টঙ্গীতে চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীর উপর হামলা: তদন্তে গিয়ে সিসিটিভি আবদার করলো পুলিশ!

 

স্টাফাঃ রিপোর্টার

গাজীপুরের টঙ্গীতে চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীয়ী সাজ্জাদুল ইসলাম মনির, তার স্ত্রী শিল্পী বেগম ও তার কলেজ পরুয়া মেয়ের উপর সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার রাতে স্থানীয় এরশাদ নগর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চার জনকে অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী শিল্পী বেগম। ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার উপ পরিদর্শক সাফায়েত ওসমান ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছে ৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা উপঢৌকন হিসেবে চেয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। যদিও পুলিশের দাবী এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কথা বলা হয়েছে।

অভিযুক্তরা হলেন, টঙ্গীর এরশাদ নগর এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি মুন্না ওরফে ইয়াবা মুন্না, রায়হান ওরফে গেড়গেড় রায়হান, বেসতি রনির বউ মুনমুন ও হযরত ওরফে ফর্মা হযরত।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, টঙ্গীর এরশাদ নগর এলাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সাজ্জাদুল ইসলাম মনির ও তার পরিবারের কাছে দীর্ঘদিন যাবৎ চাঁদা দাবী করে আসছিল মুন্না বাহিনী। বরাবরই চাঁদা দিতে অস্বীকার করে আসছিলেন তিনি। বুধবার দিবাগত রাত পৌনে বারটার দিকে মুন্নার নেতৃত্বে গেড়গেড় রায়হান মুনমুন ও হযরতসহ অজ্ঞাত কয়েকজন মিলে ব্যবসায়ী মনিরের বাসার সামনে দাড়িয়ে তার কাছে দাবীকৃত ৩ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বলেন। তিনি রাজী না হওয়ায় তার উপর অতর্কিত হামলা করে অভিযুক্তরা। এসময় তার স্ত্রী শিল্পী বেগম ও মেয়ে এগিয়ে আসলে তাদেরকেও বেধরক মারধর করে সন্ত্রাসীরা। হামলাকারীরা তাদের কাছ থেকে নগদ ১লাখ ৭৭ হাজার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অপরদিকে এঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন তদন্তে যান টঙ্গী পূর্ব থানার উপ পরিদর্শক সাফায়েত ওসমান। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে উপঢৌকন হিসেবে চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা দাবী করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে উপ পরিদর্শক সাফায়েত ওসমান বলেন, তার কাছে কোন উপঢৌকন চাওয়া হয়নি। নিরাপত্তা স্বার্থে আরো চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই ঘটনায় উভয় পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, কোন সিসি ক্যামেরা চাওয়া হয়নি নিরাপত্তার স্বার্থে আরো সিসি ক্যামেরার স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পচন ধরেছে ভালুকের শরীরে, সিলগালা সেই চিড়িয়াখানা

পচন ধরেছে ভালুকের শরীরে, সিলগালা সেই চিড়িয়াখানা

স্টাফ রিপোর্টার:

ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কমিশনার মাহবুবুর রহমান দুলালের মালিকানাধীন অবৈধ চিড়িয়াখানা সিলগালা করেছে বনবিভাগ। এ সময় বিভিন্ন প্রজাতির ২৩টি বন্যপ্রাণী জব্দ করেছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।

সম্প্রতি চিড়িয়াখানার ভেতরে থাকা একটি ভালুকের শরীরে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়ালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ঘটনাটি জানতে পেরে অভিযান পরিচালনা করে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে নগরীর জয়নুল আবেদীন উদ্যানের অবৈধ মিনি চিড়িয়াখানায় অভিযান চালিয়ে অসুস্থ ভালুকসহ সব বণ্যপ্রাণী জব্দ করা হয়।

জব্দ করা প্রাণীর মধ্যে রয়েছে- একটি অজগর সাপ, ২টি ময়ুর, ৫টি হরিণ, ২টি মদনটাক পাখি, ১টি কুমির, ২টি ভাল্লুক, ১টি সজারু, ৫টি বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা। তিনি জানান, বন্যপ্রাণী সংগ্রহ, দখলে রাখা, প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এখানে অবৈধভাবে চিড়িয়াখানা পরিচালানা করে বন্যপ্রাণী বন্দি রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় ২৩টি বন্যপ্রাণী জব্দ করা হয়। জব্দকৃত এই প্রাণীগুলোকে গাজীপুর সাফারি পার্কে অবমুক্ত করা হবে। তবে এর মধ্যে কিছু প্রাণীকে ১৫ দিন কোয়ারেন্টিনে রেখে স্বাভাবিক বণ্য পরিবেশে অবমুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।

বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, আইন অমান্য করে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে এই চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়েছিল। খবর পেয়ে প্রাণীগুলোকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একটি ভালুক খুব অসুস্থ, তার শরীরে পচন ধরেছে। আহত এই ভালুকটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ এই চিড়িয়াখানাটি তৎকালীন মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটুর অনুসারী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কমিশনার মাহবুবুর রহমান দুলাল পরিচালনা করে আসছিল।

তবে একটি সূত্রের দাবি, এই চিড়িয়াখানাটি ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন থেকে নামমাত্র মূল্যে ইজারা নিয়েছিলেন ফুলবাড়িয়ার সংসদ সদস্যের পুত্র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুল হক সেলিম। পরে তার কাছ থেকে ৪নং ওয়ার্ড কমিশনার মাহবুবুর রহমান দুলালের মালিকানা নিয়ে পরিচালনা করে আসছিলেন। তখন থেকে এই চিড়িয়াখানাতে বিভিন্ন প্রাণীকে খাচায় বন্দি করে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট এবং বিভিন্ন রাইড স্থাপনের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসার প্রসার ঘটানো হয়।

তবে বিগত ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তারা গা ঢাকা দিলে চিড়িয়াখানাটির দায়িত্ব নেন নগরীর ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মামুন। তবে শুরু থেকেই চিড়িয়াখানটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং কর্মীদের দুর্ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলে কিছু বলতে পারতো না। তবে সম্প্রতি চিড়িয়াখানার ভেতরে থাকা একটি ভালুকের শরীরে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়ালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ঘটনাটি জানতে পেরে অভিযান পরিচালনা করে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মিনি চিড়িয়াখানার বর্তমান পরিচালক মিজানুর রহমান মামুন বলেন, মানুষের চিত্ত বিনোদনের কথা চিন্তা করে নামমাত্র দর্শনার্থী বিনিময় মূল্যে চিড়িয়াখানা পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা নিয়মিত প্রাণীদের প্রতি যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করি। তবে সম্প্রতি একটি ভালুক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অসুস্থ হলে তার পায়ে পচন ধরে এবং ঘা হয়ে যায়। বিষয়টি টের পেয়ে একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসকের মাধ্যমে মাধ্যমে ভালুকটিকে সুস্থ করার চেষ্টা চলছিল।

বর্তমানে এই চিড়িয়াখানার মালিক ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কমিশনার মাহবুবুর রহমান দুলাল একটি মামলায় কারাবন্দি থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম