হাওর সুরক্ষায় মাস্টারপ্ল্যান করছে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

হাওর সুরক্ষায় মাস্টারপ্ল্যান করছে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

আনোয়ার হোসেন:

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, হাওর সুরক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছে সরকার। প্রাথমিকভাবে পাঁচটি হাওরে বাধ নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, পর্যটন সুরক্ষা ও নীতিমালা প্রণয়নসহ চারটি প্রধান পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

হাওরের সংকট ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। নেত্রকোণা সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকা এর উদ্যোগে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারের সার্বিক সহায়তায় গ্রিন কনসার্ন ফাউন্ডেশন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেছেন সংগঠনের সভাপতি রফিক মুহাম্মদ।

তিনি বলেন, হাওরের ইকো সিস্টেম পৃথিবীতেই বিরল। এটিকে অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। হাওরের সীমানা নির্ধারণ করে কৃষি-জমি থেকে মাটি উত্তোলনের মতো ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। আপনারা যারা এই সেমিনারে রয়েছেন আপনারা দীর্ঘকাল ধরে হাওরের চিকিৎসা, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলে আসছেন। আসলে সমস্যা চতুরপাশে ভরা। আমিও হাওরের মানুষ, হবিগঞ্জের। তাই হাওর নিয়ে যখন কেউ কথা বলেন তখন আমার আবেগে একটা নাড়া দেয়। হাওর যারা দেখেননি; আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম যখন এই দায়িত্বে আসিনি। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে আবারও পড়াবো।

উপদেষ্টা বলেন, হাওরের সীমানা নির্ধারণেও ভিন্নতা রয়েছে। কিছু পুকুর কিছু খাল কিছু নদী বাকী হচ্ছে ধানি জমি। সেগুলো হচ্ছে মানুষের নামে রেকর্ডকৃত। ফলে অনেক মানুষ এই হাওরের মালিকানায় সম্পৃক্ত থাকায় হাওর ব্যবস্থাপনায় কঠিন হয়ে পড়ে। সে জন্য হাওরের একটা মাস্টারপ্ল্যান নির্ধারণে আমরা একটা দেশব্যাপী কর্মশালা করেছি, কর্মশালায় যে অভিমতগুলো পাওয়া গেছে সে অভিমতগুলো এই মাস্টারপ্ল্যানে যুক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনে সংশোধনও করা হয়েছে। এরপর আমরা ওয়েবসাইটে দিবো।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে বাঁধ নির্মাণটা কিভাবে করা হবে, কিভাবে স্থানীয় উপকারগুলো টিক করা হবে। কাদেরকে সেই কাজে অংশগ্রহণ করাতে হবে। আপনারা প্রায় সময় রিপোর্ট করেন যথাসময়ে কাজগুলো সম্পন্ন হয় না। এই বিষয়ে সরকারের যে নীতি-গাইড লাইন রয়েছে সেটাকে ভুল বলবো না; তবে বলবো- কেন শুরু করলো না। হাওরের পানি ১৫ অক্টোবরের মধ্যে নামে না তাহলে কেমন করে কাজ হবে? মূলত ১৫ অক্টোবর বলা হয়েছে এই জন্য যে কোনো সময় যদি আগে পানি নেমে যায় তাহলে কাজটা যেন বিলম্ব না হয়। আগে পত্রিকায় দেখতাম কাজ শুরু হয়নি। এবার নিজে দায়িত্ব নিয়ে বাস্তবতা দেখলাম- আসে সেই সময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব না। কারণ হচ্ছে ঐখানে পানি এখানো নামেনি।

হাওরের যখন বাঁধ নির্মাণ করা হয় সেখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠির অংশগ্রহণ থাকে না মন্তব্য করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কারণ হচ্ছে যাকে কাজে অন্তর্ভুক্ত না করা হয় অনেক সময় সে জমি দিতে রাজি হয় না। তাছাড়া আমাদের সবকিছুতেই একটা রাজনীতি আছে। কাজেই সেখানে আমরা একটা সংশোধনী এনে সত্যিকার অর্থেই যাদের কাজের বিনিময়ে টাকা পাওয়া উচিত তারাই যেন অংশগ্রহণ করতে পারে। সেটা ৫০/৫০ হবে নাকি ৭০/৩০ হবে সেটা আমরা এখন চিন্তা করছি। হাওরের বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে আরেকটা অন্তরায় হচ্ছে মাটি পাওয়া যাচ্ছে না।

হাওরের বৃক্ষরোপনের গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমি নিজেই কিন্তু হালকালুকি হাওর নিয়ে মামলা করেছি। লক্ষাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে; তখন বেলায় কাজে ছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম কত গাছ লাগিয়ে ছিলেন তখন তারা বলত ফাইলটা আমাদের এই অফিসে নাই হেড অফিসে আছে। সম্প্রতি জরিপ চালিয়েছি কোন কোন হাওরের বৃক্ষরোপন সম্ভব, সেটার একটা তালিকাও প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছি। কিন্তু আজকে সেমিনারে বৃক্ষরোপন নিয়ে যে তথ্য পেলাম তাতে আমার মনে হয় শুধু গাছ লাগালেই হবে না সেখানে একটা মনিটরিং ব্যবস্থাও লাগবে।

হাওর ট্যুরিজম তো অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার কথা ছিল না। স্থানীয় পর্যায়ে তো প্রশাসন কাজ করে। হাওর অধিদপ্তরের যিনি ডিজি আছেন তাকে আমি পাঠিয়ে ছিলাম। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে আমরা হাওরের পর্যটন নিয়ন্ত্রণের সুরক্ষার খসড়া প্রস্তুত করছি। কেননা হাওরে পর্যটন বোট কয়টা যাবে কয়টা যাবে না সেটাও একটা বিষয়। সবকিছুই সরকার করে না, সরকার করে না এটা বুঝলাম। সরকার করে দিল কিন্তু পর্যটক যদি হাওরের যাওয়ার সময় আওয়াজ সৃষ্টি করে গান বাজনায়; তখন সরকারের পক্ষে কি ২০ হাজার ৫০ হাজার মানুষকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাহারা দেওয়া সম্ভব হবে। পানি নিয়ে এ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। ২০১৩ সালের আইন কিন্তু এখন ২০২৫ সাল।

তিনি বলেন, যখন আমরা সেন্টমার্টিন দ্বীপের পর্যটন নিয়ে কথা বললাম; সেখানে দেখা জাহাজে উঠার সময় এই সাউন্ড যন্ত্রাংশ নিয়ে যায়। সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে শব্দ করে বারবিকিউ পার্টি করে। এগুলোর ক্ষেত্রে মূলত পর্যটকদের সতর্ক হতে হবে। প্রকৃতিকে দেখার জন্য ট্যুরিজম এখানে তো গান শোনা বারবিকিউ পার্টি করার জন্য ট্যিরিজম না। ফলে এটা নিয়ন্ত্রণ না, এটা ইকো ট্যুরিজমের প্রসার। তাই আমাদের এমন একটা ব্যবস্থার উদ্যোগ নিতে হবে যে কয়েকটা স্থান থেকে পর্যটকরা উঠে সেইখানে একটা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্তা চালু করতে পারি। সেখানে মনিটরিং বাড়ানো যেতে পারে। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ভলান্টিয়ার রাখা হবে; যারা সচেতনামূলক বার্তা পৌছে দিবে।

সঞ্চালনা করেছেন নেত্রকোণা সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকা এর সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী খান লিথোর সঞ্চালনায় বক্তব্যে রাখেন জাতিসংঘের সাবেক পলিটিক্যাল এ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা মোশতাক আহমেদ, ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. মাহবুব হাসান শাহীন, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক(অতিরিক্ত দায়িত্বে) হাবিবুর রহমান, বিএনপির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, গ্রিন কনসার্ন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক তাহমিনা খানম, বেসরকারি টেলিভিশন আর টিভির বার্তা প্রধান ইলয়িাস হোসাইন, কিশোরগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকা এর সভাপতি এরফানুল হক নাহিদ।

জাগৃকের টেবিলে টেবিলে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার:

যে বিল্ডিংয়ের প্রতিটি চেযার টেবিলে ঘুষ খায় তার নাজ জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ স্বৈরাচারী হাসিনার দোসর হিসেবে পরিচিত ডিডি মুশফিকুল ইসলাম দুর্নীতিগ্রস্ত কিন্ত একটি সিন্ডিকেট করে রয়ে গেছে বহাল তবিয়তে বর্তমানে ছাত্র জনতার সরকার এসে একজন সৎ ব্যাক্তিকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলেও এই দূর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটর কাছে যেন অসহায় শত শত অসৎ এর কাছে একজন সৎ ব্যাক্তি কতটা করতে পারে জনগণের জন্য, তবে চেস্টা করছে মানুষের সেবা দিয়ে উক্ত প্রতিষ্টানটি দূর্নীতিমুক্ত করতে তা কি পারবেন তাই দেখার বিষয়।

এ দিকে ডিডি মুশফিকুল ইসলাম দুর্নীতির তদন্ত চলছে দুদকে।আরেকটা তদন্ত চলছে মন্ত্রণালয়ে জাল জালিয়াতি ও ফাইল আটকে রাখার দায়ে। এমনকি জাগৃক সিন্ডিকেট করে রাখছে এই সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় সৎ অফিসার ও সাধারন প্লট গ্রহিতরা। তার পরেও সে রয়েছে বহাল তবিয়তে। এদিকে নিজের নামে একটি প্লটের নামজারির আবেদন করেছিলেন এসএম অহিদুল ইসলাম। মাসের পর মাস ঘুরেও কূল-কিনারা করতে পারেননি। অসমাপ্ত রেখেই মারা যান। এর পর ওয়ারিশসূত্রে নামজারির আবেদন করেন তার স্ত্রী-সন্তানরা। তারাও মাসের পর মাস ঘুরে এখন ক্লান্ত। আদৌ নামজারি করাতে পারবেন কিনা, জানেন না।

শুধু অহিদুলই নন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে (জাগৃক) যারাই প্লট, ফ্ল্যাট পেয়েছেন তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। একটি ফাইল টেবিলের পর টেবিলে ঘুরছে কিংবা পড়ে থাকছে আর ভোগান্তি বাড়ছে গ্রাহকের। যাদের ‘রেফারেন্স’ বা ‘অর্থ’ রয়েছে তাদের কাজ সহজেই হয়। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ সেবাপ্রার্থীরা।

মিরপুর সেকশন ১২-এর মিরপুর হাউজিং এস্টেটে ব্লক সি-এর ৬ নম্বর সড়কের পুনর্বাসন ১০২/০৩ নং প্লটটি পেয়েছিলেন এসএম অহিদুল ইসলাম। তিনি নামজারির আবেদন করেছিলেন ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। এর পর চলতি বছরের ১ জুলাই ওয়ারিশসূত্রে নামজারির আবেদন করেন তার স্ত্রী পাপিয়া ইসলাম, কন্যা সুরাইয়া ইসলাম প্রিয়াংকা ও ছেলে মেহরাজ ইসলাম। দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও তারা নামজারি করাতে পারেননি। এই চিত্র শুধু ঢাকার প্রধান কার্যালয়েই নয়, জাগৃকের প্রতিটি অফিসেই।

দাবি অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় এক বছর ধরে ঢাকা অফিস আর চট্টগ্রাম অফিসে দৌড়াচ্ছেন রূপালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার শেখ ফজলুল করিম। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, হয়রানি সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ অফিসে। সেখানে অফিসের লোকদের কন্ট্রাক্টে কাজ না দিলে প্রতি টেবিলে যতবার ফাইলের জন্য যেতে হয়, ততবারই টাকা দিতে হয়। নয়তো ভুল প্রতিবেদন দিয়ে আরও বেশি যন্ত্রণায় ফেলে। আর সময়ক্ষেপণ তো রয়েছেই; দিনের পর দিন হয়রানি করে। এমনকি ফাইল বা নথি গায়েব করে দেয়। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট সরিয়ে হয়রানি করে। তিনি বলেন, আমি ক্রয়সূত্রে চট্টগ্রামের ব্লক-বি, লেন-১৬, রোড ২-এর ২১ নম্বর প্লটের পশ্চিম পাশে যে খালি/খ- জায়গা পাই।

সেই জায়গা নিজের নামে নামজারি করতে প্রায় এক বছর ধরে টেবিলে টেবিলে ঘুরছি। নিজের পরিচয় দেওয়ার পরও তারা আমাকে হয়রানি করছে। সরাসরি টাকা চায় না। তবে টাকা না দিলে ভুল প্রতিবেদন দিয়ে সময়ক্ষেপণ করে। আমি একাধিকবার ঢাকা অফিসে গিয়েছি। সেখান থেকে আবার চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেয়। অশেষ হয়রানির পর একপর্যায়ে বিকল্প পথে আগান শেখ ফজলুল করিম। তিনি বলেন, বাড়ির নামজারি করাতে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। পরে সেলস পারমিশনের জন্য ফাইল জমা দিলে নতুন করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দেওয়ায় বাড়িতে অবৈধ

নির্মাণ রয়েছে উল্লেখ করে ফাইল ঢাকায় পাঠানো হয়। পরে সে ফাইলে অনুমোদন না দিয়ে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়ে ফাইল ফেরত পাঠানো হয়। এর পর ফাইল নিয়ে আবার তদবিরে গেলে এবার

টাকার অংক আরও বেড়ে যায়। বলা হয়- এখন ঢাকাকেও ম্যানেজ করতে হবে।

ঢাকা অফিসের রেকর্ড রুম এবং যে দপ্তর থেকে চিঠি ইস্যু ও ফাইলের ডিজিটাল নম্বর দেওয়া হয় সেখানে হয়রানি হতে হয় বেশি। ফাইলে ডিজিটাল নম্বর ও প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি দেন মুসাফবিবাল আশবাব ইকবাল। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের তৃতীয় তলার ৩১৭ নম্বর রুমে গেলে সব সময় দেখা যায় সেবাগ্রহীতাদের জটলা। টাকা না দিলে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। এসএম অহিদুল ইসলামের ওয়ারিশরা নামজারির জন্য কয়েক মাস ঘোরার পর প্রথমে সরেজমিন প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে নোট দেন ইকবাল। এর পর সেই রিপোর্ট জমা দিলে নতুন করে আরও একটি প্রতিবেদনের জন্য পাঠান। এভাবে তিন-চার দফা প্রতিবেদন নিয়ে ফাইল আটকে রাখেন তিনি। এর পর ফাইলটি উপ-পরিচালক-১ (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিভাগ) আরএম সেলিম শাহনেওয়াজের দপ্তরে পাঠান। সেখানে তিন দিন রাখার পর আবার তিনি নকশা শাখায় পাঠিয়ে দেন। এভাবেই টেবিলের পর টেবিলে চলছে ফাইল চালাচালি।

নামজারি করাতে এসে ভোগান্তির শিকার পাপিয়া ইসলাম বলেন, একই চিঠি একাধিকবার আনতে হয়েছে। কেন এমন করছে, কিছু বলেও না। আমার পরে যারা দিয়েছেন, তাদের অনেকের কাজও এরই মধ্যে হয়ে গেছে। অফিসের এক স্টাফ আমাকে জানিয়েছেন, কাজটা কন্ট্রাক্টে দিলে দ্রুত হয়ে যাবে। এখানে এসে দেখি, প্রতিটা টেবিলেই টাকার জন্য ফাইল আটকে রাখে।
ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না- এ কথা বলে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রেকর্ড রুমের দায়িত্বে থাকা কামরুল হাসান ও নাফিজা খানমের বিরুদ্ধে। এর আগে কামরুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) অভিযোগ জমা হয়েছে।

এভাবে প্লটের নামজারি, নাম ট্রান্সফার, প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রয় অনুমতিসহ নানা কাজে হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। প্রতিদিনই জাগৃকের ঢাকা অফিসে শত শত মানুষ সেবা নিতে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

অভিযোগ রয়েছে জাগৃক সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) মোহাম্মদ কুদ্দুছ আলী সরকারের বিরুদ্ধেও। তিনি তার ব্যক্তিগত সহকারী শোয়েব ও অফিস সহকারী এরশাদের মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পিএ শোয়েব যে ফাইলে সবুজ সংকেত দেন, শুধু সেটিতেই স্বাক্ষর করেন কুদ্দুছ আলী সরকার। অন্যথায় দিনের পর দিন ফাইল নড়ে না। এরা বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে সুবিধা ভোগি হয়ে এখনো তাই করছে তাদের রুখবে কে।

গ্রাহকের ভোগান্তির বিষয়ে জাগৃক চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির বলেন, এটা অনেক পুরনো প্রতিষ্ঠান। যারা কাজ করাতে আসেন অনেক সময় হয়রানির শিকার হন- এটা সত্য। আগেও বিষয়টি নিয়ে নজর দেওয়া হয়েছে। তবে এখন কেউ কোনো বিষয়ে অভিযোগ দিলে আমি কেইস টু কেইস সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করছি।

এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে যারাই কাজ করাতে আসেন তারা কম-বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন, হচ্ছেন। আমি গ্রাহককে এমন আহাজারিও করতে শুনেছি যে, ‘আল্লাহ, দুনিয়াতে এতো কিছু ধ্বংস হয়, এই ভবন (জাগৃক অফিস) কেন ধ্বংস হয় না।’ মানুষ কতটা কষ্ট পেলে এমন কথা বলে? প্রশ্ন রাখেন এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ইচ্ছা করেই ফাইল থেকে নোট সরিয়ে টাকা নেওয়ার অনেক অভিযোগ উঠেছে। অনেককেই অনেক সময় অনেকভাবে সতর্ক করা হয়েছে; কিন্তু কিছুই বদলায়নি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম