প্রশাসনের নিরাপত্তায় অনুষ্ঠিত হলো রেজাউল কবির পলের গণ সংযোগ

স্টাফ রিপোর্টার॥
কেরানীগঞ্জের বন্দ ডাকপাড়া মসজিদে আসরের নামাজ ও দোয়ার মধ্য দিয়ে কেরানীগঞ্জ ৩ আসনের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য রেজাউল কবির পলের গণ সংযোগের আয়োজন শুরু হয়। কেরানীগঞ্জের প্রতিটি থানা, গ্রাম এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরা ক্রমশ বন্দ ডাকপাড়া মসজিদের সামনে জড়ো হতে থাকেন। এর আগে জিনজিরা ঈদ গাহ মাঠে গণ সংযোগ করতে গেলে বিএনপির আরেক প্রতিপক্ষ গয়েশ্বর – নিপুনের কর্মীরা প্রকাশ্যে সহিংস্রতা করে সভায় বাধা প্রদান করে। এই বিষয় নিয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় সেদিন অভিযোগ করেন স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ। কেরানীগঞ্জ ৩ আসন কে নিয়ে বিএনপির আভ্যন্তরীণ দ্বিমত থাকায় এমনটা করছেন এক পক্ষ।

৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবের পর থেকে গয়েশ্বর – নিপুণ প্যানেলের নানা অভিযোগ প্রকাশ্যে চলমান।
কদমতলী এলাকায় চাঁদাবাজি থেকে শুভাঢ্যা, কাঠুরিয়া, চুনকুটিয়া, কালিগঞ্জ সহ অন্যান্য এলাকায় ময়লার ভাগাড় দখল করে নেয় নিপুণ বাহিনী। প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকে নিরাপত্তা দানের বিষয় টি অত্যন্ত আলোচিত সমালোচিত। কালিগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে নিপুণ বাহিনী মোটা চাঁদা আদায় করে থাকে। বিভিন্ন গণ মাধ্যমে বিষয় টি কয়েকবার প্রকাশিত হলেও তারা এ বিষয় নিয়ে ডোন্ট কেয়ার।
অপরদিকে, বিএনপির অন্যান্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ গণ মাধ্যমকে জানান, তারা এই বিষয় নিয়ে অত্যন্ত বিপদজনক পরিবেশের মধ্যে আছেন। বিএনপির রাজনীতি আপোষহীন। রেজাউল কবির পলের পক্ষে কেরানীগঞ্জ ৩ এর সকল বিএনপির নেতাকর্মীরা এক জোট হয়েছেন। শুক্রবার পলের পক্ষে বিশাল সমাবেশ করেন তারা। কিন্তু সেই সমাবেশে সহিংসতা করার পায়তারা করছিলো নিপুণ প্যানেলের লোকজন। এর আগেও পলের উপর আক্রমণ হয়েছিলো বেশ কয়েকবার। তাই স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আগেই প্রশাসনকে কড়া নিরাপত্তার বিষয়টি অবহিত করেন। কেরানীগঞ্জ প্রশাসন বিষয় আমলে নিয়ে র‍্যাব সহ অন্যান্য সকল প্রশাসনিক পর্যায়ের কঠোর নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করলে রেজাউল কবির পলের গণ সংযোগ শুরু হয়। মুহুর্তেই কদমতলী এলাকায় জনসভা জনসমুদ্রে রূপান্তর হয়।
জুলাই বিপ্লব এবং গত সময়ে বিএনপির যেসব নেতাকর্মীরা মারা গেছেন তাদের জন্য দোয়ার মধ্য দিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফেরাত কামনা করা হয়। বেগম খালেদা জিয়ার এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্থতা কামনায় দোয়া হয়।
বক্তব্যতে পল বলেন, তিনি শহীদ জিয়া,বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের আপোষহীন রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতি বর্জন করতে আহবান জানান। এই সময় কেরানীগঞ্জ ৩ আসনের বিভিন্ন সিনিয়র নেতারা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের অন্যান্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। একযোগে ঐক্য বদ্ধ ভাবে তারা রেজাউল কবির পলের পক্ষে সহমত প্রকাশ করেন।
প্রশাসনের সহযোগিতার কারণে এই জনসমাবেশ সফলভাবে করতে পেরেছেন বলে পল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পল আরো বলেন, যদি তাকে সুযোগ দেয়া হয় তাহলে মাদক,চাঁদাবাজ এবং দখলদারিত্ব প্রতিহত করতে এলাকার মানুষের পাশে থাকবেন। কেরানীগঞ্জ ৩ আসনের স্থানীয় নেতা ও জনতার স্বতঃস্ফূর্ত জনসমাগমকে তিনি স্বাগত জানান এবং সবার সহযোগিতার জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন পাসপোর্ট ও বিআরটিএ

           স্টাফ রিপোর্টার:

 গত এক বছরে খানা জরিপ করে দেশের সেবা খাতের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। জরিপে পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। জরিপে সর্বোচ্চ ঘুষ লেনদেনের দিক থেকে বিচারিক সেবা, ভূমি ও ব্যাংকিং খাতের নাম প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে টিআইবির ধানমন্ডির কার্যালয়ে ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০২৩’ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব প্রতিবেদন আকারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। দেশের ১৭টি সেবা খাতের ওপর জরিপ চালিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য খাতের মধ্যে এমএফএস, ওয়াসা ও অনলাইন শপিংয়েও জরিপ চালায় সংস্থাটি।

টিআইবির প্রতিবেদনে পাসপোর্ট, বিআরটিএ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে সবসময়ে সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির খানা জরিপে একই সঙ্গে সর্বোচ্চ পরিমাণ ঘুষ গ্রহণের দিক থেকে বিচারিক সেবা, ভূমি ও ব্যাংকিং খাতে সর্বোচ্চ গড় ঘুষ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, খানা জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৪ (এপ্রিল) পর্যন্ত সেবা খাতে জাতীয় পর্যায়ে মোট ঘুষের ন্যূনতম প্রাক্কলিত পরিমাণ ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। এই সময়ে সার্বিকভাবে দুর্নীতির শিকার ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ঘুষের শিকার ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার বা খানা।

এ ছাড়া সেবা পেতে পরিবার বা খানা প্রতি সর্বনি¤œ ৫ হাজার ৬৮০ ঘুষ দিতে হয়েছে। গড় ঘুষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বিচারিক সেবায় এই খাতে একটি সেবা পেতে গড়ে গুনতে হয়েছে ৩০ হাজার ৯৭২ টাকা, প্রতিটি ভূমি সেবার জন্য গড়ে গুনতে হয়েছে ১৭ হাজার ৪৭১ ও ব্যাংকিং খাতে ৭ হাজার ৩৬৩ টাকা। সেবা পেতে ৭০ শতাংশ ৯ শতাংশ পরিবার দুর্নীতির শিকার হয়েছে। আর ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার ঘুষের শিকার হয়েছে। সর্বোচ্চ দুর্নীতি ও ঘুষের হার পাসপোর্ট, বিআরটিএ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায়।

২০২৩ সালে জাতীয়ভাবে প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ ও জিডিপির ০ দশমিক ২২ শতাংশ। এই পরিমাণ অর্থ দেশের মানুষ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেবা পেতে ঘুষ দিয়েছে। এই সময়ে ভূমি সেবা পেতে ঘুষ দিয়েছে ২ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা, বিচারিক সেবা পেতে ২ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সেবা পেতে ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা ও পাসপোর্টে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিচারিক সেবা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায় দুর্নীতি ও ঘুষের উচ্চ হার অব্যাহত, যা সাধারণ জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় বাধা; অন্যদিকে ভূমি সেবা, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং বিআরটিএর মতো সেবায় উচ্চ দুর্নীতি ও ঘুষ বিদ্যমান, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ সেবা প্রাপ্তির অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রতিবেদনে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ও ঘুষ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বিআরটিএ, ভূমি, পাসপোর্ট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, বিচারিক প্রক্রিয়ার নাম উঠে এসেছে।

এই সময়ে বিআরটিএতে সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৮৬ শতাংশ, আর প্রতিষ্ঠানটিতে ঘুষ দিতে হয়েছে ৭১ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে। পাসপোর্ট সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৮৬ শতাংশ সেবাগ্রহীতা, ঘুষ দিতে হয়েছে ৭৪ দশমিক ৮ শতাংশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ, আর ৫৮ দশমিক ৩ শতাংশ সেবা গ্রহীতাদের ঘুষ দিতে হয়েছে। বিচারিক সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ, ঘুষের শিকার ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ। এ ছাড়া ভূমিসেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতি শিকার ৫১ শতাংশ, ঘুষ দিতে হয়েছে ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ।

টিআইবির খানা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১৭ খাতে সেবা নিতে গিয়ে গড়ে ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ দুর্নীতি শিকার হয়েছেন এবং ঘুষ দেওয়ার হার গড়ে ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ।

সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ। স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত সেবায় এই হার ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনে ৪১ শতাংশ, গ্যাস খাতে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ সহায়তায় ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ।

সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেবায় দুর্নীতি শিকার ২৬ শতাংশ, বিদ্যুৎ খাতে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ, কৃষি খাতে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ, কর ও শুল্কে ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ, বিমায় ১৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং ব্যাংকিং খাতে ৯ শতাংশ।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণে কাজ করা এনজিওগুলোতে দুর্নীতির শিকার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে, যেমন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), ওয়াসা, এবং অনলাইন শপিংয়ে এই হার ১১ দশমিক ১ শতাংশ।

সেবা খাতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ জরিপে ফলাফলের ভিত্তিতে টিআইবি সরকারের কাছে ৯ দফা সুপারিশ করেছে। সেবাগ্রহণ প্রক্রিয়া ডিজিটাইলজডসহ সরকারি কর্মকর্তা–কর্মাচারীদের আচরণ সম্পদ বিবরণী দাখিল বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ৮ বিভাগের ১৫ হাজার ৫১৫টি পরিবারের তথ্য এই জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৩ মে থেকে ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট পর্যন্ত জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে।

সবা:স:জু- ১৬৪/২৪

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম