স্টাফ রিপোর্টার॥
বিগত স্বৈরাশাসক হাসিনার শাসনামলে কখনো সরকারি দলের নেতা, আবার কখনো প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার বন্ধুর পরিচয় দিয়ে নিজেকে ক্ষমতাধর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের (ডিপিডিসি) মাফিয়া ডন খ্যাত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি- ডিপিডিসির প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ২য় স্ত্রীর নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে সরকার ও দেশের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ডিপিসির এক কর্মকর্তা নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক ডিপিডিসিকে তার ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করেছেন। কোন কর্মকর্তা তার এমন কর্মকান্ড ও দুর্নীতির বিষয়ে কথা বললেই তাকে বদলী ও চাকুরি থেকে অপসারণের হুমকি দেয়। তাই এখন আর কেউ তার অপকর্ম নিয়ে কথা বলে না! বলা চলে এই প্রতিষ্ঠানে তার কথাই শেষ কথা! ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তার কথায় উঠাবস করে। উর্ধতন কর্মকর্তা যেখানে অসহায় সেখানে আমরা তো ছোটখাট কর্তা! এই কর্মকর্তার কথা শুনলেই বুঝা যায় প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক কত বড় ক্ষমতাসীন ব্যক্তি।
আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তার দুর্নীতি ও অপকর্ম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অভিযোগ পরলেও তার তদন্ত রহস্যজনকভাবে ধামাচাপা পড়ে যায়! বিগত দিনে আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘ চাকরি জীবনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিধায় একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রকৌশলী আবু জাফর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি-২০১৭ সালে দুদকে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ক্ষমতাধর আব্দুর রাজ্জাক দুর্নীতি দমন কমিশনের সেই তদন্ত কার্যক্রম ধামাচাপা দিয়েছেন বলে ডিপিডিসি’র অফিসে সকলের মাঝে গুঞ্জন শোনা যায়। এই নিয়ে ডিপিডিসির অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) সিদ্ধিরগঞ্জ এনওসিএস (নেটওয়ার্ক অপারেশন এন্ড কাস্টমার সার্ভিস)-এর প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকে একই প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিস্তারে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। সাবেক ডেসা (ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই অথরিটি) থেকে বদলে যাওয়া ডিপিডিসি (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি)-এর বিদ্যুৎ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থেকে বিদ্যুৎ বিষয়ক পণ্যের একচ্ছত্র ব্যবসা করে আসছে।
এই লক্ষ্যে ১৫২/২/এম (৩য় তলা), পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫ ঠিকানায় ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’ নামের ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে নিজের ২য় স্ত্রীকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছে। যেখানে বিদ্যুতের তার, ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি বিক্রয় করে থাকেন। ব্যবসায়ী ও হাইরাইজ ভবনের মালিক গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী এইচ-টি (হাই টেনশন-৪৯ কিলোওয়াট তদূর্ধ্ব) সংযোগের নিজস্ব সাব-স্টেশন প্রয়োজন। কিন্তু ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’কে সাব-স্টেশনের কাজ দেওয়া না হলে এধরনের কোনো গ্রাহককেই তিনি সংযোগ প্রদান করনে না। ব্যবসায়ী ও হাইরাইজ ভবনের মালিকদের এক প্রকার জিম্মি করে প্রতি বছর ‘ওসাকা পাওয়ার লিমিটেড’ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক হলেন বিগত সরকারের আমলে সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত এবং বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের ডিপিডিসি উইং এর সভাপতি ছিলেন।
তিনি ডিপিডিসির ডেভেলপমেন্ট দপ্তরকে আওয়ামী লীগের ঠিকাদারের ঘরবাড়িতে পরিণত করেছিলেন। আওয়ামীলীগ না হলে কেউ কোন কাজ করতে পারত না। যে যত বেশি টাকা দিবে সে তত ভাল কাজ পাবে কাজের কি হবে তা পরে দেখা যাবে এই নীতিতে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। আওয়ামীলীগের ঠিকাদারদের নিয়ে তারা একটা রাম রাজত্ব কায়েম করেছিল।
আব্দুর রাজ্জাকের খুঁটির জোর এতই বেশি ছিল যে ডিপিডিসির সবাই তাকে ভয় পেত এবং তার বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ কোন সাহস পেত না। পূর্বে রাজ্জাক নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জ বিভাগে কর্মরত ছিলেন, সেখানে তার বিরুদ্ধে গ্রাহকের কাছে টাকার বিনিময়ে ট্রান্সফরমার বিক্রির অভিযোগ হয় এবং তার প্রেক্ষিতে ডিপিডিসি হতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপে সেটিও ধামাচাপা পড়ে যায়।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে উক্ত বিষয় নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠালেও কোন সাড়া দেন নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ মাসুদ || বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২১/১ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০ || মোবাইল : ০১৫১১৯৬৩২৯৪,০১৬১১৯৬৩২৯৪ || ই- মেইল: dailysobujbangladesh@gmail.com || ওয়েব : www.dailysobujbangladesh.com
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ. All rights reserved.