মূর্তিমান আতঙ্ক পুলিশ সোর্স

আব্দুল আজিজ॥
মূর্তিমান আতংকের নাম পুলিশ সোর্স। যে কোন সময় যে কাউকে ফাঁসিয়ে দিয়ে ভয়ঙ্কর বিপদে ফেলতে পারে এরা। সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করে। দাবিকৃত অর্থ না পেলে ফাঁসিয়ে দেয় মাদক বা অন্য কোন মামলায়। এরা সাধারণত পুলিশের গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ায়। আর এটাই এদের সম্বল। এরা কখনও নিজেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাজে। আবার কখনও একা বা সংঘবদ্ধ হয়ে ছিনতাই, অপহরণ, খুন, গুমসহ নানা অপরাধ করে বেড়ায়। পুলিশের সঙ্গে সম্পর্ক সূত্রে এরা চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ করেই চলেছে। তথ্য গোপন করার নামে এরা মাদক ব্যবসায়ীসহ দাগী অপরাধীদের সঙ্গে আঁতাতও করে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশেই মূর্তিমান আতঙ্ক ‘সোর্স’ রয়েছে। রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকাতেই এদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। সরেজমিন তদন্ত করে এবং একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অপরাধীদের ধরতে অনেক ক্ষেত্রে সোর্স নিয়োগ করে পুলিশ। সোর্সদের দেয়া তথ্য নিয়ে পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করে। সোর্সের কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় এসব সোর্স নিজেদের পুলিশ পরিচয় দেয়। নিজেদের আর্থিক সুবিধা বা অনৈতিক সুবিধার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের মিথ্যা তথ্য দেয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুল তথ্যে বেআইনী কাজে জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাও ফেঁসে যান আবার অপরাধীদের গ্রেফতারের পেছনের তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে সোর্সদের জীবনও হুমকির মুখে পড়ে। এ নিয়ে গত দশ বছরে রাজধানীতে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত শতাধিক সোর্স খুন হয়েছে। সোর্সদের অপরাধ কর্মকা-ের ইতিহাস বছরজুড়েই রচিত হয়ে আসছে। ভুক্তভোগীরাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। জানা গেছে, রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকায় অর্ধশত খাত থেকে সোর্সরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ভাঙিয়ে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে আসছে। মামলা পাল্টা-মামলা, চার্জশীট ইত্যাদির নামেও তদ্বির করে সোর্সরা বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অথচ পুলিশের সোর্স রাখার কোন বিধান আইনের কোথাও নেই। ফৌজদারি কার্যবিধি কিংবা পুলিশের পিআরবির (পুলিশ রেগুলেশন অব বাংলাদেশ) কোথাও পুলিশের সোর্স রাখা বা পালনের বিষয়টিও উল্লেখ করা নেই। পুলিশ সূত্র জানায়, আসামি ধরা ও অপরাধীদের স্পট খুঁজতে ব্যক্তিগতভাবে সোর্সের সহযোগিতা নিতে পারে। তবে থানায় সোর্সের আনাগোনাও রাখা যাবে না এমনটাই নির্দেশনা ছিল পুলিশ সদর দফতর থেকে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা মাঝে মধ্যে এক সময়ের অপরাধীদের সোর্স হিসেবে বাছাই করে সংশোধনের সুযোগ দেন। এ ছাড়া এলাকার নিম্নবিত্ত-পেশার ব্যক্তিদেরও সোর্স হিসেবে বাছাই করা হয়। তারা অন্যান্য কাজের পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সোর্স হিসেবে কাজ করে। এতে তারা বাড়তি আয়ও করে। এই সোর্সদের বেশিরভাগই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্ষমতা দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে এবং কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে আটকের ভয় দেখাচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, কাগজপত্রে থানার কোন সোর্স থাকার কথা নয়। এরপরও বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ পেয়ে ২০১৭ সালে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয় থেকে প্রত্যেক থানায় চিঠি দিয়ে সোর্স নামধারী এসব অপরাধীর বিষয়ে ওসিদের সতর্ক হতে বলা হয়েছে। সাবেক আইজিপি শহীদুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, অপরাধীদের সঙ্গে যাদের ওঠাবসা, অপরাধীদের খোঁজখবর রাখে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যক্তি সোর্স হয়। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা এবং প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করার কাজটি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব। ওই পুলিশ কর্মকর্তা যদি নিজে সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করতে না পারেন, কোন্টা সত্য কোন্টা মিথ্যা এটা যদি বুঝতে না পারেন, তার জন্য দায়ী ওই পুলিশ কর্মকর্তা। সোর্সের গতিবিধি, চরিত্র ও মানসিকতা বুঝতে হবে। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সোর্সই ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা ওই কর্মকর্তার সমস্যা। এখানে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সোর্স নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ব্যাপারে পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ডিএমপি মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জনকণ্ঠকে বলেন, সোর্সদের মাধ্যমে কেউ কোন হয়রানির শিকার হলে বা তাদের কোন অপকর্ম দৃষ্টিগোচর হলে সঙ্গে সঙ্গে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের অবহিত করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ যাতে পুলিশের নাম ব্যবহার করে কোন প্রকার অপকর্ম বা অপরাধ কর্মকা- না করতে পারে সে বিষয়ে পুলিশ এখন অনেক বেশি সতর্ক। কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনা ॥ ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পল্লবী থানায় পুলিশের হেফাজতে জনি নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। অপর দুইজনকে সাত বছর কারাদন্ড দেয়া হয়। সাত বছর কারাদন্ড প্রাপ্ত দু’জন মূলত পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করছিল। এদিকে পল্লবী থানায় যে বোমাটি বিস্ফোরণ হয় সেটি ভবনের দোতলায় পরিদর্শক (তদন্ত) ইমরানুল ইসলামের কক্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন পুলিশের সোর্স রিয়াজুল। বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটলে সোর্স রিয়াজুলের এক হাতের কবজি উড়ে যায়। অপরদিকে গত ৬ সেপ্টেম্বর রাতে পূর্ব রাজাবাজারের রাতুল ও তার তিন সহযোগী দুটি মোটরসাইকেলে র‌্যাবের সোর্স আবুল কাশেমের পিছু নিয়ে শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশনের সামনের রাস্তায় তাকে ধরে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এ ঘটনার চার দিন পর র‌্যাব তদন্ত করে সোর্স কাশেম হত্যার ঘটনায় মাদক ব্যবসায়ী রাতুল, মাসুদ হোসেন, রেজাউল করিম ও রুবেল হোসেনকে গ্রেফতার করে। পরে গ্রেফতারকৃতরা র‌্যাবকে জানায়, রাজাবাজার এলাকায় এক মাস আগে কাশেম মাদক ব্যবসায়ী নুরজাহানকে র‌্যাবের কাছে ধরিয়ে দেয়। নুরজাহানের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া রাতুলের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। এর জের ধরে রাতুল র‌্যাব সোর্স কাশেমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ২০১৮ সালের ১২ জুন বনানী থানাধীন মহাখালী হাজারিবাড়ি দাদা ভবনের পেছনে নিজ মাদক স্পট থেকে আব্দুল আলীর ছেলে পুলিশের সোর্স শরিফ ওরফে পাগলা শরিফকে ১২০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শরিফ বনানী থানার সোর্স পরিচয়ে নিজ বাড়িতে ইয়াবার ব্যবসা করছিল। শরিফের নামে পূর্বে গুলশান থানায় একটি অস্ত্র মামলা ও বনানী থানায় দু’টি মাদক মামলা ছিল। একই বছর মে মাসের শেষে ৬০ পিস ইয়াবাসহ বাড্ডা থানায় গ্রেফতার হয় বনানী থানা পুলিশের সোর্স ও মহাখালী ওয়্যারলেস গেট এলাকার ইয়াবার ব্যবসায়ী মানিক। জানা যায়, মানিক বনানী থানা পুলিশের সবচেয়ে পুরাতন সোর্স শহীদের সহযোগী। শহীদের শেল্টারে মানিক ইয়াবার ব্যবসা করে। ওই বছর মে মাসের শেষে কড়াইল বস্তিতে অভিযান চালিয়ে যৌথবাহিনী গ্রেফতার করে মহাখালী, বনানী এলাকার দুর্ধর্ষ চোর হৃদয়কে। এ সময় তার কাছ থেকে ২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। হৃদয় সোর্স শহীদের ভাগিনা। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্রবহন-ব্যবহার, হুমকি-ধমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বনানী থানা পুলিশের কথিত সোর্স শহীদকে ২০০৫ সালে বিস্ফোরক ও অবৈধ অস্ত্রসহ বনানী ২ নম্বর রোডের হিন্দুপাড়ার বস্তি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই শহীদ পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মহাখালী টিএন্ডটি মাঠের পাশে গোডাউন বস্তিতে শহীদের ঘরে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা, ফেনসিডিল, বিয়ার ও মদের জমজমাট ব্যবসা চলছিল। জুরাইন এলাকার কয়েক ব্যবসায়ী জানান, মাঝে মধ্যেই মুরাদপুরে পুলিশের গাড়িতে করে এসে সোর্সরা রাস্তার ওপর ব্লক রেইড দেয়া শুরু করে। সে সময় যাকে পায় তার শরীর তল্লাশি করে। পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখে। মানুষজন তখন যে কত অসহায়, বিশেষ করে সোর্স পকেটে কিছু ঢুকিয়ে দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয় কিনা সে আশঙ্কায় মানুষ তটস্থ থাকে। সোর্স কারা ॥ সাধারণত রাজনৈতিক দলের কর্মী, বিভিন্ন ছোট অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, জেল থেকে ছাড়া পাওয়া আসামি, স্থানীয় বাসিন্দা, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিকে পুলিশ সোর্স হিসেবে ব্যবহার করে। একজন সাধারণ মানুষও সোর্স হতে পারে। আবার কোন বিজ্ঞজনও হতে পারেন সোর্স। কোন ঘটনাচক্রে জড়িত কাউকেও সোর্স করা হতে পারে। তবে পুরোটাই নির্ভর করে কর্মকর্তার দক্ষতা বা কৌশলের ওপর। বড় ধরনের অপরাধীর তথ্য বের করতে পুলিশ সোর্স নিয়োগ দেয়। সেক্ষেত্রে তাকে আর্থিক সুবিধা দিতে হয়, যা সোর্স মানি হিসেবে পরিচিত। যদিও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যখন এ টাকা দেয়া হয়, তখন তাকে বলা হয়ে থাকে ‘অপারেশন মানি’। সুনির্দিষ্ট কোন বিধি বা প্রবিধান না থাকায় এটি জবাবদিহিতার বাইরে থেকে যায়। সোর্স খুন ॥ আইন প্রয়োগকারী সূত্র ও তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর ৫০ থানা এলাকার সবখানেই সোর্সরা নানা অপরাধে জড়িত। গত দশ বছরে রাজধানীতে শতাধিক পুলিশ ও র‌্যাবের সোর্স খুন হয়েছে। তারা যে শুধু নিজেরা অপরাধে জড়ান তা নয়। তাদের দেয়া ভুল তথ্যে বিব্রতকর কাজে জড়িয়ে পড়ে র‌্যাব ও পুলিশ। অনেক স্থানে নিজেরা প্রশাসনের লোক পরিচয়ে অভিযানেও নামে সোর্সরা। শুধু যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় গত দশ বছরে ২০ জন সোর্স খুন হয়েছে। নিহতরা সোর্স হিসেবে কাজ করলেও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, পুলিশের লাইনম্যান, থানায় তদ্বির, পুলিশ ও র‌্যাবের ভয় দেখানো, এলাকায় আধিপত্যসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিল। আবার সন্ত্রাসী, অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে সহায়তার জন্যও কোন কোন সোর্স খুন হয়েছে। ২০১৬ সালে যাত্রাবাড়ীতে খুন হয় পুলিশের সোর্স শিপন। শনিরআখড়া এলাকার বাসিন্দা সোর্স শিপনের সঙ্গে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী কুত্তা লিটনের বিরোধ ছিল। শিপনের দেয়া তথ্যে ডিবি গ্রেফতার করে সন্ত্রাসী কুত্তা লিটনকে। এই ঘটনার জের ধরে লিটনের সহযোগীরা মিলে শিপনকে নৃশংসভাবে খুন করে। ২০১৪ সালে যাত্রাবাড়ীর দক্ষিণ দনিয়ার কমর আলী রোডে নিজ বাসায় কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় আসলাম শিকদার (৫০) নামের আরেক সোর্সকে। নিহতের মেয়ে আসমা বেগম দাবি করেন, তার বাবা যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশেরই সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বনশ্রী এলাকা থেকে মাদক স¤্রাজ্ঞী রহিমাকে গ্রেফতার করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রহিমার স্পট থেকে যারা নিয়মিত মোটা অঙ্কের মাসোহারা পেত তারা সোর্স আসলামকে খুন করে। ৪ বছর পর গত বছর ২৩ ডিসেম্বর পুলিশ সোর্স আসলাম হত্যার প্রধান আসামি আবু তাহেরকে (৩৯) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। ২০১৪ সালের ১১ নবেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ সোর্স হাফিজুর রহমান ফিরোজকে (২৬) হাত-পায়ের রগ কেটে জবাই করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ফিরোজ ছিল যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশের সোর্স। পাশাপাশি মাদক ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিতি ছিল তার। ২০১৩ সালে ভ্রাম্যমাণ আদালত ফিরোজকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়। খুন হওয়ার আগে জামিনে ছাড়া পায় সে। এরপর মাদক ব্যবসায়ী চক্রের মধ্যে পুলিশের সোর্স পরিচয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে ফিরোজ। আর এ কারণেই প্রাণ হারাতে হয় তাকে। হত্যাকাণ্ডের পর স্বজনরা তাকে পুলিশের সোর্স বলে পরিচয় দিলেও পুলিশ পরিচয় দিয়েছে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবেই। ২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর মিরপুরের মাজার রোডে পাহাড়িকা টিম্বারের সামনে থেকে হিটলু (৪৫) নামে পুলিশের এক সোর্সের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের ছোট ভাই বিটু জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা হিটলুকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। এর আগের বছর ২৩ অক্টোবর রাজধানীর পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের শাহপরান বস্তির একটি ডোবা থেকে জনি (২৩) নামে পুলিশের এক সোর্সের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মাদক ব্যবসার বিরোধের জের ধরেই জনিকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করছে তার স্বজনরা। ওই বছর ১৫ আগস্ট শাহ আলীর গুদারাঘাটে জসিম উদ্দিন নামে পুলিশ ও র‌্যাবের এক সোর্সকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তাকেও স্থানীয় একটি মাদক ব্যবসায়ী গ্রুপ হত্যা করেছে বলে দাবি করছে স্বজনরা। এর আগে ১৬ মে বাড্ডায় দুলাল হোসেন, ৯ মার্চ রামপুরায় বাদশা এবং ৭ মে টঙ্গীতে সোর্স রাসেল একইভাবে বিরোধে জড়িয়ে খুন হন। ২০১৩ সালের মার্চে পুলিশের সোর্স শিমু আক্তার ওরফে সুমিকে (২৩) হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তদন্তে মতিঝিলে সুমি খুনের ঘটনার পেছনে মাদক ব্যবসা ও পুলিশের সোর্স হয়ে কাজ করার কারণ খুঁজে পায় ডিবি পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৯০ সোর্স খুন হয়েছে। সোর্স মানি ॥ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অপরাধ ও অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করে থাকে পুলিশ। এই পুরনো পদ্ধতি ছাড়াও বর্তমানে পুলিশ ডিজিটাল সোর্স ব্যবহার করছে। এসব সোর্সের পেছনে টাকা খরচ করতে হয়। সরকার থেকে এজন্য পুলিশকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ‘সোর্স মানি’ বরাদ্দ দেয়া হয়। তথ্যের বিনিময়ে এই সোর্সদের টাকা দিতে হয়, যা সোর্স মানি হিসেবে পরিচিত। পুলিশ সদর দফতর থেকে যখন এই টাকা দেয়া হয়, তখন তা ‘অপারেশন মানি’ হিসেবে উল্লেখ থাকে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি থানায়ই সোর্স মানির একটি মাসিক বরাদ্দ রয়েছে। রাজধানীর থানাগুলোতে গুরুত্ব অনুযায়ী বরাদ্দের পরিমাণ মাসে ছয় থেকে ১৫ হাজার টাকা। এক র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, একটি কোম্পানিতে সোর্সের ভাতা ও অভিযানের তথ্য সংগ্রহ মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকে। একইভাবে প্রতি জেলায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে থাকে সোর্স মানি। ২০১৯ সালের পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। দাবি তোলা হয়, অপারেশনের সঙ্গে যারা জড়িত কেবল তাদের নামেই সোর্স মানি বরাদ্দ হোক। এ দাবির প্রেক্ষিতে সাবেক আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী অপারেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নামে সোর্স মানি বরাদ্দের নির্দেশ দেন। পুলিশ সদর দফতরে একাধিক কর্মকর্তা জানান, তথ্যের বিনিময়ে টাকা দেয়া পুরনো পদ্ধতি। সারা বিশ্বেই এটা প্রচলিত রয়েছে। তথ্যের গুরুত্বানুসারে সোর্সরা বিভিন্ন পরিমাণে টাকা দাবি করে থাকে কিংবা পুলিশের পক্ষ থেকে গুরুত্ব বুঝে সোর্সকে টাকা দেয়া হয়। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে। তারা জানান, ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরির সোর্স রয়েছে। ‘এ’ ক্যাটাগরির সোর্সরা অনেক বেশি নির্ভরশীল এবং সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ‘বি’ ক্যাটাগরির সোর্সরাও দায়িত্ব নিয়ে পুলিশকে তথ্য সরবরাহ করে। তবে ‘সি’ ক্যাটাগরির সোর্সরা অনেক সময় বিভ্রান্ত করে। হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, মাদক উদ্ধারের ঘটনায় প্রথমেই সোর্সের দেয়া তথ্যের ওপরে নির্ভর করতে হয়। বেশিরভাগ সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। ডিজিটাল সোর্স মানি ॥ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট অনেক উন্নত হয়েছে। অপহরণ, হত্যাকাণ্ড, ডাকাতিসহ বিভিন্ন ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ এখন বিভিন্ন ডিজিটাল সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। যে কোন তথ্য-উপাত্ত ও আসামির অবস্থান শনাক্তের জন্য ডিজিটাল পদ্ধতির সাহায্য নেয়া হয়ে থাকে। এভাবে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, অপরাধী ও আসামিকে গ্রেফতার করার নজির এখন অনেক। ডিজিটাল সোর্স হিসেবে পুলিশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসএ্যাপ, মেসেঞ্জার, গুগল ম্যাপ, মোবাইল ফোন ডিভাইস, কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিয়ার) এর সহযোগিতা নিয়ে থাকে। পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া সেল থেকে জানা গেছে, সোর্স মানি রাষ্ট্রের একটি বিনিয়োগ। এটি কোন ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয় বরং এ্যাকশন স্পেসিফিক। কাজের ধরন ভেদে ভিন্ন ভিন্ন খরচ হয়। পুলিশকে যারা বিপদে ফেলে ॥ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, থানায় কোন তালিকা না থাকলেও পুলিশ সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রেই সোর্সনির্ভর। কাজ করার জন্য কোন টাকাও দেয়া হয় না তাদের। ফলে কখনও বাছবিচার করা হয় না ওই সোর্স কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিনা। এসব সোর্স প্রায়ই পুলিশের জন্য চরম বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্যে ভাবমূর্তির সঙ্কটেও পড়ে পুলিশ ও র‌্যাব। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর শাহ আলীর গুদারাঘাটে চা দোকানি বাবুল মাতুব্বর (৫০) চুলার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মারা যান। নিহতের স্বজনের অভিযোগ, শাহ আলী থানার সোর্স দোলোয়ার হোসেন চাঁদার দাবিতে পুলিশ নিয়ে হাজির হয় বাবুলের দোকানের সামনে। একপর্যায়ে জ্বলন্ত চুলায় আঘাত করলে বিস্ফোরণটি ঘটে। পুলিশের সামনেই সোর্স দেলোয়ার, আয়ুব আলী ও রবিনসহ আরও কয়েকজন বাবুলকে আগুনে পোড়ালেও বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কোন পুলিশ সদস্য। সে সময় এ ঘটনায় তিন এসআইসহ ৫ পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রত্যাহার হয়েছে থানার ওসি একেএম শাহীন মণ্ডলকেও। এরপরই পুলিশ সোর্সের অনাচারের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। পরে ডিএমপি থানাগুলোতে সোর্সদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার নিদের্শ দেয়া হয়। ২০১৪ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর থানা পুলিশ সোর্স খোকন, নাসিম, ফয়সাল ও পলাশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজনকে গ্রেফতার করে। মিরপুর থানার এসআই জাহিদুর রহমান, এএসআই রাজকুমার ও দুই কনস্টেবল মিলে ওই ব্যবসায়ীর ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করে। ওই ঘটনায় জড়িত এসআই জাহিদুর ও সোর্স নাসিমসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে গোয়েন্দারা সোর্সদের ব্যাপারে নতুন করে খোঁজ নিতে শুরু করে। এই মামলায় পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। অপর দুইজনকে সাত বছর কারাদন্ড দেয়া হয়। ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে যাত্রাবাড়ীতে ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাশকে (৪০) পুলিশের মারধরের নেপথ্যেও ছিল দুই সোর্সের দেয়া ভুল তথ্য। ওই দিন ভোরে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই আরশাদ হোসেন আকাশসহ কয়েক পুলিশ সদস্য মীরহাজীরবাগ এলাকায় বিকাশকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। পুলিশ বিভ্রান্ত হওয়ার এমন অসংখ্য কাহিনী রয়েছে।এদিগে পুরাতনদের পাশাপাশি নতুন কিছু সোর্স হয়েছে তারা কিন্তু বেপরোয় এর মধ্যে বাবু ওরফে ডিব্বা বাবু তার সহযোগিদের নিযে বিস্তািরত প্রতিবেদন আসছে।( চলবে)

ঠাণ্ডায় কাঁপছে দিল্লি তাপমাত্রা নামল ৫ ডিগ্রিতে

সবুজ বাংলাদেশ ডেস্ক:

ফের পাঁচ ডিগ্রির নীচে নেমে গেল দিল্লির তাপমাত্রা। রোববার ভোরে দেশের রাজধানী নয়াদিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকার তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির নীচে নেমে গিয়েছে।

 

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রোববার ভোরে নগরীর প্রাথমিক আবহাওয়া কেন্দ্র সফদরজংয়ে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস!

মূলত গত এক সপ্তাহে এই নিয়ে তিন বার ৫ ডিগ্রির নীচে নেমে গেল তাপমাত্রা। গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা এক ধাক্কায় তিন ডিগ্রি নেমে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে দিল্লির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৪.৫ ডিগ্রি। চলতি মরসুমে এখনো পর্যন্ত সেটিই দিল্লির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল।

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই আবহাওয়া দফতরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, গত ১৪ বছরের মধ্যে এই প্রথম ডিসেম্বরে এতটা তাপমাত্রা কমল দিল্লিতে।

আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত কয়েক দিন ধরেই শৈত্যপ্রবাহ চলছে দিল্লিতে। রবিবারও তার অন্যথা হবে না। শুধু দিল্লিই নয়, পাশাপাশি রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ-সহ উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্যে শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর।

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, রাজস্থানের কোনো কোনো অংশে সোমবার পর্যন্ত শৈত্যপ্রবাহ চলতে পারে। তবে শীত বাড়লেও বাতাসের গুণমানে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। বরং শনিবারের তুলনায় আরো হ্রাস পেয়েছে বাতাসের গুণমান।

 

সবা:স:জু- ৩৫৯/২৪

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম