তারিখ লোড হচ্ছে...

ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার, অভিযোগ প্রমাণিত তবুও বহাল

আয়েশা আক্তারঃ

ঢাকা জেলা সাব-রেজিস্ট্রারদের প্রধান সাবিকুন নাহার চাকুরিজীবনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদ অর্জন ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্য ব্যাপক আলোচিত। সাবিকুন নাহারের অবৈধ সম্পদ,দুর্নীতি ও অনিয়মের খোজেঁ বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সাবিকুন নাহারের ধানমন্ডি ১০/এ রোডে ৩৭/এ গোলাপ ভিলা- ১ ও ২ নামে আট তলা দুইটি বাড়ি রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় শত কোটি টাকা। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাঁচারের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। জেলা রেজিস্ট্রার পদে যোগদানের পর থেকে বদলী বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন তার ছেলে শামীম ইয়াসার স্পন্দন। তিনি দোহার , গুলশান ও রুপগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত থাকাবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন বলে জানা যায়।

সাবিকুন নাহার বিভিন্ন অফিসে রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদানের পর ভূয়া মালিক সাজিয়ে জাল দলিল, জমির দাম কম দেখিয়ে সরকারী রাজস্বঁ ফাঁকি দিয়ে নিজে অর্থ আত্মসাত করেন,জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে ক্রেতা-বিক্রেতার নিকট থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আবার অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঁচার করার অভিযোগে দুদকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান। যদিও তদন্ত ঢিমেতালে চলছে বলে অনেক সাব-রেজিস্ট্রার অভিযোগ করেন।

দোহার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস :

দেশে ২০০৭ সালে জরুরী অবস্থা চলাকালীণ সময়ে সাবিকুন নাহার দোহার সাব-রেজিস্ট্রার দোহার সাবরেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত ছিলেন। দোহার অফিসে নিয়ম বর্হিভূতভাবে দলিল করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ ও প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের সময় যৌথ বাহিনীর হাতে ঘুষসহ ধরা পড়েন সাবিকুন নাহার। তৎকালীণ আই জি আর মাজদার হোসেন সুষ্ঠু তদন্ত করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সাবিকুন নাহারকে ছাড়িয়ে আনেন। তার কর্মকান্ডের জন্য পিয়ন ও অফিস সহকারীকে কারাবাসে যেতে হয়।

রুপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস :

সুচতুর সাবিকুন নাহার যেসব অফিসে বার্ষিক বেশী জমি দলিল সম্পাদিত হয় উৎকোচের বিনিময়ে সেই অফিসগুলোতে পদায়ন নেন। রুপগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিস নারায়ণগঞ্জ জেলার সর্বোচ্চ দরিল সম্পাদিত হওয়ার কারণে নানা কৌশলে সাবিকুন নাহার দ্রুত রুপগঞ্জ অফিসে যোগদান করেন। যত বেশী দলিল তত বেশী দুর্নীতি আর আয় করতে থাকেন সাবিকুন নাহার যা তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়। ২০১৪ সালে রুপগঞ্জে থাকাকালীণ সময়ে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে মামলা হয়। সম্পাদিত দলিল দুইটি নম্বর হল-৪০৫২ ও ৪৫২৭,যেখানে তিনি জমির প্রকৃত শ্রেণী পরিবর্তন করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেই টাকা আত্মসাত করেন। এবিষয়ে দুদক মামলা করে বলে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়। মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় সাবিকুন নাহারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিভাগীয় মামলার তদন্তভার দেয়া হয় তৎকালীণ সময়ের আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত শাখা-৩ এর উপ-সচিব উম্মে কুলসুমকে। দোষী সাব্যস্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে মন্ত্রণালয় তাকে তিরস্কারমূলক শাস্তি প্রদান করে। যা পরবর্তীতে অনেক বির্তকের সৃষ্টি করে।
গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিস: মানদন্ডের হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোর মধ্যে এলিট ও ব্যয় বহুল অফিস গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। সাবিকুন নাহার বিপুল পরিমান উৎকোচের বিনিময়ে গুলশান সাবরেজিস্ট্রি অফিসে যোগদান করেন। গুলশান এলাকার বিভিন্ন জমি , ফ্ল্যাট ও বাড়ি দাম কম দেখিয়ে বা বাজারদরের চেয়ে কম মূল্য দেখিয়ে সরকারি কোষাগারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমান অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন। গুলশানে কর্মরত থাকাকালীণ ৩ অক্টোবর ২০১১ সালে ৯১৫০ দলিলটি করতে ২ কোটি টাকা ঘুষ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল করার অভিযোগে ২০১৬ সালে ৮ নভেম্বর বনানী থানায় একটি মামলা হয়। যাহার মামলা নং-৬। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন দুদকের উপ-পরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্ত। কিন্তু তদন্ত ধামাচাপা দিতে সর্বোচ্চ চেস্টা চালিয়ে যান সাবিকুন নাহার। আরো বিভিন্ন দলিলে জাল-জালিয়াতির জন্য তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ হয়।

দুদকের উপ-পরিচালক ফয়সাল কাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। দলিল নং-৬৯৭৮ সম্পাদনের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১২ , দলিল নং-৯৩৫৫ সম্পাদনের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১২, দলিল নং-২৯২২ সম্পাদনের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১২। এই দলিলগুলো সম্পাদনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের জালিয়াতির বিষয়টি প্রতীয়মান হওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তাকে উক্ত দলিলগুলোর তথ্য প্রদানে তালবাহানা করে সংশ্লিষ্ট অফিস সমূহ। কর্ম জীবনে সীমাহীন দুনর্িিতর পরেও সাবিকুন নাহার পদন্নোতি পেয়ে বর্তমানে ঢাকা জেলা সাব-রেজিস্ট্রার। অভিযোগের বিষয়ে সাবিকুন নাহারের সাথে ফোনে ও অফিসে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

বিটিভিতে ফরিদ-তাসমিনা-শামসুল যুগের পতন শুরু

স্টাফ রিপোর্টার॥

বিটিভি বার্তা বিভাগের অপ্রতিরোধ্য ফ্যাসিস্ট-দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট ‘ফরিদ-তাসমিনা-শামসুল’ গংয়ের পতন শুরু হয়েছে। অবশেষে আওয়ামী সরকারের আস্থাভাজন মুখ্য বার্তা সম্পাদক মুন্সী ফরিদুজ্জামানকে শাস্তিস্বরূপ বদলি আদেশের মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এতদিন এইসব কর্মকর্তারা নিজেকে জামাত-বিএনপির ট্যাগ লাগিয়ে সদ্দবেশে কর্মরত ছিলেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণের ভিত্তিতে আপাতত মুন্সী ফরিদুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্র থেকে ঠাকুরগাঁও উপকেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

১১ সেপ্টেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের টেলিভিশন-১ শাখা থেকে উপসচিব মো. ইব্রাহিম ভূঞা স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে নির্দেশনা দেওয়া হয়, যাতে বলা হয়েছে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তিনি বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবেন। অন্যথায় উক্ত তারিখ থেকে তাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ট্যান্ড রিলিজড হিসেবে গণ্য করা হবে।

২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার প্রেস উইং এর সক্রিয় সদস্য একমাত্র রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিটিভিতে ৫ আগস্ট পরবর্তী কিভাবে বার্তা প্রধান হিসেবে কার মদদে টিকে ছিলেন তা নিয়েও এখন চলছে অনুসন্ধান। শুধু তাই নয় ফখরুদ্দিন -মইনুদ্দিনের সময়কালেও এই মুন্সী ফরিদুজ্জামান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ বিটিভির হয়ে যুক্ত ছিলেন।

দাম্ভিকতা দেখাতেন কেউ তাকে রুখতে পারবে না। হাছান মাহমুদ ও এ আরাফাতের আস্থাভাজন এই কর্মকর্তা ৫ আগস্টের পর নিজেকে কখনও বিএনপি , কখনও জামাত কখনও এনসিপি অনুসারী দাবি করে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখেন বিটিভির বার্তা বিভাগ। দেরিতে হলেও তার এই অবমুক্তের আদেশে বিভিটিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সম্প্রতি রাজধানীতে ‘ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন’ সংগঠনটি বিটিভির বার্তা বিভাগের ফ্যাসিস্ট-দুর্নীতিবাজ ‘ফরিদ-তাসমিনা-শামসুল’ গংয়ের বিরুদ্ধে মানবন্ধন করেছে। মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ১ বছর পরও ফ্যাসিস্ট হাসিনা, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং আরাফাতের আস্থাভাজনরা কিভাবে বিটিভিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন? এছাড়া তারা অভিযোগ করেন যে, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত ফ্যাসিস্ট দুর্নীতিবাজদের কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে এদের রক্ষার জন্য একটি চক্র কাজ করছে। তাই অবিলম্বে প্রশ্রয়দাতাদেরসহ ফ্যাসিস্ট দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহবান জানান ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন।

সূত্র জানায়, মুন্সি ফরিদুজ্জামানের বদলির আদেশ স্থগিত করতে কিংবা তার স্থলে একই সিন্ডিকেটের এক কর্মকর্তাকে বসানোর জন্য বিটিভির মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম ও জেনারেল ম্যানেজার নুরুল আজম পবন মন্ত্রণালয়ে জোর তদবির এবং বিএনপি-জামাত নেতাদের দিয়ে চাপ প্রয়োগ করছেন। তবে তার অতীত কর্মকান্ডের জন্য তেমন সাড়া মিলছে না। অন্যদিকে, বদলি আদেশ হলেও মুন্সী ফরিদ বিটিভি ছাড়বে না বলে চ্যালেঞ্জ করছে তার আস্থাভাজনদের কাছে। তবে কি টাকার জোরে এবারও পার পেয়ে যাবেন মুন্সী ফরিদুজ্জামান ? প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।

উপমহাপরিচালক(বার্তা) ড. তাসমিনা আহমেদ, মুখ্য বার্তা সম্পাদক মুন্সি ফরিদুজ্জামান এবং নির্বাহী প্রযোজক শামসুল আলম আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে বার্তা শাখাকে আওয়ামী লীগের প্রচার সেলে পরিণত করেছিলেন। এমনকি জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র ছাত্রী, বিএনপি-জামাতকে সন্ত্রাসী হিসেবে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে। এই চাটুকারিতার জন্য তারা পতিত সরকারের সাবেক মন্ত্রী এবং প্রধান মন্ত্রীর অতি আস্তাভাজন ছিলেন।

language Change
সংবাদ শিরোনাম