রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক বিষয়গুলোতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন: আলী রীয়াজ

ডেস্ক রিপোর্ট:

রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য মৌলিক বিষয়গুলোতে এক ধরনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১১তম অধিবেশনের সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। আজকের আলোচ্য সূচি হচ্ছে— প্রধান বিচারপতি নিয়োগ; তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা।

আলী রীয়াজ বলেন, গত কিছুদিনের আলোচনায় আমাদের বেশ কিছু অগ্রগতি হচ্ছে, সেটা লক্ষণীয়। আলোচনায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। অনেক ক্ষেত্রে কাছাকাছি আসছি।

তিনি বলেন, অনেক বিষয়ে একমত হওয়ার পাশাপাশি আমাদের যেটা দরকার সেটা হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য মৌলিক বিষয়গুলোতে এক ধরনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। কারণ আমাদের সকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক। সেগুলো অর্জন করার চেষ্টা করাটাই হচ্ছে আমাদের সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা।

আলী রীয়াজ আরও বলেন, আমরা একটা জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের কথা বলছি, যাতে করে ক্ষমতায় এককেন্দ্রীকরণ না হয়, সেটার কথা বলছি। নাগরিকের অধিকার সুরক্ষার কথা বলছি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলছি এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যেন এমন ব্যবস্থা তৈরি করা যায়, যা কোনো অবস্থাতেই এদেশে আবার কোনো ফ্যাসিবাদী শাসন তৈরি করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা। এ উদ্দেশ্যগুলোর ব্যাপারে আমরা সবাই একমত। ইন্টেনশন ও উদ্দেশ্যের দিক থেকে কোনো ভিন্নতা নেই। কমিশনের কোনো আলাদা উদ্দেশ্য নেই।

কমিশনের উদ্দেশ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবাইকে নিয়ে যতদূর সম্ভব ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা। আমরা বারবার বলেছি, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এই জুলাই মাসের মধ্যেই যেন এই কাজ সম্পন্ন করতে পারি। অনেক বিষয়ে অনেক নিষ্পত্তি হয়নি। তবে আলোচনায় অগ্রগতি হওয়ায় বিষয়গুলোতে আগামী সপ্তাহে মীমাংসার জায়গায় যেতে পারব। সেটাই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যে। এর বাইরে আসলে আমাদের কারও কোনো উদ্দেশ্য নেই। বিশেষ করে কমিশনের উদ্দেশ্য থাকার কোনো কারণ নেই।

আলী রীয়াজ বলেন, কারণ কমিশনের দায়িত্ব নিয়েছে আপনাদের (রাজনৈতিক দল) অংশ হিসেবে। আমরা আলাদা কেউ না। আমরা সবাই মিলে এক। ফলে এই জায়গা থেকে আমাদের অগ্রসর হতে হবে। সে জায়গায় আপনাদের কাছ থেকে যে সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি, সেই সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে আমরা দ্রুত একটা মীমাংসার জায়গায় যেতে পারব।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

 

 

জুলাই স্মৃতি সংরক্ষণের দায়িত্বে মুজিব শতবর্ষের সমন্বয়কারী ফরহাদুজ্জামান আজাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

স্বৈরাচার আ’লীগ সরকারের একনিষ্ঠ সহযোগী ও ব্যাপক সুবিধাভোগী এক উপবিভাগীয় প্রকৌশলীকে জুলাই স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘর এর কাজ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়েছে। অথচ এই প্রকৌশলী জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুজিব জন্মশত বছর উদযাপনে প্রধান সমম্বয়কারী হিসেবে ওই অনুষ্ঠানকে স্মরনীয় বরণীয় ঝাক-জমকপূর্ণ করার মূল দায়িত্বে ছিলেন। এ বদলী আদেশ নিয়ে পূর্ত প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তথ্য সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
অভিযুক্ত ওই প্রকৌশলরী নাম এসএম ফরহাদুজ্জামান আজাদ। বর্তমানে গণপূর্ত ই/এম কারখানা উপবিভাগ-১ এর দায়িত্বে আছেন। গত ২৯ জুন ২০২৫ ইং তারিখে অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর লিখিত আদেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর এর নির্মাণ কাজ তদারকির স্বার্থে সংযুক্ত করা হয় তাকে। কিন্তু এই প্রকৌশলী স্বৈরাচার আ’লীগ সরকারের শেষবছর বাদ দিয়ে শেষের প্রায় ৬ বছর গণপূর্ত ই/এম উপবিভাগ-১৩ (সংসদ ভবন ও সংশ্লিষ্ট এলাকা) এর দায়িত্বে ছিলেন। সে সময়ে তৎকালীন সরকারের স্পীকার ও চীফ হুইপসহ উর্দ্ধতন আ’লীগ নেতাদের ঘি চন্দন মলিশ করে পদলেহন করে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। ২০২২ সালে মুজিব জন্মশত বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মুল সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এখাতে কয়েক কোটি টাকা লোপাট করেন তিনি। পরের বছরে সংসদ ভবনের অন্য সাবডিভিশন গণপূর্ত কারখানা উপবিভাগ-১ এ পোষ্টিং ভাগিয়ে নেন। প্রায় ৬বছর ১৩ নং সাবডিভিশনের দায়িত্বে থাকতে সংসদ ভবনে আমব্রেলা প্রজেক্টের ১ম ও ২য় ফেজের ই/এম অঙ্গের শতাধিক কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়নের সময়ে ২%/৩% এবং বিলের সময়ে ৫% হারে প্রায় ১০কোটি টাকা লোপাট করেন এই প্রকৌশলী। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে জাতীয় সংসদ ভবনে স্থাপিত ড্রাই টাইপ ট্রান্সফর্মার পরিবর্তন করা হয়। অথচ এই ট্রান্সফর্মারগুলোর মেয়াদকাল ছিল ১০০ বছর। সে হিসেবে ২০৮২ সাল পর্যন্ত মেয়াদকাল থাকার পরও তৎকালীন হুইপ ও স্পীকারকে ভুল বুঝিয়ে তা পরিবর্তন করা হয় এডেক্স কর্পোরেশনের মাধ্যমে। যার দরপত্র মূল্য ছিল প্রায় ৪৬ কোটি টাকা। এসডিই ফরহাদুজ্জামান আজাদ এ কাজে ৮% থেকে ১০% ঘুষ নিয়ে উর্দ্ধতনদের যোগসাজশে ঠিকাদারের পুরো বিল পরিশোধ করলেও অদ্যাবধি ওই কাজ শেষ হয়নি।
শুধু তাই নয়, সংসদ ভবন এমপি হোস্টেলের সংস্কার বা রেনোভেশন এর নামে কোটি কোটি টাকার প্রাক্কলন তৈরী পূর্ব কাজের বাস্তবায়ন দেখানো হলেও সরজমিনে দেখা যায় এমপিদের অফিস কক্ষে দৃশ্যমান বৈদ্যুতিক সংস্কারে কোন কাজই হয়নি। ওই ছয়বছরে স্বাস্থ্যখাতের ৩৮ ও ওপি’র ২ শতাধিক কোটি টাকার কাজেও ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করে কয়েক কোটি টাকা লোপাট করেছেন এই প্রকৌশলী। লাভজনক কিছু কাজে তিনি নিজেই করেছেন বেনামে ঠিকাদারী ব্যবসা। আবার কিছু কাজে কাজ উঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে নিজেই ঠিকাদারের কাছ থেকে চুক্তিমূল্যের ৫৫%, কোন কোন ক্ষেত্রে ৬০% টাকা গুণে গুণে নিজ হাতে নিয়েছেন বলে অনেক ভূক্তভোগী জানিয়েছেন।
একইভাবে কারখানা গণপূর্ত উপবিভাগ-১ এর দায়িত্ব নিয়ে ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে প্রকৌশলী ফরহাদুজ্জামান আজাদের বিরুদ্ধে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই সাবডিভিশনের আওতায় ১৩৮ এর কাজে টিবি হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক সাস্থ্য ও কিডনী হাসপাতালের কাজগুলোতে হরিলূট চালানো হয়েছে এই প্রকৌশলীর নেতৃত্বে। এ কাজগুলোর টেন্ডার এলটিএম পদ্ধতিতে করা হলেও সে সময়ে সিডিউল ক্রয়কৃত বিভিন্ন ঠিকাদারকে ড্রপ না করার জন্য ফোন করে বলে দিয়েছেন এ্ই প্রকৌশলী। অনেক ঠিকাদারকে তিনি বলেছেন কাজগুলো আগে থেকে করা, আপনারা সিডিউল কিনলেও লাভ হবে না।
চাকরিজীবনের বেশীরভাগ সময়ে তিনি ঘুরেফিরে কাটিয়েছেন সংসদ ভবনে। তিনি ছিলেন ই/এম বিভাগ-৭ ও ই/এম সার্কেল-৩ এর স্টাফ অফিসার (সহকারী প্রকৌশলী)। পরবর্তীতে প্রমোশন নিয়ে ঢাকার বাইরে পোষ্টিং হলেও সল্প ব্যবধানে ফিরে আসেন নিজের পরিচিত ও পছন্দের জায়গা সংসদ ভবনে। গত ৮ বছরে বাস্তবায়িত সংসদ ভবনের বৈদ্যুতিক/যান্ত্রিক অঙ্গের প্রতিটি কাজে এই প্রকৌশলীর লুটপাটের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। চাকরীজীবনে এভাবে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডে ২টি বিলাশবহুল এপার্টমেন্টসহ নামে-বেনামে অর্ধশতাধিক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এই প্রকৌশলী। বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার জন্য ফোনে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন রেসপন্স পাওয়া যায়নি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম