সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের শেখ বিল্লালের দুর্নীতির মাইলফলক, গড়েছেন অট্রালিকাসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের শেখ বিল্লালের দুর্নীতির মাইলফলক, গড়েছেন অট্রালিকাসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি

মো: ইসমাইল হোসেনঃ

দীর্ঘ সময়ের ফ্যাসিবাদের সুযোগে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতিতে। বর্তমান বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বেরিয়ে আসছে অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনেক কর্মকর্তার দুর্নীতি প্রকাশ্যে এলেও অনেক কর্মকর্তার দুর্নীতি রয়েছে অগোচরে। বর্তমান সময়ে বাক স্বাধীনতা ফিরে পেয়ে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন সাধারণ ভুক্তভোগী জনতা। এবার প্রকাশ্যে এলো ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের পেশকার শেখ বিল্লালের দুর্নীতির চিত্র।

জমি-জায়গা নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দুর্নীতির কবলে পড়েননি বা জিম্মি হতে হয়নি এমন কাউকে পাওয়া বিরল। বিশেষ করে অর্থনৈতিক হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। নিয়মানুযায়ী সরকারী চাকরির বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩৫ হলেও দুর্নীতিবাজ শেখ বিল্লাল চাকরিতে যোগ দিয়েছেন ৪৫ বছর বয়সে। সরকারী বিধিমালা অনুযায়ী পেশকার পদের বেতন গ্রেড ১৬ এর অন্তর্ভুক্ত। যার বর্তমান বেতন কাঠামো ৯,৩০০-২২,৪৯০ টাকা। অথচ কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার মালিক শেখ বিল্লাল। অল্প সময়ের বছরের চাকরি জীবনে দুর্নীতি করে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক। যেনো আঙুল ফুলে কলা গাছ।

ফরিদপুরের বিলমামুদপুর নতুন ডাঙি গ্রামের শেখ আরসাদের তিন পূত্র। বড় ছেলে শেখ ইউনুস (মৃত), মেঝো শেখ বিল্লাল, ছোট শেখ দেলোয়ার।

শেখ বিল্লাল বিলমামুদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ময়েজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় পাস করার পর পারিবারিক টানা-হেচঁড়ায় পড়াশোনা আর চালিয়ে যেতে পারেননি। দিন এনে দিন খাওয়ার মতো পরিবার তাদের। তবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের প্রভাব খাটিয়ে ফরিদপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রিার কার্যালয়ের অফিসে পিয়ন পদে চাকুরি নেন শেখ বিল্লাল। দুই বছর যেতে না যেতেই পদন্নতি পেয়ে হয়ে যান একজন পেশকার। পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। বর্তমানে তিনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের পেশকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) নাহিয়ান ইমন নামের এক ভুক্তভোগী দুদকে একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। শেখ বিল্লালের বিরুদ্ধে রয়েছে দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল্লাশি, নকল উত্তোলনের মতো কাজেও সরকারী ফির থেকেও বাড়তি অর্থ নেওয়ার অভিযোগ। বিভিন্ন অযুহাতে গ্রাহকদের হয়রানি করে ঘুষ গ্রহন করা। এবং সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া।

শেখ বিল্লাল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার বদলে তাদের সাথে প্রতারণা করে নিজ গ্রাম ও শশুর বাড়িতে ক্রয় করেছেন বিঘায় বিঘা জমি।

অনুসন্ধানে উঠে আসে ফরিদপুরের বিলমামুদপুর নতুন ডাঙি নিজ গ্রামে গড়েছেন (কোহিনুর মন্জিল) নামে আলিশান অট্রালিকার বাড়ি। নিজের ৬ কাঠা জমিসহ সরকারী ২ কাঠা রাস্তার জায়গা দখল করে তার বাড়িটি নির্মাণ করেছেন।

শেখ বিল্লালের দুটি পূত্র, (বড় সাইফুল), (ছোট সাকিব)। বড় ছেলে সাইফুলও ব্যবহার করেন দামি পোশাক, দামি গাড়ি, দামি ফোন।

শেখ বিল্লালের ছেলের বিষয়ে জানতে চাইলে একজন বলেন, সাইফুল খুবই ভয়ংকর, এলাকার মধ্যে একধরনের ত্রাস করে বেড়ান।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, শেখ বিল্লালের বাড়িতে ৪-৫ বছর আগেও চুলা তেমন একটা জ্বলতো না, কিন্তুু শেষ বয়সে সরকারী চাকরি নেওয়ার সাথে সাথে এতো বড় অট্রালিকা বানানো সত্যিই চোখে নাড়া দেওয়ার মতো।

আরেকজন স্থানীয় বলেন, শেখ বিল্লাল মোবারক খলিফার দাপটে পুরো গ্রামে ত্রাস করে বেড়াতেন।

মোবারক খলিফা কে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোবারক খলিফা সাবেক আওয়ামীলীগের কাউন্সিল, কিন্তুু বর্তমানে তিনি পলাতক আছেন।

এবিষয়ে শেখ বিল্লালকে কল করা হলে তিনি বলেন বাড়িটি লোন করে করা হয়েছে, আর আমি এখনো অভিযোগটি দেখিনি, পাঠিয়ে দিন। দেখে আমি জানাচ্ছি।
কিন্তুু পরবর্তীতে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

এবিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাব রেজিস্ট্রার তনু রায়, ফরিদপুর সদর সাব রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলামকে একাধিক কল করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।

জামায়াত নেতারা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করছিলেন: পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক॥

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলসহ গ্রেপ্তার নয় নেতাকর্মী রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। এই অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলার পর আদালতে তুলে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সোমবার রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

এর আগে সন্ধ্যায় রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে নয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদ সদস্য ইজ্জত উল্লাহ, মোবারক হোসেন, আব্দুর রব, ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত এবং জামায়াতের কর্মী মনিরুল ইসলাম ও আবুল কালাম।

জামায়াত নেতাকর্মীদের থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার মামলা দিয়ে তাদের আদালতে তুলে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ডিসি আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গ্রেপ্তার জামায়াতের নেতারা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। বৈঠকে তারা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। গোপন সংবাদে বৈঠকের খবর জানতে পেরে তাদের আটক করি।’

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা বৈঠকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র ও নাশকতার পরিকল্পনা করছেন বলে আমাদের কাছে খবর আসে। তাদের রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার বৈঠক থেকে আলামত হিসেবে কিছু বই আমরা জব্দ করি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা কেন বৈঠকে মিলিত হয়েছেন এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। আমরা ধারণা করছি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও নাশকতার পরিকল্পনা করার উদ্দেশ্যে মিলিত হয়েছিলেন। রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য এটা তাদের গোপন বৈঠক ছিল। নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কি না, তারা কোথায় বা কোন সময় নাশকতা করবে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমরা জানতে পারবো, তারা কী উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। তাছাড়া তাদের কাছ থেকে পাওয়া আলামতের বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারব।’

তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও নাশকতার পরিকল্পনার উদ্দেশ্যে মিলিত হওয়ার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।’

তাদের নিয়মিত বৈঠক ছিল নাকি বিশেষ কোনো পরিকল্পনার জন্য বৈঠক ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়মিত বৈঠক ছিল না। এর আগেও যে নাশকতা হয়েছিল তারা একইভাবে বসুন্ধরা এলাকায় বৈঠকে মিলিত হয়ে পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতো।’

সম্প্রতি তালেবানের উত্থানের সঙ্গে তাদের এই নাশকতার পরিকল্পনার কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না জানতে চাইলে ডিসি গুলশান বলেন, ‘মাত্র আগস্ট মাস গেল। আগস্ট মাসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছিল দেশে ও দেশের বাইরে। আমরা এটুকু খতিয়ে দেখছি, এ ধরনের ষড়যন্ত্রের কোনো পরিকল্পনা তাদের ছিল কি না।’

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম