মেঘনা পেট্রোলিয়ামে নিয়োগ বাণিজ্য চালাচ্ছে এমডি টিপু ও জিএম এর সিন্ডিকেট

স্টাফ রিপোর্টার॥

মেঘনা পেট্রোলিয়ামের কেরাণী থেকে জেনারেল ম্যানেজার (এইচ আর) পদোন্নতি পাওয়া মোহাম্মদ ইনাম ইলাহী চৌধুরীর নিয়োগ বাণিজ্য এখন প্রকাশ্যে এসেছে। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল-কে ম্যানেজ করে জিএম মোহাম্মদ ইনাম এলাহী চৌধুরী,রেজা মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন- জিএম র্মাকের্টি ও  এমডি টিপু সুলতানের ছত্রছায়ায় কতিপয় কর্মকর্তা নিয়ে একটি দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল। সে সময় তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কেউ করেনি। জানা যায় সে কোম্পানিতে কেরানি পদে চাকরিতে যোগদান করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের শাসন আমলে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তার কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে খুব দ্রুত পদোন্নতি বাগিয়ে নেয়। বর্তমান পদে আসার পরে সে মেঘনা পেট্রোলিয়ামকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে। নিজের আওয়ামী লীগের খোলসও পাল্টিয়ে ফেলেছে এরইমধ্যে। বর্তমানে সে এখন কোম্পানিতে টেন্ডার কমিটির আহবায়ক হয়ে টেন্ডারে দুর্নীতিসহ পদোন্নতি ও নিয়োগ বাণিজ্য করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি মেঘনা পেট্রালিয়াম এর বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। গত ৪ জুলাই নিয়োগ পরীক্ষাও হয়ে গেছে কিন্তু নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, জুন মাসে নিজের ক্ষমতা অপব্যাবহার করে মো: জাহিদুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন এবং শরিফুল ইসলাম এই তিনজনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে গোদনাইল ডিপোতে নিয়োগ দেয়, যা কোম্পানী আইন এর পরিপন্থি। টিপু সুলতান ও ইনাম এলাহী, রেজা মোহাম্মদরিয়াজ উদ্দিন জিএম র্মাকের্টি, সিন্ডিকেট পদোন্নতির বাহানায় ঘুষ নেওয়ার অভেযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেঘনা পেট্রোলিয়ামের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান এই অস্থায়ী নিয়োগ অবৈধ এবং কোম্পানীর আইনের পরিপস্থি। মেঘনা পেট্রোলিয়ামে দুনীতির নিয়ে কয়েকটি গনমাধ্যমে নিউজের পর জ্বালানি মন্ত্রণালয় বিপিসিকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। বিপিসি মেঘনা ডিপোতে তদন্ত করে মোশারফ ডিপো ইনচার্জ ও সহকারি ম্যানেজার করুন কান্তি ও মিটার ম্যান কামাল কে বদলি করে। কারণ মোশারফ যে ডিপোকে কর্মরত থাকেন সেই ডিপোতে তার সাথে এই দুজনকে বদলি করান কর্তৃপক্ষকে দিয়ে। সম্প্রতি নিয়োগ বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদে কর্মচারী ও শ্রমিকের ১৪৭ জনের বিশাল জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডে। এতো লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি অত্র কোম্পানি ইতিহাসে কখনো হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের আওয়ামী লীগের সময়ের এই প্রভাবশালী কর্মকর্তা টিপু সুলতান, মোহাম্মদ ইনাম ইলাহী চৌধুরী অবসরে যাওয়ার আগে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করে কোটি টাকা হাতিয়া নেয়ার উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হলেও ঘুষ ছাড়া চাকরি মিলবেনা চাকরি প্রাথীদের। ২৭ জুন এম ডি টিপু সুলতান এবং এই বছরের শেষের দিকে জিএম মোহাম্মদ ইনাম এলাহী চৌধুরীও অবসরে যাবেন। অবসরে যাওয়ার আগেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পায়তার করছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিপু সুলতান  ও রেজা মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন জিএম র্মাকের্টি।

মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এ দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় কর্মকর্তা মিলে একটি শক্তিশালী দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা হচ্ছে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডে এর এম ডি টিপু সুলতান। তাকে সহযোগিতা করছে জেনারেল ম্যানেজার (এইচ আর) মোহাম্মদ ইনাম ইলাহী চৌধুরী এবং গোদনাইল মেঘনা ডিপোর সাবেক কর্মকর্তা মোশাররফ। মূলত কোম্পানিতে মাস্টার রোলে অর্থাৎ যারা জিই-০১ এ কর্মরত আছেন, তাদের চাকুরী স্থায়ীকরণের জন্যই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন, কোম্পানিতে থার্ড পাটির মাধ্যমে কর্মরত কয়েকজন অস্থায়ী শ্রমিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অস্থায়ী শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, মূলত জি-১ ভুক্ত লোকজনকে নেয়ার জন্য এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তারা বলেন, শুনেছি জি-১ লোকজন ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা অগ্রীম দিয়ে জিএম (এইচ আর) সাথে চুক্তি করেছে। এখানে জিএম (এইচ আর) সহযোগী হিসেবে কাজ করছে গোদনাইলের মোশাররফ সাহেব। কারণ উনিই এই মাস্টার রোল নিয়ন্ত্রণ করেন। এই মাস্টার রোলে নিয়োগ পাওয়ার জন্য আবার নওশাদ জামাল সাহেবকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। আর এই নওশাদ জামাল জিএম (এইচ আর) সিন্ডিকেটের লোক। তারা অভিযোগ করে আরো বলেন, এই জিএম (এইচআর) একজন মহা দুর্নীতিবাজ লোক। এ ব্যাপারে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের এমডি মো. টিপু সুলতান ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অভিযোগ রয়েছে এমডি টিপু সুলতানের আশ্রয় প্রশ্রয় এ সব কর্মকান্ড করছেন জেনারেল ম্যানেজার (এইচ আর) চঃ দাঃ মোহাম্মদ ইনাম ইলাহী চৌধুরী। এ ব্যপারে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (এইচ আর) চঃ দাঃ মোহাম্মদ ইনাম ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে বার বার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি, এমনকি খুদে বার্তা পাঠিয়েও উত্তর কোন মেলেনি।

এদিকে (০৪ জুলাই) রাজধানীতে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। এই প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীন। পরীক্ষা দিতে আসা অন্তত চার তরুণ-তরুণী হাইকোর্টের আদেশসহ সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হন। তাদের হাতে ছিল রিট পিটিশন নম্বর ১৭০৫/২০২৫, সংবিধানের ১০২(২)(ক)(র) ও (রর) ধারায় দেওয়া আদালতের রায়, কোর্ট ফি জমার রশিদসহ সবকিছু। তবুও গেটের সামনে ‘নাম তালিকায় নেই, প্রবেশপত্র নেই’ এই যুক্তিতে তাদের আটকে দেওয়া হয়। পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্বে থাকা মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড পরে জানায়, রায় পাওয়া গিয়েছিল বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই)। হাতে সময় ছিল মাত্র ২৪ ঘণ্টা। টেলিটক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (বিআইএম) এর সঙ্গে সমন্বয় না হওয়ায় নতুন করে আবেদন গ্রহণ, প্রবেশপত্র তৈরি ও কেন্দ্রে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই তারা আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কি আদালতের রায় কার্যকর না করে শুধু সমন্বয় হয়নি বলেই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে?

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেঘনা পেট্রোলিয়াম সরাসরি আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করেছে। সময় না থাকাটা অজুহাত হতে পারে না। প্রয়োজনে আলাদা কেন্দ্রে পরীক্ষা নিয়ে রায় বাস্তবায়ন করা যেত। অথচ এখানে চারটি স্বপ্নকে গেটের বাইরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। পূর্বেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আরমান হোসেনসহ ছয়জন এক রিটে হাইকোর্টের রায় পেয়েছিলেন, যাতে তাদের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠান আপিল বিভাগে গিয়ে রায় স্থগিত করায় তারা অংশ নিতে পারেননি। এবারও আদালতের রায় থাকার পর সময় না থাকার অজুহাত দেখানো হয়েছে।

এ ব্যপারে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (এইচ আর) মোহাম্মদ ইনাম ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে বার বার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি, এমনকি খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন উত্তর মেলেনি। এ ব্যপারে মেঘনার জেনারেল ম্যানেজার (এ অ্যান্ড এফ) সঞ্জীব নন্দী বলেন, টাকা লেনদেনের বিষয় আমার জানা নেই।টাকা দেওয়ার প্রমাণ থাকলে দেখাতে বলেন। এ ছাড়া আমি কিছু বলতে পারি না। এবিষয়ে এমডি সাহেব জানেন। এ ব্যপারে মেঘনার এমডি টিপু সুলতানের মুঠো ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

আগামী পর্বে-পদের মেয়াদ বাড়াতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ এমডি টিপুর…

ঘরে বসে ইনকাম করতে গিয়ে উল্টো লাখ টাকা হারালেন তরুণ!

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানার ফার্মগেট ইন্দিরা রোড এলাকার বাসিন্দা রাকিব হাসান (ছদ্মনাম)। পেশায় একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ভালোই আয় করেন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখ অচেনা একটি নম্বর থেকে রাকিবের মোবাইল ফোনে একটি ক্ষুদেবার্তা আসে। বার্তায় লেখা ছিল, ঘরে বসে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট কাজ করে দিনে দুই থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় করার সুযোগ। এমন বার্তা পেয়ে রাকিব সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাননি। যোগাযোগ করেন ক্ষুদেবার্তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে।

তাকে প্রথমে কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেলে লাইক ও সাবস্ক্রাইব করতে বলা হয়। তিনটি ইউটিউব চ্যানেলে লাইক ও সাবস্ক্রাইব করেন রাকিব। এর একটু পরই তার বিকাশ নম্বরে ৬০ টাকা চলে আসে। মাত্র তিনটি ক্লিক করেই টাকা আয়ের লোভে আরও কয়েকটি কাজ করেন রাকিব। এরপরই পণ্য কিনলেই আরও সহজে বেশি টাকা আয়ের সুযোগের প্রস্তাব দেওয়া হয়। আর এভাবেই নিজের অজান্তেই প্রতারক চক্রের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে তিন লাখেরও বেশি টাকা হারান রাকিব। পরবর্তীতে এই ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। ঘটনার প্রায় দুই মাস পার হলে প্রতারক চক্রটি রয়েছে গেছে অধরা।

এদিকে শুধু রাকিব নন, ঘরে বসে সহজে আয় করা, আবেদন না করেও চাকরি পাওয়া, পরিচিত না হয়েও ভিডিও কলে অন্তরঙ্গ প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিচ্ছেন অনেকে। ফলে কিছু বোঝার আগেই হারাচ্ছেন টাকা। যদিও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বেশ কিছু প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে। তবে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন চক্রের মূল হোতারা।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে,দিন দিন এ ধরনের অভিযোগের সংখ্যা বেড়েই চলছে। মূলত বেশি লোভের কারণে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। প্রতারক চক্রের দেখানো সহজে আয়ের লোভে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন শতশত মানুষ।

ভুক্তভোগী রাকিব (ছদ্মনাম) প্রতিবেদককে বলেন, হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ পেয়ে কৌতূহলবশত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কয়েকটা টাস্ক (কাজ) দেওয়া হয়। সেগুলো করলে কিছু টাকা দেয়। এভাবে বেশ কিছু টাস্ক (কাজ) করি। পরবর্তীতে আমাকে বড় টাস্ক দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। ভিআইপি প্যাকেজের টাস্ক নামের সেই কাজে আমাকে ১৬টি পণ্য কিনতে বলা হয়। এরমধ্যে কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য ছিল। যেগুলো তাদের গছিয়ে দেওয়া। এই পণ্যের মূল্য বাবদ আমি বেশ কয়েকটি বিকাশ নম্বরে তিন লাখ ১৮ হাজার টাকা পাঠাই। এই টাকা পাঠানোর পরে তারা আমাকে জানায়, আমাকে আরও তিনটি পণ্য কিনতে হবে। এ জন্য এক লাখ টাকা পাঠাতে হবে। এই টাকা না পাঠালে আমার পাঠানো তিন লাখের বিপরীতে আমার লাভ করা ছয় লাখ ৯৬ হাজার টাকা তুলতে দেবে না। কিন্তু এরপরে দেখি সেই ওয়েবসাইটই বন্ধ হয়ে গেছে। তখন বুঝতে পারি যে, আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। পরবর্তীতে শেরে বাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। এই ঘটনায় জিডিসহ ডিবির সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু তারা এখনো আসামি ধরতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, এই চক্রটি প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলেও তাদের ফাঁদে পা দেওয়ার পরে যোগাযোগ করে টেলিগ্রামে। সেখানে তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো তথ্য দেখার সুযোগ নেই। তারা যে ওয়েবসাইট ব্যবহার করে সেটিও ১৫-২০ দিনের বেশি থাকে না। কয়েক ধাপে একেকজনকে ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর তারা সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। গত কয়েক মাসে আমি দেখেছি ঘরে বসে টাকা আয়ের এই চক্রটি একজনের সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ দিনের বেশি কাজ করে না। প্রথমে তারা কিছু টাকা দিয়ে লোভ দেখালেও পরবর্তীতে ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিকাশ, নগদ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে। এছাড়া বড় অঙ্কের টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক একাউন্টও ব্যবহার করে তারা।

ভুক্তভোগী রাকিবের কথার সূত্র ধরে একাধিক ব্যাংক একাউন্টের তথ্য পায় প্রতিবেদক। তারমধ্যে সিটি ব্যাংকের যশোর ব্রাঞ্চে খোলা একটি একাউন্টের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোর ক্ষেত্রে বানোয়াট কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। নামের ক্ষেত্রে এম আর ট্রেডার্স, যশোর সদরের হারানাধ দত্ত লেনের ঠিকানা দিলেও প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় রয়েছে গোঁজামিল। দোকান নম্বর দেওয়া হয়েছে শূন্য। যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা রবি নম্বরটিতেও কল যায় না। ঠিকানাসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ঠিক না থাকলেও লেনদেন ঠিকই চলছে। কয়েকটি মাত্র মোবাইল ফোন ব্যাংকিংয়ের বিভিন্ন নম্বর থেকে লাখ টাকা জমা হচ্ছে একাউন্টটিতে।

প্রতারক চক্রের অভিনব প্রতারণা ও সতর্কতা বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের সমাজে সহজে বেশি টাকা আয়ের পথ খোঁজা পথ কেউ ছাড়তে চায় না। শুধু আমাদের দেশে না, এটা সারা বিশ্বেই আছে। ফলে এই সহজে আয়ের লোভে পড়ে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে।

চক্রগুলো ঘরে বসে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদে ফেলে। তারা প্রথমে কিছু টাকা দিলেও যার পরিমাণটা শতকরা ১০ ভাগ। এভাবে বিশ্বাস অর্জন করে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ব্লক করে দিয়ে তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দেবে।

অনলাইনে ডুয়েল কারেন্সি নীতিমালা বাস্তবায়ন ও অন্তর্দেশীয় অপরাধী গ্রেফতারের তাগিদ দিয়ে এই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বলেন, মোবাইল ফোন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা দেশে আসা ও বিদেশে পাঠানো ক্ষেত্রে একটি আইন আছে। মোবাইল ফোন ব্যাংকিংয়ে রিচার্জ করা টাকা সঙ্গে সঙ্গে ডলার বা বিদেশি মুদ্রায় কনভার্ট করার অনুমোদন বাংলাদেশ ব্যাংক দেয়নি। পাশাপাশি অনলাইন প্রতারকদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশেও দক্ষ জনবলের সংকট রয়েছে। পাশাপাশি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটেরও (বিএফআইইউ) কোনো সেল নেই যেখানে অভিযোগ দেওয়া যায়।

তিনি বলেন, ঘটনা বিপুল পরিমাণ ঘটলেও খুব সামান্য পরিমাণ অভিযোগ থানা পুলিশের কাছে যায়। এই সব কিছুর সুযোগ নিচ্ছে প্রতারকরা। এছাড়া ১০ লাখের পুলিশ বাহিনীতে খুব সামান্য পরিমাণ জনবল রয়েছে সাইবার ক্রাইমে। যার সংখ্যা এক লাখও না। এর মধ্যে যারা আছে তাদের অধিকাংশ আবার সম্পূর্ণ দক্ষ না। এছাড়া আমাদের দেশে অন্তর্দেশীয় অপরাধীদের গ্রেফতারের নীতিমালা প্রয়োজন। কারণ এখন আমরা দেখছি পার্শ্ববর্তী দেশে বসে আমাদের দেশের মানুষকে টার্গেট করে প্রতারণা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে যে সকল মামলায় সাইবার অপরাধীরা গ্রেফতার হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে যাচ্ছেন। যার মূল কারণ ত্রুটিযুক্ত মামলা। তদন্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতার ঘাটতি। ফলে আসামি গ্রেফতার হলেও আলামত সংরক্ষণ ও অভিযান স্থান নিয়ে ত্রুটি থাকায় সেই মামলার আরও কোনো ফলাফল নেই। জামিন নিয়ে অপরাধীরা বের হয়ে আবারও অপরাধ করছে। এখন পর্যন্ত ২০টারও কম মামলার রায় হয়েছে। অথচ মামলার সংখ্যা অসংখ্য।

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম