চিহ্নিত সন্ত্রাসী শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ছাত্র হত্যা মামলায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য, ফেনী জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ফেনী পৌরসভার সাবেক কমিশনার শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়াকে ভূঁইয়া গ্রেফতার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে ফেনীর যৌথবাহিনীর সদস্যরা তাকে তার ফেনী পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভুঁইয়া বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে তাকে ফেনী মডেল থানায় রাখা হয়েছে। ফেনী মডেল থানার ওসি মর্ম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ছাত্র হত্যার ঘটনায় ১২ জানুয়ারি লালবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে মামলাটি নথিভুক্ত হয়। শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে দায়ের করা মামলার ২১ নম্বর আসামি ফেনীর এক সময়ের ত্রাস শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া।

এদিকে, চিহ্নিত সন্ত্রাসী শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়াকে আইনের আওতায় আনতে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া ফেনীতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তিনি ছিলেন ফেনীর গডফাদার হিসেবে খ্যাত জয়নাল আবেদীন হাজারীর ডান হাত। জয়নাল হাজারীর নির্দেশে তিনি ফেনীতে খুন, গুম ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করতেন শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া। আওয়ামী লীগের শাসনামলে শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া ফেনীতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তিনি ছিলেন ফেনীর গডফাদার হিসেবে খ্যাত জয়নাল আবেদীন হাজারীর ডান হাত। জয়নাল হাজারীর নির্দেশে তিনি ফেনীতে খুন, গুম ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করতেন শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া।

১৯৯৭ সালে ২৯ মার্চ ফেনী শহরের ট্রাংক রোডে বের হওয়া মিছিলে তৎকালীন এমপি জয়নাল হাজারির ক্যাডার বাহিনী কর্তৃক ব্রাশফায়ারে খুন হন নাসির। এই খুনের অন্যতম হোতা শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ফেনীতে শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। ফেনীর চাঁদাবাজদের গডফাদার ছিলেন শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া।

ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের শেল্টারে ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে জুলাই ও আগস্টে ফেনীতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চলে। শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া এ সময় ফেনী পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ছিলেন। তিনি কমিশনার থাকা অবস্থায় জয়নাল হাজারীর শেল্টারে এ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তাকে চাঁদা না দিয়ে কেউ বাড়ি করতে পারতেন না। ফেনী পৌরসভায় শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়ার কথাই ছিল আইন। শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়ার টর্চার থেকে বাঁচতে বিএনপির অনেক নেতা তখন ফেনী ছাড়তে বাধ্য হন। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। ফেনীতে আওয়ামী লীগের শাসনামলে এমন কোনো অপরাধ ঘটেনি, যেখানে শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া জড়িত নেই। সরকার পতনের পর ফেনীর আওয়ামী লীগের সব নেতা পালিয়ে গেলেও এখন ফেনীতে প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন যুবলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া। তার বিরুদ্ধে প্রচুর পরিমাণে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

কথিত আছে, ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের অঢেল সম্পদ শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়ার জিম্মায় রয়েছে। অবিলম্বে তাকে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

আ.লীগ নেতাকে নিরাপদ রাখতে গাড়ি উপহার নেয়ার অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

 

স্টাফ রিপোর্টারঃ

গাজীপুরের শ্রীপুরে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চুর ব্যবহৃত একটি লাল গাড়ি ভাইরাল হয়েছে। আওয়ামীলীগের মন্ত্রী এনামূর রহমানকে বিএনপির লোক বলে দাবি করা ও একাধিক আওয়ামীলীগ নেতাকে শেল্টার দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি শ্রীপুরে এক আওয়ামীলীগ নেতা কর্তৃক বিএনপি নেতা বাচ্চুকে উপহার দেয়া একটি লাল গাড়ি ও একাধিক আওয়ামীলীগ নেতার সাথে বাচ্চুর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গাড়ি উপহার দেয়া আওয়ামীলীগ নেতা বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলার আসামি হয়ে এখন পলাতক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৪-৬৪১৩ নম্বর গাড়িটির উপহার দাতা হিসেবে শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ মো: নাজমূল হুদা ও উপহার গ্রহীতা হিসেবে গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ডা: রফিকুল ইসলাম বাচ্চু নাম এখন আলোচনা-সমালোচনায় গাজীপুরের মানুষের মুখে মুখে।
সূত্রমতে, গাড়িটি উপহার পাওয়ার পর ডা. বাচ্চু নাজমুল হুদার সভাপতিত্বে একটি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন। এতে নাজমুল হুদা প্রকাশ্যে থাকার গ্যারান্টি পেয়ে যান। গাড়িটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে সম্প্রতি নাজমুল হুদার নামে একটি বৈষম্যবিরোধী হত্যা মামলা হলে তিনি গা ঢাকা দেন। লাল গাড়ি ও উপহার দাতা-গ্রহীতার ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। একই সঙ্গে বিভিন্ন আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে বিএনপি নেতা ডা: বাচ্চুর একাধিক ছবিও ভাইরাল হচ্ছে। লাল গাড়িটি তার বাড়ির সামনে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাচ্চুকে বহন করতেও দেখা গেছে। এই গাড়িটির মালিক কে তা জানার জন্য ঢাকা ও গাজীপুর বিআরটিএতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে বিআরটিএ।
তবে একটি গোপন সূত্র জানায়, গাড়ির মালিক খায়রুল ইসলাম পিতা: জহুর আলী, ময়মনসিংহ রোড ঢাকা এই টুকু ঠিকানা বিআরটিএর রেজিস্ট্রারে লেখা আছে। গাড়ির মালিকের হাতবদলের পর বর্তমান মালিক কে তা জানা যায়নি। কিন্তু বিএনপি নেতা বাচ্চু গাড়িটি ব্যবহার করেছেন বলে স্বীকার করায় গাড়িটি তার নিয়ন্ত্রণে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, ডাঃ বাচ্চু গাজীপুর বিএনপির সবচেয়ে বড় নেতা হতে বড় বড় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। নিজ দলের আর কেউ যেন প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী হতে না পারে সেজন্য ডা: বাচ্চু সব ধরণের কাজ করছেন। বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যে সকল বিএনপির নেতা-কর্মী আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে সরাসারি মাঠে কাজ করেছেন, যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছেন তাদের নিয়ে একাধিক অনুষ্ঠানে কম্বলও বিতরণ করেছেন বাচ্চু। বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলসহ বিএনপির প্রতিষ্ঠিাকালীন সময়ের যে সকল নেতা-কর্মী রয়েছেন তাদের অনেকের সাথেই কোন যোগাযোগ নেই তার। আগামী সংসদ নির্বাচনে আর কেউ যেন ধানের শীষ চাইতে না পারে সেজন্য বাচ্চু এখন মরিয়া। শ্রীপুরে প্রায় শতাধিক শিল্পকারখানায় নিজস্ব লোক ও সুবিধাভোগী কিছু নেতাকর্মীদের দিয়ে দিয়ে ঝুট ব্যবসা করাচ্ছেন বলেও বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক শ্রীপুরের স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতৃবৃন্দ জানায়, ডা: বাচ্চু তৃনমূল থেকে বিএনপি করেননি। তিনি পেশাজীবী সংগঠনের কেন্দ্রিয় নেতা। আওয়ামীলীগের পুরো সময় তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের ত্রাণমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমানের সাভারস্থ এনাম মেডিকেলে চাকুরী করে নিরাপদেই ছিলেন বাচ্চু। গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক হওয়ার আগে বাচ্চুর গোপন ষড়যন্ত্রের কারণে গাজীপুর জেলা বিএনপির বড় বড় নেতাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হয়।
এই বিষয়ে গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ডা: রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, আলোচিত লাল গাড়িটি আমি কিছুদিন ব্যবহার করেছি। গাড়িটি একজন বিএনপি নেতার। আওয়ামীলীগ নেতা নাজমুল হুদাকে তিনি চিনেন না বলে জানালেও তিনি নাজমূল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে যাননি বলে জানান। আওয়ামীলীগ নেতা খোকন, আ: জলিলসহ বহু আওয়ামীলীগ নেতার সাথে বাচ্চুর ছবি থাকলেও তিনি তাদেরকে চিনেন না বলে জানান। একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
আওয়ামীলীগের সাবেক মন্ত্রী এনামূর রহমানের এনাম মেডিকেলে চাকুরী করার কথা স্বীকার করে বাচ্চু বলেন, এনামূর রহমান বিএনপির লোক ছিলেন, এটা জেনে রাখেন।
ভাইরাল গাড়িটির কথিত উপহার দাতা শ্রীপুর পৌর আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ নাজমূল হুদাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম