স্যামির কৌতূহলে মিরপুরের পিচ ঘিরে

ডেস্ক রিপোর্ট:

আগের রাতে দিল্লি থেকে ঢাকায় পা রাখার পর থেকেই চেনা মানুষের ভিড়ে ড্যারেন স্যামি। মিরপুরে গিয়েও সেলফির আবদার মেটাতে হয়েছে তাঁকে। আসলে ড্যারেন স্যামির কাছে মিরপুরের এই স্টেডিয়ামে নতুন কিছু নয়। খেলোয়াড়ি জীবনে এই স্টেডিয়ামে বহু জয়ের সাক্ষী তিনি।

ক্রিস গেইলদের নিয়ে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল নয়, বিপিএলেও বহু ম্যাচ খেলে গেছেন এই মাঠে। তাই মিরপুরের বলবয় থেকে শুরু করে পুরোনো দ্বাররক্ষী  অনেকের কাছেই স্যামি এখনও মজার মানুষ। এবার বাংলাদেশ সফরে এসেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ হয়ে। গতকালই তিনি হোটেল থেকে দলবল নিয়ে মিরপুরে চলে আসেন অনুশীলনের জন্য।

একাডেমির নেটে ছেলেদের নিয়ে অনুশীলনের ফাঁকে কথা বলেন মিরপুরের অস্ট্রেলিয়ান কিউরেটর টনি হেমিংয়ের সঙ্গে। কী কথা হয়েছে তাদের, স্বভাবতই তা জানা যাবে না। তবে আন্দাজ করা যেতে পারে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বাইশ গজ ঘিরেই যত কৌতূহল ড্যারেন স্যামির। তাই একাডেমির মাঠ থেকে সরাসরি তিনি চলে যান মূল স্টেডিয়ামের বাইশ গজের কাছে। সেখানে ঢেকে রাখা পিচের চট সরিয়ে বাইশ গজ পরখ করে নেন।

আসলে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের অন্যতম নির্ণায়ক যে এই মিরপুরের পিচ; তা ভালোভাবেই জানা আছে স্যামির। যদিও সর্বশেষ সেই চার বছর আগে এখানে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে এসেছিল ক্যারিবীয়রা। সেই সিরিজে তিন ম্যাচের ওডিআইতে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছিল তারা। যদিও সেই দলের কেউই নেই এখন বর্তমান ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে।

বাংলাদেশ স্কোয়াডে বরং মিরাজ, সৌম্য, শান্ত, তাসকিন, মুস্তাফিজরা রয়েছেন। মিরপুরের স্লো অ্যান্ড লো পিচ ঘিরে বিশ্বক্রিকেটে একটা মিথ তৈরি হয়ে আছে, সেখানে কিউরেটর গামিনি ডি সিলভাকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে টনি হ্যামিংয়কে। মিরপুরের বদনাম ঘুচিয়ে স্পোর্টিং উইকেট করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হ্যামিংয়কে। সেই হিসেবে এই সিরিজই তাঁর প্রথম পরীক্ষা। ক্যারিবীয় এই দলটি অবশ্য খুব একটি ছন্দে নেই। ভারত থেকে দুই টেস্টের সিরিজ হোয়াইটওয়াশ হয়ে এসেছে তারা, সেই দলের পাঁচ ক্রিকেটার ওয়ানডে স্কোয়াডেও রয়েছেন।

তাছাড়া ঘরের মাঠে এর আগে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিলও তারা। ইংল্যান্ডে গিয়েও ওডিআইতে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছিল। তবে সর্বশেষ ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল ক্যারিবীয়রা। র‍্যাঙ্কিংয়ে ৯ নম্বরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিশ্চিতভাবেই দশ নম্বরে থাকা বাংলাদেশের কাছ থেকে রেটিং পয়েন্ট বাড়িয়ে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে।

এই দলটির মধ্যে এই মুহূর্তে ফর্মে রয়েছে অধিনায়ক শাই হোপ, মাত্রই দিল্লি টেস্টে সেঞ্চুরি করে এসেছেন তিনি। এছাড়া রোস্টন চেজ, জাস্টিন গ্রেভিস, গুডাকেশ মোতিও ফর্মে রয়েছেন। সব মিলিয়ে এই দলটি চার বছর আগে ঢাকায় আসা দলটির চেয়ে অন্তত ভালো। এদিন মিরপুরে স্যামিরা অনুশীলন করলেও মিরাজরা অবশ্য বিশ্রামেই ছিলেন। আজ টিম হোটেলে ট্রফির ফটোসেশনের পর মিরপুরে অনুশীলনে আসবেন তারা। কাল মিরপুরে প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দুই দল।

এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি লড়াই

এশিয়া কাপের এখন পর্যন্ত ১৪ বারের আসরে সবচেয়ে বেশি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত ৭ বার। এরপর শ্রীলঙ্কা হয়েছে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন। পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ৩ বার। ভারত ৭ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়াও ৩ বার হয়েছে রানার্সআপ।

এই ৩ বারই তারা শ্রীলঙ্কার কাছে হেরেছিল। শ্রীলঙ্কা অপর ২ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পাকিস্তানকে হারিয়ে। শ্রীলঙ্কা রানার্সআপ হয়েছে ৬ বার। এর ৫ বারই হেরেছে ভারতের কাছে। অপর ফাইনালে হেরেছিল পাকিস্তানের কাছে। পাকিস্তান যে ২ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সেখনে তারা আরেকবার হারিয়েছিল বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ ৩ বার ফাইনালে উঠে একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ২ বার ভারতের কাছে ১ বার পাকিস্তানের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল।

এবার ১৫তম আসরে গত দুইবারের ফাইনালিস্ট ভারত ও বাংলাদেশ কোনো দলই নেই। ভারতে সুপার ফোর থেকে আর বাংলাদেশ গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে। এবার শ্রীলঙ্কা চ্যাম্পিয়ন হলে ভারতের কাছাকাছি চলে আসবে। তারা হবে ষষ্ঠবার চ্যাম্পিয়ন। পাকিস্তানের হবে তৃতীয়বার।

 

গত ১৪ বারের আসরে শ্রীলঙ্কা ১১বার ও পাকিস্তান ৩ বার ফাইনাল খেলেছে। পাকিস্তানের ফাইনালে ৩ বারের ২ বারই প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। এবারও তাদের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাই। এই দুই দল ২০১৪ সালের পর আবার উঠেছে ফাইনালে। মাঝের দুই আসর পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল। এক নজরে দেখে আসা যাক দুই দলের মুখোমুখি আগের ৩ ফাইনাল।

১৯৮৬ সাল, দ্বিতীয় আসর, ভেন্যু শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম

দুই দলই তারকা সমৃদ্ধ দল। ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের হয়ে জাভেদ মিয়ানদাদ, মুদাসসর নজর, মহসিন খান, রমিজ রাজা, সেলিম মালিক, ওয়াসিম আকরাম, আব্দুল কাদির, দিলিপ মেন্ডিসের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা হয়ে ব্রেন্ডন কুরুপ্পু, রুশান মাহানামা, গুরুসিংহা, অরভিন্দ ডি সিলভা, অর্জুনা রানাতুঙ্গার মতো খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণে ফাইনাল ম্যাচটি কিন্তু জমে উঠেনি। পাঁচ উইকেটে ম্যাচ

জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। টস জিতে শ্রীলঙ্কা পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে কৌশিক আমারিনের মারাত্বক বোলিংয়ে ৪৫ ওভারে ৯ উইকেটে মাত্র ১৯১ রানে আটকে রাখে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেছিলেন মিয়ানদাদ। তার ১০০ বলের ইনিংসে ছিল মাত্র ৪টি বাউন্ডারি। এ ছাড়া, মঞ্জুর এলাহী ৩৭, আব্দুল কাদির ৩০, সেলিম মালিক ২৩ রান। কৌশিক ৪৬ রানে ৪ উইকেট নেন। রবি রত্নানায়েক ৫০ রানে নেন ২ উইকেট।

 

জবাব দিতে নেমে শ্রীলঙ্কা ৪২.২ ওভারে ৪২.২ ওভারে ৫ উইকেটে করে ১৯৫ রান। রানাতুঙ্গা ৫৭, অরবিন্দ ডি সিলভা ৫২, ব্রেন্ডন কুরুপ্পু ৩০, দিলিপ মেন্ডিস ২২, মাহানাম ২১ রান করেন। পাকিস্তানের হয়ে আব্দুল কাদির ৩২ রানে নেন ৩ উইকেট। ম্যাচ সেরা হন জাভেদ মিয়ানদাদ।

২০০০ সাল সপ্তম আসর, ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম

ঢাকায় ১৯৮৮ সালের পর বসেছিল এশিয়া কাপের দ্বিতীয় আসর। ১৯৮৬ সালে ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নেয় পাকিস্তান এবার শ্রীলঙ্কাকে ৩৯ রানে হারিয়ে। এবার পাকিস্তান দলে ১৯৮৬ সালের শুধু ওয়াসিম আকরাম ছিলেন। নতুন করে ছিলেন সাঈদ আনোয়ার, ইনজামাম-উল-হক, মোহাম্মদ ইউসুফ, অধিনায়ক মঈন খান, শহীদ আফ্রিদী । শ্রীলঙ্কা দলেও ছিলেন ১৯৮৬ সালের একমাত্র অলবিন্দ ডি সিলভা। সে সময় শ্রীলঙ্কা দলে তারকাদের ছড়াছড়ি। মারভান আতাপাত্তু, রমেশ কালুভিথারানা, সনাথ জয়াসুরিয়া, মুতিয়া মুরালিধরন, চামিন্দাভাস, মাহেলা জয়াবর্ধনে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান ৪ উইকেটে ২৭৭ রান করে। সাঈদ আনোয়ার ৮৮, ইনজামাম-উল-হক ৭২, মঈন খান ৫৬, মোহাম্মদ ইউসুফ ২৫, শহীদ আফ্রিদী ২২ রান করেন। নুয়ান জয়সা ৪৪ রানে নেন ২ উইকেট। জবাব দিতে নেমে শ্রীলঙ্কা মারভান আতাপাত্তুর সেঞ্চুরিতেও টার্গেট অতিক্রম করতে পারেনি। ৪৫.২ ওভারে ২৩৮ রানে অলআউট হয়ে যায়। আতাপাত্তু ১২৪ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ১০০ রান করেন। এ ছাড়া, রাসেল র্আনল্ড ৪১, উপল চন্দনা ২৪, সনাথ জয়াসুরিয়া ২২, অরবিন্দ ডি সিলভা ২০ রান করেন। ওয়াসিম আকরাম ৩৮, আরশাদ খান ৪২ ও মোহাম্মদ আকরাম ৫০ রানে নেন ২ উইকেট। ম্যাচ সেরা হন মঈন খান।

২০১৪ সাল, দ্বাদশ আসর, ভেন্যু শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম

২০১৪ সালে ঢাকায় বসেছিল এশিয়া কাপের দ্বাদশ আসর। ঢাকায় ছিল চতুর্থ আয়োজন। এবার শ্রীলঙ্কা জিতে আবার ৫ উইকেটে। পাকিস্তান দলে ২০০০ সালে খেলা শহীদ আফ্রিদী ছিলেন একমাত্র। শ্রীলঙ্কা দলে ছিলেন মাহেলা জয়াবর্ধনে। তবে এবার আর আগের মতো দুই দলে তারকাদের ছড়াছড়ি ছিল না। পাকিস্তান দলে উল্লেখযোগ্য তারকা বলতে ছিলেন অধিনায়কক মিসবাহ-উল-হক, মোহাম্মদ হাফিজ, আহমেদ শেহজাদ। সে তুলনায় শ্রীলঙ্কা দলে তারকা খেলোয়াড় ছিলেন বেশ ভারী। কুমারা সাঙ্গাকারা, লাসিথ মালিঙ্গা তখন বিশ্বমানের তারকা। এ ছাড়া ছিলেন কুশাল পেরেরা, লাহিরু থ্রিমান্নে, অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান ফাওয়াদ আলমের সেঞ্চুরিতেও খুব বেশি পুঁজি সংগ্রহ করতে পারেনি। লাসিথ মালিঙ্গার তোপে পড়ে ৫ উইকেটে করে ২৬০ রান। ফাওয়াদ আলম ১৩৪ বলে ৩ ছক্কা ও ৮ চারে ১১৪ রান করেন। মিসবাহ-উল-হক ৬৫, ওমর আকমল ৫৯ রান করেন। পাকিস্তানের পতন হওয়া সব কটিচ উইকেটই নেন মালিঙ্গা ৫৬ রানে। জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে লহিরু থ্রিমান্নের ১০১ রানের ইনিংসে ভর করে শ্রীলঙ্কা ৪৬.২ ওভারে ৫ উইকেটে ২৬১ রান করে শিরোপা জিতে নেয়। থ্রিমান্নে ১০৮ বলে ১৩ চারে ১০১ রান করেন। মাহেলা জয়াবর্ধনে ৭৫, কুশাল পেরেরা ৪২ রান করেন। সাঈদ আজমল ২৬ রানে নেন ৩ উইকেট।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম