স্কুল নিয়ে তালবাহানা ও কোচিং বাণিজ্যের নেপথ্যে কারা?

ঢাকা উদ্যান পাবলিক হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক অপসারণে কোচিং সিন্ডিকেটের চক্রান্ত

মো: মহিব্বুল্লাহস্টাফ রিপোর্টার।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান এলাকায় অবস্থিত ঢাকা উদ্যান পাবলিক হাই স্কুলে চলছে শিক্ষার নামে কোচিংবাণিজ্যের দৌরাত্ম্য। বিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক নিয়মিত শ্রেনী পাঠ ফাকি দিয়ে বিকালে ব্যক্তিগত কোচিংসেন্টার পরিচালনায় ব্যস্ত, এই কোচিং বাণিজ্য ধরে রাখতে  চতুর শিক্ষকগন রামরাজত্য করার জন্য,কৌশলে বিদ্যালয়েরপ্রতিবাদী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ হাবিবুর রহমানকে সরিয়ে  দিয়েছেন বলে  শিক্ষার্থী অভিভাবক সাধারন শিক্ষকদেরমাঝে চলছে চাপাক্ষোভ মিশ্র প্রতিক্রিয়া। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে শ্রেণিকক্ষে সঠিকভাবে পাঠদান না করে বাধ্যতা মুলক শিক্ষার্থীদের কোচিং বাণিজ্য সেন্টারে ভর্তি হতে হয়। শ্রেনী কক্ষে না পড়িয়ে তারা প্রায়ই বলেন,বিষয়টি কোচিংয়ে ব্যাখ্যাকরব।ফলে শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত খরচ বহন করতে বাধ্য হয়, আর অভিভাবকেরা অভিযোগ জানালেও কর্তৃপক্ষ নীরবশ্রোতার ভুমিকায় অবতির্ণ হয় কোচিং বাণিজ্যের বিষয়টি গোপন রাখতে শিক্ষক সিন্ডকেট ছাত্রছাত্রীদেরকে মিথ্যা শিখাচ্ছেন। মিথ্যা তথ্যের উপর নির্ভর করে ছাত্রছাত্রীদেরকে প্রধান শিক্ষকের উপরে উসকে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: হাবিবুর রহমান এর বিরুদ্ধে মিছিল বিক্ষোভ করান, কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের সভাপতি . মো: আমিরুল ইসলাম বরাবর একটি অভিযোগ জমা দেন। তবে জানা যায় সেই অভিযোগের কোনো তদন্ত না করেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে হাবিবুর রহমান কে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ করতে নিষেধকরে বলেন;

মো: হাবিবুর রহমান স্যারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আমরা শিক্ষকরা আমলে নেই নি এবং অই অভিযোগে কি লেখা ছিলো তাও সভাপতি মহোদয় আমাদেরকে জানাননি

একজন শিক্ষক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন;

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান স্যার খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। অন্যায়, অনিয়ম দূর্নীতির বিরুদ্ধে স্যার কথাবলায় কয়েকজনের কোচিং ব্যবসায় সমস্যা হচ্ছিল, তাই তাকে চক্রান্ত করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

একজন অভিভাবক ক্ষোভ জানিয়ে বলেন;

“স্কুলে আগের মত এখন আর পড়ানো হয় না। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই কোচিং করায়। স্যারদের কাছে কোচিং না করালেপরিক্ষায় বাচ্চাদের নম্বর কম দেওয়া হয়।”

শিক্ষাবিদদের মতে, এই প্রবণতা শিক্ষার মান ধ্বংস করছে এবং শিক্ষা গ্রহনে ছাত্র অভিভাবকদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কোচিং সেন্টারে রূপান্তরিত হতে দেওয়া হলে শিক্ষার মান ধ্বংস হবে,” — বলেন এক শিক্ষা বিশ্লেষক।

বিষয়ে ঢাকা উদ্যান পাবলিক হাই স্কুলের কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য চাইলে কেহ মুখ খুলতে রাজি হয়নি।

ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার, অভিযোগ প্রমাণিত তবুও বহাল

আয়েশা আক্তারঃ

ঢাকা জেলা সাব-রেজিস্ট্রারদের প্রধান সাবিকুন নাহার চাকুরিজীবনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদ অর্জন ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্য ব্যাপক আলোচিত। সাবিকুন নাহারের অবৈধ সম্পদ,দুর্নীতি ও অনিয়মের খোজেঁ বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সাবিকুন নাহারের ধানমন্ডি ১০/এ রোডে ৩৭/এ গোলাপ ভিলা- ১ ও ২ নামে আট তলা দুইটি বাড়ি রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় শত কোটি টাকা। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাঁচারের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। জেলা রেজিস্ট্রার পদে যোগদানের পর থেকে বদলী বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন তার ছেলে শামীম ইয়াসার স্পন্দন। তিনি দোহার , গুলশান ও রুপগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত থাকাবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন বলে জানা যায়।

সাবিকুন নাহার বিভিন্ন অফিসে রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদানের পর ভূয়া মালিক সাজিয়ে জাল দলিল, জমির দাম কম দেখিয়ে সরকারী রাজস্বঁ ফাঁকি দিয়ে নিজে অর্থ আত্মসাত করেন,জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে ক্রেতা-বিক্রেতার নিকট থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আবার অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঁচার করার অভিযোগে দুদকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান। যদিও তদন্ত ঢিমেতালে চলছে বলে অনেক সাব-রেজিস্ট্রার অভিযোগ করেন।

দোহার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস :

দেশে ২০০৭ সালে জরুরী অবস্থা চলাকালীণ সময়ে সাবিকুন নাহার দোহার সাব-রেজিস্ট্রার দোহার সাবরেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত ছিলেন। দোহার অফিসে নিয়ম বর্হিভূতভাবে দলিল করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ ও প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের সময় যৌথ বাহিনীর হাতে ঘুষসহ ধরা পড়েন সাবিকুন নাহার। তৎকালীণ আই জি আর মাজদার হোসেন সুষ্ঠু তদন্ত করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সাবিকুন নাহারকে ছাড়িয়ে আনেন। তার কর্মকান্ডের জন্য পিয়ন ও অফিস সহকারীকে কারাবাসে যেতে হয়।

রুপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস :

সুচতুর সাবিকুন নাহার যেসব অফিসে বার্ষিক বেশী জমি দলিল সম্পাদিত হয় উৎকোচের বিনিময়ে সেই অফিসগুলোতে পদায়ন নেন। রুপগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিস নারায়ণগঞ্জ জেলার সর্বোচ্চ দরিল সম্পাদিত হওয়ার কারণে নানা কৌশলে সাবিকুন নাহার দ্রুত রুপগঞ্জ অফিসে যোগদান করেন। যত বেশী দলিল তত বেশী দুর্নীতি আর আয় করতে থাকেন সাবিকুন নাহার যা তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়। ২০১৪ সালে রুপগঞ্জে থাকাকালীণ সময়ে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে মামলা হয়। সম্পাদিত দলিল দুইটি নম্বর হল-৪০৫২ ও ৪৫২৭,যেখানে তিনি জমির প্রকৃত শ্রেণী পরিবর্তন করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেই টাকা আত্মসাত করেন। এবিষয়ে দুদক মামলা করে বলে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়। মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় সাবিকুন নাহারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিভাগীয় মামলার তদন্তভার দেয়া হয় তৎকালীণ সময়ের আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত শাখা-৩ এর উপ-সচিব উম্মে কুলসুমকে। দোষী সাব্যস্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে মন্ত্রণালয় তাকে তিরস্কারমূলক শাস্তি প্রদান করে। যা পরবর্তীতে অনেক বির্তকের সৃষ্টি করে।
গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিস: মানদন্ডের হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোর মধ্যে এলিট ও ব্যয় বহুল অফিস গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। সাবিকুন নাহার বিপুল পরিমান উৎকোচের বিনিময়ে গুলশান সাবরেজিস্ট্রি অফিসে যোগদান করেন। গুলশান এলাকার বিভিন্ন জমি , ফ্ল্যাট ও বাড়ি দাম কম দেখিয়ে বা বাজারদরের চেয়ে কম মূল্য দেখিয়ে সরকারি কোষাগারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমান অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন। গুলশানে কর্মরত থাকাকালীণ ৩ অক্টোবর ২০১১ সালে ৯১৫০ দলিলটি করতে ২ কোটি টাকা ঘুষ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল করার অভিযোগে ২০১৬ সালে ৮ নভেম্বর বনানী থানায় একটি মামলা হয়। যাহার মামলা নং-৬। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন দুদকের উপ-পরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্ত। কিন্তু তদন্ত ধামাচাপা দিতে সর্বোচ্চ চেস্টা চালিয়ে যান সাবিকুন নাহার। আরো বিভিন্ন দলিলে জাল-জালিয়াতির জন্য তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ হয়।

দুদকের উপ-পরিচালক ফয়সাল কাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। দলিল নং-৬৯৭৮ সম্পাদনের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১২ , দলিল নং-৯৩৫৫ সম্পাদনের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১২, দলিল নং-২৯২২ সম্পাদনের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১২। এই দলিলগুলো সম্পাদনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের জালিয়াতির বিষয়টি প্রতীয়মান হওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তাকে উক্ত দলিলগুলোর তথ্য প্রদানে তালবাহানা করে সংশ্লিষ্ট অফিস সমূহ। কর্ম জীবনে সীমাহীন দুনর্িিতর পরেও সাবিকুন নাহার পদন্নোতি পেয়ে বর্তমানে ঢাকা জেলা সাব-রেজিস্ট্রার। অভিযোগের বিষয়ে সাবিকুন নাহারের সাথে ফোনে ও অফিসে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম