অর্থপাচারে জড়িত ৭০ ভিআইপি শনাক্ত করল দুদক

স্টাফ রিপোর্টার:

বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে দুবাইয়ে ‘গোল্ডেন ভিসা’ সুবিধার মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ৪৫৯ জন বাংলাদেশি নাগরিক। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ (C4ADS)’ এবং ‘ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি’-র তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল পর্যন্ত তারা দুবাইয়ে ৯৭২টি প্রপার্টি কিনেছেন, যার আনুমানিক মূল্য ৩১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার।

চাঞ্চল্যকর এই তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে নেমে এরইমধ্যে ৭০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নামও রয়েছে এ তালিকায়।

ইতোমধ্যে তাদের কর শনাক্তকরণ নম্বরসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। চিঠিতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ই-টিআইএন, আয়কর রিটার্নসহ সব প্রাসঙ্গিক তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।

সম্প্রতি দুদকের উপপরিচালক ও প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা রাম প্রসাদ মন্ডল স্বাক্ষরিত চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, দুদকের অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা তার প্রয়োজনে যেকোনো নথিপত্র তলব করতে পারেন। সেটা সম্পূর্ণ তার এখতিয়ার। দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতেই পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেবে কমিশন।

চিঠিতে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে পাচার করা অর্থের মাধ্যমে দুবাইয়ে সম্পত্তিগুলো কেনা হয়েছে বলে তথ্য যোগ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ৭০ বাংলাদেশির মধ্যে রয়েছেন– আহসানুল করীম, আনজুমান আরা শহীদ, হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল, হুমায়রা সেলিম, জুরান চন্দ্র ভৌমিক, মো. রাব্বী খান, মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, এস এ খান ইখতেখারুজ্জামান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সৈয়দ ফাহিম আহমেদ, সৈয়দ হাসনাইন, সৈয়দ মাহমুদুল হক, সৈয়দ রুহুল হক, গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া, হাজী মোস্তফা ভূঁইয়া, মনজ কান্তি পাল, মো. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, মো. মাহবুবুল হক সরকার, মো. সেলিম রেজা, মোহাম্মদ ইলিয়াস বজলুর রহমান, এস ইউ আহমেদ, শেহতাজ মুন্সী খান, এ কে এম ফজলুর রহমান, আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, গুলজার আলম চৌধুরী, হাসান আশিক তাইমুর ইসলাম, হাসান রেজা মহিদুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ, এম সাজ্জাদ আলম, মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী, মোস্তফা আমির ফয়সাল, রিফাত আলী ভূঁইয়া, সালিমুল হক ঈসা/হাকিম মোহাম্মদ ঈসা, সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান/সৈয়দ কামরুজ্জামান, সৈয়দ সালমান মাসুদ, সৈয়দ সাইমুল হক, আবদুল হাই সরকার, আহমেদ সামীর পাশা, ফাহমিদা শবনম চৈতি, মো. আবুল কালাম, ফাতেমা বেগম কামাল, মোহাম্মদ আল রুমান খান, মায়নুল হক সিদ্দিকী, মুনিয়া আওয়ান, সাদিক হোসেন মো. শাকিল, আবদুল্লাহ মামুন মারুফ, মোহাম্মদ আরমান হোসেন, মোহাম্মদ শওকত হোসেন সিদ্দিকী, মোস্তফা জামাল নাসের, আহমেদ ইমরান চৌধুরী, বিল্লাল হোসেন, এম এ হাশেম, মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন চৌধুরী, নাতাশা নূর মুমু, সৈয়দ মিজান মোহাম্মদ আবু হানিফ সিদ্দিকী, সায়েদা দুররাক সিনদা জারা, আহমেদ ইফজাল চৌধুরী, ফারহানা মোনেম, ফারজানা আনজুম খান, কে এইচ মশিউর রহমান, এম এ সালাম, মো. আলী হোসেন, মোহাম্মদ ইমদাদুল হক ভরসা, মোহাম্মদ ইমরান, মোহাম্মদ রোহেন কবীর, মনজিলা মোর্শেদ, মোহাম্মদ সানাউল্যাহ চৌধুরী, মোহাম্মদ সরফুল ইসলাম, সৈয়দ রফিকুল আলম ও আনিসুজ্জামান চৌধুরী।

এর আগে, ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল দুবাইয়ে অর্থপাচার এবং এর সঙ্গে জড়িতদের তথ্য-উপাত্ত জানতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল দুদক। ওই বছরের ১০ এপ্রিল এ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে দুদক। পরে গত বছরের ১৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট থেকে দুবাইয়ে অবস্থানরত ৪৫৯ বাংলাদেশি নাগরিকের সম্পদ কেনার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

অভিযোগের বিষয়ে দুদকসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশ্যে-গোপনে বিপুল পরিমাণ মূলধন স্থানান্তরিত হচ্ছে দুবাইয়ে। এ অর্থ পুনর্বিনিয়োগে ফুলে ফেঁপে উঠছে দুবাইয়ের আর্থিক, ভূসম্পত্তি ও আবাসনসহ (রিয়েল এস্টেট) বিভিন্ন খাত। ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৫৯ জন বাংলাদেশির মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি প্রপার্টি কেনার তথ্য রয়েছে। কাগজে-কলমে যার মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার। তবে প্রকৃতপক্ষে এসব সম্পত্তি কিনতে ক্রেতাদের ব্যয়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে।

সূত্র বলছে, গত দুই বছরে দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের প্রপার্টি কেনার প্রবণতা ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। এসময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছেন বাংলাদেশিরা, যার তথ্য তারা দেশে পুরোপুরি গোপন করেছেন। এমনকি বৈশ্বিক নেতিবাচক অর্থনীতির মধ্যেও দেশটির রিয়েল এস্টেট খাতের বিদেশি প্রপার্টি ক্রেতাদের মধ্যে শীর্ষে বাংলাদেশিরা। এদিক থেকে নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, চীন ও জার্মানির মতো দেশগুলোর বাসিন্দাদেরও পেছনে ফেলেছেন তারা।

সাবেক মন্ত্রী মায়া চৌধুরীর বাড়িতে আগুন

স্টাফ রিপোর্টার: 

শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাতে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুরের বাড়ির দুটি ভবনে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।

রোববার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মতলব উত্তর ইনচার্জ ইন্সপেক্টর নুরুল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, গতকাল রাত ১১টার দিকে আগুনের খবর পাই। মায়া চৌধুরীর বাড়ির দুটি তিনতলা ভবনের নিচতলায় আগুন দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস।

মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) প্রদীপ বলেন, রাতে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। আমাদের এসপি মহোদয়ের নির্দেশে যৌথবাহিনীর ইনচার্জ স্যারের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে যাই। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর আমরা তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) খায়রুল কবির চৌধুরী বলেন, আমরা সন্ধ্যার দিকে সাবেক এমপি মায়া চৌধুরীর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের খবর পাই। এরপর আমরা দ্রুত সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই।

তিনি আরও বলেন, দুটি বাড়ির নিচতলায় ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়েছিল। তবে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে আগুন নিচতলাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সে বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি।

মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সারোয়ার মজুমদার বলেন, আমরা এটিকে ন্যক্কারজনক ঘটনা মনে করি। আমরা এটিকে এক বিন্দুও সমর্থন করি না। আমাদের নেতা তারেক রহমান। আমরা কখনোই সহিংসতার রাজনীতি করি না। সহিংসতার রাজনীতিকে আমরা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেই না। তাদের মধ্যকার বিবাদ গ্রুপে ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে বলে স্থানীয়ভাবে শুনেছি।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই থেকে মায়া চৌধুরী আত্মগোপনে রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ ঢাকায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

সবা:স:জু-১৩৫/২৪

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম