘাট পরিচালনা নিয়ে বাংলাদেশ বিআইডবিউটিএ ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাথে ৬ বছরের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

২০২০ সালের পয়লা মার্চ ফেনী জেলার সোনাগাজী থানা সংলগ্ন চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই থেকে ডাবল মুরিং থানা পর্যন্ত পুরো এলাকাকে নৌ–বন্দর ঘোষণা করে সরকার। পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ-কে নৌ–ঘাটগুলো পরিচালনার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। তাই আইন অনুযায়ী নৌ ঘাটটি পরিচালনা করবে বিআইডব্লিউটিএ। অপরদিকে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদও তাদের পরিচালনা কার্যক্রম বন্ধ রাখেনি। উল্টো এ নৌ ঘাটের ইজারাদাতা হিসেবে মালিকানা ধরে রাখতে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে তদবির করা অব্যাহত রাখে। বিষয়টি সমাধানে দলীয় প্রভাব খাটানোর মাধ্যমে কয়েক দফা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বসার অভিযোগও রয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ- পরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ- নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর্তৃক ধার্যকৃত দেশের বিভিন্ন নৌ-পথের যাত্রী ভাড়া আদায়ের একটি তালিকা আছে। সে অনুপাতে গুপ্তছড়া-কুমিরা ১৭ কি.মি. নৌ- পথের পারাপার ও যাতায়াতের জন্য ভাড়া হওয়ার কথা টাকা ২৯ টাকা। কিন্তু সরকারি হিসেবের ২৯ টাকার জায়গায় ৩৮০ টাকা আদায় করা হচ্ছে, অর্থাৎ ১৩ দশমিক ১০ গুণ বেশি।

সর্বশেষে বিডব্লিউটিএ স্পীড বোট ভাড়া করতে চেয়েছে ২০০ টাকা জনপ্রতি। কিন্তু জেলা পরিষদ তা মানতে রাজি হয় নি। ইজারাদার হঠাৎ করে ২৫০ টাকার ভাড়া ৩৮০ টাকা করে ফেললেও তার বিরুদ্ধে সামান্য কোন ব্যবস্থাও গ্রহন করে নেই জেলা পরিষদ। আর এসবে সর্বোচ্চ ভুক্তভোগী সাধরণ মানুষ।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম