কার পরামর্শে এপ্রিলে নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার॥
দু-একজন লোক বা দু-একটি রাজনৈতিক দলের কথায় প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়ির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এপ্রিলে নির্বাচনের সিদ্ধান্তকে দেশের জনগণ অর্বাচীনের মতো কাজ ও অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত বলে মনে করে। কোন সুতার টানে, কার পরামর্শে ড. ইউনূস এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলছেন? তিনি নির্বাচন নিয়ে কেন টানাহেচঁড়া করছেন—এসব প্রশ্ন রাখেন রিজভী।

রোববার (৮ জুন) দুপুরে রাজধানীতে জাতীয়তাবাদী ভ্যান শ্রমিক ও রিকশা শ্রমিক দলের উদ্যোগে ঈদের খাবার বিতরণকালে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, কেন দু-একজন লোকের কথায় বা দু-একটি রাজনৈতিক দলের কথায় প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলছেন? এপ্রিলে তো প্রচণ্ড খরতাপ থাকে, ঝড়-বৃষ্টি হয়, এসএসসি পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা থাকে। তখন কেবল রোজার ঈদ শেষ হবে। এপ্রিলে নির্বাচন হলে রমজানে প্রচারণা চালাতে হবে। মানুষ রোজা রেখে কীভাবে প্রচারণা চালাবে? মানুষ রোজা রাখবে নাকি নির্বাচনের প্রচারণা করবে?

অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র আর সংস্কারকে মুখোমুখি করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পলিমাটির যে বাতাস তা অত্যন্ত পরিশোধিত। তবে এ বাতাসের মাঝে এমন কিছু বঙ্কিম বাতাসও প্রবাহিত হয়। ক্ষমতায় এলেই তারা চিরস্থায়ী ক্ষমতার স্বপ্ন দেখেন। অন্তর্বর্তী সরকারের শরীরেও বঙ্কিম বাতাস লাগছে কি না—এটি মানুষের কাছে এখন বড় ধরনের প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, ছাত্র-জনতার আত্মদান তো ছিল যে গণতন্ত্রকে শেখ হাসিনা সিন্ধুকে তালাবদ্ধ করেছিলেন, সেই গণতন্ত্রকে অবমুক্ত করার জন্য। ১৫ -১৬ বছর ধরে এদেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতে দিয়েছে, সব অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের ইতিহাসকে দুপায়ে মাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের একটি প্রধান মাধ্যম হচ্ছে নির্বাচন, আমি আমার বন্ধুর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতেই পারি। তবে অধিকাংশ মানুষ যাদের সমর্থন করবে ভোট দেবে, তারাই বিজয়ী হবে। এটিই নির্বাচন। এজন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে। এটি বলতে গিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা গুমের শিকার হয়েছে। কারণ, তারা গণতন্ত্র চেয়েছিল। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন আর কথা বলার স্বাধীনতা চেয়েছিল। এই চাওয়াটুকুই ছিল তাদের অপরাধ। শেখ হাসিনা তাদের গুম করেছিল।

‘কত যুবককে বিচার বহির্ভূত হত্যা করেছে, কারও লাশ নদীর ধারে, খালের ধারে ফেলে দিয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর কারাগারে রেখেছে, এই সবকিছুর মূলে ছিল গণতন্ত্র। আর গণতেন্ত্রর মূল উপাদান হচ্ছে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্রের খুব দুর্ভাগ্য। গণতন্ত্র নিজেই এক দুর্ভাগ্যের মধ্যে পড়েছে। এখনো সব গড়িমসিই যেন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে।’

বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, আন্দোলনে যারা গুম-খুন হয়েছেন তাদের সমর্থনও কিন্তু ড. ইউনূস পেয়েছেন। কিন্তু কোন সুতার টানে, কার পরামর্শে তিনি নির্বাচন নিয়ে টানাহেচঁড়া করেছেন? নির্বাচন নিয়ে কেন এই টানাপোড়েন তৈরি করছেন? এ পরিস্থিতিতো হওয়ার কথা নয়। আমরা সব না বুঝলেও এটি বুঝি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাপানে গিয়ে তিনি (ড. ইউনূস) বলে দিলেন- একটি দল ছাড়া কেউ নির্বাচন চায় না। কিন্তু সেই একটি দলের আয়তন কত, প্রশস্ত কতটুকু তা কি তিনি জানেন না? অবশ্যই জানেন ওই দলটির জনসমর্থন কতটুকু। তার মতো দায়িত্বশীল কীকরে এসব কথা বলেন? এরপরও দেখেন কত রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে।

আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক জহির রায়হানের সভাপতিত্বে ও আফজাল হোসেনের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহুবুব ইসলাম ও ডা. জাহিদুল কবির প্রমুখ। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সংগঠনের নেতা আরিফুর রহমান তুষার।

খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা নিয়ে তথ্য

স্টাফ রিপোর্টার:

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সব ঠিক থাকলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশত্যাগ করবেন। এ সময় মেডিকেল বোর্ডের সাতজন চিকিৎসক, নার্স ও তিনজন সহকারীসহ মোট ১৬ জন তার সঙ্গে যাবেন।

‘লং ডিসটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্স’ যোগে বিএনপি নেত্রীকে প্রথমে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে, পরে সেখান থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী অন্য কোনো দেশের মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হেলথ সেন্টারে নেওয়া হবে। এরই মধ্যে একটি বিশেষাষিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়েছে। ১ অথবা ২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া রওনা দেবেন। এর মাধ্যমে প্রায় ৮ বছর পর লন্ডনে তার বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে তার দেখা হবে। সেখানে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। সব শেষে সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার পথে পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরবেও যাওয়ার কথা রয়েছে বিএনপি নেত্রীর। তবে বিষয়টি নির্ভর করবে তার শারীরিক অবস্থার ওপর।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের অন্যতম সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ম্যাডাম চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে একটু স্ট্যাবল আছে। দ্রুত তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হবে। সময়মতো সবকিছুই অবহিত করা হবে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেকজন চিকিৎসক জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বর্তমানে অনেক ভালো। তিনি মানসিকভাবে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, লন্ডনের ভিসা ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নেওয়া হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা এখনও পাওয়া যায়নি।

বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) লন্ডন যাওয়ার আগে তার আমেরিকার ভিসা কনফার্ম করার চেষ্টা চলছে।

খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, ম্যাডামের যাওয়ার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তাই কবে যাচ্ছেন তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সাত চিকিৎসক (অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, প্রফেসর ডা. শাহাবুদ্দিন, অধ্যাপক ডা. শামসুল আরেফিন, ডা. নূর উদ্দিন, প্রফেসর ডা. এফ এম সিদ্দিক, ডা. জাফর ও ডা. আল মামুন), পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, গৃহপরিচালিকা ফাতেমা ও রূপার যাওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খালেদা জিয়া ও তার যাত্রা সঙ্গীদের ভিসা প্রাপ্তিতে সহযোগিতা প্রদানসহ বিষয়টি তদারকি করছে।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি থাকার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেয়। এরপর থেকে ৬ মাস পরপর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নেত্রীর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল সরকার।

এমন অবস্থায় গত ৫ আগস্ট গণ আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপি।

৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে আইসিইউতে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর গত ২১ আগস্ট এভারকেয়ার হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসাধীন থেকে বাসায় ফেরেন তিনি।

 

সবা:স:জু-২০৬/২৪

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে অত্যন্ত হতাশাজনক : মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক দের মাঝে যে অনৈক্য কুমিরের দেখা মিলল রাজশাহীর পদ্মায় সরকার ও সেনাবাহিনী, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও ন্যায়বিচার যেন ব্যাহত না হয় আজ থেকে আমরণ অনশন, প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান