তারিখ লোড হচ্ছে...

যন্ত্রদানব চালকদের পেছনে কারা?

স্টাফ রিপোর্টার॥
রাজধানীর সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকার জেলা প্রশাসক, দুই সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি গত মঙ্গলবার এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই দিন রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় আফসানা করিম রাচি নামে এক ছাত্রী নিহত হন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নবীন শিক্ষার্থীর জীবন ঘড়ি থামিয়ে দিয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা নামক এক যন্ত্রদানব। যার হিংস্র গতি থেতলে দিয়েছে রাচির মায়াবি মুখমন্ডল। স্তব্ধ করে দিয়েছে এক সম্ভাবনাময় তরুণ প্রাণের স্পন্দন। নিজ ক্যাম্পাসে একটি অটোরিকশা কেড়ে নিয়েছে এক বাবা-মায়ের বেঁচে থাকার অবলম্বন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো জায়গায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো যে একেকটি মৃত্যুদূত হয়ে বিচরণ করে, তা হয়তো এই অভাগা বাবা-মায়ের জানাই ছিল না। সারাদেশে এরকম আরো কত রাচির জীবন এভাবে অকালে নিভে যাচ্ছে তার খবর কজনে রাখে? হাইকোর্টের আদেশের পরে বেপরোয়া উঠেছে যন্ত্রদানব এসব রিকশার চালকরা। তারা হাইকোর্টের নির্দেশ না মেনে উল্টো সরকারকে বেকায়দায় ফেলার নানা অপকৌশলে জনগণের ভোগান্তি বাড়াতে সচেষ্ট। এই টার্গেট তাদের অনেক পুরোনো।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, সড়কে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। প্রাণহানির দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে তিন চাকার যানবাহনের দুর্ঘটনা। যার মধ্যে বেশির ভাগই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ৫৯৮ জন মারা গেছেন। যানবাহনভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী এক হাজার ৯২৪ জন; যা মোট নিহত হওয়া মানুষের ৩৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর তিন চাকার যানবাহন সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারি রিকশা, ইজিবাইক, নছিমন, অটোভ্যান ইত্যাদির দুর্ঘটনায় এক হাজার ৯৭ জন মারা গেছেন; যা মোট নিহত মানুষের ১৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। সরকার নিবন্ধন দেয় না বলে এসব অবৈধ যানবাহন চালানোর জন্য কোনো প্রশিক্ষণ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগে না। যার যখন ইচ্ছা সে চালাতে পারে।
সরকারি হিসাবে দেশে বৈধ যানবাহন আছে ৬২ লাখের মতো। আর সরকারের বিবেচনায় ‘অবৈধ’ তিন চাকার যানবাহন আছে প্রায় ৭০ লাখ। যদিও বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি। বৈধ যানের ২ শতাংশের কম বাস-মিনিবাসসহ গণপরিবহন।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও অন্যান্য অবৈধ তিন চাকার যানবাহনের প্রকৃত হিসাব সরকারের কোনো দফতরেই নেই। তবে ২০১০ সালের দিকে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একাধিক বৈঠকে তিন চাকার অবৈধ যানের সংখ্যা ১০ লাখের মতো বলে উল্লেখ করা হয়। বিআরটিএ, যাত্রী অধিকার সংগঠন, পুলিশ ও অন্যান্য অংশীজনের হিসাবে, ব্যাটারি ও যন্ত্রচালিত তিন চাকার অবৈধ যানবাহন এখন ৬০ লাখের বেশি। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে আছে প্রায় ৫০ লাখ। আর ঢাকায় আছে ১০ লাখের মতো। হাসিনার পতনের পর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে ঢাকার প্রবেশ করেছে আরো কমপক্ষে আট লাখ। সব মিলিয়ে ঢাকায় এসব যানের সংখ্যা এখন ২০ লাখের মতো।

চাহিদার তুলনায় গণপরিবহনের এই স্বল্পতার সুযোগে কারিগরিভাবে ত্রুটিপূর্ণ তিন চাকার ব্যাটারি ও ইঞ্জিনচালিত রিকশায় ঢাকাসহ সারাদেশ ছেয়ে গেছে। এসব যান বাড়তে দিয়ে এখন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না; বরং ত্রুটিপূর্ণ এই যানবাহনগুলো দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে। রাজধানীতে বাড়াচ্ছে যানজটসহ বিশৃঙ্খলা। যা গত প্রায় তিন মাস ধরে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। এমতাবস্থায় হাইকোর্ট ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজধানীর যানজট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে সময় বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি কমিটিও হয়েছিল। কিন্তু কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে পুলিশ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কেন নেয়নি সেটি পুলিশ প্রশাসনই ভালো জানে। অনেকেই মনে করেন, তখন প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ উদ্যোগ নিলে আজ ব্যাটারি রিকশা চালকরা রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ করাসহ সেনাবাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আক্রমণ করার সাহস পেতো না।

নেপথ্যে কারা?
৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের পুলিশ বাহিনী অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তখনই ঢাকার অলিগলি থেকে ব্যাটারি রিকশা ঢাকা শহরে প্রবেশ করতে থাকে। কয়েক দিন অবাধে চলাচলের সুযোগে ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকেই লাখ লাখ রিকশা চলে আসে ঢাকায়। এর মধ্যে হাসিনার দোসররা প্রথমে বিচার বিভাগ দিয়ে ক্যু করার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আনসার বাহিনী দিয়ে সরকার পতনের অপচেষ্টা চালায়। সেটিতেও ব্যর্থ হয়ে তারা ব্যাটারি রিকশা দিয়ে রাজধানী দখল করে নেয়ার নীল নকশা আঁকে। সে সময় কয়েকজন রিকশাচালকের সাথে কথা বললে তারা জানায়, নেতার কথায় তারা ঢাকায় এসেছে। এদের বেশির ভাগই দেশের বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা, সক্রিয় কর্মী কিংবা আওয়ামী মন্ত্রী, এমপির দালাল। অনেককে আবার নেতাই রিকশা কেনার অর্থ জোগান দিয়েছে বলে জানায়। বেশ কয়েকজন রিকশাচালক স্বীকারও করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় মামলা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য তারা এখন ঢাকায় ব্যাটারি রিকশা চালাচ্ছে। গত বুধবার থেকে ব্যাটারি রিকশা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে এসব রিকশাচালক যেভাবে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে মিছিল করছে তাতে তারা যে আওয়ামী লীগেরই দোসর তা নিয়ে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। কেউ কেউ এদেরকে উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠন ইসকনের সদস্যদের সাথেও তুলনা করেছেন। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে তৎপর হলে আজ এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতো না।

এ ছাড়া, অবৈধ বলে এসব রিকশা রাস্তায় নামাতে আওয়ামী লীগ আমল থেকেই স্থানীয় নেতাদের এককালীন কমপক্ষে দুই হাজার টাকা ও মাসিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হতো। সেই সব চাঁদাবাজরা এখনো সক্রিয়। আন্দোলনরত রিকশাচালকরা জানান, নেতাদের কথায় তারা মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিন রাতে গ্যারেজগুলোতে এ নিয়ে মিটিং হচ্ছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত যা আসছে তা মোবাইলে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।

১০০ জনের কাছে জিম্মি পুরো দেশ!
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারাদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয় মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে। সাইকেল ও মোটরসাইকেলের খুচরা যন্ত্রাংশ হিসেবে এগুলোর যন্ত্রাংশ চীন থেকে আনা হয়। এমন আমদানিকারক আছে মাত্র ১০০ জন। এরাই রাজধানীর শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম, কমলাপুরে প্রকাশ্যে এসব খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রি করে। যেগুলো বিভিন্ন কারখানায় নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে চেচিস তৈরি করে ইজিবাইক ও ব্যাটারি রিকশা বানানো হয়। অনুসন্ধানে শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম, কমলাপুরের এরকম কয়েকজন আমদানিকারকের নাম জানা গেছে। এগুলো হলোÑ জি মোটর সেন্টার, মালিক নজরুল ইসলাম খান, বিল্লাল অটো সেন্টার, মালিক মো. বিল্লাল হোসেন, কর্ণফুলি অটো, এক্সিলেন্স অটো, ত্রিরতœ ট্রেডিং ইত্যাদি। মোট কথা, শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের চারিদিকে কমপক্ষে ৫০ জন আমদানিকারক আছে, যারা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এসব অবৈধ যানের খুরচা যন্ত্রাংশ আমদানি করে থাকে। বাকি ৫০ জনের বেশ কয়েকজন বংশাল, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, হাজারীবাগ, জুরাইন, শ্যামপুর, মুগদা, ডেমরা, বসিলা, মিরপুর, দক্ষিণ খান, উত্তর খান, আমিনবাজার ও কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা। এদের কারো কারো আবার নিজস্ব কারখানাও আছে। বনশ্রীর এক কারখানার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার কারখানা থেকে কক্সবাজার ও টেকনাফে ইজিবাইক সরবরাহ করা হয়। টেকনাফে তার দুটো শোরুম আছে। এ পর্যন্ত কয়েক হাজার ইজিবাইক বিক্রি করে তিনি বর্তমানে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। আর ব্যাটারি রিকশার কারখানা বেশি শ্যামপুর ও জুরাইনে। ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, ১০০ জন আমদানিকারক এসব অবৈধ যান দিয়ে গোটা দেশকে জিম্মি করে ফেলেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এদের ব্যবসা বন্ধ করলেই এমনতিতেই ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইকে দাপট কমে আসবে। তিনি বলেন, গ্যারেজগুলোতে অভিযান চালিয়ে এগুলো জব্দ করতে হবে। পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১২০টি ওয়ার্ডের অলিগলিতে কয়টি রিকশা বা ইজিবাইক চলতে পারবে তা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। জীবিকার তাগিদে তাদেরকে এতটুকু ছাড় দেয়া যেতে পারে। তার আগে ঢাকার বাইরে থেকে আসা রিকশাগুলোতে ঢাকা থেকে অবশ্যই বিতাড়িত করতে হবে।

আওয়ামী সরকারের নাটক!
স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিষিদ্ধ এসব যান চলাচল ও বৈধতা নিয়ে কয়েক দফা নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে একবার এসব যান নিষিদ্ধ করা হলে সরকার কিছুটা তৎপরতা দেখালেও পরে সেখান থেকে সরে এসেছে। এর পেছনেও ছিল তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৫ মে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকায় ব্যাটারি বা যন্ত্রচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশনা দেন। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানীর আগারগাঁও ও মিরপুর-১০ নম্বরে সড়ক অবরোধসহ ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এসব যানের চালকরা। ২০ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়াকান্না দেখিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন। মূলত সেটিও ছিল দলীয় কর্মীদের চাঁদাবাজিতে বঞ্চিত না করার একটি কৌশল।

বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানান, হাসিনার ওই সিদ্ধান্তের পর ঢাকাসহ সারা দেশে অবৈধ এসব যান স্রোতের মতো নামতে শুরু করে। এসব রিকশা আগে চলত অলিগলিতে। হাসিনার ঘোষণার পর মূল সড়তে উঠে আসে।
অবৈধ এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বুয়েটের অধ্যাপক হাদীউজ্জামান বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। শুধু তাই নয়, এগুলো চলাচল কিভাবে করবে, কোথায় চলতে পারবে সে বিষয়েও নীতিমালা করা দরকার। দীর্ঘদিন রাজনীতিকদের সহযোগিতায় এখনো এগুলো নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এখন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।

ডিপিডিসি জোয়ার্দার এখন শতকোটি টাকার মালিক!

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর (ডিপিডিসির) নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও স্বেচ্ছাচারীমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়া লিখিত অভিযোগ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে একাধিক ফ্ল্যাট, বাড়ি, দোকানসহ জায়গার মালিক হয়েছেন। নির্বাহী পরিচালক হওয়ার আগেই আলাদিনের চেরাগ ধরা দিয়েছিল তার হাতে।

তখন সময়টা ছিল বিএনপি সরকারের। ঢাকার মোহাম্মদপুরের সূর্য নামে এক নেতার সঙ্গে আত্মীয়তার সুবাদে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের কাছে সূর্যর সাথে প্রায়ই হাওয়া ভবনে যেতেন গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার। তাই বিএনপির আমলে ভাল পোষ্টিং, বিদেশ ভ্রমণসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন কারাগারে থাকলেও তার সহযোগীর কাছে নিয়মিত অবৈধ অর্থের ভাগ পাঠান এবং কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে খাবার ও টাকা দিয়ে আসেন। বিএনপির রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত থেকে ঢাকার উত্তরাতে তিনটি ফ্ল্যাট গড়েছেন।

যার মধ্যে একটি আলিশান ফ্লাটে নিজে বসবাস করেন। ওই ফ্লাটে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা রেখে মনের মত সাজিয়েছেন। বাকী দুইটি ফ্লাট ভাড়া দেওয়া। মোহাম্মদপুরের বায়তুল আমান হাউজিংয়ে ২টি এবং লালমাটিয়াতে ২টি ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া আছে। এ ছাড়াও তার নামে-বেনামে অসংখ্য জায়গা ও দোকান রয়েছে। শুধু দেশে নয়, এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার রয়েছে আমেরিকাতে বাড়ি-গাড়ি।

তার মেয়ে আমেরিকাতে পড়াশুনা শেষে আলিশান জীবন যাপন করছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে এই কর্মকর্তা খোলস পাল্টিয়ে রাতারাতি একজন মন্ত্রীর বড় ভাই পরিচয়ে এবং একটি চক্রের সহযোগীতায় হঠাৎ ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান।

সূত্র জানায়, ডিপিডিসির একজন প্রভাবশালী ‘স’ অদ্যাক্ষরের এক বোর্ড মেম্বারের পরক্ষ ছত্রছায়ায় তিনি খুব ক্ষমতাবান বনে গেছেন।

সূত্র আরো জানায়, এই কর্মকর্তা যখন ডিপিডিসির প্রিপেইড মিটারের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ছিলেন, তখন তিনি অনেক অনিয়ম করে শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। তৎকালীন সময় হেক্সিন ঠিকাদারী কোম্পানীর নিম্নমানের প্রিপেইড মিটার ক্রয় ও গ্রাহকের আঙ্গিনায় মিটার স্থাপনের সময় সরকারের অনেক রাজস্ব ক্ষতি সাধন করেছেন। তৎকালীন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশিতও হয়েছিলো।

ডিপিডিসির একাধিক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, ডিপিডিসিতে অনেক যোগ্য লোক থাকতেও জোয়ার্দারের মত অযোগ্য লোককে নেয়া হয়েছে অর্থের বিনিময়ে। টাকা ছাড়া কোন ফাইল সই করেন না। হুমকি-ধমকির ভয়ে তার রুমে কেউ যেতে চায় না।

তারা আরো জানান, কর্মকর্তাদের ওপর যখন তখন টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন এবং রুমে গেলে কাজের চেয়ে অকাজের কথা বেশি বলেন। গত দুই বছরে নির্বাহী পরিচালক হয়ে কমপক্ষে ৬০ কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য করেছে। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ডিপিডিসিতে চলছে বিদেশ ভ্রমণ ও দুর্নীতির মহোৎসব।

নির্বাহী পরিচালক থাকাকালীন গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার প্রকল্প পরিচালকও ছিলেন। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ঠিকাদারকে সুবিধা দেয়ার জন্য ভেরিয়েশনের মাধ্যমে অন্তত দুইশ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। তাছাড়া ওই প্রকল্পের কাজের গুনগত মান নিম্নমানের হওয়ায় এরই মধ্যে সাতটি ট্রান্সফর্মার বিকল হয়েছে।

ফলে সরকার তথা ডিপিডিসির অন্তত ৮০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীতে বেশ কিছু বৈদ্যুতিক সাবষ্টেশন নির্মাণেও তিনি অনেক ঘাপলা করেছেন। নিম্নমানের মালামাল সরবরাহের কারণে সাবষ্টেশনগুলোতে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে।

ডিপিডিসি থেকে আরও জানা যায়, গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দারকে দুই দফা চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার পরও একটি ঠিকাদার চক্র তৃতীয়বারের মত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সার্ভিস রুলস্ সংশোধনের পায়তারা করছে তারা।

আগামী বছরের জানুয়ারীতে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানীতে নির্বাহী পরিচালক নিয়োগে বয়সের যে বিধিমালা রয়েছে তা সব সংস্থার এক নিয়মে চলে।

ডিপিডিসিতে নিয়োগের বয়স সংশোধন হলে সিস্টেম ভেঙ্গে পরবে। এতে করে মেধাসম্পন্ন যোগ্য লোক যথাস্থানে বসতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানে দেখা দিবে অসঙ্গতি, কাজের গতি কমে যাবে এবং প্রকৌশলীদের মনোবল ভেঙ্গে যাবে।

বিদ্যুত সেক্টর ও ডিপিডিসির এ যাবত কালের সমস্ত নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে দশ কোটি টাকার বিনিময়ে একটি শক্তিশালী চক্র উঠেপড়ে লেগেছে এই অযোগ্য, অর্থবর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে আর একবার চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে তোড়জোড় শুরু করেছেন।

তিনি কথায় কথায় নিচের কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে বলেন, আমিই ডিপিডিপির এমডি হব। এখন কথা মত কাজ না করলে এর ফল পরে ভোগ করতে হবে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বৃহস্পতিবার গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার সঙ্গে মুঠোফোন বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

ডিপিডিসির এমডি প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগ আমি পাইনি। দুদক একটি স্বাধীন সংস্থা। তারা তাদের মত তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম