সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে নদী দখল

সবুজ বাংলাদেশ॥
দেশে নবায়নযোগ্য শক্তিসংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অবৈধ দখলের বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

লালমনিরহাটে একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে গিয়ে কীভাবে অন্যের জমি দখলে নেওয়ার পাশাপাশি নদীর বিস্তীর্ণ এলাকাও দখল করা হয়েছে, তা গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। জানা গেছে, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভোটমারী (নাককাটির ডাঙ্গা) গ্রামের মানুষ বংশপরম্পরায় নদী পার হয়ে তিস্তার চরে চাষাবাদ করে আসছে।

কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের জমি কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। কারণ, সেখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে। সেই থেকে ওই গ্রামের বহু মানুষের জীবন প্রায় থমকে গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কৃষকের জমি দখলের পাশাপাশি তিস্তার বিস্তীর্ণ এলাকা দখলের অভিযোগও উঠেছে। সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য নদীর বুক চিরে ৫০ ফুট চওড়া দুই কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

সড়ক নির্মাণের ফলে তিস্তার একটি চ্যানেল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নদীর ভেতর এ ধরনের সড়ক নির্মাণের ফলে নদীভাঙনসহ সম্পদহানি ঘটবে। তিস্তার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীতে এভাবে অবৈধ দখল প্রক্রিয়া চলছে, এসব কি দেখার কেউ নেই?

জানা গেছে, তিস্তার তীরে নদীর ওপর লাগানো হয়েছে ‘ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেডের’ সাইনবোর্ড। এক জায়গায় নদীর মাঝখানে কিছুটা জায়গা ফাঁকা (বেইলি ব্রিজের জন্য) রেখে চলছে সড়কের নির্মাণকাজ। ফলে নদীর পানি বাধাগ্রস্ত হয়ে দুই তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে; যা বাঁশ-টিন দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। নদী পার হয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় দুই কিলোমিটারের ইট বিছানো সড়কটি চলে গেছে শৌলমারী চরে নির্মাণাধীন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এলাকা পর্যন্ত। সড়কের কারণে চরের মাঝে পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ডুবে আছে চরের অনেক জমি।

শৌলমারী চরের একজন কৃষকের দাবি, তার কেনা প্রায় পৌনে তিন একর জমির মধ্যে ৯০ শতাংশ জমি কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে নেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ করেন ওই কৃষক ও তার স্বজনরা। এতে জমি রক্ষা করা সম্ভব না হলেও মারধরের শিকার হয়েছেন তারা। শৌলমারী চরের ওই কৃষকসহ নয়জনের নামে সম্প্রতি কাঁটাতার ও টাকা ছিনতাইয়ের মামলাও করা হয়েছে।

নিজেকে ইন্ট্রাকো সোলার লিমিটেড ‘কমিটির ম্যানেজার’ দাবি করে ওই এলাকার প্রভাবশালী এক ব্যক্তি মামলাটি করেন। এমন ঘটনায় এলাকার অনেকেই হতবাক। নদীর ভেতর সড়ক নির্মাণের কারণে বিস্তীর্ণ আবাদি জমি ইতোমধ্যে চলে গেছে নদীগর্ভে। ফলে এলাকার বহু দরিদ্র মানুষ পথে বসার আশঙ্কায় দিন গুনছেন। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের নামে অবৈধ কর্মকাণ্ডে যুক্ত যারা, তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

প্রসঙ্গ আইপি টিভি

সাইদুর রহমান রিমন :
তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন বৈঠকে ফেসবুক, আইপি টিভি, অনলাইন টিভিতে সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রনালয় থেকে চিঠি জারি হওয়ায় সবাই যেন খুশিতে গদ গদ হয়ে উঠেন। ফলাও করে তা পত্র পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের অনলাইন পেপারে প্রচার প্রকাশ করে যুদ্ধ জয়ের ঢেকুর তুলেন সবাই।
এভাবেই ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত আইপি টিভি ও অনুমোদনহীন অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ নিষিদ্ধ করে কতগুলো সরকারি চিঠি জারি হয়েছে তা জানেন কি? খোঁজ খবর নিয়ে তথ্য মন্ত্রনালয়ের জারিকৃত ৭/৮টি কঠোর নির্দেশ জারির চিঠি পাওয়া গেল। প্রায় অভিন্ন ভাষায় জারিকৃত একেকটি চিঠি পাঠ করলে ধারণা হবে যে, এই বুঝি সব বাহিনীর সমন্বয়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হচ্ছে, যে কোনো মূল্যে সব আইপি টিভি, ভূয়া অনলাইন পেপার বন্ধ এবার হবেই হবে। বারবার শুনতে পাবেন জিরো টলারেন্স, জিরো টলারেন্স!
তবে জিরো টলারেন্স এর বাস্তবচিত্রটি আসলে কী তা নিজ নিজ এলাকার মাদক ব্যবসায়িকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারবেন। মাদক ব্যবসায়িরা বলবে, থানা পুলিশ, বড় বাবু ২/৪ মাস পর পরই জিরো টলারেন্সের ধোয়া তুলে আমাদের দাবড়ে বেড়ায়। মাসোহারার টাকা বকেয়া পড়লেও জিরো টলারেন্স, বখড়ার পরিমাণ বাড়াতে হলেও জিরো টলারেন্স। তখন জিরো টলারেন্সের ধাওয়ার ধকলে পড়ে মাদক ব্যবসায়িরা ছোটাছুটি করে হাজিরা দেন বড় বাবুর কাছে…তখনই জানতে পারেন টলারেন্সের মূল কারণ। এখন মাদক ব্যবসায়িদের মতো জিরো টলারেন্সের ধাওয়া খেয়ে ভূয়া আইপি টিভিওলারাও বকেয়া মাসোহারা কিংবা বাড়তি বখড়া নিয়ে কোথাও হাজির হয় কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সাইদুর রহমান রিমন :

সিনিয়র সাংবাদিক।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম