বাংলাদেশের রিজার্ভ নতুন উচ্চতায়

নিজস্ব প্রতিবেদক॥
মহামারি করোনাভাইরাসের আঘাতে বিশ্ব অর্থনীতির বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মধ্যে আশা জাগাচ্ছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ)। স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স যখন ৫০-এ দাঁড়িয়ে, এমন মাহেদ্রক্ষণে নতুন উচ্চতায় উঠে এল রিজার্ভ। এবার আমদানি ব্যয় বাড়ার পরও রিজার্ভ এক লাফে ৪৮ বিলিয়ন (৪ হাজার ৮০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে আজ (মঙ্গলবার)। মঙ্গলবার দিনের কার্যদিবস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ- এই ৯টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।

প্রতি মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে মজুদ বাংলাদেশের এই বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা যোগ হওয়ায় রিজার্ভ এই মাইলফলক অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।

মহামারির বছরেই (২০২০) দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন ৪৩ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। সে বছরের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে।

এ‌দি‌কে চল‌তি অর্থবছ‌রের ১৭ জুন পর্যন্ত রিজার্ভ ৯.৪২ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছ‌রের শুরুতে (৩০ জুন পর্যন্ত) ৩৬.০৩ বিলিয়ন ডলার ছিল।

‌বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চল‌তি বছ‌রের ৩ মে দে‌শের রিজার্ভ প্রথমবা‌রের মতো ৪৫ বি‌লিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ওইদিন রিজার্ভ বে‌ড়ে দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে চলতি বছরের গত ২৪ ফেব্রুয়া‌রি রিজার্ভ ৪৪.০২ বিলিয়ন বা চার হাজার ৪০২ কোটি ডলার অতিক্রম করেছিল। তার আগে ৩০ ডি‌সেম্বর রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার, ১৫ ডি‌সেম্বর ৪২ মি‌লিয়ন ডলার এবং ২৮ অক্টোবর ৪১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল।

২০২০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রথম ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। তারপর থেকে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে সে বছরের ডিসেম্বরেই রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম বার্ষিক রিপোর্টে (১৯৭১-১৯৭৩) বলা হয়, স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরপর বাংলাদেশের কোনো বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় ছিল না। কিন্তু ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ আস্তে আস্তে তার বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করে নিয়েছে। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন রিজার্ভ ছিল ১১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তার পরের বছরের ২৯ জুনে স্বাধীন দেশের রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ১২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

ফ্যাসিষ্ট সরকারের দোসর ইকবাল এখন এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক

স্টাফ রিপোর্টার:

দুর্নীতির দায়ে ২০১৫ সালে লন্ডনের আদালত জরিমানা করার পর ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার থেকে আজীবন বহিষ্কৃত সীমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান হিমায়িত মাছ ব্যবসায়ী ইকবাল আহমদ অবিকে এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক মনোনীত করায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। আস্থাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছেন গ্রাহকরা।

গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের এক আদেশে তাকে নবগঠিত ৭ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক করা হয়। বাকিরা স্বতন্ত্র পরিচালক। অর্থাৎ তিনিই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ইকবালের ঘনিষ্ঠতা ছিল। এ সংক্রান্ত বেশ কিছু ছবিও পাওয়া গেছে। যদিও জূলাই বিপ্লবের পর ইকবাল ফেসবুক থেকে সেগুলো সরিয়েছেন।

প্রাপ্য তথ্য বলছে, ইকবালের বিরুদ্ধে ২ শত হাজার পাউন্ড লোপাটের অভিযোগ এনে লন্ডনের আদালতে ২০১৫ সালে মামলা করেন ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দ। আদালত ইকবাল কে ৫ লক্ষ পাউন্ড জরিমানা করে। অর্থাৎ ইকবাল দুর্নীতিবাজ এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বারের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রমাণ হয় কোর্টের রায়ে।

ইকবালের উত্থান সম্পর্কে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, তিনি বিগত এক দশক ধরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান গড়ে তোলেন। হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন। জুলাই বিপ্লবের পর ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে বিপ্লবী সাজতে নানা কৌশল চালাচ্ছেন তিনি।

লন্ডনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিশেষ করে লন্ডন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইকবালের দুই ডজন বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অত্যাধুনিক প্রপার্টি যা বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে ক্রয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব পাচারের টাকায় লন্ডনে গড়ে তোলা বিভিন্ন কোম্পানি ইকবালের ভাই ও ভাতিজাসহ পরিবারের সদস্যরা পরিচালনা করছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ইবকো হোল্ডিংস লিমিটেড, ভারমিলিওন গ্রুপ লিমিটেড, ফ্লাইং ইউনিকর্ন লিমিটেড, মাই ইনভেসমেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড, ওপেন হাও হোল্ডিংস লিমিটেড, ইবকো লিমিটেড, সীমার্ক পিএলসিসহ মোট ১৪ টি কোম্পানি।

সূত্র বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইকবালের নাম জড়িয়ে ছিল শেখ হাসিনার উপদেষ্টা গহর রিজভীর সঙ্গে। তার অর্থ পাচারের সিন্ডিকেটের অন্যতম ছিলেন এই ইকবাল। আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট বলছে, সুইস ব্যাংকে গওহর রিজভীর নামে জমা হওয়া ১২ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৪০ শতাংশ ইকবালের মাধ্যমে পাচার করা হয়। তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভুয়া কোম্পানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন রেমিট্যান্স হস্তান্তরের ভুয়া ডকুমেন্টেশন এবং রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজর এড়িয়ে অপকর্ম চালায় ইকবাল।

এছাড়া এস কে সুর চৌধুরীর ব্যাংকিংখাতে অর্থ লুটপাটের যে নেটওয়ার্ক ছিল তাতেও ইকবাল ছিলেন একজন শক্তিশালী সদস্য। সেই সময়ও একটি ব্যাংক থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ লুটপাট করেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ থাকায় এসব অভিযোগ উঠলেও তৎকালীন সময়ে ইকবালের কোন বিচার হয়নি। এছাড়া ইকবালের অর্থ পাচারের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স সাম্প্রতিক রিপোর্টে বাংলাদেশকে “ধূসর তালিকা” থেকে মুক্ত করতে ইকবালের কেলেঙ্কারি দ্রুত বিচারা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একজন ব্যক্তির মাধ্যমে এত বড় আকারের দুর্নীতি সম্ভব হয় শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। সরকারের উচিত এই নেটওয়ার্কের মূল হোতাদের বিচারের আওতায় আনা। এ বিষয়ে ইকবাল আহমেদের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেও তার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
বিদেশ থেকে যতটুকু স্বর্ণ আমদানি করলে দিতে হবে না ভ্যাট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎতে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব ফকরুল বাংলাদেশে ইতিহাস গড়ল উইন্ডিজ দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন রাজউক ইমারত পরিদর্শক শামীম রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে কে জিতবে, তা নিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচেছ ট্রাম্প নাসার চন্দ্র মিশনে স্পেসএক্স জুলাই যোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে নতুন করে দেড় হাজারের বেশি আবেদন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি শুরু প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন ইএম ২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদ সম্পদের পাহাড় জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি