ডেস্ক রিপোর্ট:
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই মডেলের প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় উদ্ধারকারী দল। চলছে উদ্ধার অভিযান। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহরে এই মডেলের মোট ১৬টি বিমান যুক্ত হয় ২০১৩ সালে। ‘এফ-৭ বিজিআই’ হলো চীনের তৈরি এফ-৭/জে-৭ সিরিজের সবচেয়ে উন্নত এবং শেষ উৎপাদিত সংস্করণ। এটি মূলত একটি হালকা ও উচ্চগতিসম্পন্ন যুদ্ধবিমান, যার নকশা ও প্রযুক্তি সোভিয়েত মিগ-২১-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যাম্পাসে যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেটি এফ-৭ বিজিআই মটেডেলের একটি প্রশিক্ষণ বিমান বলে জানিয়েছে আইসএসপিআর। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর একটার পর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এফ-৭ বিজিআই (F-7 BGI) একটি মাল্টি-রোল যুদ্ধবিমান অর্থাৎ এটি একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনে সামরিক কার্যক্রমে দক্ষ বা বহুমুখী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। এই বিমান চীনের চেংডু এয়ারক্র্যাফ্ট করপোরেশনের তৈরি। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী এটি বিশেষভাবে একটি ব্যয়সাশ্রয়ী মাল্টি-রোল যুদ্ধবিমান হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। চেংডুর তৈরি এফ সিরিজের বিমানগুলোর মধ্যে এটিকে সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ বলে গণ্য করা হয়। এফ-/৭ বিজি-তে, জে-৭ জি বিমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তৈরি করা F-7 BGI (I বলতে বুঝানো হয় Improved বা উন্নত)।
এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য-
ইঞ্জিন: এটি একটি ইঞ্জিন বিশিষ্ট বিমান। এতে ডব্লিউপি-১৩এফ (WP-13F) আফটারবার্নিং টার্বোজেট ইঞ্জিন রয়েছে।
সর্বোচ্চ গতি: এটি মাক ২.২ (Mach 2.2) বা ঘণ্টায় প্রায় ২,৪৭০ কি.মি. গতিতে উড়তে সক্ষম।
রেঞ্জ: এর ফেরি রেঞ্জ (ফেরত যাওয়ার ক্ষমতাসহ) প্রায় ২,০০০ কি.মি.।
অস্ত্র: এফ-৭ বিজিআই বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র বহন করতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে- পিএল-৫, পিএল-৯ ইনফ্রারেড গাইডেড মিসাইল। ৩০ মিমি কামান। ফ্রি-ফল বোমা। রকেট পড। এটি লেজার গাইডেড বোমা (যেমন: Mk 81, Mk 82-এর জন্য TEBER গাইডেন্স কিট), জিপিএস গাইডেড বোমা এবং ৩০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত সাসপেন্ডেড আরমামেন্ট বহন করতে পারে।
রাডার: এতে কেএলজে-৬এফ (KLJ-6F) পালস ডপলার রাডার ব্যবহার করা হয়, যা ৮০ কিমি+ রেঞ্জ কাভার করে।
ককপিট: এর ককপিট আধুনিক ‘গ্লাস ককপিট’; যেখানে মাল্টিফাংশন ডিসপ্লে এবং হ্যান্ডস অন থ্রটল অ্যান্ড স্টিক সিস্টেম রয়েছে।
সীমিত বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ (BVR) যুদ্ধক্ষমতা: আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলোর তুলনায় এর বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ যুদ্ধক্ষমতা সীমিত।
চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন এবং গুইঝো এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন ১৯৬৫ সাল থেকে এই সিরিজের বিমান উৎপাদন শুরু করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশকে ১৬টি এফ-৭ বিজিআই হস্তান্তরের মাধ্যমে এই সিরিজের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এই মডেলের সর্বমোট ২৪ শটির বেশি বিমান তৈরি করা হয়েছে।
বিমানটি স্বল্পপাল্লার ইনফ্রারেড গাইডেড এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম। এটি মূলত আকাশ থেকে আকাশে লড়াইয়ের জন্যই ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে এটি মাটির কাছাকাছি (ক্লোজ এয়ার সাপোর্ট) অপারেশনেও ব্যবহৃত হয়।
প্রথমে শুধু চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স এই বিমান পরিচালনা করলেও পরে এটি বহু দেশে রপ্তানি হয়। চীনের বাইরে পাকিস্তান হলো এর সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী। জিম্বাবুয়ে, তানজানিয়া, শ্রীলংকাসহ কয়েকটি দেশেও এই বিমান সরাসরি যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ মাসুদ || বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২১/১ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০ || মোবাইল : ০১৫১১৯৬৩২৯৪,০১৬১১৯৬৩২৯৪ || ই- মেইল: dailysobujbangladesh@gmail.com || ওয়েব : www.dailysobujbangladesh.com
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ. All rights reserved.