১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । বিকাল ৫:২৪ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
সামসুন নাহার স্মৃতি ॥
এখন বসন্তকাল। ঋতু পরিবর্তনের এ সময় ঘরে ঘরে ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, জ্বর দেখা দেয়। বসন্তকালের আবহাওয়া যতই মিষ্টি হোক না কেন, এ সময় অনেকেরই বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন- চিকেন পক্স, গুটিবসন্ত কিংবা সর্দি-কাশি, ঠান্ডা, জ্বর ইত্যাদি।
সংক্রমিত রোগকে প্রতিরোধ করতে হলে দৈনিক খাদ্য তালিকায় চাই পর্যাপ্ত পরিমাণ মৌসুমি ফল ও বিভিন্ন রঙের শাকসবজি। বিশেষ করে ভিটামিন ‘সি’যুক্ত মৌসুমি ফল ও নানা রঙের শাকসবজি সমৃদ্ধ খাদ্যতালিকা তৈরি করতে হবে সবার জন্য।
দেশীয় মৌসুমি ফল খাওয়ার সু-অভ্যাসটি গড়ে তুলতে হবে পরিবারের ছোট-বড় সদস্যদের। রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর জন্য খেতে পারি আমরা দেশীয় মৌসুমি ফল, যেমন-পেয়ারা, আমড়া, কামরাঙ্গা, বাউকুল, বরই ইত্যাদি। এছাড়া মালটা, কমলা, আনার, নাশপাতি, ড্রাগন, আঙুর ফল খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ভিটামিন ‘সি’র সব থেকে ভালো উৎস হলো লেবু।
প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় আমরা একটি করে লেবু বা লেবুর তৈরি কোনো খাবার যেমন-লেবুর শরবত, লেবু চা খাওয়া যেতে পারে। কিছু ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-
* পেয়ারা
পেয়ারা খেতে যেমন সুস্বাদু পুষ্টিগুণেও ভরপুর। ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এ ফল ফ্রি রেডিকেল্রের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। যার ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ পেয়ারা ফল হিসাবে কিংবা সালাদে বিভিন্ন ধরনের রেসিপি করা যায়। অনেক শিশু ফল খেতে চায় না। তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফল দিয়ে জ্যাম-জেলি ঘরে তৈরি করে দিতে পারেন, এতে করে শিশুরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ পেতে পারে।
* কমলা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রক্তে কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখা জরুরি। এমনকি কমলালেবু ওজন কমাতেও সাহায্য করে। কমলা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
* মালটা
মালটা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ হওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য শিশু কিংবা বয়স্কদের জন্য মালটার জুস কিংবা মালটার চা হতে পারে অতুলনীয় পানীয়।
* আনার বা বেদানা
লাল রঙের এবং ছোট ছোট দানাযুক্ত এ ফলটি রক্তস্বল্পতা রোধে কার্যকরী। বেদানা রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিহত করে রক্তকে পরিশুদ্ধ করতে পারে এবং শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
* বরই বা কুল
এ সময় বাজারে বিভিন্ন ধরনের বরই বা কুল দেখতে পাওয়া যায়। ছোট বাউকুল বা দেশি কুল আমরা যে বরই-ই বলি না কেন রোগ প্রতিরোধ করতে বরই বা কুলের বিকল্প মেলা কঠিন। বরইতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’, মিনারেলস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পুষ্টি যা শরীরের ফ্রি র্যাডিকেল মুক্ত করে দেহকে সুস্থ ও নিরোগ রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খেতে পারেন, আমড়া, জাম্বুরা, আমলকী। মৌসুমি ফল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সালাদ, ভিন্ন, ভিন্ন রেসিপি করে দেওয়া যেতে পারে। চালতা কিংবা আমড়ার টক রান্না করা, আমলকীর মোরব্বা করা যেতে পারে।
বাজারের ক্যামিকেলযুক্ত জ্যাম-জেলি না কিনে ঘরেই এসব মৌসুমি ফল দিয়ে মুখরোচক জ্যাম-জেলি তৈরি করে শিশুদের সকালের নাস্তায় কিংবা স্কুলের টিফিনেও দেওয়া যেতে পারে।
লেখক : ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড ডায়েটিশিয়ান, উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল, উত্তরা, ঢাকা
Leave a Reply