1. md.zihadrana@gmail.com : admin :
দুর্নীতির আখড়া বাঞ্ছারামপুর শিক্ষা অফিস - দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ

১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । রাত ১২:২৭ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।

সংবাদ শিরোনামঃ
ফিলিস্তিনের ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশ সিভিল রাইটস্ সোসাইটি মানববন্ধন অবৈধপথে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক: রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির পরিচালকের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ: তদন্ত কমিটি গঠন! সরকারী দপ্তরে নির্বাচনী প্রচারণা! মিথ্যা সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন ক্ষমতাসীন দলের পদ-পদবী ব্যবহার করে হোটেল ব্যবসার আড়ালে বাদলের মাদক,জুয়া ও রমরমা দেহ ব্যবসা বিশ্বনাথে অবশেষে অস্ত্র ও সহযোগী’সহ পুলিশের খাঁচার বন্দি কুখ্যাত ডাকাত আজির টংগী’তে অবস্থিত ‘জাবান হোটেল’ যেনো অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শনী ও মদ সেবনের নিরাপদ আড্ডাখানা বরখাস্তের পরও স্বপদে বহাল বিতর্কিত সেই অধ্যক্ষ প্রতিষেধকের অভাবে সেলিম মাদবরের মৃত্যু মিরপুরে মানব পাচার ও দেহ ব্যবসা চক্রের মূল হোতা মারুফের খুটির জোর কোথায়? হোটেল ক্লিনার থেকে কোটিপতি মারুফ !
দুর্নীতির আখড়া বাঞ্ছারামপুর শিক্ষা অফিস

দুর্নীতির আখড়া বাঞ্ছারামপুর শিক্ষা অফিস

বিশেষ প্রতিনিধি॥
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বর্তমান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নৌসাদ মাহমুদ ও সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা গাজী মো. শাহরাজের সীমাহিন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। তারা প্রায় ৭ বছর যাবত বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখানো, হয়রানি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ঘুষ গ্রহণ, বদলী বাণিজ্য, নারী শিক্ষকদের সাথে অনৈতিক আচরণ ও অর্থ আত্মসাৎসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা অফিসার নৌসাদ মাহমুদকে পুরোপুরিভাবে সহযোগিতা করেছেন সহকারি শিক্ষা অফিসার গাজী মো. শাহরাজ।
নানাবিধ অনিয়ম ও অভিযোগের পর গত ২৮ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ৩৮.০১.০০০০.৩০০.১৯.০০১.২২.১৭৯ নং স্মারকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নৌসাদ মাহমুদকে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় স্ট্যান্ড রিলিজ বদলীর আদেশ করেন। ওই আদেশে উল্লেখ ছিল ১ আগস্ট নৌসাদ মাহমুদ বড়লেখায় যোগদান করবেন। কিন্তু তিনি ডিজির আদেশ অমান্য করেন।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার নৌসাদ মাহমুদ উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজে ২০২১-২০২২, ২০২০-২০২১, ২০১৯-২০২০, ২০১৮-২০১৯, ২০১৭-২০১৮, ২০১৬-২০১৭, ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০২১-২০২২ অর্থ বছরে স্লীপ হতে ২৩ লাখ ৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শেখ রাসেল কর্ণার, সততা স্টোর, শপথ বাক্য, মানবতার দেয়াল, ডিজিটাল উপকরণ, চেয়ার ও মই বাবত উপজেলার ১২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ৩২ হাজার টাকা করে সর্বমোট ৪০ লাখ ৯৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু খরচ করেছেন ১৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এই টাকাগুলো গাজী মো. শাহরাজের স্লিপের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে নৌসাদ মাহমুদ গ্রহণ করেন। পরে সহকারি শিক্ষা অফিসার গাজী মো. শাহরাজ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং কয়েকজন শিক্ষকদের নিয়ে ২৩ লাখ ৪ হাজার টাকা ভাগভাটোয়ারা করেছেন। বাকি ১৭ লাখ ৯২ হাজার টাকার মালামাল শিক্ষকদের নিকট বিতরণ করেছেন।
২০২০-২১ অর্থ বছরে স্লীপ হতে ৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ডিজিটাল থার্মোমিটার, ডিজিটাল ঘড়ি, অগ্নি নিবারণ যন্ত্র বাবত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ হাজার টাকা করে ১৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু এসব মালামাল ৭ লাখ টাকায় কিনে শিক্ষকদের মধ্যে বিতরণ করেছেন। বাকি ৭ লাখ টাকা সহকারি শিক্ষা অফিসার গাজী মো. শাহরাজের সঙ্গে ভাগভাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করেছেন।
একইভাবে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ওয়ান ডে ওয়ান খাতা কেনা বাবত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিয়েছেন ১০ লাখ ৩৪ হাজার, কিনেছেন ৩ লাখ ২৯ হাজার টাকায়, আত্মসাৎ করেছেন ৭ লাখ ৫ হাজার টাকা। বই কেনা বাবত ১৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ হাজার ৮শত টাকা করে সর্বমোট গ্রহণ করেছেন ১২ লাখ ২৩ হাজার ২শত টাকা। বই কিনেছেন ৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকার। আত্মসাৎ করেছেন ৫ লাখ ২৮ হাজার ২শত টাকা। ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রিন্টার বাবত নিয়েছেন ১১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। কিনেছেন ৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকায়, আত্মসাৎ করেছেন ৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ক্ষুদ্রে ডাক্তার, ড্রেস, ছবি ও অন্যান্য বাবত ১৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়েছেন ৯ লাখ ৭৩ হাজার হাজার টাকা। কিনেছেন ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকায়। আত্মসাৎ করেছেন ৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এছাড়াও ওই অর্থ বছরে ক্ষুদ্র মেরামত বাবত ৫ হাজার, ওয়াশ ব্লক ১ হাজার, রুটিন মেইনটেনেন্স ২ হাজার, ইউপিএফ থেকে ১ লাখ টাকা সহ ৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন, এমন অভিযোগ রয়েছে। তবে এসব টাকা নিজের হাতে না নিয়ে অন্যের মাধ্যমে নিয়েছেন। খাতা, বই, প্রিন্টার, ক্ষুদে ডাক্তারের ড্রেস সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা গাজী মো. শাহরাজের মাধ্যমে নরসিংদী ও ঢাকা থেকে কিনে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠিয়েছেন। দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা কাজী নাহিদা আক্তার, স্মারক নং ৫০৫, তারিখ ৩১/০৫/২০২০ এর তালিকার ক্রমিক নং ১৪৯, ১৮০ এবং কদমতলি দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা আসমা আক্তার, স্মারক নং ৫০৫, তারিখ ৩১/০৫/২০২০ এর তালিকার ক্রমিক নং ১৪১, ১৪৯ এর তদন্ত ট্রেজারী অফিস ও ব্যাংকের মাধ্যমে স্পষ্ট পাওয়া যাবে। তবে অফিসে নথি সম্পূর্ণ পরিবর্তন করা হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে। রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মনিরা আক্তার ও ইসরাত জাহান বাঞ্ছারামপুর উপজেলা থেকে হোমনা উপজেলায় বদলীর ছাড়পত্রসহ সকল কাগজপত্র ২০২০ সালের মে মাসে প্রেরণ করেছেন এবং অব্যাহতি দিয়েছেন। কিন্তু ওই একই বছরের ২৮ জুন শ্রান্তি বিনোদন ভাতা বাঞ্ছারামপুর উপজেলা থেকে প্রদান করেছেন। যদিও অফিসে নথিতে তা নেই। তবে ট্রেজারী অফিস ও হোমনা উপজেলার নথিতে আছে।
ডিপিএড প্রশিক্ষণে ১ বছর ৬ মাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া পিটিআই সুপারের অধীনে কর্মরত থাকে। শিক্ষকদের সকল প্রকার ছুটি অনুমোদন করবে পিটিআই সুপার। কোন প্রকার ছুটি, অন্যান্য প্রশিক্ষণ সুবিধাজনক ভাতা মঞ্জুরের এখতিয়ার উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নেই। কিন্তু অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে তাদের ১৫ দিনের ছুটি ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতা দিয়েছেন। সুবিধা পাওয়া এসব শিক্ষকরা হলেন আকানগর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রহিমা বেগম, শুটকিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রেহেনা বেগম, দশদোনা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুরভী আক্তার, বড়কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোকবল হোসেন, বাঞ্ছারামপুর পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কবিতা মালাকার, রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আহসান উল্লাহ, ভবনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বনানী রাণী সাহা, কানাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রোমানা আক্তার, কদমতলি দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আসমা আক্তার, চরমরিচকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বপ্না আক্তার, ফরদাবাদ দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তাছলিমা আক্তার, হাসন্নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লিপি আক্তার, কদমতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রোকসানা আক্তার, নিলুফা আক্তার, চরশিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আবদুল জব্বার, কালাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জেসমিন আক্তার এবং রূপসদী দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জেসমিন আক্তার। তবে লোকজন জানাজানি হওয়ায় মূলক কাগজ লুকিয়ে রাখেন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে কয়েকজনকে ২ বার করে একই অর্থবছরের শ্রান্তি বিনোদনের টাকা দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিক্ষা অফিসারের মৌন সমর্থনের কারণে সরকারি কোষাগারে বাড়তি টাকা ফেরত দেয়া হয়নি।
বাঞ্ছারামপুর শিক্ষা অফিসে কাজ করেন আছিয়া বেগম। তিনি অতি দরিদ্র মানুষ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি রাজস্বখাত থেকে তাকে ১৮০০ টাকা দেয়া হয় বলে স্বাক্ষর নেন। কিন্তু দেয়া হয় ১৫০০ টাকা। এই টাকা থেকেও ৩০০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা উপজেলা শিক্ষা অফিসে বইয়ের গোডাউনে ভুয়া দারোয়ান দেখিয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। অথচ তখন কোন দারোয়ান ছিল না। ২০১৭ সালে ডিপিএ এ প্রশিক্ষণে সিনিয়রিটি বাদ দিয়ে জুনিয়রিটিকে প্রশিক্ষণে প্রেরণ করা হয়। যা ২০১৮ ও ১৯ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল।
পদ শুন্য না থাকা সত্ত্বেও ২০১৭ সালে সেকেরকান্দি ও মধ্যনগর সরকারি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষক বদলী করা হয়। খাককান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইয়ামিন মিয়াকে অবৈধভাবে মানিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও শিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শরিফুল ইসলামকে জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়।
২০১৭ সালে ১৩৯টি স্কুল থেকে ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে ২ টাকা করে নেয়া হয়। মানুষ জানাজানি হওয়ায় ওই টাকা বৃক্ষরোপণের জন্য নেয়া হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু ওই টাকা থেকে আজ পর্যন্ত একটি বৃক্ষও লাগানো হয়নি।
২০১৮ সালে অন্ধ কল্যাণের টিকিটের জন্য জনপ্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২ টাকা করে নেয়া হয়। ৮০ হাজার ৩শত টাকার পুরোটাই আত্মসাৎ করে শিক্ষা অফিসার ও প্রভাবশালী কয়েকজন শিক্ষক। এছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টূর্ণামেন্টে বরাদ্দের কোড থেকে টাকা অনুমোদন না করে অন্য কোড থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে উপ বৃত্তির তালিকা করার জন্য সরকারি বরাদ্দ থাকলেও শিক্ষা কর্মকর্তা নৌসাদ মাহমুদ উপজেলা সদরের কম্পিউটার দোকানদার ইয়ামিনকে দিয়ে কাজ করান। পরে প্রতিটি স্কুল থেকে প্রতিবছর ১০-১২ হাজার করে নিয়ে যান।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিজের কোন মোটরসাইকেল না থাকা সত্ত্বেও মেরামত ও তেল ক্রয় বাবদ ২৫ হাজার ৪শত টাকা উত্তোলন করেছেন। যা ধারাবাহিকভাবে চলছে। বিদ্যালয় পরিদর্শনের সময় শিক্ষকদের মোটরসাইকেল দিয়ে বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন এবং ওই শিক্ষকের মাধ্যমে তেল বাবদ ৫শত টাকা বিদ্যালয় থেকে নিয়ে যান।
বাঞ্ছারামপুরে কর্মস্থল হলেও শিক্ষা অফিসার নৌসাদ মাহমুদ পাশ^বর্তী নরসিংদী জেলায় বসবাস করেন। ফলে বেশির ভাগ সময়ই তিনি এলাকায় থাকেন। তবে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করিয়ে নেন ঠিকই। নরসিংদীতে থাকার কারণে অফিস চলাকালিন সময়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষক তাকে মরিচাকান্দি লঞ্চঘাট থেকে উপজেলা সদরে শিক্ষা অফিসে আনা নেয়ার কাজটি করে থাকেন। কোন শিক্ষক অপরাগতা প্রকাশ করলে তাকে শাস্তির ভয় দেখান।
২০১৮ সালে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে স্কুলের সিনিয়র শিক্ষকদের বাদ দিয়ে জুনিয়র শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। দরিয়াদৌলত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আবদুল হাকিম ও কলাকান্দি দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আবুল কালাম আজাদই বাস্তব প্রমাণ। এছাড়া একই বছরে সমাপনী পরীক্ষায় কতিপয় স্কুলকে বিশেষ সুবিধা দিতে সিনিয়রদের বাদ দিয়ে জুনিয়র শিক্ষকদের হলসুপার হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে নীতিমালা ভঙ্গ করে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে অনেক বেশি টাকা নিয়েছেন। তাছাড়া ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে পঞ্চম শ্রেণীর সাময়িক ও মডেল টেস্ট পরীক্ষার আদায়কৃত টাকা নীতিমালা ভেঙ্গে উত্তোলন করেছেন। প্রতিবছর দুইটি করে মডেল টেস্টের টাকাও আত্মসাৎ করেছেন, যার কোন হিসেবপত্র নেই। এছাড়া ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেলের ফিক্সেশনের জন্য ৮-১২শত টাকা করে প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে আদায় করেছেন। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর পরীক্ষার কোড নম্বর ফাঁস করে দিয়েছেন। তিনি নরসিংদী থেকে তার পছন্দের কোডিং ম্যান এনে পাশাপাশি দপ্তরি দিয়ে কাজ করান। যার কারণে খাতার কোড ফাঁস হয়ে যায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কোন অনুমোদন ছিল না। ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দপ্তরি কাম প্রহরীর বেতন উত্তোলনে প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর না নিয়ে নিজেই স্বাক্ষর করে বেতন তুলে দেন।
দরিয়াদৌলত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম প্রহরী হেলাল উদ্দিনের ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে অনুপস্থিত থাকার পরও মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নিয়ে একসাথে বেতন ভাতা পরিশোধ করে দেন। ওই দপ্তরি প্রায় ১ বছর জেল হাজতে ছিল। মরিচাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাদকের মামলায় জেল হাজতে থাকার পরও বেতন ভাতা প্রদান করেছেন।
অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের হয়রানির কোন শেষ নেই। কাগজপত্র সঠিক করতে জনপ্রতি ১০ হাজার করে টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় ৫ জন অনুপস্থিত শিক্ষার্থীকে পাস দেখানো হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডাকখরচ বাবদ ১ হাজার টাকা ভাউচারে স্বাক্ষর করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অফিসের রেজিস্ট্রার পাল্টিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে ট্রেজারী অফিসে প্রমাণ রয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর টাকাও আত্মসাৎ করেছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক শিশুদের জন্য লিখি মুদ্রণ বাবদ ৮৫ হাজার ৪৫ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই টাকা কোন প্রকার খরচ না করে এবং কোন শিক্ষককেও না দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরের অফিসের ভাউচারে প্রমাণ পাওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে ট্রেজারী খাতওয়ারী ভাউচার যাচাই করতে হবে।
২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ অর্থবছরে প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিদ্যালয় জরিপের জন্য অধিদপ্তর থেকে ৭শত টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই জরিপ কাজটি করতে গিয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ৫শত থেকে ১ হাজার টাকা খরচ হয়। এই খরচের টাকাও শিক্ষকদের দেয়া হয়নি।
২০২০ সালে শিক্ষকদের ১০ বছর পূর্তিজনিত উচ্চতর গ্রেড প্রদানে বিধি মোতাবেক উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস কর্তৃক সার্ভিস বহিতে অনুমোদন না নিয়ে উচ্চতর গ্রেডে বেতন ভাতা প্রদান করেছেন। ২০১৮ সালে ডিপিএড পাশকৃত শিক্ষকের ডিপিএড স্কেল বা প্রশিক্ষণ স্কেল বেতন নির্ধারণ হিসাবরক্ষণ অফিস কর্তৃক সার্ভিস বহিতে অনুমোদন না নিয়ে এবং অনলাইনে কপি প্রেরণ না করে শিক্ষকদের থেকে বাড়তি উৎকোচ নিয়ে বেতন ভাতা প্রদান করেছেন।
বাঞ্ছারামপুর শিক্ষা অফিসে নৌসাদ মাহমুদের পছন্দের লোক রয়েছে। তাদের মাধ্যমে শিক্ষকদের জিপিএফ মঞ্জুরির জন্য ৫শত থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। মাতৃত্ব ছুটি মঞ্জুর ও পরবর্তীতে যোগদানের বাবদও ৫শত থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন এমন অভিযোগও রয়েছে। তাছাড়া এসব কাজের জন্য ৩-৪দিনের হয়রানিও হতে হয়। এখানেই শেষ নয়। চিকিৎসা ছুটি মঞ্জুর ও পরবর্তীতে যোগদানের পর বকেয়া বেতন উত্তোলনের জন্য ১৫শত থেকে ২ হাজার টাকা দিতে হয়। বলতে গেলে উৎকোচ ছাড়া কোন কাজ হয় না। অনেকটা ভয়ভীতির কারণে শিক্ষকরা চুপ করে থাকেন এবং বছরের পর বছর নিরবে এসব সহ্য করে যাচ্ছেন।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে স্লিপের ভ্যাট প্রদান করার জন্য নিষেধ করে দিয়েছেন। তিনি ইচ্ছে মতো প্রতিবছরই ১২ শতাংশ ভ্যাট কেটে রাখেন।
একীভূত শিক্ষার জন্য ২০১৫-২০১৬ এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই টাকা ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে ভুয়া স্বাক্ষর নিয়ে ভাগভাটোয়ারার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। টেন্ডারের কাগজপত্র যাচাইকালে তা বেরিয়ে আসবে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত টাকাও সম্পূর্ণ ব্যয় করা হয়নি। টেন্ডারদাখিলকারী ব্যক্তি এ ব্যাপারে অবগত। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে মধ্যনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জোহাকে দুইখাতের ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০২০-২০২১ অর্থবছরেও পূণরায় ক্ষুদ্র মেরামত প্রদান করেছেন। অথচ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৮টি স্কুলে পরপর দুইবার বরাদ্দ পাওয়াতে কাজ করতে বাঁধা দিয়েছেন।
২০১৮ সালে হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাইকারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাড়াতলি উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুন্দর ওয়াশব্লককে ভেঙ্গে ফেলে। তারপর সরকারি খরচে ৮ লাখ টাকা দিয়ে ওয়াশ ব্লক তৈরি করা হয়েছে। যা অল্পদামে নিলামে বিক্রী করা হয়েছিল। এখানেই শেষ নয়। বিদ্যালয় পরিত্যক্ত ভবন ও মালামাল নিলামের ফাইল বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ও তথ্য গোপন করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে অল্পদামে বিক্রি করে ফেলেন। অথচ সরকারি নীতিমালা মোতাবেক নিজ নিজ বিদ্যালয়ে ওপেন ডাকের মাধ্যমে নিলাম বিক্রী করার নীতিমালা আছে। বিগত সময়ে নিলামের ফাইল যাচাই করলে সব পরিস্কার বেরিয়ে আসবে।
২০১৮ ও ২০১৯ সালে বদলীতে সরকারি নীতিমালা মোতাবেক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে শুন্য পদে পছন্দ মোতাবেক ব্যক্তিদের বদলী করেছেন। প্রমাণ হিসেবে শিক্ষকদের আবেদনপত্র যাচাইকালে সব জানা যাবে। নগরীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষককে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে উপজেলার বাইরে রিলিজ করে দিয়েছেন। অথচ ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক মাত্র ২ জন। নিজকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক খাদিজা আক্তারকে ভবনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করেছেন। সেখানে শিক্ষক মাত্র ১ জন। ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল উপজেলা শিক্ষা অফিসারের স্মারক নং ৪৬০ এ ৭ জন শিক্ষককে বদলীর আদেশ দিয়েছেন। অথচ এপ্রিল মাসে বদলীর কোন বিধান নেই। সূত্র থেকে জানা যায়, প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ে ২-৩ জন শিক্ষক থাকার পরও তাদের রিলিজ করে দিয়েছে। তাছাড়া সেই বিভাগীয় বদলীর ক্ষেত্রে বদলীর সময়কাল ৩ বছর অতিক্রান্ত না হলেও শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বদলীর নীতিমালা বহির্ভূত ২০১৮-২০১৯ সালে বদলীর প্রস্তাব প্রেরণ করেছেন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ নতুন কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রূপা আক্তারকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা থেকে নবীনগর উপজেলায় বদলী করা হয়। ওই স্কুলে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই তাতুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবু হেনা শহীদকে বদলী করা হয়। অথচ তখন বদলী কার্যক্রম বন্ধ ছিল। অভিযোগ রয়েছে জেলা শিক্ষা অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে বদলীর আদেশ জারী করা হয়েছিল।
২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে সরকারি পাঠ্য বই বিতরণের সময় সহকারি শিক্ষা অফিসার গাজী মো. শাহরাজের মাধ্যমে প্রতিটি কিন্ডারগার্টেন হতে ২ শত থেকে ১ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। বইয়ের চাহিদা দেয়ার সময় সফটওয়্যারে কাজ করা জন্য প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ৩শত টাকা নিয়ে থাকেন। বিদ্যালয় জরিপের সময় ৫শত টাকা নেন। তদন্তে প্রমাণ মিলবে।
২০২০-২০২১ অর্থবছরে ইএফটিতে বেতন করার জন্য শিক্ষকদের ৪শত টাকা করে টাকা দেয়ার নির্দেশ দেন। মনির হোসেন নামে জনৈক শিক্ষক টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। ওইখাত থেকে ৪ লাখ ৩ হাজার ৫শত টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া ১০ বছর পূর্তি উচ্চতর গ্রেডের জন্য ও চাকুরি স্থায়ী করার জন্য ১ হাজার টাকা করে ঘুষ নেয়ার কথাও জানা গেছে।
নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার নৌসাদ মাহমুদ ও সহকারি শিক্ষা অফিসার গাজী মো. শাহরাজ অস্বীকার করেন। একটি বিশেষ মহল তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় ও দেশী সিস্টেম লিমিটেড, আজাদ স্টিল এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, এসআর সাইন, স্টার মিডিয়া, স্টার মিডিয়া ভিশনকে বারবার কাজ দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা অফিসার নৌসাদ মাহমুদ ও সহকারি শিক্ষা অফিসার গাজী মো. শাহরাজ চুপ করে থাকেন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2021
ভাষা পরিবর্তন করুন »